published : ২৬ জুন ২০২৫
ব্রেন বা মস্তিষ্ক হচ্ছে আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আমাদের শরীরে যত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আছে- হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, পরিপাকতন্ত্র, ব্লাডার- সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে এই মস্তিষ্ক। তাই বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ করবে যদি আপনার ব্রেন ঠিকঠাক কাজ করে। আর তাই ব্রেনকে একটিভ রাখতে হবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।
আখরোট একজাতীয় বাদাম, দেখতে ব্রেনের মতো। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা খাবার নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে একশ খাবারকে শ্রেষ্ঠ খাবার হিসেবে শনাক্ত করেন। এর মধ্যে বাদামকে তারা বলেন এক নম্বর শ্রেষ্ঠ খাবার। আর বাদামের ভেতর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আখরোট। একে আপনি বলতে পারেন ব্রেনবান্ধব খাবার।
আখরোটের ৬৫% ফ্যাট, ১৫% প্রোটিন এবং বাকিটা কার্বোহাইড্রেট ও আঁশ। আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট, যা ব্রেন এবং হার্ট দুইয়ের জন্যেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আখরোট মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমায়।
এছাড়া বিষণ্ণতা প্রতিরোধ করে এবং বয়সজনিত কারণে মস্তিষ্কের বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকায়। তাই প্রতিদিন অন্যান্য বাদাম ও বীজের সাথে খান ১/২টি ভেজানো আখরোট।
ব্রেনের বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার হচ্ছে ডালিম। আনার বা বেদানা নামেও ডাকে কেউ কেউ।
বয়স, বংশগতি ইত্যাদি নানা কারণে মস্তিষ্কে Amyloid Beta Aggregates জমে। এটি একধরণের অস্বাভাবিক প্রোটিন, যা মস্তিকের সেলগুলোর চারপাশে দেয়াল তৈরি করে আলঝেইমারের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েড জমা প্রতিহত করে ডালিম।
এছাড়া, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং স্মরণশক্তি কমে যাওয়া প্রতিরোধ করে এই ফল। এটি আলজেইমার প্রতিরোধ, এমনকি নিরাময়ও করতে সক্ষম- বলছেন বিজ্ঞানীরা।
পরিপূর্ণ উপকার পেতে ডালিম বিচিসহ চিবিয়ে খান। জুস করে খেলেও বিচি ছেঁকে ফেলে দেবেন না। কারণ ডালিমের বিচিতে রয়েছে ভিটামিন-কে, ভিটামিন-সি, ফলিক এসিড, পটাশিয়াম এবং হৃদবান্ধব আঁশ বা ফাইবার।
বিট বা বিটরুটের সবচেয়ে উপকারী উপাদান হচ্ছে নাইট্রেটস (Nitrates)। বিট খেলে এই নাইট্রেটস শরীরে প্রবেশ করে কিছুক্ষণের মধ্যেই নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। বিজ্ঞানীরা নাইট্রিক অক্সাইডকে বলছেন ‘মিরাকেল মলিকিউল’। এটি ধমনীকে প্রসারিত করে। ফলে অন্যান্য অঙ্গের মতো ব্রেনেও রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। ব্রেন তখন চমৎকারভাবে কাজ করতে শুরু করে।
সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে Mental & Cognitive Function কমতে থাকে। ফলশ্রুতিতে কমতে থাকে শেখা, ভাবা, কারণ বোঝা, মনে রাখা, সমাধান করা, সিদ্ধান্ত নেয়া ও মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা। যা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় আলঝেইমার এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি।
বিট খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে এবং কর্মকালীন স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। এতে কমে আলঝেইমার এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি।
সালাদ, জু্স, রোস্ট, স্যুপ নানাভাবেই খেতে পারেন বিট। তবে কাঁচা খেতে পারলেই ভালো। প্রতিদিন একগ্লাস বিট জুস খেলে আপনি পারবেন বুড়িয়ে যাওয়া থেকে মস্তিষ্ককে রক্ষা করতে।
