আইসক্রিম খেলে কী ক্ষতি হয়?

published : ৬ মার্চ ২০২৩

আইসক্রিম- রং বেরংয়ের মোড়ক, কাপ বা বক্সের এই ফ্রোজেন ফুড বা হিয়ায়িত খাবার চেখে দেখার লোভ সংবরণ আসলেই একটু কঠিন। চেখে দেখা দূর, চোখে দেখলেও জিভে জল আসে অনেকের। কিন্তু খাদ্যের নামে বহুল বিক্রিত এই কুখাদ্য আপনার কী মারাত্মক ক্ষতি করছে তা কি আপনি জানেন?

ব্যবহৃত হয় ক্ষতিকর নানা উপাদান

নামী ব্র্যান্ড কিংবা ফুটপাতের ভ্যান- যেখান থেকেই আইসক্রিম কেনেন না কেন, আইসক্রিমে যে উপাদানগুলো ব্যবহৃত হয় মানব স্বাস্থ্যের জন্যে তা খুবই ক্ষতিকর।

প্রথমেই হলো প্রসেসড মিল্ক এবং সাদা চিনি যার ক্ষতির কথা বলাই বাহুল্য। গবেষকরা দেখেছেন, দুই স্কুপের একটা রেগুলার কাপ আইসক্রিমে ২৮ গ্রাম বা ৭ চামচ চিনি থাকে!

ছোট্ট এই কাপ আইসক্রিমে চিনি আছে প্রায় ৭ চামচ! (ছবিসূত্র- www.zomato.com)

প্রসেসড মিল্কে ক্যালসিয়াম এবং ফসফেটের পরিমাণ থাকে ৮ থেকে ১০ গুণ বেশি। অন্যদিকে নেই পর্যাপ্ত আয়রন, ভিটামিন সি এবং ম্যাগনেসিয়াম।

আইসক্রিমে যেসব রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়

১. ডাইটিথিলিন গ্লাইকোল, গাড়ির ওয়ার্কশপে যা পেইন্ট তোলার কাজে ব্যবহৃত হয়

২. আলডিহাইড-১৭ যা রঙ তৈরিতে এবং প্লাস্টিকে ব্যবহৃত হয়

৩. পিপারোনাল যা দেয়া হয় ভ্যানিলাসহ আইসক্রিমে যে বিভিন্ন এসেন্স ব্যবহৃত হয় তার জন্যে। পিপারোনাল প্রাকৃতিকভাবেও হয়, কিন্তু দাম কম বলে উৎপাদকরা অনেক সময় রাসায়নিক পিপারল ব্যবহার করে থাকে। আর রাসায়নিক পিপারল উকুন মারার ওষুধে ব্যবহার করা হয়ে থাকে!

৪. মিষ্টি গন্ধ তৈরির জন্যে আইসক্রিমে দেয়া হয় ইথাইল এসিটেট নামের একটি রাসায়নিক যা গ্লু বা আঠা এবং নেইল পলিশ রিমুভারে কাজে লাগে।

৫. কলা বা আপেলের ফ্লেভার দিতে ব্যবহার করা হয় অ্যামাইল এসিটেট যা পেইন্ট ওয়ার্কশপে রঙকে তরলীভূত করতে ব্যবহৃত হয়।

৬. মিষ্টি এবং চনমনে গন্ধ তৈরির জন্যে ব্যবহৃত হয় বেনজাইল এসিটেট।

স্বাদে-গন্ধে-দর্শনে অতুলনীয় করতে কত অজস্র রাসায়নিক উপাদান যে আইসক্রিমে মেশানো হয়! (ছবিসূত্র-Dr. Jayashree Gupta's Blog)

তাহলেই বুঝুন- ভ্যানিলা, চকলেট বা স্ট্রবেরি ফ্লেভারের যেসব আইসক্রিম আপনি খান তা আসলে কারখানায় তৈরি হরেকরকম রসায়নের যৌগ বৈ কিছু নয়! আর মানবস্বাস্থ্যের জন্যে তা যে কত ভয়াবহ হুমকি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আইসক্রিমের স্বাস্থ্যঝুঁকি

আইসক্রিমে ব্যবহৃত ডেইরী প্রোডাক্ট উচ্চ ফ্যাট ও ক্যালরি সমৃদ্ধ। অত্যধিক চিনি তো আছেই! ফলে বেশি বেশি আইসক্রিম খেলে বাড়বে মেদস্থূলতা ও ওজন; আপনি অল্পতেই মুটিয়ে যাবেন। আর বাড়তি মেদ মানেই নানাবিধ রোগের বাড়তি ঝুঁকি।

চিনি ছাড়াও আইসক্রিমে দেয়া হয় ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ। আরো আছে এক্সট্রা সুইটনার। ডায়বেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এ দুটোই যথেষ্ট!

আইসক্রিমে থাকে উচ্চ মাত্রার LDL তথা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল। যা হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি করে।

এছাড়া, এতে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদানের একাধিক ক্যান্সারের কারক।

ছেলে-বুড়ো নির্বিশেষ আইসক্রিমের ভক্ত যেহেতু সব বয়সী মানুষ, রোগের ঝুঁকি তাই বয়স-নিরপেক্ষ। ছোট ছোট বাচ্চাদেরও এখন হৃদরোগ, ফুসফুস ও কিডনি রোগ, কোলন, স্টমাক বা লিভার ক্যান্সারের পরিমাণ বেড়ে গেছে- এটাই তার কারণ।

তবে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো আইসক্রিম যথেষ্টই এডিক্টিভ বা আসক্তিকারক। মানে একবার যদি বাচ্চা খেতে শুরু করে তাহলে তা থেকে তাকে মুক্ত করা কঠিন, যেমন কঠিন মাদকাসক্তকে মাদক থেকে মুক্ত করা।

আইসক্রিমের মতো ‘high-fat’ ‘high-sugar’ খাবার মস্তিষ্কের ‘reward’ সিস্টেমকে মাদকের মতই বদলে দেয় (ছবিসূত্র- The Telegraph)

American Journal of Clinical Nutrition-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কোকেন সেবনে ব্রেইনের যে অবস্থা হয়, ঠিক একই অবস্থা হয় নিয়মিত আইসক্রিম খেলেও। বেশি বেশি আইসক্রিম খাওয়ার তাড়না- অবস্থাটা মাদকাসক্তির মতই!

অভিভাবক হিসেবে আপনার করণীয়

আইসক্রিম নিজে তো খাবেনই না, সন্তানও যেন না খায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। আইসক্রিমের ক্ষতির দিকগুলো সম্পর্কে তাকে অবহিত করুন।

আশার কথা হলো- শিশুদের উদ্বুদ্ধ করা সহজ। আর একবার যদি আপনি তাকে কুখাদ্য চিনিয়ে সুখাদ্যে অভ্যস্ত করাতে পারেন, সারাজীবন সে ওটাই ধারণ করবে।