রোজার ১১ উপকার

বর্তমানে সারা পৃথিবী জুড়ে স্বাস্থ্যগত নানা উপকারিতার কারণে ডায়েট কন্ট্রোল অর্থাৎ দিনের পর দিন খাবার নিয়ন্ত্রণ, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং অর্থাৎ একদিন পর পর উপবাস বা ৮ ঘন্টা খাওয়া-দাওয়ার পর ১৬ ঘন্টা উপবাস, 5:2 fast diet নামে সপ্তাহের ৫ দিন খাবার গ্রহণ করে ২ দিন উপবাসসহ নানা চর্চা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। অথচ প্রাচীনকাল থেকেই আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্যে রোজা বা উপবাস করে প্রার্থনার চর্চা সবসময়ই প্রচলিত আছে।

এখানে আমরা উপবাস বা রোজার স্বাস্থ্যগত, মনগত, আবেগ সংক্রান্ত এবং আত্মিক উপকারিতার উপর তৈরি করেছি একটি তালিকা-

১. রোজা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় :

বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন, রোজা বা উপবাস ইনসুলিনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়কে পুনরায় কর্মক্ষম করে তুলতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কমে যায়।

২. রোজা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় :

রোজা বা উপবাস ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কিছু কিছু সেলের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে। খ্যাতনামা টিভি জার্নালিস্ট মাইকেল মজলি, যিনি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক ডকুমেন্টারির একজন জনপ্রিয় উপস্থাপকও, তিনি নিজের উপর পরীক্ষা করে দেখেছেন, উপবাসের ফলে প্রোস্টেট ক্যান্সারসহ অন্যান্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার যে ঝুঁকি তার ছিল, তা অর্ধেকে নেমে গেছে।

৩. রোজা এলার্জি ও চর্মরোগ নিরাময় করে :

চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মত দিয়েছেন যে, উপবাস বা রোজা জীবাণু বা আঘাতজনিত অসুস্থতার প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে দেয়। ফলে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এলার্জি, সোরিয়াসিস নামক চর্মরোগ ইত্যাদির নিরাময় ঘটে।

৪. ত্বকের দাগছোপ ও ব্রণ নির্মূল হয় :

রোজার ফলে শরীর থেকে বেশি পরিমানে ক্ষতিকর টক্সিন বেরিয়ে যাওয়ায় ত্বক পরিষ্কার হয়। লিভার, কিডনির কাজ আরো ভালো হওয়ায় ত্বকের দাগছোপ ও ব্রণ নির্মূল হয়।

৫. হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে :

১৯৯৭ সালে অ্যানালস অব নিউট্রিশন মেটাবলিজমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, রোজা রাখলে দেহে খারাপ কোলেস্টেরল বা LDL কমে প্রায় ৮%, ট্রাইগ্লিসারাইড কমে ৩০% এবং ভালো কোলেস্টেরল বা HDL বাড়ে ১৪.৩%। ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্টোকের ঝুঁকি কমে।

৬. রোজা স্ট্রেস ও রক্তচাপ কমায় :

গবেষণায় দেখা গেছে, রোজা বা উপবাস স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। একই সাথে তা ব্যায়ামের চেয়েও কার্যকরভাবে হার্টবিট ও ব্লাড প্রেশার কমিয়ে দেয়।

৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় :

রোজা মানব দেহে 'ফ্রি রেডিকেল ড্যামেজ' কমায়। ফলে ইমিউন সিস্টেম বা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।

৮. রোজা ওজন কমায় :

রোজা বাড়তি ওজন কমিয়ে দেহে ঝরঝরে অনুভূতি এনে দেয়। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, রোজা বা নির্দিষ্ট কয়েক ঘন্টার উপবাসে অনেক বেশি ক্যালরি ক্ষয় হয়। তখন এনার্জির জন্যে শরীর ফ্যাট সেলগুলোকে ভেঙে দেয়। এমনকি নিয়মিত ডায়েটিং করার চেয়েও ক্যালোরি ক্ষয়ের জন্যে উপবাস অনেক বেশি কার্যকরী হয়।

৯. সহজে বয়স ভর করে না :

বার্ধক্যজনিত যে শারীরিক পরিবর্তন ঘটে তার নেপথ্যে আছে যে জারণ, তার নাম এডভান্সড গ্লাইকেশন এন্ড-প্রোডাক্ট (Advanced Glycation End product বা AGE) । এটা দেহে সৃষ্টি করে অস্থিতিশীল অক্সিজেন অণু, যার সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক পরিণতি হলো দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া। রোজাতে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে এই ক্ষতিকারক টক্সিন রেচনের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। ফলে বয়স বাড়লেও, বয়সের ছাপ পড়ে না।

১০. খাওয়ার অভ্যাস উন্নত হয় :

মাঝে মাঝেই এটা ওটা খাবার বদ-অভ্যাস ছাড়িয়ে দিতে রোজা কার্যকর ভূমিকা রাখে। কথায় বলে- মানুষ না খেয়ে মরে না, খেয়েই মরে। অর্থাৎ অতিরিক্ত টুকটাক মুখ চালানোর অভ্যাস থেকে অনেক রোগ-ব্যাধি হয়। রোজা এটা দূর করে খাবারের সু-অভ্যাস তৈরি করে দেয়।

১১. আত্মিক উন্নয়ন ঘটে :

উপবাস থাকাকালীন শরীর ও মন বেশি একাগ্র হয়। ইবাদত ও উপাসনায় মনোযোগ বাড়ে। স্রষ্টার নৈকট্য লাভের জন্যে গভীর প্রার্থনায় মনোনিবেশ করা সম্ভব হয়।

তথ্যসূত্রসমূহ : সূত্র-১সূত্র-২সূত্র-৩সূত্র-৪সূত্র-৫সূত্র-৬ এবং সূত্র-৭