published : ১৪ জুন ২০২২
সারাবিশ্বের স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের সম্মান জানাতে এবং রক্তদানের মতো মহৎ মানবিক কাজে জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৫ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ৯ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এর কেবল ৩০ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে আসে। বাকি ৭০ শতাংশ আসে রক্তগ্রহীতার স্বজন ও অপরিচিতদের কাছ থেকে।
বিগত কয়েক বছরে দেশে স্বেচ্ছা রক্তাদাতার সংখ্যা বেশ বেড়েছে। তবে এক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে আছেন অনেকটাই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, বাংলাদেশে রক্তদাতাদের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ নারী!
রক্তদানের ক্ষেত্রে নারীদের পিছিয়ে থাকার কারণ অনেকাংশেই পরিবার বা নিকটাত্মীয়।
‘মেয়ে মানুষ, সুঁইয়ের খোঁচা সহ্য করতে পারবে তো?’
‘মেয়েদের শরীরে তো এমনিতেই রক্ত কম!’
‘রক্ত দিলে চেহারা খারাপ হয়ে যাবে’
‘এমনিতেই তো হ্যাংলা পাতলা; রক্ত দিলে তো শরীরে কিছুই থাকবে না!’
এমন অজস্র ভুল ধারণা বা ভ্রান্তবিশ্বাস নারীদের মনে ঢুকে যায় কাছের মানুষদের মুখে বারংবার এই নেতিকথাগুলো শুনতে শুনতে। অথচ সন্তান ধারণ থেকে শুরু করে জন্মদানের মতো দীর্ঘ অবর্ণনীয় কষ্টকর প্রক্রিয়া সহ্য করার স্রষ্টাপ্রদত্ত শক্তি রয়েছে নারীদের। অতএব, একটুখানি প্রেরণা আর উৎসাহ পেলে রক্তদানের মতো এতবড় একটি পূণ্যের কাজেও নারীরা এগিয়ে যাবেন রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের আর দশনা অঙ্গনের মতো।
রক্তদানের ক্ষেত্রে নারীদের বিশেষ কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। পুরুষ হোক বা নারী, শারীরিকভাবে সুস্থ হলে যে-কেউই চার মাস পর পর রক্ত দিতে পারবেন।
ওজন ন্যূনতম ৫০ কেজি, বয়স ১৮ থেকে ৬০-এর মধ্যে, রক্তচাপ স্বাভাবিক এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ প্রতি ডেসিলিটারে ১৪ গ্রাম- নারীদের রক্তদানের যোগ্যতা স্রেফ এগুলোই।
অনেকেরই ধারণা, রক্ত দিলে বুঝি শরীরে রক্তের কমতি পড়ে! ধারণাটি ভুল।
গড়পরতা পুরুষদের শরীরে উদ্বৃত্ত রক্তের পরিমাণ ১৩০০ মি.লি. এবং নারীদের ৮০০ মি.লি.। অন্যদিকে, স্বেচ্ছা রক্তদানে একজন দাতার কাছ থেকে নেয়া হয় মাত্র ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার রক্ত। তাই এক ব্যাগ রক্ত দেয়ার পরও শরীরে থাকে পর্যাপ্ত রক্ত।
আর রক্তদানের পরবর্তী কিছুদিন ভিটামিন-সি যুক্ত ফলমূল, সবুজ শাকসবজি, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ খেলে এবং পর্যাপ্ত পানি পান করলে প্রদত্ত রক্তের ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।
কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে নারীদের রক্তদান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
মাসিক চলাকালীন সময়ে রক্ত দেয়া যাবে না। মাসিক শেষ হবার সাত দিন পর নারীরা রক্ত দিতে পারেন।
অন্তঃসত্ত্বা কিংবা প্রসূতি, স্তন্যদানকারী মা কিংবা গর্ভপাত হয়ে থাকলে রক্তে আয়রনের মাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে কিছুটা কম থাকে। তাই আয়রনের মাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রক্তদান থেকে বিরত থাকতে হবে।
এ-ছাড়াও কোনো অসুস্থতার কারণে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে ওষুধের কোর্স চলাকালীন সময়ে রক্তদান করা যাবে না। কোর্স শেষ হওয়ার সাত দিন পর থেকে রক্ত দেয়া যাবে।
সব কথার পরও প্রাসঙ্গিক কথা হলো- একজন নারী কেন রক্ত দেবেন? দিয়ে তার কী লাভ?
আসলে রক্তদান দাতার জন্যেই কল্যাণের। নিয়মিত রক্তদাতাদের ফুসফুস, লিভার, পাকস্থলী, কোলন ক্যান্সারসহ ১৭টিরও বেশি রোগের ঝুঁকি কম থাকে।
ওজন নিয়ন্ত্রণের দিকে ঝোঁক থাকে অনেক নারীরই। তাদের জন্যে সুখবর হলো, নিয়মিত রক্তদান ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে; কমিয়ে দেয় শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমার প্রবণতা।
শরীরে ফ্রি রেডিকেল তৈরি হওয়ার কারণে বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, নারীদের ক্ষেত্রে যা বেশি দৃশ্যমান। রক্ত দিলে শরীর থেকে ফ্রি রেডিকেলগুলো বের হয়ে যায়, যা সাহায্য করে তারুণ্য ধরে রাখতে।
এ-ছাড়াও, নিয়মিত রক্তদানে ত্বক থাকে টানটান ও লাবণ্যময়, দেহমন থাকে প্রাণবন্ত ও এনার্জেটিক।
আসুন, সাহসী সিদ্ধান্ত নিন; ১৯তম জন্মদিনকে স্মরণীয় ও রহমতে পূর্ণ করুন রক্তদানের মাধ্যমে। প্রকৃতির প্রতিদানেই বরকত ও প্রাপ্তিতে ভরে উঠবে আপনার জীবন।