কোমল পানীয়॥ আসলে কতটা কোমল?

published : ৫ আগস্ট ২০১৮

প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বাড়িতে অফিসে পার্টিতে পথে-ঘাটে হরদম খেয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোমল পানীয়। বছর দশেক ধরে এর সাথে যুক্ত হয়েছে এনার্জি ড্রিংকস। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর নিত্যনূতন বিক্রয়-কৌশল আর চাকচিক্যময় বিজ্ঞাপনের হুজুগে এগুলো বিক্রিও হচ্ছে ধুন্ধুমার।

কিন্তু কী আছে এসব পানীয়ে আর মানবদেহের ওপর তার প্রভাবটাই-বা কেমন, এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে গবেষণা চলছেই। যা থেকে প্রায়ই বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন সব বিস্ময়কর তথ্য। নিজের ও পরিবারের সুস্থতা তো বটেই, সর্বোপরি একজন সচেতন মানুষ হিসেবেও আমাদের সবারই বিষয়গুলো জানা থাকা প্রয়োজন।

ইথিলিন গ্লাইকল : আর্সেনিক-সদৃশ বিষ!

ফ্রিজে চার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা তার কম তাপমাত্রায় কোনো তরল দীর্ঘক্ষণ রাখলে তা জমে বরফ হয়ে যায়। কিন্তু কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকসের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে না। কারণ এগুলোতে এন্টি-ফ্রিজার হিসেবে মেশানো হয় একটি রাসায়নিক উপাদান। যার নাম ইথিলিন গ্লাইকল। এটি মানবদেহের জন্যে স্বল্প মাত্রার আর্সেনিকের মতোই একটি বিষ। মূলত শিল্প-কারখানায় ব্যবহারযোগ্য হলেও স্বচ্ছ বর্ণ গন্ধহীন এ উপাদানটি বিভিন্ন পানীয়ে এন্টি-ফ্রিজার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে হরদম। গবেষকদের মতে, ইথিলিন গ্লাইকল মানবদেহে নীরব বিষক্রিয়া ঘটাতে সক্ষম। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, হৃৎপিণ্ড, লিভার এবং কিডনি জটিলতা এমনকি দীর্ঘমেয়াদে কিডনি বৈকল্য পর্যন্ত ঘটাতে পারে এটি।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ধারণা, বিশ্বজুড়ে গত কয়েক দশকে সববয়সী বিশেষত শিশুদের মধ্যে কিডনি রোগ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো এই কোমল পানীয়।

ইথিলিন গ্লাইকলের পাশাপাশি কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকসে মেশানো হয় কিছু কৃত্রিম রঙ। যেমন টারট্রাজিন, কারমোসিন, ব্রিলিয়ান্ট ব্লু, সালফেট ইয়েলো ইত্যাদি। নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে এগুলোর বিক্রয় নিষিদ্ধ। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এ উপাদানগুলো ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ।এছাড়াও কোমল পানীয়তে প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহার করা হয় সোডিয়াম বেনজয়েট বা বেনজয়িক এসিড। এ উপাদানটি কারো কারো ক্ষেত্রে হাঁপানি ও চর্মরোগের কারণ হতে পারে।

কোনো তরল কতটা এসিডিক হবে তা নির্ভর করে তার pH মানের ওপর যে পানীয়ের pH মান যত কম সে পানীয় তত এসিডিক। কোনো পানীয়ের pH মান ৫.৫ বা তার কম হলে সে পানীয় শরীরের জন্যে ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয়। সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপারটি হলো, ব্রিটিশ কোমল পানীয় সমিতি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোমল পানীয়ের মাত্রা শনাক্ত করে যে ছকটি প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, এদের প্রত্যেকটির মান ৩-এর কম। আর বাজারের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোমল পানীয়টির pH মান ২.৪ থেকে ২.৮ এর মধ্যে। কোমল পানীয় পানের ফলে শরীরে ক্রমান্বয়ে জমা হতে থাকা এই এসিড দাঁত ও হাড়সহ শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতিসাধন করে।

