published : ১ জুন ২০১৪
মহামানবরা পৃথিবীতে এসেছেন শান্তির বাণী আর আলোকিত জীবনের দিক-নির্দেশনা নিয়ে। তাঁদের কথা ও জীবনচর্চা সমসাময়িক মানুষকে যেমন আলোকিত করেছে, তেমনি হাজার বছর ধরে পরবর্তী প্রজন্মকেও সঠিক পথ দেখিয়েছে। কোয়ান্টাম মেথড এ শাশ্বত চেতনারই একটি আধুনিক রূপ।
সহজবোধ্যতা ও কার্যকারিতা কোয়ান্টাম মেথডকে দিয়েছে সার্বজনীনতা। আর তাই বয়স, পেশা, শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সামাজিক অবস্থান যা-ই হোক, প্রত্যেকে এর চর্চায় উপকৃত হচ্ছেন সমানভাবে। ফলে সম্ভব হয়েছে একক প্রচেষ্টায় ২২ বছরে পৌনে চারশটি কোর্স—যা বিশ্বে মেডিটেশনের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।
কোয়ান্টাম পরিবারের সদস্যরাই শুধু নন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ চেতনার সাহচর্যে এসে লাখো মানুষ বদলে ফেলেছেন তাদের জীবন। শারীরিক মানসিক আর্থিক সামাজিক আত্মিক—বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাকে যারা মেনে নিয়েছিলেন নিয়তি হিসেবে; কোর্সে অংশগ্রহণ করে, মেডিটেশন ও অটোসাজেশন চর্চা করে তারাই নিজেদের আবিষ্কার করছেন নতুনরূপে। অভাবকে প্রাচুর্যে, রোগকে সুস্থতায়, ব্যর্থতাকে সাফল্যে রূপান্তরিত করে লাভ করছেন সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যস্ত সুখী জীবন।
বদলে যাওয়ার অসীম ক্ষমতা রয়েছে প্রতিটি মানুষের মধ্যেই। আমাদের মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ যে সূক্ষ্ম কর্মপ্রবাহ, তাতে রয়েছে সঙ্ঘবদ্ধতার বিস্ময়কর নিদর্শন। মস্তিষ্ক যে এত জটিল প্রক্রিয়ায় কাজ করতে পারছে, এর মূলে রয়েছে সঙ্ঘবদ্ধতা। আমাদের মস্তিষ্কে রয়েছে ১০০ বিলিয়ন নিউরোন সেল। একটি নিউরোনের সাথে আরেকটি নিউরোনের সংযোগ-সম্ভাবনা অসীম। এই নিউরোন সেলগুলো একটি আরেকটির সাথে সংযোগ স্থাপন করে প্রতিনিয়ত। এ সংযোগ যত বাড়বে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও তত বাড়বে। সংযোগায়নের এ ক্ষমতা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে ডা. হার্বার্ট বেনসন বলেছেন, ২৫-এর পাশে ৩০টি শূন্য বসালে যে সংখ্যা হবে, একটি নিউরোন সে পরিমাণ নিউরোনের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। যদি এই সংখ্যক কাগজ একটার ওপর একটা রাখা হয়, তবে তা উঁচু হতে হতে মহাবিশ্বে আমাদের জানা সীমানা পার হয়ে যাবে, তবু কাগজ ফুরোবে না। নতুন বিশ্বাস কিংবা নতুন ধারণার সাহায্যে মস্তিষ্কে নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করতে পারলে এ সংযোগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এভাবেই মস্তিষ্কের কর্মকাঠামো পরিবর্তিত হয়ে উপহার দেয় জীবনের নতুন বাস্তবতা।
দীর্ঘ দুদশকের নীরব ও গতিময় কাজ কোয়ান্টামকে দিয়েছে এক ভিন্ন পরিচিতি। কোয়ান্টাম পরিবারের গন্ডি পেরিয়ে এর সঠিক জীবনদৃষ্টিমূলক কালোত্তীর্ণ বাণীগুলো এখন মানুষের মুখে মুখে। ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’, ‘দৃষ্টিভঙ্গি বদলান জীবন বদলে যাবে’, ‘সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যস্ত সুখী জীবন’—কথাগুলো যেন প্রতিটি মানুষের মৌলিক প্রয়োজনকেই উপস্থাপন করছে। জীবনঘনিষ্ঠ এ বাণীগুলো তাই সাধারণ মানুষ গ্রহণ করেছেন। চর্চা করেছেন। আর নিয়মিত এর অনুশীলন করে অর্জন করছেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য।
কোয়ান্টামের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনাকে এখন অনেকেই দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করছেন আনন্দচিত্তে। খাদ্যাভ্যাসের বেলায় দুধ-চায়ের পরিবর্তে লিকার চা, সফট ড্রিংকসের পরিবর্তে ডাব বা লেবু পানি, সকালে ভরপেট নাশতা ও রাতে হালকা খাবার, রমজান মাসে ইফতার ও সেহরিতে হালকা খাবার; ফাস্টফুড, জুস, কৃত্রিম ও প্যাকেটজাত খাবার বর্জন ইত্যাদি স্বাস্থ্যসম্মত ও বৈজ্ঞানিক খাদ্যাভ্যাসগুলো এখন অনুসরণ করছেন স্বাস্থ্যসচেতন অনেক মানুষ।
