যে ৮টি কারণে শিক্ষার্থীদের মেডিটেশন করা দরকার

published : ১৩ জুন ২০২১

এক বিজ্ঞানপ্রেমী লোক পড়াশোনা শেষ করে একটি কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। নিজের গবেষণার জন্যে তিনি একটি কক্ষ খুঁজছেন। কিন্তু প্রতিকূলতার কারণে কক্ষ পেতে ব্যর্থ হলেন।

তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। ভাবছেন এখন কী করবেন? এমতাবস্থায় চোখ গেল বাথরুমের পাশে ২৪-বর্গফুটের একটি ছোট ঘরের দিকে। এ ঘরটিকেই তিনি গবেষণার কাজের জন্যে নির্ধারণ করলেন।

প্রতিদিন নিয়মিত চারঘণ্টা শিক্ষকতার পর যেটুকু সময় পাওয়া যায় সবটুকুই তিনি এই গবেষণার কাজে দিতে লাগলেন। অর্থ সংকটও ছিল প্রকট। সীমিত ব্যয়ে স্থানীয় মিস্ত্রীদেরকে শিখিয়ে পড়িয়ে তিনি পরীক্ষণের জন্যে উপকরণ প্রস্তুত করতে লাগলেন। পদে পদে প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিজ্ঞান সাধনার প্রতি তার আগ্রহ কমে যায় নি।

অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হবার পর তার জীবনে আসলো নতুন এক সমস্যা। তিনি গবেষণায় আরো মনোনিবেশ করতে চাইলেন। কিন্তু তাকে গবেষণার জন্যে কোনোরকম সুবিধাই দেয়া হয় নি। শুধু তাই নয়, ইউরোপীয় অধ্যাপকদের অর্ধেক বেতনেরও কম বেতন তার জন্যে নির্ধারিত হয়।

ইউরোপিয়ানরা মনে করত, তাদের ব্রেনের তুলনায় বাঙালিদের ব্রেন অর্ধেক। অর্থাৎ বাঙালিদের বুদ্ধি ইউরোপিয়ানদের থেকে অর্ধেক। আর তাই যে-কোনো ভাগ বাটোয়ারার ক্ষেত্রে তাদের তুলনায় অর্ধেক পরিমাণ পেতে হতো বাঙালিদের।

কিন্তু তিনি কোনো মারপিটে যান নি। অহিংস প্রতিবাদ করেন। তিনি বেতন নেয়াই বন্ধ করে দেন এবং তিন বছর অবৈতনিকভাবেই অধ্যাপনা চালিয়ে যান। দীর্ঘকাল এই অহিংস প্রতিবাদের ফলে তার বেতন পরবর্তীতে ইউরোপীয়দের সমতুল্য করা হয়।

১৮৮৭ সালে বিজ্ঞানী হের্‌ৎস প্রত্যক্ষভাবে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। এ নিয়ে আরো গবেষণা করার জন্যে তিনি চেষ্টা করছিলেন কিন্তু শেষ করার আগেই তিনি মারা যান।

এই বিজ্ঞানপ্রেমী তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে সর্বপ্রথম প্রায় ৫ মিলিমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট তরঙ্গ তৈরি করেন। এ ধরনের তরঙ্গকেই বলা হয় অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ বা মাইক্রোওয়েভ।

বিজ্ঞানের একজন অমর প্রতিভা ছিলেন এই মানুষটি। যিনি প্রথম মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তির ওপর সফল গবেষণা করেন যার ফলশ্রুতিতে আবিষ্কৃত হয় রেডিও।

তিনি আর কেউ নন! বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু!

তিনি প্রমাণ করেন, বাঙালির ব্রেন অর্ধেক নয় বরং সবার ব্রেনের ক্ষমতাই অসীম! তার এই আবিষ্কারের পেছনে ছিল, গভীর মনোযোগ একাগ্রতা স্থিরতা।

প্রিয় শিক্ষার্থী! আপনিও অর্জন করতে পারেন বিজ্ঞানী বসুর মতো মনোযোগ, একাগ্রতা, স্থিরতা। পারবেন বিজ্ঞানী বসুর মতো পরিস্থিতিকে সামলে নিয়ে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে। প্রশ্ন আসতে পারে, কীভাবে?

