হৃদবান্ধব ১০ খাবার

published : ২৯ আগস্ট ২০১৫

বাদাম

বাদামে ফ্যাট আছে, এ ভয়ে অনেকেই বাদাম খেতে চান না; কিন্তু বাদামের ফ্যাট হলো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা হার্টের জন্যে উপকারী। পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে পাঁচ বারের বেশি বাদাম খান যারা, করোনারি হৃদরোগে তাদের মৃত্যুর সম্ভাবনা ২৫ থেকে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
নিয়মিত বাদাম খেলে আপনার শরীরে উপকারী কোলেস্টেরল HDL-এর মাত্রা বাড়ে। সেইসাথে বাদাম একটি লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সমৃদ্ধ খাবার বলে এটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। সব ধরনের বাদামই ভালো, তবে চীনাবাদাম সহজলভ্য বলে আপনি এটি প্রতিদিন খেতে পারেন। প্রতিদিন মুঠোভর্তি (৫০ গ্রাম) বাদাম খান। লবণযুক্ত প্রক্রিয়াজাত বাদাম না খেলেই ভালো।

কমলা

কমলায় আছে পেকটিন নামে একপ্রকার আঁশ যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। আর আছে পটাসিয়াম যা ব্লাড প্রেশার কমাতে সাহায্য করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, হেসপিরিডিন নামের এন্টি-অক্সিডেন্টের উপস্থিতি থাকায় কমলার রস খেয়ে ব্লাড পেশার কমে গেছে।

সামুদ্রিক মাছ

সামুদ্রিক মাছে আছে হার্টের জন্যে উপকারী ওমেগা-৩। রূপঁচাদা, কোরাল, রূপসা, লাক্ষা ইত্যাদি যে সব সামুদ্রিক মাছ বাংলাদেশে পাওয়া যায় সেগুলো খাওয়া যেতে পারে। বিদেশি সামুদ্রিক মাছের মধ্যে টুনা, স্যামন, সারডিন, ম্যাকারেল, হেরিং ইত্যাদি যদি সংগ্রহ করতে পারেন তাহলে খেতে পারেন।

শিম

শিমে আছে সয়া প্রোটিন, যা রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড মাত্রাকে কমায়। আধকাপ শিমে আছে নয় গ্রাম কোলেস্টেরল কমাবার উপযোগী আঁশ। পরিমাণে যা চার পিস পাউরুটির সমান।

গাজর

গবেষণায় দেখা গেছে, ব্লাড সুগার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গাজরের ভূমিকা রয়েছে। গাজর কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে। আর ওট-এ যে ধরনের দ্রবণীয় আঁশ পাওয়া যায়, গাজরেও তা প্রচুর পরিমাণে আছে, যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

রসুন

রক্তে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে রসুন উপকারী। প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সভ্যতা ও চীনে এটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা রসুনকে অভিহিত করেছেন প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হিসেবে।
এছাড়াও রসুন উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে গ্লুকোজের মান নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। সেইসাথে এটি ঠান্ডাজনিত যে-কোনো সমস্যা এবং ফ্লু প্রতিরোধ করে। হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা ও সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্যে প্রতিদিন রসুনের একটি কোষ খান।

টক দই (ইয়োগার্ট)

চিনি ছাড়া দই অর্থাৎ টক দই হৃৎপিণ্ডের পাশাপাশি পুরো শরীরের জন্যেই অত্যন্ত উপকারী। করোনারি হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন যারা, তাদের জন্যে টক দই বিশেষভাবে উপকারী। টক দই আপনার পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতা ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সেইসাথে এটি ত্বকের জন্যেও উপকারী। তাই প্রতিদিন এক কাপ টক দই খান।

মিষ্টি আলু

আলু বেশি খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে, সাধারণভাবে এমনটাই মনে করা হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, মিষ্টি আলু এর ব্যতিক্রম। কারণ মিষ্টি আলু লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খাবার। অর্থাৎ এটা খেলে হজমপ্রক্রিয়াটা এমনভাবে ঘটে যে, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ে ধীরগতিতে, হঠাৎ করে অনেকটা নয়। ফলে অতিরিক্ত ইনসুলিন নিঃসরণ করতে গিয়ে প্যানক্রিয়াসকেও পড়তে হয় না চাপের মুখে, যা আখেরে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিকেই কমায়। আর মিষ্টি আলুতে আছে দ্রবণীয় আঁশ, ভিটামিন এ এবং লাইসোপেন, যা হার্টের জন্যে উপকারী।

সয়াদুধ/ সয়াপ্রোটিন ড্রিংকস

সয়াদুধ বা সয়াপ্রোটিন প্রথম শ্রেণির উদ্ভিদজাত প্রোটিন। এটি গরুর দুধের বিকল্প এবং শতভাগ কোলেস্টেরল মুক্ত। হৃদরোগীরা গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে সয়াদুধ/সয়াপ্রোটিন ড্রিংকস প্রতিদিন ২৫০ মিলি খেতে পারেন। বাজার থেকে সয়াবিন কিনে নিয়ে আপনি নিজেই বাড়িতে বসে সয়াদুধ তৈরি করে নিতে পারেন। সয়াদুধ তৈরির প্রক্রিয়া

স্পিরুলিনা

স্পিরুলিনা হলো অতিক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক নীলাভ সবুজ সামুদ্রিক শৈবাল, যা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ খাদ্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। জাতিসংঘ স্পিরুলিনাকে একবিংশ শতাব্দীর খাদ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।
স্পিরুলিনাতে দুধের চেয়ে ২০ গুণ, ডিমের চেয়ে ছয় গুণ এবং মাছ ও মাংসের চেয়ে তিন গুণ প্রোটিন রয়েছে, যা সম্পূর্ণ কোলেস্টেরলমুক্ত। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন, ফলিক এসিড ও এন্টি-অক্সিডেন্ট। খাওয়ার সুবিধার্থে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, পাউডার বিভিন্ন ধরনে এটি পাওয়া যায়।