
published : ৬ নভেম্বর ২০২৫
চিনির ক্ষতি সম্পর্কে এখন অনেকেই সচেতন। চা বা অন্য খাবারে চিনি খান না। কিন্তু বাজারে যেসব প্রসেসড ফুড ও ড্রিংকস পাওয়া যায়, অনেকে যা কিনে খেতে পছন্দও করে, জানেন কি যে তার শতকরা ৯৯ ভাগের মধ্যেই দেয়া আছে চিনি?
অনেকেই ব্রেকফাস্টে পাউরুটি খায়। ১০ পিসের এক প্যাকেট পাউরুটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ১৮-২০ গ্রাম চিনি!
ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত বিস্কুটে চিনি ছাড়াও ব্যবহৃত হয় invert sugar, liquid glucose, wheat flour, যেগুলো আসলে চিনিরই বিভিন্ন নাম!
পাউরুটিতে জেলি মেখে স্কুলের টিফিন বক্সে ভরতে ভরতে খুব একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হয়তো ভাবলেন- যাক, বাচ্চাকে আজ একটা স্বাস্থ্যকর নাশতা দেয়া গেল! কিন্তু এই জেলিতে সরাসরি চিনি ত আছেই; আরো আছে অরেঞ্জ কনসেনট্রেট ও অরেঞ্জ ফ্লেভার ইত্যাদি নামের চিনি।
এগুলোর ক্ষতি সম্পর্কেকোয়ান্টাম সদস্যরা সচেতন। কিন্তুযারা সচেতন নন তারা কিন্তু এখনও খেয়ে যাচ্ছেন এসব ফিজি ড্রিংকস।
দেশের নামকরা একটি ফুড ব্র্যান্ড নিজেদেরকে দাবী করেছে ‘The Topmost Favorite Healthy Fruit Drink of the Country!’ ওয়েবসাইটে নিজেদের প্রডাক্টের (জ্যুস)বিবরণে ভিটামিন এ, সি এবং মিনারেলস আছে বললেও চিনির উল্লেখ নেই। অথচ ২৫০ এমএল এর বোতলে চিনি আছে ৮ চা চামচ!
কোক/পেপসি/স্প্রাইট নিয়ে যেহেতু নেতিবাচক প্রচারণা অনেক হয়েছে, কেউ কেউ ভাবেন অন্য স্বাদের ড্রিংকস হয়তো ভালো হবে। চিনি থেকে মুক্ত নয় এগুলোও!
রমজানে বা গ্রীষ্মে বা অতিথি আপ্যায়নে ইনস্ট্যান্ট পাউডার দিয়ে শরবত বানাবার চল আছে। ম্যাঙ্গো, অরেঞ্জ ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর ফলের নামে হলেও প্রচলিত এসব ড্রিংক পাউডারে ফল কতটুকু আর ক্ষতিকর রসায়ন ও চিনি কতটা- তা আসলেই একটা প্রশ্ন।
যে খাবারগুলো মিষ্টি স্বাদের নয়, তাতেও যে চিনি ব্যবহৃত হয় তা কি আপনি জানেন? টমেটো সস, ভ্যানিলা ফ্লেভারড ইয়োগার্ট, চিকেন কর্ন স্যুপ- এর প্রতিটিতেই আছে চিনি!
শিশুদের স্থূলতা নিয়ে গবেষণা করেছেন ড. রবার্ট লাস্টিগ। তার একটি বই আছে। নাম ‘Sugar Has 56 Names- A Shopper's Guide’. বইটিতে তিনি দেখিয়েছেন, পোশাকি নাম ‘সুগার’ হলেও অন্তত ৫৬টি নাম আছে চিনির-
Sugar, Sucrose, Cane Juice, Table sugar, caramel, Beet sugar, cane sugar, Confectioner's sugar, Date sugar, grape sugar, Dextrose, Icing sugar, Invert sugar, Brown sugar, Maltose, Golden Sugar, Lactose, Galactose, Yellow sugar etc.
অধিকাংশ প্রসেসড খাবারেই এই চিনিগুলোর একাধিক ব্যবহৃত হয়। ২০১৫ সালে আমেরিকায় যত প্রসেসড ফুড বিক্রি হতো তার শতকরা ৭৪ ভাগেই পাওয়া গিয়েছিল চিনি! শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই নয়, এ অবস্থা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের।
মিষ্টি বাদে স্বাদের আছে আরো চারটা ধরণ- টক, ঝাল, তেতো এবং লবণাক্ত। ড. লাস্টিগ বলেন, চিনি ব্যবহার করে এই প্রতিটা স্বাদকেই ব্যালেন্সড করা হয়।
খেয়াল করে দেখুন- বরই ভর্তার টক কমাতে আমরা কী দিতাম? চিনি!
তরকারিতে লবণ বেশি হয়ে গেলে মা-খালারা কী দিয়ে দিতেন তাতে? একটু চিনি। তাতেকটা স্বাদটা কমে যেত। খেতে বসে আর হৈ চৈ হতো না।
ফুটির পানসে স্বাদ ঢাকতে বা বেলের শরবতের স্বাদ বাড়াতে চিনি দিয়ে খেয়েছেন- এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে!
একসময় আমাদের পূর্বপুরুষরা যখন প্রকৃতি থেকে খাদ্য আহরণ করতেন তখন মিষ্টি স্বাদটা ছিল তাদের কাছে খাবার নির্বাচনের একটা মাপক। ফল, বীজ বা পাতা মিষ্টি হলেই তারা বুঝতেন এই খাবারটি তাদের জন্যে নিরাপদ। এটা খেলে কোনো বিষক্রিয়া হবে না।
ফলে মিষ্টির প্রতি আকর্ষণটা মানুষের সহজাত।
রবার্ট লাস্টিগ বলেন, আমরা যেমন রান্নায় সবকিছুতেই লবণ দিই, ফুড ইন্ডাস্ট্রিগুলো ঠিক সেভাবে ব্যবহার করেছে চিনিকে। উপাদেয় করার জন্যে সবকিছুতেই তারা ব্যবহার করেছে চিনি।
আর যত তারা চিনি ব্যবহার করেছে তত মানুষ আসক্ত হয়েছে আরো বেশি চিনির প্রতি।
পশ্চিমা দেশের একজন টিনএজার এখন দিনে ৩০ থেকে ৪১ চা চামচ চিনি খায় এসব প্রসেসড খাবারের সাথে। আমাদেরদেশের হিসেবও নেহায়েত কম হবে না! ফলে নিজেদের অজান্তেই চিনি খাচ্ছি আমরা, বারটা বাজাচ্ছি স্বাস্থ্যের।