৯ প্রাকৃতিক উপায়ে প্রতিরোধ করুন টাইপ-টু ডায়াবেটিস

published : ১৪ নভেম্বর ২০২৫

ডায়াবেটিসকে এখন বলা হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর প্লেগ! ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে প্রতি ৯ সেকেন্ডে ১টি মৃত্যু ঘটেছে ডায়াবেটিসে। 

ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত; ১০ শতাংশ মৃত্যুর কারণ ডায়াবেটিস। 

ডায়াবেটিস মূলত একটি লাইফস্টাইল ডিজিজ, চিকিৎসাবিজ্ঞান যাকে ভাগ করেছে দুটো প্রধান শ্রেণিতে। 

টাইপ-ওয়ান ডায়াবেটিস- যেখানে শরীরে একদমই ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না।   

টাইপ-টু ডায়াবেটিসে ইনসুলিন কম উৎপন্ন হয়, বা পর্যাপ্ত উৎপন্ন হলেও শরীর সেটাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে না। এই অবস্থাকে বলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বলছে, আমাদের দেশে ৯৫ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীই টাইপ-টু ধরনের। 

আশার কথা হচ্ছে, আগাম সতর্কতা অবলম্বন করলে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে টাইপ-টু ডায়াবেটিস ঠেকিয়ে রাখা বা বিলম্বিত করা সম্ভব- বলছেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান। 

এই আর্টিকেলে আছে এমন ৯টি উপায়ের কথা, যা অনুসরণ করে আপনি প্রাকৃতিকভাবেই প্রতিরোধ করতে পারবেন ডায়াবেটিসঃ

ভিডিও দেখুন : ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করুন সহজে! 

১. প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন

আমরা অনেকেই নিয়ম করে হাঁটি ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়ার পর ডাক্তারের পরামর্শে। অথচ আপনি যদি সুস্থ থাকতেই নিয়ম করে হাঁটেন তাহলেই পারবেন ডায়াবেটিসকে রুখে দিতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা রক্তে গ্লুকোজ কমাতে সাহায্য করে। যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক।

এছাড়া, ব্যায়াম, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, খেলাধুলা ইত্যাদি শারীরিক সক্রিয়তা ইনসুলিন রেসপন্স বাড়ায় এবং গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।  

২. মাংস খাওয়া কমান

গরু, খাসি, ভেড়ার মাংস অর্থাৎ রেড মিট, বিশেষত প্রক্রিয়াজাত রেড মিট, যেটা আপনি ফাস্টফুডের সাথে খান, এগুলো ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় অনেকখানি। রোজ হাতের তালু পরিমাণ রেড মিট খেলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে ২০ ভাগ। 

আসলে যে-কোনো মাংস যত কম খাবেন ডায়াবেটিসের তত কম ঝুঁকিতে থাকবেন। আপনি যদি মাংস ছেড়ে শুধু মাছ খান তাহলেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যাবে ৫০ ভাগ!

৩. আঁশযুক্ত খাবার খান

ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার ব্লাড সুগার ও ইনসুলিনের ঘনত্ব কমায়। প্রকারান্তরে কমায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি।

আমাদের প্রতিদিন ৩০ গ্রাম আঁশ খাওয়া উচিত। বার্লি, ওটস, ডাল, শাকসবজি ও ফলের মাধ্যমে আপনি পাবেন এই আঁশ। 

৪. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় আরো যেসব খাবার

করলা- চারান্টিন (Charantin) সহ বেশ কিছু এন্টি-ডায়াবেটিক উপাদান আছে করলায়

এন্টি-ডায়াবেটিক উপাদান উপাদান আছে জামের বিচির গুঁড়োতেও। 

মেথি বীজ ভেজানো পানি- রক্তে শর্করা শোষণ কমায় এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়

বাদাম ও বীজ যেমন আমন্ড বা কাঠবাদাম, আখরোট, চিয়া সিড ও ফ্ল্যাক্সসিড বা তিসি- ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায়।

গ্রিন টি ও দারুচিনি- রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়

লেবু ও অন্যান্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার- ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমায় 

এপেল সাইডার ভিনেগারএলোভেরা বা ঘৃতকুমারী- ব্লাড সুগার লেভেল কমায়

৫. ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন করুন

চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে যেসব বাজে অভ্যাস সবার আগে বাদ দিতে হবে, তার মধ্যে রয়েছে ধূমপান ও মদ্যপান। কারণ এগুলো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে দেয়। 

তামাকজাত দ্রব্য থেকে দূরে থাকুন; ধূমপান ডায়াবেটিসের জন্য ক্ষতিকর।

৬. চিনি পরিহার করুন

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই চিনি ও চিনিযুক্ত খাবার, প্রসেসড ফুড এবং পানীয় পরিহার করতে হবে। 

আমাদের রক্তে চিনি থাকে মাত্র এক চা চামচ! আমরা যদি প্রতিদিন সরাসরি বা খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমে ২/৩/৪/৫ চা চামচ চিনি খাই, তখন রক্তের সুগার বেড়ে দাঁড়ায় কয়েকগুণ, যা ঘটায় স্থূলতা, ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস।

৭. ব্যাড কার্বের বদলে খান গুড কার্ব

টাইপ-টু ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট বা পরিশোধিত শর্করা, যেমন- সাদা চাল ও সাদা ময়দা, যাকে বলা হয় ব্যাড কার্ব। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে চাইলে আপনাকে এগুলো বাদ দিতে হবে। 

লাল চালের ভাত ও লাল আটার রুটি আপনার শর্করার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সহায়তা করবে ডায়াবেটিস প্রতিরোধেও।    

৮. মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম করুন

হার্ভার্ড হেলথে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, স্ট্রেস কমলে রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর স্ট্রেস কমাতে মেডিটেশনের কার্যকারিতা প্রমাণিত!

ছয় মাসের এক গবেষণায় ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত ৬০ জন রোগীকে দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। একটি গ্রুপের সবাইকে নিয়মিত মেডিটেশন করানো হয়। ছয় মাস পর দেখা যায়, যারা মেডিটেশন করেছে তাদের দেহে ব্লাড সুগার কমেছে। 

এছাড়া, জানুশিরাসন, শশাঙ্গাসন, অর্ধশলভাসন ও হলাসন- যোগব্যায়ামের এই আসনগুলো অগ্ন্যাশয়কে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখার মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিরাময়ে সাহায্য করবে আপনাকে।  

৯. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

অতিরিক্ত ওজন ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়। স্থূলতা বা অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়ার কারণেও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়- বলছেন অধ্যাপক এ কে আজাদ খান। 

তাই স্থূলতা ও বাড়তি ওজন কমিয়ে আপনি অন্যান্য লাইফস্টাইল ডিজিজের মতো প্রতিরোধ করতে পারেন ডায়াবেটিসও।