নিয়মিত হাঁটার এই ১০ উপকারের কথা আপনি হয়ত জানেন না!

published : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিয়মিত হাঁটার আছে অনেক উপকারযা জানলে আপনি আজ থেকেই হাঁটার অভ্যাস করবেন।  

. স্ট্রেস কমায়

ক্রমাগত স্ট্রেসে ভুগতে থাকলে তা একসময় হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও মানসিক রোগের ঝুঁকি তৈরি করে। তাই জীবন থেকে স্ট্রেস আপনি পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলতে না পারলেও স্ট্রেস মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আপনাকে নিতেই হবে

স্ট্রেস মোকাবেলায় খুব সহজ একটি উপায় হলো নিয়মিত হাঁটা

হাঁটলে শরীরে এন্ডোরফিনের উৎপাদন বাড়ে। এন্ডোরফিনকে বলা হয় feel-good হরমোন। কারণ এই হরমোন নিঃসৃত হলে ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এতে মুড হয় চাঙাদূর হয় ব্যথাবেদনার অনুভূতি।

আপনি যখন স্ট্রেসে ভোগেন তখন শরীরে কর্টিসল নামে এক ধরণের হরমোন নিঃসৃত হয়, যা শরীরের জন্যে ক্ষতিকর। নিয়মিত হাঁটা কর্টিসলের মাত্রা কমায়, এতে কমে স্ট্রেস।    

. বাড়তি ওজন কমে

বাড়তি ওজন নিয়ে চিন্তিতনিয়মিত হাঁটুনহাঁটলে ক্যালরি বার্ন হয় তবে কতটা বার্ন হবে তা নির্ভর করছে আপনার ওজনহাঁটার গতি ও কতক্ষণ হাঁটছেন তার ওপর

সহজ একটি হিসাব হলো১৫০ পাউন্ড ওজনের কেউ যদি ঘণ্টায় ৪ মাইল বেগে ৩০ মিনিট হাঁটে তাহলে ক্যালরি বার্ন হবে ১৫০ ইউনিট 

বিপাক ক্রিয়াকে তৎপর করে হাঁটাবাড়ায় মেটাবলিক রেট। ফলে হাঁটা শেষেও বাড়তি ক্যালরি পুড়তে থাকে দিনভর। 

হাঁটলে শরীরে জমা চর্বি খরচ হতে থাকে। হাঁটলে যে ওজন কমে এটা তার একটা কারণ

গ্রেলিন (ghrelin) এবং লেপটিন হরমোন দুটোকে বলা হয় hunger hormone, কারণ এরা ক্ষুধার অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে হাঁটা এই হরমোনগুলো নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা ও ক্ষুধাবোধ কমায়প্রকারান্তরে কমায় বাড়তি ওজন।

. মনোযোগ বাড়ে

হাঁটলে মস্তিষ্কে এন্ডোরফিনডোপামিন এবং সেরোটনিনের উৎপাদন বাড়ে। এই হরমোনগুলো মুডকে ভালো রাখে এবং মনোযোগকে উন্নত করে। 

অনেককে দেখবেন পরীক্ষার আগে বই হাতে পায়চারী করতে করতে পড়ছেমনোযোগ বাড়াতেই এটা করা।  

স্ট্রেস ও অতিরিক্ত চিন্তায় মন আচ্ছন্ন থাকলে মনোযোগও ব্যহত হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটলে মনের এই জঞ্জালগুলো সাফ হয়ে যায়। আর মন ফ্রেশ থাকলে মনোযোগ তো বাড়বেই!

. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ে

হাঁটলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো মস্তিষ্কেও রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এতে মস্তিষ্কের কোষগুলো পায় বাড়তি অক্সিজেন এবং পুষ্টিফলে বাড়ে ব্রেনের কার্যকারিতা। 

মস্তিষ্কে হিপোক্যাম্পাস নামে একটি অংশ আছেযা স্মৃতি এবং শিক্ষণ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত। মস্তিষ্কে বাড়তি রক্তপ্রবাহ হিপোক্যাম্পাসের জন্যে উপকারী।

নিউরোজেনেসিস নামে একটি প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কে নতুন নিউরন জন্মেহাঁটা এই প্রক্রিয়াকেই সচল করে। এতে বাড়ে স্মৃতি ও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা

এছাড়াওহাঁটলে কর্টিসল নিঃসরণ কমে এবং এন্ডোরফিন নিঃসরণ বাড়ে বলে স্মৃতিশক্তি হয় সমুন্নত।        

বার্ধক্যে অনেকেই আক্রান্ত হন আলঝেইমার্স ও ডিমেনশিয়ার মতো স্মৃতিক্ষয়ী রোগে, এই রোগগুলোর ঝুঁকি কমায় নিয়মিত হাঁটা। 

. আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধ করে

একটু বয়স হলে আর্থ্রাইটিসের যন্ত্রণায় ভোগেন অনেকেনিয়মিত হাঁটা আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি কমায়। 

হাঁটলে জয়েন্টবিশেষত হাঁটুহিপ এবং গোড়ালিকে ঘিরে থাকা মাংসপেশি মজবুত হয়। এতে জয়েন্টে চাপ কম পড়েক্ষয় কম হয়। এছাড়াও নিয়মিত হাঁটলে এক ধরণের ফ্লুইড প্রবাহিত হয়ে জয়েন্টগুলোকে পিচ্ছিল রাখেফলে জয়েন্ট থাকে নমনীয় এবং কর্মক্ষম

কার্টিলেজ নামে একধরণের টিস্যু আমাদের জয়েন্টকে সুরক্ষা দেয়। কার্টিলেজ ভালো রাখতে নিয়মিত চলাচল প্রয়োজনযা মেটে নিয়মিত হাঁটার মাধ্যমে

জয়েন্টে ব্যথা এবং আর্থ্রাইটিসের অন্যতম কারণ হলো প্রদাহ। শরীরে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহের কারক পদার্থগুলোর মাত্রা কমায় হাঁটা। 

নিয়মিত হাঁটা হাড়ের ঘনত্ব বাড়িয়ে হাড়কে মজবুত করে। হাড় মজবুত থাকলে জয়েন্টের ক্ষতির আশঙ্কা কমেএতে প্রতিহত হয় আর্থ্রাইটিস। 

৬. হৃদরোগ প্রতিরোধ করে

নিয়মিত হাঁটলে হৃৎপিণ্ড শক্তিশালী হয়রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা কমায়। সেই সাথে কমে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলও। ফলে ভালো থাকে আপনার হৃৎপিণ্ড এবং কমে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি। 

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছেপ্রতিদিন ১১ মিনিট দ্রুতলয়ে হাঁটলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে ১৭ শতাংশঅন্যদিকেEuropean Journal of Preventive Cardiology-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয় দিনে ২,৩৩৭ কদম হাঁটলেই কমবে হৃদরোগে মৃত্যুঝুঁকি। 

বিশ্বব্যাপী ২ লক্ষ ২৬ হাজার ৮৮৯ জন ব্যক্তির ওপর পরিচালিত ১৭টি গবেষণার সারসংক্ষেপ হলোযত বেশি হাঁটা যাবে তত মিলবে স্বাস্থ্য উপকারিতা। বাড়তি ৫০০ কদম হাঁটলে হৃদরোগে মৃত্যুঝুঁকি কমবে ৭ শতাংশ!

৭. ঘুম ভালো হয়

ভালো ঘুমের জন্যে প্রয়োজন শরীরে পর্যাপ্ত মেলাটোনিন উৎপাদন। হাঁটা এই মেলাটোনিন উৎপাদনকেই প্রভাবিত করে

দুশ্চিন্তা স্ট্রেস অ্যাংজাইটি ডিপ্রেশনে ভোগাদের একটি কমন সমস্যা হলো ঘুমে ব্যাঘাত। হাঁটা স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের উৎপাদনকে প্রভাবিত করেবাড়ায় happy hormone ডোপামিন ও সেরোটনিনের উৎপাদন। এই দুইয়ের প্রভাবে যখন আপনি স্ট্রেস টেনশন অ্যাংজাইটি থেকে মুক্ত হবেন তখন স্বাভাবিকভাবেই উন্নত হবে আপনার ঘুম। 