ঝাঁঝালো স্বাদে জীবনক্ষয়

কোমল পানীয়তে ঝাঁঝালো স্বাদের জন্যে মেশানো হয় ফসফরিক এসিড, যা ইতোমধ্যেই দাঁতের এনামেল আর শরীরের হাড়ের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। পরীক্ষায় দেখা গেছে, কোমল পানীয়ের বোতলে একটি দাঁত ফেলে রেখে দিলে তা ১০ দিনের মধ্যে পুরোপুরি গলে যায়। ব্রিটিশ ডেন্টাল এসোসিয়েশনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, প্রতিবার কোমল পানীয় গ্রহণের প্রায় একঘণ্টা পর্যন্ত দাঁতের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব বজায় থাকে। কারণ, ওই পানীয়তে থাকা ক্ষতিকর উপাদানগুলোর প্রভাব অকার্যকর করতে মুখের লালার প্রায় একঘণ্টা সময় লাগে।

কোমল পানীয়ে থাকা ফসফরাস শরীরে জমে দীর্ঘমেয়াদে হাড়কে ভঙ্গুর করে দেয়। শুধু তা-ই নয়, ভারী কোনো পরিশ্রমের পর কোমল পানীয় পান করলে এর ক্যাফেইন শরীরের ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের সাথে বিক্রিয়া করে। ফলে শরীর থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়, যা হাড়ক্ষয় তরান্বিত করার পাশাপাশি হৃদযন্ত্রে গোলযোগ ঘটাতে পারে।

নিয়মিত কোমল পানীয় পানের ফলে শরীর থেকে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান মূত্রের সাথে বেরিয়ে যায়। ফলে বাড়তে থাকে হাড়ক্ষয়ের সম্ভাবনা ও থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের কার্যকারিতা কমে যাওয়া বা হাইপোথাইরয়েডিজম ইত্যাদি জটিলতার সম্ভাবনা। যুক্তরাষ্ট্রের টাফ্টন ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে ব্যাপক আকারে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারীরা নিয়মিত কোমল পানীয় পান করেন তাদের কোমরের হাড়ের ঘনত্ব কমে গেছে।

উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন : আসক্তির প্রধান কারণ

কোমল পানীয় প্রীতির অন্যতম কারণ এর অত্যধিক ক্যাফেইন। তাই এগুলো একবার খেলে বার বার খেতে চায় মন। বলা হয়, কোনো খাবার বা পানীয়ে উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন কাজ করে একটি আসক্তিকর মাদকের মতোই, যা শরীরের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে সাময়িকভাবে উত্তেজিত করে তোলে। হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এই সাময়িক উত্তেজনার শেষ পরিণতি হলো অবসন্নতা। উপরন্তু, এর ফলে ধীরে ধীরে দেখা দিতে পারে অনিদ্রা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা বা নার্ভাসনেস, উদ্বেগ। অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরের স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনকে বাধাগ্রস্ত করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন গর্ভপাত, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রসব, কম ওজনের সন্তান প্রসব ও গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি ঘটানোর মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়াও মূত্রাশয় ও পাকস্থলীর ক্যান্সারসহ কমপক্ষে ছয় ধরনের ক্যান্সার ও উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ এই অতিরিক্ত ক্যাফেইন। পাকস্থলীর ভেতরের আবরণের ওপরও রয়েছে ক্যাফেইনের ক্ষতিকর প্রভাব। কোমল পানীয়ের আরেকটি উপাদান হলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড, যা আমরা শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় শরীর থেকে বর্জ্য হিসেবে বের করে দিই। অথচ কোমল পানীয় পানের মাধ্যমে এটি শরীরে প্রবেশ করে।

মা-বাবা-অভিভাবকরা সাবধান!_অতিরিক্ত চিনি ডেকে আনতে পারে অকালমৃত্যু

গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, স্বাদ মিষ্টি করার জন্যে প্রতি বোতল কোমল পানীয়তে মেশানো হয় গ্লুকোজ, সুক্রোজ, ফ্রুক্টোজ, স্যাকারিন ইত্যাদি। আর এক বোতল বা এক ক্যান কোমল পানীয়তে থাকা ক্যালরির পরিমাণ হলো ১৬০, যা প্রায় ১০ চামচ চিনির সমান। এ পরিমাণ ক্যালরি পোড়াতে একজন মানুষকে ভারী ব্যায়াম করতে হবে সপ্তাহে চার ঘণ্টারও বেশি। এবং স্বাভাবিকভাবেই তা করা হয়ে ওঠে না। যা শেষপর্যন্ত মেদস্থুলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর  এর পরিণতি হলো ডায়াবেটিস, মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল, গলব্লাডারে পাথর, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, রক্তনালীর স্থায়ী সংকোচন, স্ট্রোক ও অকালমৃত্যু।