মার্চ, ২০২০ থেকে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি। ক্লাসের ঘণ্টার শব্দ, স্কুল ছুটির ঘণ্টা এখন নেই কোনো স্কুলে। নেই শিক্ষার্থীদের ছোটাছুটি, টিফিন নিয়ে কাড়াকাড়ি, মাঠে-ক্লাসে দৌড়ঝাঁপ! এ অবস্থায় তাদের মনের ওপর যে চাপ পড়ছে তা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র সূত্র হলো ‘মেডিটেশন’।

মেডিটেশন একজন শিক্ষার্থীকে কী দিতে পারে...     

মেডিটেশন একজন শিক্ষার্থীকে যত ইতিবাচকভাবে গড়ে দেয় অন্য আর কোনোভাবেই তা সম্ভব নয়!

কিন্তু বুঝবেন কীভাবে?

১. মনোযোগ

মেডিটেশনে মনোযোগ বাড়ে এ কথাটি এখন বাস্তব প্রমাণিত সত্য!

ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ার টেবিলে বসে থেকে যে ছেলেটি বা মেয়েটি এক বাক্যে মন বসাতে পারে না তার কারণ সে নিজে যতটা নয় তার চেয়ে বেশি কারণ বর্তমান পরিস্থিতি। করোনাকালীন সময়ে ভার্চুয়াল ভাইরাসের আগ্রাসনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে মনোযোগের অভাব।

আর মনোযোগ দিয়ে পড়া না হলে মনে রাখার ক্ষেত্রেও একজন শিক্ষার্থী সফল হতে পারবে না। এজন্যেই প্রয়োজন মেডিটেশন।

একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আপনি এখন থেকে পড়া শুরুর আগে চেয়ারে বসে আরাম, আরাম, আরাম বলুন। এবং ১৯ থেকে ০ গণনা করে মনের বাড়ির দরবারে বসে কোয়ান্টা ভঙ্গি করে বলুন, ‘কোয়ান্টা ভঙ্গি করে আমি এখন ... অমুক বিষয়ের (বিষয়ের নাম উল্লেখ করুন) ... অমুক অধ্যায় (অধ্যায়ের নাম উল্লেখ করুন) ... পড়তে যাচ্ছি। আমি কোয়ান্টা ভঙ্গি করে যা পড়ব, তা আমার পুরোপুরি মনে থাকবে এবং ভবিষ্যতে যখনই কোয়ান্টা ভঙ্গি করে তা মনে করতে চাইব, সাথে সাথে তা মনে পড়বে এবং আমি সুন্দরভাবে তা বলতে বা লিখতে পারব।’

এরপর নিয়মমতো ০ থেকে ৭ গণনা করে বাহ্যিক জাগ্রত অবস্থায় পৌঁছান। কোয়ান্টা ভঙ্গি করা অবস্থায় পড়া শুরু করুন। পড়া শেষ করে আবার নিয়মমাফিক মনের বাড়ির দরবার কক্ষে যান। আরামে বসে পুনরায় বলুন, ‘আমি এতক্ষণ কোয়ান্টা ভঙ্গি যোগে যা পড়লাম তা আমার স্মৃতিতে পুরোপুরি গেঁথে রইল।

এরপর ভবিষ্যতে যখনই কোয়ান্টা ভঙ্গি করে এ বিষয়টি আমি মনে করতে চাইব সাথে সাথে বিষয়টি পুরোপুরি হুবহু মনে পড়বে এবং আমি তা সুন্দরভাবে বলতে বা লিখতে পারব।’

তারপর নিয়মমাফিক মনের বাড়ি থেকে পুরোপুরি জাগ্রত অবস্থায় ফিরে আসুন।

আপনার মনোযোগের গভীরতা ও মনে রাখার ক্ষমতা দেখে নিজেই বিস্মিত হবেন!   

