published : ১১ জুন ২০১৬
রোজার ধর্মীয় গুরুত্ব নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু শারীরিক গুরুত্ব যে কত বেশি তা বিজ্ঞানীদের একের পর এক গবেষণায় উঠে আসছে। দেখা যাচ্ছে, কম খেয়ে বা ডায়েটিং করে যে ফল, তার চেয়ে অনেক দ্রুত এবং অনেক কার্যকরী ফল পাওয়া যাচ্ছে যখন উপবাস বা রোজা রাখা হচ্ছে। সুস্থ থাকার প্রয়োজনে তাই পাশ্চাত্যসমাজের বহু মানুষই এখন রীতিমতো উপবাস করছেন! উপবাসভিত্তিক স্বাস্থ্যচেতনা পাচ্ছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এরকমই কিছু চমকপ্রদ তথ্য নিয়ে এ সংকলন!
ফৌজা সিং। লন্ডন ম্যারাথনের ২৬ মাইল দীর্ঘযাত্রায় যারা অংশ নিচ্ছেন, সেই ৩৬ হাজার দৌড়বিদের মধ্যে তিনিও আছেন। এ ম্যারাথনে অনেকেই আছেন যারা পঞ্চাশোর্ধ। ৭৮, ৮১ বছরেরও কেউ কেউ আছেন।
কিন্তু ফৌজা সিং তাদের সবার চেয়ে আলাদা। কারণ ১৯১১ সালে জন্ম নেয়া ইংল্যান্ড প্রবাসী এই ভারতীয় ১০১ বছর বয়সে অংশ নিচ্ছেন এ ম্যারাথনে। মজার ব্যাপার হলো, সাধারণ এক পাঞ্জাবী কৃষক পরিবারের সন্তান ফৌজা সিং খুব সাদাসিধে জীবন কাটিয়েছেন। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যরক্ষার আধুনিক সব নীতিমালা পালন করার সুযোগ তার হয় নি। বিশেষ কোনো খাবার খাওয়াও তার পক্ষে সম্ভব হয় নি। সাধারণ পাঞ্জাবি কৃষক পরিবারগুলোতে যে খাওয়া হয়, সেটাই তিনি খেয়েছেন।
আজ পর্যন্ত তার দেহে কোনো অপারেশন হয় নি, হৃদরোগ নেই তার, কখনো তিনি কোনো ওষুধ খান নি।
তার সুস্থ দীর্ঘজীবনের রহস্য কী? ফৌজা সিং বলেন, খাবারের পরিমাণ। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ দিনে যে পরিমাণ খায়, ফৌজা সিং খান তার অর্ধেক। অর্থাৎ একটি শিশু যে পরিমাণ খায়, অনেকটা সে পরিমাণ।
বিজ্ঞানীরা এখন মোটামুটি নিশ্চিত যে দীর্ঘায়ুর সাথে জিনের একটা সম্পর্ক আছে। কিন্তু জিনের ব্যাপারে তো আপনার কিছু করার নেই। আপনার যা করার আছে, তাহলো আপনার খাবার। এবং সেটা শুধু কী খাবেন, তা নয়, কখন এবং কীভাবে খাবেন তাও।
৩০ এর দশকে আমেরিকায় যখন মহামন্দা চলছিল, সেসময় আয়ুষ্কাল নিয়ে একটি গবেষণা করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া হচ্ছিল যে, খরা-দুর্ভিক্ষপীড়িত জনপদটিতে মানুষের গড় আয়ু কম হবে। কিন্তু বিস্ময়কর হলো, ১৯২৯-১৯৩৪ – এই চার বছরের জরিপে দেখা গেল মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে ৬ বছর! বিষয়টি বিজ্ঞানীদের এত বিস্মিত করল যে, নিউইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক প্রাণীর ওপর কিছু পরীক্ষা করে দেখেন যে, খাবারের পরিমাণ কমিয়ে এদের আয়ুও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো গেছে।
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. লুইজি ফন্টানা। গত ১০ বছর ধরে তিনি এমন একদল লোককে নিয়ে গবেষণা করছেন যাদেরকে বলা হয় ‘ক্রনি’ (cronie- calorie restrictor on optimal nutrition) ক্রনিরা হলেন এমন কিছু মানুষ যারা দৈনন্দিন পুষ্টিচাহিদাকে ঠিক রেখে খাবারে ক্যালরি গ্রহণের মাত্রাকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করেন। স্বাভাবিকভাবেই তাদের খাবারের একটা বড় অংশই হলো শাকসবজি, ফলমূল। বলা হয়, পৃথিবীজুড়ে এরকম এক লাখের মতো ‘ক্রনি’ আছেন।
ড. লুইজির মতে এরা যেন এক ‘ভিন্ন প্রজাতি’। ব্যাপারটা বোঝার জন্যে এরকমই একজন ‘ক্রনি’র সাথে সাধারণ খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত একজন মানুষের কিছু তুলনামূলক পরীক্ষা করা হয়। দেখা গেল, বয়স ৫০ হলেও শরীরের ভারসাম্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঐ ‘ক্রনি’র সামর্থ্য এখনো ২০ বছরের যুবকের মতো। তার দেহে ফ্যাটের মাত্রা ১১% যা কেবল একজন সুপার এথলেটের দেহেই দেখা যায় আর পঞ্চাশোর্ধ একজন মানুষের তুলনায় এটা খুবই কম একটা মাত্রা। অন্যদিকে সাধারণ মানুষটির দেহের ২৭%, মানে তিন ভাগের এক ভাগই হলো ফ্যাট। যার ৩০% আবার এবডোমিনাল ফ্যাট। আর ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং ক্যান্সার- বর্তমান পৃথিবীর ঘাতক এই তিনটি রোগেরই একটি বড় কারণ এবডোমিনাল ফ্যাট। তবে আশার কথা হলো, একজন সাধারণ মানুষ যদি এই ‘ক্রনি’দের মতো খাদ্যাভ্যাস শুরু করে, তাহলে এক বছরের মধ্যেই এই ঝুঁকিগুলো কমে যাবে।