গত কয়েক দশকে সারা বিশ্বে এসব রোগে অকালমৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার একটি সাধারণ কারণ হিসেবে কোমল পানীয়ের উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য-গবেষকরা।

বোস্টন চিলড্রেন্স হসপিটাল ও হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের একটি যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে, যেসব শিশু নিয়মিত এসব পানীয় পান করতে অভ্যস্ত, তাদের অতিরিক্ত ওজনধারী হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৬০ ভাগ বেড়ে যায়।

এছাড়াও সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, এসব চিনিযুক্ত পানীয় বা সুগার ড্রিংক কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। বলা হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের কোলা, সোডা, চিনিযুক্ত পানীয় যারা নিয়মিত পান করেন তাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি স্বাভাবিক একজন মানুষের চেয়ে শতকরা ৩৩ ভাগ পর্যন্ত বেশি। এ ব্যাপারে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডা. এলেইন ওরচেস্টার বলেন, এসব পানীয় নিয়মিত পানের ফলে মুটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আর এ থেকেই বাড়ে কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি। এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকান সোসাইটি অব নেফ্রোলজি জার্নালে।

এর প্রেক্ষিতে শুধু পাশ্চাত্যেই নয়, আমাদের দেশেও এখন সচেতন শিশু-বিশেষজ্ঞরা এসব ব্যাপারে মা-বাবা অভিভাবকদের কোমল পানীয়ের ব্যাপারে সাবধান করে দিচ্ছেন। ২০০৯ সালের ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসে আয়োজিত একটি সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমানে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের শিশুদের মধ্যেও যে ডায়াবেটিস ও কিডনি জটিলতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে, তার অন্যতম কারণ হলো কোমল পানীয়ের প্রতি ক্রমবর্ধমান আসক্তি। তাই যেসব মা-বাবা তাদের আদরের সন্তানটির বায়না রাখতে কোমল পানীয় কিনে দিচ্ছেন, তিনি আসলে সন্তানের অকালমৃত্যুকেই ডেকে আনছেন। চিনির মাত্রাধিক্যের কারণে সিঙ্গাপুর সরকার ১৯৯২ সালে কোকাকোলা, পেপসিসহ সকল ধরনের কোমল পানীয় স্কুল পর্যায়ে বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

হজম নয়, বদহজমের চূড়ান্ত

তথ্যগত বিভ্রান্তির ফলে আমরা অনেক সময় আমাদের জীবনযাপনে চূড়ান্ত বোকামির প্রকাশ ঘটাই। এর মধ্যে সবচেয়ে হাস্যকর বোকামিটি হচ্ছে বিয়ে বা কোনো উৎসবে ভরপেট খাওয়ার পর মহানন্দে কোমল পানীয় পান করা। অধিকাংশেরই ধারণা, এতে খাবারটা ভালো হজম হবে। এ ধারণার অসারতা বুঝতে কিছু তথ্য জানা প্রয়োজন।

খাবার সবচেয়ে ভালো হজম হয় যখন পাকস্থলীর তাপমাত্রা থাকে ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এ তাপমাত্রায় পাকস্থলীর এনজাইম বা পাচক-রস খাবার হজমের জন্যে সবচেয়ে উপযোগী অবস্থায় থাকে। কিন্তু ভরপেট খাওয়ার পরই আপনি যখন আপনার পাকস্থলীতে শূন্য থেকে চার ডিগ্রি তাপমাত্রার কোমল পানীয় ঢেলে দেন তখন স্বাভাবিকভাবেই হজমের পুরো প্রক্রিয়াটি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হজমের বদলে তখন পাকস্থলীতে থাকা খাবার গাঁজন প্রক্রিয়ায় পচতে শুরু করে। কোমল পানীয় পানের কিছুক্ষণ পর খাবার হজমের লক্ষণ মনে করে আপনি যে তৃপ্তির ঢেঁকুরটি তোলেন, তা আসলে খাবার পচনের ফলে সৃষ্ট গ্যাস।

কোমল পানীয়ে কীটনাশক!