২. স্মৃতি ও বুদ্ধিমত্তা

অনেক শিক্ষার্থী হতাশায় ভোগেন এই ভেবে যে, তার স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা সমবয়সী বন্ধু বা সহপাঠীদের চাইতে অনেক কম। তাই জীবনে বড় কিছু করার যোগ্যতা হয়তো তার নেই!

কিন্তু মেডিটেশন করে আপনি এই হতাশা থেকেও বেরিয়ে আসতে পারেন।

মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের নাম হিপোক্যাম্পাস। তথ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহে আপনাকে সাহায্য করাই যার কাজ। ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েসের প্রফেসর আর্ট ক্রেমার বলেন, হিপোক্যাম্পাসের আকার যত বড় ও সুগঠিত, তত বেশি স্মৃতি সংরক্ষণ ও নতুন স্মৃতি তৈরি সম্ভব।

আর নিয়মিত মেডিটেশনে এই হিপোক্যাম্পাস অংশটিই বড় হয়, হয় শক্তিশালী, মজবুত।

মহাঋষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মেডিটেশন করে হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধিমত্তা বেড়েছে। বেড়েছে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা। এমনকি বাস্তব বুদ্ধি আইকিউও বেড়েছে তাদের মেডিটেশনে।

৩. মানসিক চাপ ও পরীক্ষাভীতি থেকে মুক্তি

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে ৪৭% ভাগ সময়েই আমরা অপ্রয়োজনীয় নানা চিন্তায় (নাকি দুশ্চিন্তা!!) ডুবে থাকি।

আমাদের মন হয় অতীতের না পাওয়া-অতৃপ্তিগুলো নিয়ে আফসোস করতে থাকে অথবা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে।

অনেক শিক্ষার্থীই আছেন, পড়তে বসলেই যাকে গত পরীক্ষায় খারাপ করার দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করে। আবার সামনের পরীক্ষায় খারাপ করলে বাবা-মাকে কী জবাব দেবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা!  

এই দোটানা চাপের কারণে একদিকে প্রস্তুতি বাধা পড়ে। আবার প্রস্তুতি ভালো থাকলেও নার্ভাসনেসের কারণে পরীক্ষা খারাপ হয়!

২০১৭ সালে ইউনিভার্সিটি অফ রোড আইল্যান্ডে ১৮-২৩ বছর বয়সী একদল শিক্ষার্থীকে বেছে নেয়া হয় গবেষণার জন্যে। সময়টা ছিল ফাইনাল পরীক্ষার ঠিক ছয় সপ্তাহ আগে, যখন অধিকাংশ শিক্ষার্থীই পরীক্ষা সংক্রান্ত মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তায় বিপর্যস্ত।

টানা ছয় সপ্তাহ তাদের নিয়মিত মেডিটেশন অনুশীলন করানো হলো। ফলাফল দেখা গেল, পরীক্ষাভীতি ও নার্ভাসনেস কাটিয়ে আত্মবিশ্বাস ও ফুরফুরে মেজাজে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন তারা!  

৪. বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি

অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে পুরো শিক্ষার্থী জীবনে সবচাইতে বেশি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় টিনএজ বয়স বা বয়ঃসন্ধিকালে। এসময়ে হরমোনাল চেঞ্জের কারণে শরীর-মনে আসে নানা পরিবর্তন।

দেখা দেয় মুড সুইং, হঠাৎ রেগে যাওয়ার প্রবণতা, বিষণ্ণতা। স্কুল-কলেজে বুলিংয়ের মতো অপ্রিয় ও অপ্রত্যাশিত ঘটনাও কারো কারো সাথে ঘটে থাকে।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৫০% টিনএজারই ডিপ্রেশনের শিকার বলে দেখা গেছে। আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া তাই ইঙ্গিত করে।

