নিয়মিত প্রাণায়াম করুন, আপনি সুস্থ থাকবেন

স্ট্রেস-এ ভুগছেন দিনের পর দিন? নানামুখী চাপে প্রতিদিন ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে যাচ্ছেন একটু একটু করে? নাকি বিষণ্নতার কালো ছোবলে আক্রান্ত? কিংবা রোগে শোকে সংকটে বেদনায় হয়ে পড়েছেন উদ্যমহীন? ভয় নেই। এ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন আপনি নিজেই। চাই শুধু আপনার ইচ্ছা ও সচেতন প্রচেষ্টা।

জ্ঞানীরা বলেন, দম হচ্ছে জীবনের মূল ছন্দ। এই দম বা শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রতি মনোযোগী হোন। জীবনের ছন্দ সত্যিই ফিরে আসবে।

সুস্থির হয়ে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে ধীর লয়ে দম নেয়া আর ছাড়ার অভ্যাস করুন (কোয়ান্টাম পরিভাষায় ‘নাসায়ন’)। পাশ্চাত্যে এর পোশাকি নাম ‘ব্রিদিং এক্সারসাইজ’ হলেও, এটি মূলত প্রাচ্যের হাজার বছর আগের সাধকদের উদ্ভাবিত ‘প্রাণায়াম’ ।

বিশ্বজুড়ে আধুনিক ধারার চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, স্ট্রেসমুক্ত হওয়ার সহজ ও কার্যকর পন্থাটি রয়েছে ঠিক আপনার নাকের গোড়ায়! সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ধীর লয়ে নেয়া গভীর দম আপনাকে মনোদৈহিকভাবে সুস্থ রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা চিকিৎসাবিদ ও অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিন-এর প্রতিষ্ঠাতা ডা. এন্ড্রু ওয়েল বলেন, ‘অনেক গবেষক কল্পনাই করতে পারছেন না যে, এই সাধারণ অভ্যাসটি মানুষের শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমকে এতটা প্রভাবিত করতে পারে!’

স্বাস্থ্য-গবেষকরা বলছেন, মনোযোগায়ন ও যোগ সাধনার মূল বিষয়টি হলো দমচর্চা। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, হৃৎস্পন্দন থাকে স্বাভাবিক। আর্টারিকে করে তোলে অধিকতর নমনীয় এবং সেইসাথে প্যারাসিম্পেথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে রাখে সক্রিয়। স্ট্রেসের প্রতিক্রিয়ায় দেহাভ্যন্তরে যে ক্ষতিকর উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তাকে প্রশমিত করে প্যারাসিম্পেথেটিক নার্ভাস সিস্টেম।

গবেষণালব্ধ এসব তথ্য-উপাত্তের আলোকে ডা. ওয়েল এবং তার সহযোগীরা মনে করছেন যে, বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে এই প্রাণায়াম। ওয়েল বলেন, আমাদের ইনভলান্টারি নার্ভাস সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণের এটাই হলো একমাত্র উপায়।

ক্রনিক হার্ট ফেইল্যুর-এর রোগীদের ক্ষেত্রে দম চর্চার প্রভাব নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছেন ইতালির প্যাভিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. লুসিয়ানো বার্নার্ডি। তাতে দেখা গেছে, দমচর্চার ফলে এসব রোগীর দৈহিক সক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, মস্তিষ্কের যে অংশটি বিষণ্নতা রোধে ভূমিকা রাখে সেটিকে সক্রিয় করে তোলে প্রাণায়াম।

এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে দৈনিক ১০ মিনিট প্রাণায়াম চর্চা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রক্তচাপ কমায়। অনিদ্রায় আক্রান্ত রোগীদের বেলায় ঘুমোতে যাওয়ার আগে ২০ মিনিট প্রাণায়াম সুনিদ্রা আনে। দিনে কয়েকবার প্রাণায়াম অনুশীলন করেন যারা তাদের শরীরে অক্সিজেন গ্রহণ ক্ষমতা ৩৭% পর্যন্ত বেড়ে যায়। সজীবতা বাড়ে স্বাভাবিকভাবেই।

২০১৫ সালে পরিচালিত একটি গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে দুবার করে যারা টানা আট সপ্তাহ যোগ ব্যায়াম এবং প্রাণায়াম করেছেন তাদের উদ্বেগজনিত অসুস্থতার হার কমে গেছে অনেকটাই।

এসব গবেষণা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ-যুগের স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে-নিয়মিত ধীর লয়ে দমচর্চা (নাসায়ন) করুন। শারীরিক মানসিক সব দিক থেকেই আপনি ভালো থাকবেন।

টাইম ম্যাগাজিনের স্বাস্থ্য প্রতিবেদন (১৬ নভেম্বর, ২০১৫)

প্রাণায়ামের নিয়ম জানতে দেখুন নাহার আল বোখারী প্রণীত রোগ নিরাময়ে কোয়ান্টাম ব্যায়াম ও সৌন্দর্যচর্চা বইটি (পৃষ্ঠা : ৮০)।