হ্যাঁ তাই। এ অবশ্য অনেক পুরনো তথ্য। সেই ২০০৪ সালেই ভারতের অন্ধ্র-প্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের কৃষকরা তাদের জমিতে নামীদামী কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহার না করে কোকাকোলা ও পেপসি ব্যবহার করেছেন। এবং চমৎকার সুফল পেয়েছেন, পোকামাকড় সব মরে শেষ! সে বছরই নয়াদিল্লি ও হায়দ্রাবাদে ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় ধরা পড়ে কোকাকোলা-পেপসিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক রয়েছে, যা শরীরের জন্যে বিশেষত শিশু-কিশোরদের জন্যে ক্ষতিকর। পরে এ নিয়ে দিল্লির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সেন্টার ফর সায়েন্স এন্ড এনভায়রনমেন্ট বিস্তারিত গবেষণা-প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তারপর শুরু হয় সারা ভারতজুড়ে হৈ চৈ, মামলা-মোকদ্দমা যা শেষপর্যন্ত হাইকোর্ট পেরিয়ে সুপ্রিম কোর্ট অবধি গড়ায়। বিজ্ঞ বিচারপতিরা এর সত্যতা যাচাই করে রায় দেন-‘একজন ক্রেতা কী খাচ্ছেন তা জানার অধিকার তার আছে। তাই এসব পানীয়ের বোতলে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি থাকতে হবে যে, এতে কীটনাশক থাকতে পারে।’ কোকাকোলা ও পেপসি কোম্পানি তখন এটা তাদের পানীয়ের বোতলে উল্লেখ করতে রাজিও হয়।

সম্প্রতি (অক্টোবর ২০১৩) আবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও মান কর্তৃপক্ষকে বাজারের সব কার্বোনেটেড কোমল পানীয়ের ওপর নিয়মিত নজরদারি ও তা পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। এখন সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার-কৃষকরা যা কীটনাশক হিসেবে জমিতে ব্যবহার করছেন সেটাই আপনি পান করবেন কি না।

আমাদের ধর্মবিশ্বাস কী বলে?

কোকের উপাদান বিশ্লেষণ করে গবেষকরা আরো কিছু তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। এতে রয়েছে এলকোহল, যা থিতানো হয় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ১৯০৯ সালের দিকে ক্যালিফোর্নিয়ার সাদা মদও শতকরা ২০ ভাগ এলকোহল ফর্মুলাতেই তৈরি হতো। এছাড়াও বর্ণ গন্ধ ও স্বাদের জন্যে কোকে মেশানো হয় সাইট্রাস, চুনের রস ও অন্যান্য মশলা। শুধু তা-ই নয়, ১৯০৯ সাল অবধি এতে কোকেন পর্যন্ত মেশানো হতো!

২০০৭ সালে ব্রিটিশ সানডে টাইমস পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, কোকাকোলায় রয়েছে এলকোহল। কোকাকোলা কোম্পানি অবশ্য এর সত্যতা অস্বীকার করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ কারণেই হয়তো কোকাকোলা কোম্পানি গত এক শতাব্দী ধরে তাদের পানীয়ের ফর্মুলা প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে এবং এ ব্যাপারে দুজন বিচারকের আদেশকেও অমান্য করেছে তারা। উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে ভারত সরকার কোকের ফর্মুলা জানতে আগ্রহী হলে কোকাকোলা কোম্পানি দেশটি থেকে তখনকার মতো পাততাড়ি গুটিয়ে নেয়, তবু ফর্মুলা প্রকাশ করে নি। স্বাস্থ্য-গবেষকদের মতে, কোকে উপকারী কিছু তো নেই-ই, বরং এটি হাবিজাবি ক্ষতিকর মশলায় ভরা।

একালের প্রখ্যাত মার্কিন পণ্ডিত গবেষক বক্তা ও টিভি-ব্যক্তিত্ব মার্ক পেন্ডারগ্রাস্ট। ২০০০ সালে তার একটি বই প্রকাশিত হয়-‘ফর গড কান্ট্রি এন্ড কোকাকোলা’। শুরু থেকেই ব্যাপকভাবে আলোচিত হয় বইটি। আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস এটিকে সে বছরের উল্লেখযোগ্য বই হিসেবে আখ্যায়িত করে। ডিসকভার ম্যাগাজিন বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বইটির ওপর।

