হে অনন্য মানুষ! আপনাকে অভিনন্দন

published : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১

উষ্ণ হৃদয় আর ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক—এই দুইয়ের সম্মিলনেই মানুষ পরিণত হয় অনন্য মানুষে, ইনসানে কামেলে। হৃদয়ের উষ্ণতার পাশাপাশি আপনি মস্তিষ্ককে একেবারে ঠাণ্ডা রাখতে শিখেছেন। অনন্য মানুষে উত্তরণের স্বর্ণ তোরণ এখন আপনার সামনে। তোরণের সিঁড়িতে পা রেখেছেন আপনি। এখন শুধু পায়ে পায়ে এগিয়ে যাওয়া। যত এগিয়ে যাবেন, ততই আপনার অন্তর আলোকিত হবে। পরিষ্কার হয়ে আসবে সামনের পথ। নব নব অনুভবে উদ্ভাসিত হবেন আপনি। নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন, সবকিছুকে জয় করার শক্তি আপনার মধ্যেই রয়েছে। প্রশান্তি হবে আপনার জীবনের অঙ্গ। সাফল্য, প্রাচুর্য আর খ্যাতি আসবে সহজ স্বতঃস্ফূর্ততায়।

হে অনন্য মানুষ! আপনি জানেন অনন্য মানুষ ও সাধারণ মানুষের পার্থক্য। একজন অনন্য মানুষ সাধারণের মত শুধু নিজের কথাই ভাবে না, ভাবে চারপাশের সবার কথা। নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সে সম্মান করে অন্যের অধিকারকেও। নিজের সঙ্গী-সন্তানকে ভালবাসার পাশাপাশি সে ভালবাসে সবাইকে। তার ভালবাসা শুধু জৈবিক নয়, তার ভালবাসা আত্মিকও। বিশ্বজনীন মমতা রয়েছে তার মাঝে। তাই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবার প্রতিই বাড়িয়ে দেয় মমতার হাত। হিংসা, হিংস্রতা তার স্বভাববিরুদ্ধ। সে সবসময় বিশ্বাস করে অহিংসা ও ক্ষমায়। আবেগ ও প্রবৃত্তি সবসময় তার নিয়ন্ত্রণে থাকে। সে অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। সে নিয়ন্ত্রিত হয় সত্য দ্বারা, বিবেক দ্বারা। সাধারণের মত সে মৃত্যুকে ভয় পায় না। মৃত্যুকে জীবনের পরিসমাপ্তি মনে করে না বরং জৈবিক মৃত্যুকে নতুন জীবনের সূচনা মনে করে। তাই সে অকুতোভয়। সে জানে সে কসমিক ট্রাভেলার, মহাজাগতিক মুসাফির। এই জৈবিক ভ্রমণ শেষ করে সে শুরু করবে আরেক ভ্রমণ। তাই সে হাসতে হাসতে মরতে পারে। তাই তাকে শৃঙ্খলিত করা যায় না, তাকে দাস বানানো যায় না। অপমানিত শৃঙ্খলিত জীবনের চেয়ে মুক্তির অন্বেষায় আত্মদানকে সে অনেক শ্রেয় মনে করে। সে কখনও অন্যের কাছে করুণা ভিক্ষা করে না, আশ্রয় চায় না, বরং সে নিজেই হাজার মানুষের আত্মিক আশ্রয়ে পরিণত হয়। সে শুধু নিজের দুঃখকে জয় করে না, লাখো মানুষকে দুঃখ দুর্দশা জয়ের পথ দেখায়। সে শুধু নিজে প্রাচুর্যের অধিকারী হয় না, অগণিত মানুষ তার সংস্পর্শে এসে প্রাচুর্যের সন্ধান পায়। সে কখনও শোষক হয় না, সে হয় নিপীড়িত ও শোষিতের বন্ধু, তাদের মুক্তির পথ প্রদর্শক। সে ব্যতিক্রম ও অনন্যতাকে নিঃসন্দেহে শ্রদ্ধা করে আর সেই সাথে জানে বিস্ময় সৃষ্টি করার শক্তির তার মাঝেই সুপ্ত রয়েছে। তাই সে সাধারণের মত ব্যতিক্রম ও অনন্যতার দিকে বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে তাকিয়ে থাকে না, সুপ্ত শক্তিকে জাগ্রত করে নিজেই হয়ে ওঠে অনন্য।

