published : ১৪ জুন ২০২৩
রক্তের প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয় মানুষকেই। রক্তদান নিঃসন্দেহে মহৎ ও মানবিক।
তবে এর সাথে নানান জটিল দুরারোগ্য ব্যাধী থেকে বাঁচার উপায়ও হলো নিয়মিত রক্তদান। যেমন, ক্যান্সার। হ্যাঁ, নিয়মিত রক্তদান যে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় তা বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত।
বিজ্ঞানীরা বলেন, রক্ত দেয়ার সময় শরীরের অতিরিক্ত লৌহ উপাদান বেরিয়ে যাওয়ার ফলে রক্তদাতার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।
মিলার-কিস্টোন ব্লাড সেন্টার সাড়ে চার বছর ধরে ১২০০ লোকের ওপর গবেষণা চালিয়ে বের করেন যে, রক্তদানের সাথে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমার সরাসরি সম্পর্ক আছে।
যারা বছরে অন্তত দুই বার রক্ত দান করেন, অন্যদের তুলনায় তাদের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম।
বিশেষ করে গলা, ফুসফুস, লিভার, কোলন ও পাকস্থলী ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায় রক্ত দিলে।
রক্তদানের সাথে হৃদরোগ ঝুঁকি কমানো নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন একদল গবেষক। তারা ২০ বছর ধরে নির্দিষ্ট রক্তদাতাদের অবজার্ভ করেন।
এই পরীক্ষায় হৃদরোগের চেয়েও ক্যান্সারের ফলাফল দেখে তারা বেশি বিস্মিত হন। গবেষণায় দেখা যায়, রক্তদাতাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি ৩৭% পর্যন্ত নেমে গেছে। আর যাদের ক্যান্সার হয়েছে, তাদের মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম।
বছরে যারা ২ বার রক্তদেন তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি ৩৭% পর্যন্ত কমে যায় । ( ছবি সূত্র : www.somoynews.tv)
এই ফলাফলে বিস্ময় প্রকাশ করে ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট জার্নাল (Journal of the National Cancer Institute)।
এক রিপোর্টে তারা বলেন, “results almost seem to be too good to be true.”. এ থেকে তারা উপসংহার টানেন যে, ৬ মাসের মধ্যে শুধু একবার রক্ত দান করলেই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে আসে।
রক্তের অন্যতম উপাদান হলো লৌহ বা আয়রন।
বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত গবেষণায় চমকে উঠছেন যে, রক্তের আয়রন উপাদানের ভারসাম্যের সাথে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কতটা সরাসরিভাবে সম্পর্কিত।
গবেষকদের পরীক্ষা নিরীক্ষায় উঠে এসছে যে, রক্তের আয়রন উপাদান বেশি হলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
যার জন্যে গবেষকরা এই নিয়ে গবেষণাপত্র লিখেছেন যে, ক্যান্সার কি তাহলে ফেরোটক্সিক ডিজিজ (ferrotoxic disease)? Ferro মানে লৌহ-বিশিষ্ট। টক্সিক মানে বিষাক্ত।
অর্থাৎ বিজ্ঞানীরা সন্দেহ করছেন, শরীরে আয়রন উপাদানের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি শরীরে যে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে তার কারণে ক্যান্সার হয় কিনা!
রক্তের আয়রন উপাদান বেশি হলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে বলে বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
কারণ আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা ব্লাড ট্রান্সফিউশনের মাধ্যমে রক্ত নেন, তাদের শরীরে আয়রন উপাদান বেড়ে যাওয়ার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এমনকি মহিলাদের যাদের কোনো জটিলতার কারণে যেমন এনডোমেট্রিওসিস (Endometriosis) মাসিকের সময় ওভারিতে রক্তপাত হয় তাদের ওভারিতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেকাংশে।
আবার যাদের দেহে আয়রন জমে যাওয়ার প্রবণতা আছে, যাকে বলা হয় হেমোক্রমেটসিস রোগ (hemochromatosis), তাদের ক্ষেত্রে বলা হয় ক্যান্সারের ঝুঁকি ২০০% বেশি!
শুধু ক্যান্সারই নয়, রক্তদানের আছে আরও বহুমুখী উপকার।
রক্তদান করার সাথে সাথে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত বোন ম্যারো নতুন কণিকা তৈরির জন্যে উদ্দীপ্ত হয়। দান করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়, আর লোহিত কণিকার ঘাটতি পূরণ হতে সময় লাগে চার থেকে আট সপ্তাহ।
আর এই পুরো প্রক্রিয়া আসলে শরীরের সার্বিক সুস্থতা, প্রাণবন্ততা আর কর্মক্ষমতাকেই বাড়িয়ে দেয়। তবে রক্তদানের এ উপকারগুলো আসলে তারাই পাবেন যারা নিয়মিত রক্তদান করেন।
শুধু ক্যান্সারই নয়, রক্তদানের আছে আরও বহুমুখী উপকার।
এছাড়া কোয়ান্টাম ব্লাড ল্যাবে রক্ত দিতে এলে প্রতিবারই একজন রক্তদাতার সুস্থতার বেশ কিছু পরীক্ষা একদম ফ্রি হয়ে যাচ্ছে।
যেমন, তার নাড়ি, ব্লাড প্রেশার, দেহের তাপমাত্রা, হিমোগ্লোবিন মাত্রা ইত্যাদি।
তাছাড়া রক্ত দেয়ার পর তার হয়ে যাচ্ছে হেপাটাইটিস বি, সি, এইচআইভি, সিফিলিস, গনোরিয়া এরকম রক্তবাহিত পাঁচটি রোগের স্ক্রিনিং। ফলে প্রতি চার মাসে এক বার করে বছরে তিন বার হয়ে যাচ্ছে তার সুস্থতার সার্বিক যাচাই।
তাই অন্যের জীবন বাঁচাতে, নিজের সুস্থতা বৃদ্ধি করতে ও অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে নিয়মিত রক্তদানে এগিয়ে আসুন, অন্যকে উৎসাহিত করুন।
কোয়ান্টাম ব্লাড ল্যাবে যোগাযোগ করুন: ০১৭১৪ ০১০৮৬৯