দীর্ঘ অনুসন্ধান ও গবেষণার ভিত্তিতে রচিত এ বইটিতে কোকাকোলাসহ অন্যান্য কোমল পানীয়ের অনেক অজানা দিক উন্মোচন করেন পেন্ডারগ্রাস্ট। তিনিই প্রথমবারের মতো বলেন, কোকাকোলার ফর্মুলায় এলকোহলের উপস্থিতি রয়েছে। তার ভাষায়-‘শিশুরাও মদ খাচ্ছে, কারণ মা-বাবারা তাদের হাতে কোকের গ্লাস তুলে দিচ্ছেন’।

এ তথ্য প্রকাশের সাথে সাথে নড়েচড়ে বসেছেন অনেকেই। বিশেষত মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট মুখপাত্রেরা বলছেন, কোকাকোলার বোতলের গায়ে এলকোহলের উল্লেখ না থাকায় মুসলমানদের পক্ষে এর উপাদান সম্পর্কে জানা সম্ভব হচ্ছে আর এই কৌশলগত গোপনীয়তার ফলে মুসলমানরা না জেনে এলকোহল খাচ্ছেন! কিন্তু এলকোহল থাকার কারণে এটি স্পষ্টতই মুসলমানদের জন্যে হারাম হয়ে গেছে। পবিত্র কোরআন ও হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-কোনো খাদ্য নিয়ে এমন সন্দেহের সম্মুখীন হলে তা অবশ্যই বর্জনীয়।

মালয়েশিয়াভিত্তিক ভোক্তাদের সংগঠন ‘উটুসান কনজ্যুমার’ থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কোকে রয়েছে এলকোহল, তাই মুসলমানদের জন্যে এটি সম্পূর্ণ হারাম’। তারাও তাদের একটি বইতে প্রকাশ করেছে কোক তৈরির গোপন ফর্মুলা। এসব তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর সচেতন মুসলমানদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলেছেন, এভাবে ফর্মুলা গোপন রেখে কোকাকোলা কোম্পানি মুসলমানদের বিভ্রান্ত করেছে ও না জেনে মদ্যপানে বাধ্য করছে। ক্রেতাদেরকে গোপনে হারাম খাওয়ানোকে তারা দেখছেন মানুষের দীর্ঘকালীন বিশ্বাসের প্রতি একটি বড় আঘাত হিসেবে।

এশিয়া-উইক সাময়িকীর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ প্রসঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার উলামা কাউন্সিল ঘোষণা করেছে-‘মুসলমানদের জন্যে এক ফোঁটা এলকোহলও হারাম।’ মালয়েশিয়ার মুসলমান সমাজকে 'Always CocaCola' জাতীয় চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে না পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন সে দেশের বিজ্ঞ সমাজ।

এখানেই শেষ নয়। মার্ক পেন্ডারগ্রাস্টের মতে, কোকাকোলার আরেকটি উপাদান গ্লিসারিন। কোকাকোলা কোম্পানিও তাদের পানীয়ে গ্লিসারিন থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে নি। গ্লিসারিন হচ্ছে তেল ও চর্বির উপজাত, যা ব্যবহৃত হয় সাবান তৈরিতে। অনেকেরই আশঙ্কা, মুসলমানদের জন্যে নিষিদ্ধ বা হারাম প্রাণী থেকেও এ চর্বি সংগৃহীত হতে পারে।

কোকে এলকোহল ও গ্লিসারিন-এর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর এখন প্রশ্ন উঠেছে, আর কী কী সন্দেহজনক উপাদান রয়েছে এসব পানীয়ে? কিন্তু জানতে চাইলেই তো আর জানা যায় না, কারণ গত এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এ নিয়ে চলছে এক অবিশ্বাস্যরকম গোপনীয়তা। বলা হয়ে থাকে, সেই ১৮৯২ সাল থেকেই কোকাকোলার মূল ফর্মুলা আজও  আমেরিকার একটি গোপন রহস্য। আর এর ফর্মুলা সংরক্ষিত আছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংকের ভল্টে। শুধুমাত্র কোকাকোলা কোম্পানির চীফ কেমিস্ট এর প্রকৃত মাল-মশলা সম্বন্ধে জানেন এবং একজন চীফ কেমিস্ট-এর অবসর গ্রহণের সময় অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে তার উত্তরসূরির কাছে এ তথ্য হস্তান্তর করা হয়। কোকাকোলা কোম্পানিকে সে দেশের আদালত এ পর্যন্ত দুবার এই ফর্মুলা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে। কোম্পানিটি এ নির্দেশ না মানার দরুন বিপুল অংকের ক্ষতিপূরণ দিয়েছে, কিন্তু ফর্মুলা প্রকাশ করে নি।

