published : ১৫ আগস্ট ২০২৪
World Health Organization (WHO)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২০ সালে পৃথিবীতে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা ছিল ৫ কোটি। যা ২০৫০ সাল নাগাদ বেড়ে দাঁড়াবে ১৫ কোটিরও বেশি যদি এখন থেকেই সচেতনতা অবলম্বন করা না হয়।
আলঝেইমার সুনির্দিষ্টভাবে নিউরোডিজেনারেটিভ বা স্নায়ুক্ষয়জনিত রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে তার স্মৃতি হারাতে থাকেন; হ্রাস পেতে থাকে জানা-শেখা-বোঝার ক্ষমতা। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘Cognitive decline’। এসবের কারণে অবধারিতভাবে সে ব্যক্তির আচার-আচরণও বদলে যেতে থাকে।
আলঝেইমার মূলত বয়সজনিত রোগ। বয়স যখন মধ্য ষাটের ঘরে, এ-রোগের লক্ষণগুলো সাধারণত তখন দেখা দেয়।
তবে বছর ৩০/৪০ এর ব্যক্তির মধ্যেও আলঝেইমারের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘আর্লি অনসেট আলঝেইমার’। তবে এটি খুব বিরল।
যদিও রোগটির কারণ এখনো সম্পূর্ণভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই আলঝেইমার রোগটি বংশগতি, লাইফস্টাইল এবং পরিবেশ- এই তিনের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়। যা সময়ের সাথে মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক প্রোটিন জমা করে। এই অস্বাভাবিক প্রোটিনের একটি হল অ্যামাইলয়েড (amyloid), যেটি মস্তিকের সেলগুলোর চারপাশে দেয়াল বা আড়াল তৈরি করে।
আরেকটি হল টাউ (tau), যার কাজ ব্রেইন সেলে জট পাকানো। ফলে ব্রেইনের নিউরোনগুলোর স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়, একটি নিউরোনের সাথে আরেকটি নিউরোনের যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটে। যার কারণে আলঝেইমার এবং ডিমেনশিয়ার সৃষ্টি হয়।
বৃদ্ধ বয়সে ব্রেইনের ক্ষমতা কমে যাওয়া স্বাভাবিক ভেবে যারা পাশ কাটিয়ে যান, তাদের ভোগান্তি বেশি হয় বা হবে- এটা নিশ্চিত। আলঝেইমারের কারণ যেহেতু একাধিক, তাই প্রতিরোধের প্রক্রিয়াও হতে হবে সামগ্রিক। ছোটদের জন্য এটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব অভিভাবকদের। আর তরুণদের দায়িত্ব নিতে হবে নিজেদেরই।
মস্তিষ্কের সর্বোত্তম স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি শেখার বা cognitive ability কমে যাবার ঝুঁকি হ্রাস করতে হবে। এজন্যে প্রয়োজন নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর-সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, সুস্থ মানসিক বিকাশ চর্চা, সামাজিক যোগাযোগ, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদির সমন্বয়। তাহলেই দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কমবে আলঝেইমারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি।
ক্রমবর্ধমান গবেষণায় দেখা গেছে, অত্যধিক স্ট্রেস বা মানসিক চাপ মস্তিষ্কের উপর চাপ সৃষ্টি করে cognitive ability ক্ষয় করতে থাকে। মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন খুবই কার্যকরী।
শুধু তা-ই নয়, মস্তিষ্কে নিউরোপ্লাস্টিসিটি বাড়ায় মেডিটেশন। নিউরোপ্লাস্টিসিটি হল মস্তিষ্কের প্রতিমুহূর্তে নিউরাল সংযোগ স্থাপন, রক্ষা, নবায়ন প্রক্রিয়া। ব্রেনের গঠন এবং পরিচালনার অবিচ্ছেদ্য মাধ্যম। এটি ছাড়া শেখা, বিকাশ, স্মৃতি তৈরির মতো মানবীয় কাজগুলো একেবারেই অসম্ভব।
নিয়মিত মেডিটেশন ব্রেনের নিউরোপ্লাস্টিসিটি শুধু ধরেই রাখে না, বাড়াতেও সাহায্য করে। ফলে বৃদ্ধ বয়সেও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভাল থাকে; হ্রাস পায় শেখা, জানা, বোঝার ক্ষমতা কমে যাবার সম্ভাবনা। উদ্বেগ-বিষণ্ণতা এবং দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক আবেগকে আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি বাড়ার একটি কারণ ধরা হয়। ধ্যানচর্চা এসব দূর করে মানসিক শান্তি, ভারসাম্য এবং স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে, পরোক্ষভাবে অবদান রাখে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যরক্ষায়।
মনে রাখতে হবে, আলঝেইমারে একবার আক্রান্ত হয়ে গেলে তা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যেতে থাকে। সময় থাকতে সচেতনতা আর নিয়মিত কিছু চর্চা বৃদ্ধবয়সে জড় পদার্থে পরিণত হবার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
তবে একক নয়, আলঝেইমার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সামগ্রিক প্রক্রিয়া। অল্প বয়স থেকেই নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাবার, সামাজিক যোগাযোগ, মানসিক বিকাশের চর্চা, পর্যাপ্ত ঘুম, মেডিটেশনের সমন্বিত প্রয়োগে আন্তরিক হতে হবে। আপনার এখনকার এই প্রয়াসে বার্ধক্যেও আপনি থাকবেন চমৎকার স্মৃতিশক্তির অধিকারী।