সফট ড্রিংকস বা কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস—এসব ক্ষতিকর পানীয় নিয়ে এখন সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। অথচ কোয়ান্টাম এ নিয়ে সতর্ক করে আসছে দেড় যুগ আগে থেকেই। কোমল পানীয়ের প্রতি সাধারণ মানুষের আসক্তিই কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, অকালবার্ধক্য, হৃদরোগ, হজমে সমস্যা, মেদস্থুলতা ইত্যাদির জন্যে দায়ী। কোয়ান্টাম পরিবারের সদস্যদের ব্যাপকভাবে এসব ক্ষতিকর পানীয় বর্জন এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতাকে আরো গতিশীল করেছে।
সময়কে অনুসরণ করা, সর্বাবস্থায় শুকরিয়ার চর্চা, কুশল জিজ্ঞাসার উত্তরে ‘শোকর আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি’ বলা, কথা-আচরণ-পোশাকে শালীনতাবোধ, আলোচনা অনুষ্ঠান ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখা, ধূমপান বর্জন ইত্যাদি শিষ্টাচারগুলো ধীরে ধীরে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে! কোয়ান্টাম পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি অন্যান্যদের মাঝেও।
ব্যক্তিগত জীবনে কোয়ান্টাম পরিবারের সদস্যদের সহজ ও মিতব্যয়ী জীবনযাপন এবং সুখী পারিবারিক পরিবেশ অনুপ্রাণিত করছে চারপাশের মানুষকে। এর পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, বাহুল্য, ব্র্যান্ডপ্রীতি কিংবা চলতি ফ্যাশনের স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে না দিয়ে সবার মধ্যে জাগ্রত হচ্ছে পরিমিতিবোধ ও দানের প্রবণতা। সৃষ্টির সেবায় মাটির ব্যাংকে দান জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বহু পরিবারে।
সামাজিক অনুষ্ঠানে উপহার দেয়া/ নেয়া থেকেও এখন বিরত থাকছেন অনেকেই। এক্ষেত্রে কোয়ান্টাম দৃষ্টিভঙ্গি হলো, কোনো উপলক্ষ বা নির্দিষ্ট দিনে নয়, সামর্থ্য অনুযায়ী প্রিয়জনকে তার প্রয়োজনীয় ও পছন্দনীয় উপহার দেয়া যায় যেকোনো সময়ে।
পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও বিনয় কোয়ান্টাম পরিবারের সদস্যদের মাঝে সৃষ্টি করেছে এক অচ্ছেদ্য মমতার বন্ধন। বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের সুযোগসুবিধা ও প্রয়োজনের দিকে মনোযোগী হওয়া—এই চিরায়ত গুণগুলো এ পরিবারের তরুণ-তরুণীদের দিয়েছে আলাদা পরিচিতি। ফলে তারাও দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করছেন শিষ্টাচারের শিক্ষাকে।
জড়তা-সংকোচ দূর করে সবার সাথে যোগাযোগ বাড়ানো এবং সর্বস্তরের মানুষের সাথে মেশার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে সবার মধ্যে। সেবা নেয়ার পাশাপাশি সেবা দেয়ার মানসিকতা এবং সেইসাথে বেড়েছে অন্যের জন্যে আন্তরিক প্রার্থনা করার আকাঙ্ক্ষা।
মাতৃভাষা বাংলায় পবিত্র বেদ, গীতা, ধম্মপদ ও বাইবেল–এর মর্মবাণী এবং কোরআনের মর্মস্পর্শী দোয়াসমূহ শোনার এক অপূর্ব সুযোগ করে দিয়েছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ‘হে মানুষ শোনো’, ‘পবিত্র ধর্মবাণী’ ও ‘আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী’ অডিও সিডি। কোয়ান্টাম পরিবারের সদস্যরা প্রতিদিন ধর্মীয় বাণীর এ সিডিগুলো নিজেরা শুনছেন, যার যার ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী নিমগ্ন হচ্ছেন প্রার্থনায়। উপহার হিসেবে বিতরণ করছেন পরিচিতদেরকেও।
এছাড়া প্রাত্যহিক মেডিটেশন চর্চা কোয়ান্টাম পরিবারের সদস্যদের মাঝে সৃষ্টি করেছে এক ভিন্ন মাত্রা। সুস্থতা, প্রশান্তি ও কর্মব্যস্ত সুখী জীবনের অনুরণন পৌঁছে গেছে ঘরে ঘরে।