দীর্ঘ সমীক্ষার পর মালয়েশিয়াভিত্তিক পত্রিকাটি কোক এবং অন্যান্য কোমল পানীয়কে মুসলমানদের জন্য সম্পূর্ণ হারাম বলে আখ্যায়িত করে। কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্যান্য পানীয়গুলোও কমবেশি একই পদ্ধতিতেই তৈরি হচ্ছে, তাই এগুলোতেও এলকোহল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান থাকাটা খুব স্বাভাবিক। এছাড়াও সব ধরনের কোমল পানীয়ে ব্যবহৃত ইথানলও সম্পূর্ণ হারাম। কারণ, এটি একটি মাদক।

নবীজী (স) বলেন, ‘যা বৈধ তা সুস্পষ্ট, যা অবৈধ সেটাও সুস্পষ্ট। কিন্তু এর মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে কিছু সন্দেহজনক জিনিস যা অনেক মানুষই জানে না, সেগুলো থেকে যে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে, সে তার ধর্ম ও সম্মানকে নিষ্কলুষ রাখে’ (বোখারি ও মুসলিম)। মধু, ভুট্টা, বার্লি ইত্যাদিকে গাঁজিয়ে মাদক তৈরি করলে সেটা হালাল কি না, সে ব্যাপারে একবার নবীজী (স)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো। উত্তরে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, প্রতিটি মাদকই হারাম। অর্থাৎ মূলত মানবদেহের জন্যে ক্ষতিকর ও অপকারী বস্তুগুলোই ইসলামে হারাম হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

এনার্জি ড্রিংকস ॥ পরিণতি ভয়াবহ

কোমল পানীয়ের সর্বনাশা বাণিজ্যের পথ ধরে বাজার সয়লাব হয়ে উঠেছে এনার্জি ড্রিংকসে। কী আছে এতে? বিশেষজ্ঞদের মতে, কোমল পানীয়ের সব ক্ষতিকর দিকগুলো তো বটেই, তার সাথে এসব পানীয়ে রয়েছে আরো বেশি মাত্রার ক্যাফেইন, অপিয়েট ও সিলডেনাফিল সাইট্রেট-এর মতো ক্ষতিকর উপাদান। যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। এনার্জি ড্রিংকস পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌনশক্তি হ্রাস, সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা, হৃদরোগ এবং নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভপাত ও দুর্বল শিশু জন্ম দেয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।

রেডিওলজিক্যাল সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকার সাম্প্রতিক একটি গবেষণা-প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরুষরা এনার্জি ড্রিংকস পান করার একঘণ্টার মধ্যে হৃৎপিণ্ডের সংকোচনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা হৃৎপিণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব বন-এর একটি গবেষণার ফলাফলেও একই কথা বলা হয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগে এনার্জি ড্রিংক পান সংশ্লিষ্ট অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘দি সাবস্ট্যান্স এবিউজ এন্ড মেন্টাল হেলথ সার্ভিসেস এডমিনিস্ট্রেশন’ থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০০৫ সাল থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে অন্যান্য এলকোহল জাতীয় পানীয় বা মাদকের সঙ্গে গ্রহণ করা এনার্জি ড্রিংক পানে অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। এদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩৯ বছর বয়সী পুরুষদের সংখ্যাই বেশি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বছর কয়েক আগে ফ্রান্সে ১৮ বছরের এক তরুণ বাস্কেটবল খেলার পর চার ক্যান ‘রেড বুল’ খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয়, উচ্চ রক্তচাপের সাথে এনার্জি ড্রিংকসের উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন মিশে ‘সাডেন এডাল্ট ডেড সিনড্রোম’ থেকেই তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর ফ্রান্স সরকার সে দেশে রেড বুল এনার্জি ড্রিংকসটি নিষিদ্ধ করে।