ব্লুবেরিতে আছে প্রচুর এন্টি-অক্সিডেন্ট, বিশেষ করে অ্যানথোসায়ানিনস, কোয়ারসেটিন এবং মাইরিসেটিন। অ্যানথোসায়ানিনস হলো এক ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েডস।
ব্লুবেরি শরীরে Oxidative stress প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। Oxidative stress কমে এলে মস্তিষ্ককের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ হয়।
ব্লুবেরি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। একটি গবেষণায় দেখা দেছে যে, নিয়মিত ১২ সপ্তাহ ব্লুবেরি জুস খাওয়ার ফলে অল্প বয়সে স্মৃতিশক্তি কমে যাচ্ছিল এমন ৯ জনের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরেকটি গবেষণায় দেখা দেছে, ৬ বছর ধরে প্রতিদিন ব্লুবেরি ও স্ট্রবেরি খাওয়ানো হয়েছে এমন কিছু মানুষের Brain aging আড়াই বছর কমে গেছে।
২০১২ সালে ‘অ্যানালস অফ নিউরোলজি’ জার্নালে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয় নিয়মিত স্ট্রবেরি খেলে বয়স্কদের কগনিটিভ ফাংশন অক্ষত থাকে।
স্ট্রবেরিতে আছে পর্যাপ্ত এন্টি-অক্সিডেন্ট বিশেষ করে Pelargonidin, Ellagic acid, Ellagitannins, Procyanidins। এর উচ্চমাত্রার ফ্ল্যাভোনয়েডস ব্রেনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে হৃৎপিণ্ডের সুস্থতাও নিশ্চিত করে।
ব্রোকলি একটি সুপার ফুড। এতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এন্টি-অক্সিডেন্ট সালফোরাফেন, ল্যুটিন এবং জিয়াক্স্যানথিন। সালফোরাফেন বার্ধক্যগতিকে শ্লথ করার মাধ্যমে একজন মানুষকে দীর্ঘজীবী করে।
ব্রোকলির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে Glucosinolates। এটি শরীরে প্রবেশের পর Isothiocyanates এ রূপান্তরিত হয়। Isothiocyanates একটা বয়সের পর স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, ভুলে যাওয়া ইত্যাদি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ব্রোকলি খেতে পারেন খুব হালকা তাপে অথবা স্টিম বা ভাপ দিয়ে রান্না করে বা ভর্তা করে। অধিক তাপে রান্না করবেন না, তাহলে এর সব গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করবে।
সামুদ্রিক মাছে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। যা ব্রেনের জন্য অত্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বাড়ায়। ফলে বাড়ে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা। স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়, শেখার ক্ষমতা বাড়ে, প্রতিহত হয় ব্রেনের বুড়িয়ে যাওয়া।
সামুদ্রিক মাছে রয়েছে ভিটামিন বি-১২। এটি বয়স্কদের বিষণ্ণতা এবং ভারসাম্যহীনতা ও স্মরণশক্তি কমে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
Blue Zones এর অধিবাসীরা গড়ে ১০০ বছর বাঁচে এবং জীবনের শেষদিনও তারা একটিভ থাকে, স্মৃতিশক্তি থাকে অটুট। তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকে সামুদ্রিক মাছ।
তাই সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন। একেক দিন একেক রকম মাছ খান। তবে উচ্চতাপে রান্না না করে হালকা আঁচে অল্প তেল বা তেল ছাড়া রান্না করবেন। ঝলসিয়েও খেতে পারেন। তাহলে মাছের গুণাগুণ অনেকটাই রক্ষা পাবে।
নিয়মিত এই খাবারগুলো খাওয়ার পাশাপাশি মাঝে মাঝেই ফাস্টিং করুন। প্রতিদিন ১ ঘণ্টা ব্যায়াম করুন- ৩০/৪০ মিনিট জোরে জোরে হাঁটুন, ৫/১০ মিনিট জগিং এবং ২০/২৫ মিনিট ইয়োগা করুন।
সেই সাথে দু'বেলা মেডিটেশন। নিয়মিত মেডিটেশন করলে ব্রেনের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সের পুরুত্ব ও পরিমাণ বেড়ে যাবে। ফলে আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে, আপনি প্রতিরোধ করতে পারবেন স্মরণশক্তি হ্রাস এবং স্মৃতিভ্রংশতা।