তাই দিনের আলোয় হাঁটুনআপনার দেহঘড়ি ছন্দে ফিরবে, ঘুম হবে ভালো।  

৮. বিষণ্ণতা মোকাবেলা করে

নিয়মিত হাঁটা কর্টিসলের নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি বাড়ায় এন্ডোরফিনের নিঃসরণ। এন্ডোরফিন স্ট্রেসদুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতা কমায়

এছাড়া, হাঁটলে নিঃসৃত হয় ডোপামিন হরমোন, যার আরেক নাম feel-good হরমোন। কারণ এই হরমোন নিঃসৃত হলে মনে একটা সুখ সুখ অনুভূতি সৃষ্টি হয়

এভাবে নিয়মিত হাঁটা উদ্বেগ বিষণ্ণতা প্রতিরোধ ও নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেযে-কারণে সাইকিয়াট্রিস্টরা বিষণ্ণতায় আক্রান্তদের প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার পরামর্শ দেন

তবে হাঁটা ডিপ্রেশন নিরাময়ে সহায়ক শক্তিমাত্র। আপনি যদি সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শে কোনো ওষুধ সেবন করেন তাহলে তা ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত বন্ধ করবেন না।  

৯. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার হয়

শ্বেত রক্তকণিকার প্রবাহ বৃদ্ধিস্ট্রেস ও প্রদাহ হ্রাস এবং ইমিউন সেল বৃদ্ধির মাধ্যমে হাঁটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে জোরদার করে।

পর্যাপ্ত হাঁটার অভ্যাস থাকলে আপনি শীত ও ফ্লু সিজনে পাবেন বিশেষ সুরক্ষা।

১০০০ জনের ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখে গেছেযারা রোজ অন্তত ২০ মিনিট করে সপ্তাহে ৫ দিন হেঁটেছে, তারা সর্দি কাশি ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন যারা হাঁটেন নি তাদের চেয়ে ৪৩ শতাংশ কম। অসুস্থ হলেও তাদের রোগের লক্ষণ ছিল তুলনামূলক মৃদু এবং তারা অসুস্থ ছিলেনও অন্যদের চেয়ে কম সময় 

১০. দীর্ঘজীবন লাভ 

হৃদরোগডায়াবেটিসস্ট্রোকমেদস্থূলতাক্যান্সারএই প্রাণঘাতি রোগগুলোকে বলা হয় ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’মানে ভুল লাইফস্টাইল বা জীবনযাপনের কারণে হয় এই রোগগুলো। 

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি ১০ মৃত্যুর ৭টির কারণ এই অসংক্রামক রোগগুলোনিয়মিত হাঁটলে এই রোগগুলোর ঝুঁকি কমে ফলে হ্রাস পায় অকাল মৃত্যুর ঝুঁকিপ্রকারান্তরে বাড়ে আয়ু। সপ্তাহে ৭৫ মিনিট তথা দিনে মাত্র ১১ মিনিট দ্রুতলয়ে হাঁটলেই প্রতিহত হবে প্রতি ১০ অকালমৃত্যুর ১টি- বলছে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা।  

দৃষ্টান্ত চাইলে তাকান ব্লু জোনসের অধিবাসীদের দিকে। পৃথিবীতে ৫টি অঞ্চল আছেযেখানকার মানুষের গড় আয়ু ১০০বছরঅঞ্চলগুলোকে একত্রে বলা হয় ‘ব্লু জোনস’। এই অঞ্চলের তাদের দীর্ঘায়ুর পেছনে যতগুলো কারণ বলা হয় তার মাঝে অন্যতম হলো নিয়মিত হাঁটা

হাঁটার কিছু অবিশ্বাস্য উপকারিতা, যা জানলে আপনি অবাক হবেন! (Video)

দিনে ২৩৩৭ পা হাঁটলেই পাবেন অবিশ্বাস্য ৫ উপকার- ২ লক্ষ মানুষের ওপর করা গবেষণার ফলাফল (Video)