কিন্তু মেডিটেশন এই ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।  

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষক ড. সাত বীর সিং খালসা বলেন, বয়ঃসন্ধিকালে যেসব কিশোর-কিশোরী যোগ-ধ্যান চর্চা করে তাদের উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ও ঘুমের সমস্যা দূর হয়। তৈরি হয় আত্মসচেতনতা ও চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।  

চার্লস ড্রিউ ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াইয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, যে শিক্ষার্থীরা মেডিটেশন করেছে তাদের মধ্যে বিষণ্নতার উপসর্গগুলো অনেক কমে গেছে। এমনকি এদের কেউ কেউ ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের রোগীও ছিল।

৫. বিধ্বংসী-বেপরোয়া আচরণ নিয়ন্ত্রণ

কৈশোর বা তারুণ্যে অনেকের মধ্যেই একটা বেপরোয়া ভাব দেখা যায়। যার ফলে ধূমপান, মাদক, পর্ণ বা ভার্চুয়াল ভাইরাসের মতো নেশার তারা সহজ শিকার।

মা-বাবার কথা না শোনা, শিক্ষককে অমান্য করা বা সমবয়সীদের সাথে রূঢ় আচরণ করা- ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয়।  

এই কৈশোরে মেডিটেশন চর্চা একদিকে ব্রেনের এমিগডালা অংশের তৎপরতা কমিয়ে তার ভয়, ক্রোধ এবং অস্থিরতা কমায়। অন্যদিকে মমতা, সহানুভূতি ও বিনয়ের আবেগকে করে তোলে শক্তিশালী।            

৬. আসক্তি থেকে মুক্তি

করোনাকালের ভার্চুয়াল আগ্রাসনে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটে এখন আসক্ত। সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও গেম, ইউটিউব এবং নেটফ্লিক্সে নষ্ট হচ্ছে তাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়।

একজন শিক্ষার্থীর নিজে নিজে এ থেকে মুক্ত হওয়াটা কঠিন। কারণ গবেষণায় দেখা যায়, ভার্চুয়াল এই আসক্তি কোকেন আসক্তির চেয়ে কম নয়, বরং বেশি! যে কারণে পাশ্চাত্যের অনেক জায়গায়ই এখন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের মতো গড়ে উঠেছে ভার্চুয়াল আসক্তি নিরাময় কেন্দ্রও।

আর গবেষণায় দেখা গেছে- মেডিটেশনই আসক্তিমুক্তির সবচেয়ে কার্যকরী দাওয়া। তা সে যে আসক্তিই হোক!

২০১৮ সাল থেকে দিল্লির ১১০০ সরকারি বিদ্যালয়ে শুরু হয় হ্যাপিনেস কোর্স, যার আওতায় ১০ লক্ষ শিক্ষার্থী এবং ৫০ হাজার শিক্ষকের প্রতিদিনের স্কুল রুটিনেই এখন থাকছে মেডিটেশন এবং ইতিবাচক জীবনদৃষ্টির নানা অনুশীলন।

২০১৯ সাল থেকে ইংল্যান্ডের ৩৭০টি স্কুল শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বৃদ্ধি ও আগ্রাসী আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্যে  মেডিটেশনকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

৭. মানসিক সমস্যার সমাধান

এটেনশন ডেফিসিট হাইপার-এক্টিভিটি ডিসঅর্ডার হচ্ছে এক ধরনের মানসিক সমস্যা, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ দেখা যায়। এরা খুব অস্থিরচিত্ত থাকে, কোনো একটা বিশেষ কাজে মন দিতে পারে না।

অভিভাবকরা হয়তো মনোযোগ নেই বলে শাসন করছেন, কিন্তু বেচারা কী করবে? সমস্যাটা তো তার ভেতরে!

