published : ১২ মার্চ ২০১৮
সুস্বাস্থ্য একজন মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আর এ সুস্বাস্থ্যের অন্যতম প্রধান ভিত্তি দম। আমরা বলতে পারি, দম হচ্ছে জীবনের মূল ছন্দ। খাবার ছাড়া আপনি বেশ কিছুদিন বাঁচতে পারবেন, পানি ছাড়াও দিন কয়েক বাঁচা সম্ভব। কিন্তু দম ছাড়া অর্থাৎ অক্সিজেন ছাড়া আপনি বড়জোর পাঁচ মিনিট বাঁচতে পারেন, এর বেশি নয়।
দমের মূল অনুষঙ্গ অক্সিজেন। এই অক্সিজেন আমাদের দেহের জৈব-তড়িৎ ভারসাম্য (Bio-Electrical Balance) নিয়ন্ত্রণ করে, আর খাবারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় দেহের জৈব-রাসায়নিক ভারসাম্য (Bio-Chemical Balance) অর্থাৎ শরীরের সার্বিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্যে খাবারের পাশাপশি দমও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণত আমরা দুভাবে দম নিয়ে থাকি :
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শ্বসনতন্ত্রের অনেক অসুখের কারণ হলো সঠিকভাবে দম নিতে না পারা। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমরা অধিকাংশ মানুষই এ ব্যাপারে উদাসীন। সঠিকভাবে দম নেয়া তখনই হবে-যখন আপনি নাক দিয়ে দম নেবেন, আপনার বুক ফুলবে এবং ফুসফুস প্রসারিত হবে পূর্ণমাত্রায়। এভাবে দম নিলে সারাদিন আপনি থাকবেন কর্মোদ্যমী ও প্রাণবন্ত। তাই যখনই পারেন, সচেতনভাবে বুক ফুলিয়ে দম নিন।
দমের মধ্য দিয়ে শরীরে শুধু অক্সিজেনই প্রবেশ করে না, এক ধরনের প্রাণশক্তিও প্রবেশ করে। সাধকরা এটিকে বলতেন ‘প্রাণা’। তাই দম চর্চার এই পদ্ধতিকে প্রাচীন যোগব্যায়ামের ভাষায় সাধকরা অভিহিত করেছেন ‘প্রাণায়াম’ নামে। প্রাণশক্তি বৃদ্ধি পায় ও দেহকে জরা-ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখে বলেই এর নাম প্রাণায়াম।
প্রাণায়াম আপনার দেহ ও মনের মধ্যে ব্রিজ বা সেঁতু হিসেবে কাজ করে। স্ট্রেসের কারণে যখন সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম উদ্দীপ্ত হয়, দেহ-মনে চলতে থাকে ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স, তৈরি হয় অস্থিরতা অশান্তি এবং করোনারি ধমনীতে অযাচিত সংকোচন ইত্যাদি। আর এ অবস্থায় নিয়মিত প্রাণায়াম বা দম চর্চা আপনার দেহ-মনকে টেনশনমুক্ত করে। ভেতরে সৃষ্টি হয় এক অনাবিল প্রশান্তি। সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমের উদ্দীপনা কমে আসে। ফলে করোনারি ধমনীতে যে ক্ষতিকর সংকোচন সৃষ্টি হয়েছিলো সেটি দূর হয়।
যোগ সাধনায় বহু ধরনের প্রাণায়াম রয়েছে। এর মধ্যে হৃৎপিণ্ডের সুস্থতার জন্যে উপকারী দুটি প্রাণায়াম হচ্ছে সহজ উজ্জীবন ও নাসায়ন। দিনের যেকোনো সময় যেকোনো পরিবেশে আপনি খুব সহজেই এ দুটি প্রাণায়াম অনুশীলন করতে পারেন। মুহূর্তেই হয়ে উঠতে পারেন টেনশনমুক্ত ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর।
সহজ উজ্জীবন
পদ্ধতি : মেরুদণ্ড পুরোপুরি সোজা রেখে দাঁড়ান অথবা বসুন। দুই হাত কোমরের দুই পাশে রাখুন। তাতে ফুসফুস পূর্ণমাত্রায় প্রসারিত হওয়ার সুযোগ পাবে। এবার সময় নিয়ে ধীরে ধীরে বুক ফুলিয়ে দম নিন। দম নেবেন নাক দিয়ে, মুখ বন্ধ থাকবে। দম নেয়ার সাথে সাথে বুক ফুলবে, ওপরের পেট নয়। ফুসফুস সর্বোচ্চ প্রসারিত হওয়ার পর কয়েক সেকেন্ড দম ধরে রাখুন, ফুস্ করে ছেড়ে দেবেন না।
এবার ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে দম ছাড়ুন। দম নেয়ার চেয়ে দম ছাড়তে একটু বেশি সময় নিন। একবার দম নেয়া হলো। এভাবে ১৯ বার দম নিলে এক দফা সহজ উজ্জীবন হবে। সারাদিনে পাঁচ/ ছয় দফা চর্চা করুন।
নাসায়ন বা একনাসা প্রাণায়াম
পদ্ধতি : মেরুদণ্ড সোজা রেখে প্রথমে এক পা ওপরে তুলে আর এক পা ভাঁজ করে নিচে রেখে (ছবির মতো করে) বসুন। এবার ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে নাকের ডানপাশের ছিদ্র চেপে ধরুন (ছবির মতো করে)। এমনভাবে ধরুন যেন বাতাস বেরিয়ে যেতে না পারে। এবার বামপাশের ছিদ্র দিয়ে দম নিয়ে অনামিকা দিয়ে বামপাশের ছিদ্রটিও বন্ধ করে দিন। তারপর বাম ছিদ্র বন্ধ রেখেই ডান ছিদ্র থেকে বুড়ো আঙুল তুলে ডান ছিদ্র দিয়ে দম ছাড়ুন। বাম ছিদ্র বন্ধ রাখা অবস্থায়ই নাকের ডান ছিদ্র দিয়ে পুনরায় দম নিন। দম নেয়া হলে বুড়ো আঙুল দিয়ে ডান ছিদ্র বন্ধ করে পুনরায় বাম ছিদ্র দিয়ে দম ছাড়ুন। এভাবে একবার ডান নাক বন্ধ রেখে বাম নাক দিয়ে ছাড়া আবার বাম নাক বন্ধ রেখে ডান নাক দিয়ে ছাড়া-এই মিলে এক প্রস্থ হবে। এভাবে আপনি ছয় থেকে ১০ প্রস্থ করতে পারেন। নাসায়ন আপনি পদ্মাসনে বসেও করতে পারেন।