বদলে যাচ্ছে মানুষ, বদলে যাচ্ছে জাতি, এবার বদলে যান আপনি

মানুষ বদলে যাচ্ছে। হতাশা বিষণ্নতা নেতিবাচকতার মতো আত্মঘাতী সব আবেগের শৃঙ্খল ভেঙে বিশ্বাস ও উদ্যমের শক্তিতে জেগে উঠছে চারপাশের লক্ষ মানুষ। ধ্যান ও ইতিবাচকতার পথ ধরে ব্যক্তি মানুষের এ পরিবর্তনই ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে সমাজ ও দেশে। যার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠছে আমাদের জাতিগত পরিবর্তনের শুভসম্ভাবনা।

ইতিহাস বলে, আমরা ছিলাম ধ্যানী জ্ঞানী অভিযাত্রী ও শিল্পোন্নত এক সুখী-সমৃদ্ধ জাতি। আমাদের নৈতিক সংস্কৃতিই ছিল এ উৎকর্ষের মূল প্রেরণা। আতিথেয়তায় উদার ও সম্পদে প্রাচুর্যবান এ জনপদে তাই বৈষয়িক স্বার্থে বার বার এসে ভিড় করেছে নানা জাতির মানুষ। একসময় এ সুযোগেই এই অঞ্চলে চেপে বসে কয়েকশ বছরের সাম্রাজ্যবাদী শোষণ।

আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের উদারনৈতিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং এর গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গগুলো। আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায় ধ্যান। নির্বাসন ঘটে মুক্ত জ্ঞানচর্চা, বিশ্বাস এবং জীবন সম্পর্কে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির। ফলে জাতি হিসেবে আমরা হয়ে পড়ি দরিদ্র, হতাশ ও ঋণজর্জরিত। সর্বগ্রাসী নেতিবাচকতা আক্রান্ত করে এ জাতির কমবেশি প্রতিটি মানুষকেই। মানুষ হিসেবে এবং জাতি হিসেবে আমরাও যে কিছু করতে পারি, এ বিশ্বাসটুকু পুরোপুরি হারিয়ে যায় আমাদের জীবন থেকে।

এই যখন পরিস্থিতি, তখন আশির দশকের গোড়ায় যোগ মেডিটেশন কেন্দ্র এবং ১৯৯৩ সালে এর বিকশিত রূপ কোয়ান্টাম মেথডের মধ্য দিয়ে এক ভিন্ন ধারার সূচনা ঘটে দেশে। জাতীয় জীবনে প্রথমবারের মতো এখান থেকেই প্রবল বিশ্বাসে ধ্বনিত হয় ইতিবাচক ও আশাবাদী জীবনের আহবান‘মানুষ যা ভাবতে পারে, যা বিশ্বাস করতে পারে, তা অর্জন করতে পারে। তাই আসুন, মেডিটেশন করুন। চিন্তা স্থির হবে, লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট হবে, মস্তিষ্ককে সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। আপনিও এগিয়ে যাবেন আত্মবিশ্বাসী ও সুখী-সফল জীবনের দিকে।’

সময়ের সাথে সাথে এ চেতনার সাথে নানাভাবে সম্পৃক্ত ও একাত্ম হলেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। লাভ করলেন সঠিক ও ইতিবাচক জীবনদৃষ্টি এবং আলোকিত জীবনের চিরায়ত দর্শন ও সাফল্যসূত্র। পেলেন নিজেদের জীবনকে বদলে নেয়ার শক্তি আশা বিশ্বাস উদ্যম। আর এ অনুরণন একটু একটু করে ছড়িয়ে গেল চারপাশে। দৃষ্টিভঙ্গি বদলান জীবন বদলে যাবে, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’ এসব কথা স্থান করে নিল সর্বস্তরের মানুষের মুখে মুখে ও নিত্য-জীবনাচারে।

আর, যে ধ্যান হয়ে পড়েছিল অবহেলিত, ধীরে ধীরে ঘরে বাইরে অফিসে পার্কে দেশের সর্বত্রই আধুনিক মানুষের দৈনন্দিন জীবন-অনুষঙ্গে পরিণত হলো তা। শুধু দেশেই নয়, সম্প্রতি জাতিসংঘ ২১ জুনকে ঘোষণা করেছে ‘বিশ্ব যোগ দিবস’ হিসেবে। যা ইঙ্গিত দেয় এক নতুন সম্ভাবনার, নতুন এক আলোকিত দিগন্তের।

এ ধারাবাহিকতায় বিশ্বাস ধ্যান ইতিবাচকতা লক্ষ প্রাণে ঘটিয়েছে এক অভূতপূর্ব আত্মজাগরণ। ব্যক্তির প্রভাব পড়েছে সমষ্টিতে। বদলে যাচ্ছে দেশ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতি ও প্রবৃদ্ধি এবং এর সম্ভাবনা নিয়ে সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্তগুলোই এর প্রমাণ।

জাতি হিসেবে আমাদের আজকের এই অগ্রযাত্রার মূলে রয়েছে একদল আশাবাদী স্বপ্নপ্রাণ মানুষের সঙ্ঘবদ্ধ বিশ্বাস। দু-যুগ আগেও ব্যক্তিগত আলাপে, সংবাদপত্রের খবরে-কলামে, বক্তৃতায় সর্বত্রই যখন হতাশার সুর, কোথাও ছিল না কোনো আশার বাণী, কোয়ান্টাম সেদিনও দৃপ্ত বিশ্বাসে বলেছে, ‘এক সমৃদ্ধ ও মহান জাতির উত্তরসূরি হিসেবে নিকট-ভবিষ্যতে আমরা পরিণত হবো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দশ জাতির একটিতে।’

আর এ নতুন স্বপ্নে চাই তরুণ প্রাণের আস্থা ও অংশগ্রহণ, আগামীতে তারাই তো নেতৃত্ব দেবে জাতিকে। তাই স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলো ১৯৯৮ সালে ‘মনছবি বাংলাদেশ ২০২৫’।

এর দু-বছরের মধ্যেই বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ স্থান করে নিল সেরা দশে! এবং ইতোমধ্যেই ধান, বিভিন্ন ফল ও মাছ উৎপাদন, পোশাক রপ্তানিসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন-সূচকে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে প্রথম দশে।

জাতীয় নেতৃত্বও আস্থাবান হয়ে উঠেছেন আত্মনির্ভরশীলতার দর্শনে। দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে। বদলে গেছে সংবাদপত্রে প্রতিবেদনের ধরন ও বক্তব্য।

সদ্য প্রকাশিত এক বিশ্বজরিপে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিক থেকে দ্বিতীয় এবং আশাবাদী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে প্রথম স্থানে। শুধু তা-ই নয়, এখন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরাও কোয়ান্টামের মতোই বিশ্বাস করছেন, বিপুল জনগোষ্ঠী আমাদের জন্যে বোঝা নয়, বরং আশীর্বাদ। সবমিলিয়ে বলা যায়, হতাশার সুর আজ সর্বত্রই রূপ নিয়েছে আশার গানে।

প্রিয় সুহৃদ! মানুষ বদলাচ্ছে, জাতি বদলাচ্ছে। আপনি কেন পিছিয়ে থাকবেন? জীবন বদলের এ অনন্য অভিযাত্রায় আপনাকে স্বাগতম। এবার বদলে যাক আপনার জীবন। লাখো মানুষের মতো আপনিও বলে উঠুন, ‘সারা পৃথিবী আমার। যেখানে দরকার সেখানে যাব। যা প্রয়োজন তা-ই নেব। যা চাই তা-ই পাব। আমি পারি আমি করব।’