সম্প্রতি দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে এনার্জি ড্রিংকস ও এদের ক্ষতিকর দিক নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় (প্রথম আলো, ৮ জানুয়ারি ২০১৩)। তাতে বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বাজার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির এনার্জি ড্রিংকসের নমুনা সংগ্রহ করার পর তা কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে। দেখা গেছে, এসব পানীয়ে এমন সব উপাদান রয়েছে যা জনস্বাস্থ্যের জন্যে হুমকির কারণ। দেশের বাজারে প্রচলিত সাত ধরনের এনার্জি ড্রিংকসে উচ্চমাত্রার ক্যাফেইনের পাশাপাশি অপিয়েট ও  সিলডেনাফিল সাইট্রেট পাওয়া গেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেখানে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রচলিত পানীয়গুলোতে প্রতি লিটারে ক্যাফেইনের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫০ মিগ্রা, সেখানে আমাদের দেশের পানীয়গুলোতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে পাঁচগুণ, এমনকি কোনো কোনোটাতে তারও বেশি পরিমাণ ক্যাফেইন পাওয়া গেছে। এছাড়াও এসব কার্বোনেটেড পানীয়ে ব্যবহৃত হয় সিনথেটিক ক্যাফেইন, যা আরো ভয়াবহ।

আর অপিয়েট ও সিলডেনাফিল নামের এ দুটি রাসায়নিক উপাদান ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২ অনুযায়ী নিষিদ্ধ। কারণ, সিলডেনাফিল সাইট্রেট ধীরে ধীরে যৌনশক্তি নিঃশেষ করে ফেলতে পারে। আর অপিয়েট ও অতিরিক্ত ক্যাফেইন মানুষকে ধীরে ধীরে কড়া নেশার জগতে ধাবিত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক এসব পানীয়ের নেশাকে আরো বড় নেশার জগতে প্রবেশের জন্যে ‘ওয়েটিং রুম’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সিলডেনাফিল সাইট্রেট মেশানো পানীয় পর্যায়ক্রমে পুরুষত্ব নষ্ট করে ফেলবে। হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে লিভার ও কিডনি।

এর সাথে একমত  পোষণ করে দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, এসব পানীয় দীর্ঘদিন পান করলে ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। গর্ভবতী নারীর সন্তান বিকলাঙ্গ হতে পারে। রুচি নষ্ট ও মেজাজ হয়ে উঠতে পারে খিটখিটে। উপরন্তু, শিশুদের জন্যে এগুলো খুবই ক্ষতিকর। এসব তথ্যের প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক এ ধরনের পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

মিথ্যা প্রচার আর মনমাতানো বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে এ যুগের মানুষ কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকসের সর্বনাশা ফাঁদে পা দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের সবারই খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে, স্বাস্থ্য আমার আর একে সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকসসহ এরকম যত কৃত্রিম ও প্রক্রিয়াজাত পানীয় রয়েছে তাতে উপকারী কিছু তো নেই-ই বরং রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর একাধিক উপাদান। তাই এসব জঞ্জাল শরীরের জন্যে সত্যিকার অর্থে অপ্রয়োজনীয়। কারণ, শরীরে পানির চাহিদা মেটাতে সাধারণ বিশুদ্ধ পানিই যথেষ্ট।

তাদের মতে, বাজারে প্রচলিত কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকসসহ সব ধরনের প্রক্রিয়াজাত পানীয় এবং প্যাকেটজাত ও বোতলজাত জুস সবই আসলে কমবেশি একই উপাদান দিয়ে তৈরি। আর এসব পানীয়তে বর্ণ, গন্ধ ও প্রিজারভেটিভ হিসেবে যা ব্যবহৃত হয়, তার অধিকাংশই মানবদেহের জন্যে ক্ষতিকর ও নীরব ঘাতকঅ

তথ্যসূত্র : মার্ক পেন্ডারগ্রাস্ট-এর লেখা ‘ফর গড, কান্ট্রি এন্ড কোকাকোলা’

           জার্নাল অব আমেরিকান সোসাইটি অব নেফ্রোলজি

           ওয়েব-এমডি ডটকম

           মাসিক গণস্বাস্থ্য (আগস্ট ২০০৪ ও জুলাই ২০০৮)