published : ২৫ জুন ২০২৩
“সাঁঝ বেলায় সাজ সাজ রব, ছুটে যাব সেই হাসির টানে, চলে যাব স্মৃতির কোলে, আমার সব যেখানে”।
জীবিকার কারণেই ঘরছাড়া হয়ে প্রিয়জন ছেড়ে মানুষ শহরে-নগরে পাড়ি জমায়।
কিন্তু ঈদের সময় যে যেখানেই থাকুক না কেন, নিজ পরিবারের কাছেই ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে। ট্রেন, বাস, লঞ্চ, নৌকাসহ নানা বাহনে চড়ে শহর থেকে নাড়ির টানে ফিরে যায় পেশাজীবী মানুষেরা।
এই ফেরা যেন শুধু বাড়ি ফেরা নয়, নিজেকেই ফিরে পাওয়া। তাই দিন শেষে সবাই ফিরতে চায় নিজের কাছে, পরিবারের কাছে।
আর এসময় ছোট বড় দুর্ঘটনার সংবাদও পাওয়া যায়।
এক জরিপে দেখা যায়, ২০২২ সালে ঈদ-উল-আজহার ছুটিতে যাতায়তের সময় গত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ঈদের আগের-পরের ১৫ দিনের মধ্যে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জন নিহত ৭৭৪ জন আহত হয়েছে।
ঈদের ছুটিতেই সবচেয়ে বেশি দূর্ঘটনা হয়। ( ছবি সূত্র : inews.zoombangla.com)
একই সময়ে রেল ও নৌ-পথে ৩৫৪টি দুর্ঘটনায় ৪৪০ জন নিহত ও ৭৯১ জন আহত হয়েছে।
এবং ১১৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত, ৬৮ জন আহত হয়েছে।
এবং নানান কারণে এই দূর্ঘটনার হার প্রত্যেক ঈদেই বেড়ে চলেছে।
শুধু দূর্ঘটনারতদেরই নয় থ্যালাসেমিয়া রোগী, গর্ভবতী নারী, বার্ন ইউনিট, ডেঙ্গু রোগী যাদের সবারই প্রয়োজন রক্তের। আপনার রক্তেই তারা বেঁচে থাকবে আরও কিছুদিন বা কয়েক বছর।
কোরবানি ঈদের কোরবানি শব্দের অর্থ উৎসর্গ করা ও স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করা।
আল্লাহতায়ালা কোরবানিকে ইবাদতের অংশ করেছেন যাতে একজন মানুষ তার নিজের ভেতরের পশু প্রবৃত্তিকে কোরবানি দিতে পারে।
রক্তদানের মাধ্যমে নিজের ভালো মনুষ্যত্বকেই জাগ্রত করুন যা মানুষের প্রতি সমমর্মীতারই প্রকাশ ঘটিয়ে স্রষ্টার নৈকট্য লাভে আপনাকে এক ধাপ এগিয়ে রাখবে।
স্বেচ্ছা রক্তদাতারাই মানুষের জীবন বাঁচানোর আন্দোলনের দূত।
একবার ভাবুন তো, আপনার রক্তে বেঁচে উঠছে একটি অসহায় শিশু, একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ, একজন গর্ভবতী নারী। এই মুহূর্তে আপনার যে মানসিক তৃপ্তি এটা কখনোই অন্য কোনোকিছুর সঙ্গে তুলনা করা সম্ভব নয়।
তাছাড়া রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্যে অত্যন্ত উপকারি। রক্তদান করার সাথে সাথে শরীরের বোন ম্যারো নতুন কণিকা তৈরির জন্যে উদ্দীপ্ত হয়। দান করার ২ সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে।
আর প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি ৪ মাস পর পর আমাদের শরীরের রেড সেল বদলায়, তাই বছরে তিন বার রক্ত দিলে শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা আরো বেড়ে।
নিয়মিত রক্তদানে দেহের লোহিত রক্তকণিকা প্রাণবন্ত থাকে।
ইংল্যান্ডে মেডিকেল পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিয়মিত স্বেচ্ছা রক্তদাতারা দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি থেকে প্রায়ই মুক্ত থাকেন। রক্তদাতার হৃদরোগ ও হার্ট এটাকের ঝুঁকিও অনেক কম।
রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকেও অত্যন্ত পুণ্য বা সওয়াবের কাজ। দানের মধ্যে রক্তদান উত্তম দান।
এটি এমন একটি দান যার তাৎপর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদার ৩২নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানবজাতির জীবন রক্ষা করার মতো মহান কাজ।’
ঋগ্বেদে বলা হয়েছে, ‘নিঃশর্ত দানের জন্যে রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব।’
১৯৯৬ সালে কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের সূচনা হয়; যা পূর্ণ মাত্রায় গতিশীল হয় ১৪ এপ্রিল ২০০০ সালে নিজস্ব আধুনিক ল্যাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কোয়ান্টাম ল্যাব
২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত রক্ত ও রক্ত উপাদান দিয়ে কোয়ান্টাম বাঁচাতে সাহায্য করেছে অসংখ্য মুমূর্ষের জীবন।
দুই দশকের প্রচেষ্টায় প্রায় ১৪ লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষায় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে কোয়ান্টাম ল্যাব।
১. কোয়ান্টাম ল্যাবে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আপনার দেয়া একব্যাগ রক্তকে ৮টি উপাদানে আলাদা করার ব্যবস্থা রয়েছে।
প্লাটিলেট কনসেনট্রেট, ফ্রেশ প্লাজমা, ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা, প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা, প্লাটিলেট পুওর প্লাজমা, প্রোটিন সলিউশন, রেডসেল কনসেনট্রেট, ক্রায়ো-প্রিসিপিটেট।
তাই এক ব্যাগ রক্তেই প্রয়োজন মেটানো যায় কয়েকজনের।
২. প্রতিবার রক্তদানের পর রক্তদাতার জন্যে রক্তবাহিত ৫টি রোগের (হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইডস এবং ম্যালেরিয়া) স্ক্রিনিং রিপোর্ট।
৩. ১ম বার রক্তদানের পরই রক্তদাতা পান একটি ডোনার কার্ড।
৪. ৩, ১০, ২৫ ও ৫০ বার রক্তদানে রক্তদাতারা পাবেন বিশেষ সম্মাননা স্মারক, আইডি কার্ড ও সনদ।
৫. রক্তদাতা নিজ দেহের প্রয়োজনে জমাকৃত প্রতি ব্যাগ রক্ত ফেরত পাবেন কোনো প্রসেসিং খরচ ছাড়া।
৬. রক্তদাতা তার মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী বা সন্তানের জন্যে প্রসেসিং খরচে (সঞ্চিত রক্তের সমপরিমাণ) ছাড় পাবেন ২০%।
কোয়ান্টাম ল্যাবে নিয়মিত রক্তদিতে পারেন আপনিও
তাই ঈদের আগেই আপনি একটি মহতি কাজের সাথে শরিক হয়ে বাঁচাতে পারেন কয়েকজনের প্রাণ। ফোটাতে পারেন তাদের মুখে হাসি।
আজ যদি নিঃস্বার্থভাবে অন্যের পাশে দাঁড়ান, প্রকৃতির প্রতিদান অনুসারেই দেখবেন আপনার বা আপনার পরিবারের দুঃসময়ে খুব সহজেই প্রয়োজনীয় রক্ত পেয়ে যাবেন।
পরিশেষে এটাই প্রত্যাশা, সবার ঈদ উদযাপন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হোক।