মেডিটেশন এ ধরনের শিক্ষার্থীদের দেয় সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর সমাধান।

জার্নাল অফ সাইকোলজিতে এ নিয়ে একটা গবেষণা রিপোর্ট ছাপা হয়। মাধ্যমিক স্তরের কিছু শিক্ষার্থীকে তিনমাস প্রতিদিন দুইবেলা মেডিটেশন করতে বলা হয়।

তিনমাস পরে দেখা গেল, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা এবং এই মানসিক রোগটির উপসর্গ ৫০% ভাগ কমে গেছে। গবেষকরা আরো দেখেছেন, মেডিটেশন মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা এবং দক্ষতা বহুগুণে বাড়িয়েছে।

৮. শারীরিক সুস্থতা

অনেক শিক্ষার্থীকেই দেখা যায়- অসুস্থ থাকার কারণে নিয়মিত ক্লাসে যেতে পারে না, পড়ালেখায় মন দিতে পারে না বা পরীক্ষায় সময় অসুস্থ হয়ে পড়ায় রেজাল্ট খারাপ হয়।     

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটালে ১৭ হাজার জনকে নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত মেডিটেশন করেন তারা মেডিটেশন না করা শিক্ষার্থীর চেয়ে ৪৩ ভাগ কম অসুস্থ হন!

যে কারণে গত ৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে মেডিটেশন করা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ! এমনকি সেখানকার বেশি সংখ্যক শিশুরাও মেডিটেশন করছে।

২০১২ সালে যেখানে ০.৬% শিশু মেডিটেশন করত, ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৫.৪%।

মেডিটেশন করলে একজন শিক্ষার্থীর যেসব শারীরিক উপকার ঘটে :

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
  • মাইগ্রেনের ব্যথামুক্তি
  • হৃদরোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়
  • এলার্জি ও ইনফেকশন থেকে মুক্তি
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
  • ত্বক হয়ে ওঠে লাবণ্যময়
  • রোধ করে কম বয়সে বুড়িয়ে যাওয়া

গুহাবন্দি ১২ কিশোরের সুস্থতার কারণ মেডিটেশন...

মেডিটেশন একজন কিশোরকে কতটা সমমর্মী, আত্মবিশ্বাসী এবং প্রশান্ত করতে পারে থাইল্যান্ডের থাম লুয়াং গুহায় আটকে পড়া ১২ কিশোরের ঘটনা থেকে তা আমরা দেখি।

এক সতীর্থের জন্মদিন পালনের জন্যে গুহার ভেতরে তারা যাওয়ার পর প্রবল বৃষ্টিপাতে গুহাটি বন্যাপ্লাবিত হয়ে যায়। আটকা পড়ে যায় তারা গুহার আড়াই মাইল ভেতরের এক চেম্বারে।

কবরের অন্ধকার, খাবার নেই, পানি বলতে গুহার দেয়াল চুইয়ে যতটুকু পড়ে। নয়দিন পর্যন্ত পৃথিবীর কোনো মানুষের সাথে তাদের যোগাযোগ হয় নি!

পাথরের শুকনো কার্নিশে বসে এসময় তারা যে দুটো কাজ করেছে তাহলো ধ্যান এবং স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা!

সন্ধান পাওয়ার পর দুর্গম পথে তিনদিন ধরে তাদের উদ্ধারের পর দেখা গেল- সবার নেতিবাচক সব ভবিষ্যদ্বাণীকে ব্যর্থ প্রমাণ করে তারা দিব্যি সুস্থ, প্রশান্ত, স্বাভাবিক আছে। ট্রমা বা মানসিক বৈকল্য বলে কিছু নেই!        

প্রিয় শিক্ষার্থী! আপনিও মেডিটেশন করতে শিখুন। অংশ নিন আধুনিক মেডিটেশনের সবচেয়ে সহজ ও ফলপ্রসূ কোর্স কোয়ান্টাম মেথডে। শিক্ষার্থী জীবনই মেডিটেশন শেখার সুবর্ণ সুযোগ ও সঠিক সময়।