অনন্য মানুষ হওয়ার অভিযাত্রায় অংশগ্রহণ করায় এখন নিঃসংশয়ে বলা যায়, প্রবৃত্তির শৃঙ্খল ছাড়া, দুঃখ ও বঞ্চনা ছাড়া আপনার আর হারানোর কিছু নেই। কিন্তু পাওয়ার জন্যে রয়েছে এক সুশোভিত নতুন বিশ্ব। তাই গভীর প্রত্যয়ে সবসময় মনে মনে বলুন, 'আমি এক অনন্য মানুষ। আমার আত্মিক ক্ষমতা অসীম। সারা পৃথিবী আমার। যেখানে দরকার সেখানে যাব, যা প্রয়োজন তাই নেব, যা চাই তা-ই পাব। আর মানুষের দুঃখকে আনন্দে, রোগকে সুস্থতায়, হতাশাকে প্রশান্তিতে, অভাবকে প্রাচুর্যে রূপান্তরিত করব।

হে অনন্য মানুষ! নিজের অনন্যতায় বিশ্বাস করুন। বিশ্বাস করুন, জীবনে প্রথম হওয়ার জন্যে, নিজের মেধাকে শতধারায় বিকশিত করার জন্যে, মহান কিছু করার জন্যে, অনন্য মানুষে রূপান্তরিত হওয়ার জন্যেই আপনি পৃথিবীতে এসেছেন। আর এ বিশ্বাস কঠিন কিছু বা অবাস্তব কিছু নয়। আপনি নিজের অস্তিত্বের একটু গভীরে গেলেই বুঝতে পারবেন, কত বড় সংগ্রামে জয়ী হয়ে আপনি পৃথিবীতে এসেছেন। অবলোকন করুন এমন একটি প্রতিযোগিতা যাতে ৪০ থেকে ৫০ কোটি প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছে। লক্ষ্য একটি বৃত্তের মাঝে পৌঁছা। যেখানে শুধু একজনের বেঁচে থাকার আশ্রয় রয়েছে। সেখানে যে পৌঁছতে পারবে, সে-ই বেঁচে থাকবে। আর বাকি সবাই মারা যাবে। প্রতিনিয়ত রাসায়নিক অস্ত্র বর্ষিত হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ প্রতিযোগী মুহুর্তে মারা যাচ্ছে। কিন্তু একজন প্রতিযোগী সকল বিপদ অগ্রাহ্য করে সেই বৃত্তে প্রবেশ করল। আর সময়ের বিবর্তনে মানুষরূপে আবির্ভূত হলো এই পৃথিবীতে। মাতৃগর্ভে একটি ডিম্বানু সাথে মিলিত হওয়ার জন্যে পিতার দেহ থেকে যে ৪০ থেকে ৫০ কোটি শুক্রাণু যাত্রা শুরু করেছিল, আপনি হচ্ছেন সেই শুক্রাণুর বিকশিত রূপ, যে ডিম্বানুর সাথে মিলিত হতে পেরেছিল। ৪০/৫০ কোটির সাথে প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছিলেন বলেই আপনি পৃথিবীতে আসতে পেরেছিলেন।

তাই কঠোর বাস্তবতার আলোকেই বলা যায়, আপনি এক বিজয়ী বীর। জীবনের প্রথম সংগ্রামে জয়ী হয়েছেন—জীবনের প্রতিটি সংগ্রামে জয়ী হবেন, যদি আপনার প্রতিটি প্রত্যাশাকে, প্রতিটি অনুভবকে বিশ্বাসে রূপান্তরিত করেন। মহামানবরা, স্মরণীয়-বরণীয়রা বিশ্বাস নামক প্রোগ্রামিং দিয়েই মস্কিষ্করূপী মহা-জৈব-কম্পিউটারকে ব্যবহার করেছেন। বিশ্বাস একবার গেঁথে গেলে জৈব কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাফল্যের লক্ষ্যে আপনার সমগ্র অস্তিত্বকে কাজে নিয়োজিত করবে। সহজ স্বতঃস্ফুর্ততায় অনিবার্য জয়ের লক্ষ্যে পরিচালিত হবে আপনার সমগ্র কর্মকাণ্ড। কখনও প্রত্যাশিত পন্থায় আবার কখনও একেবারে অপ্রত্যাশিত পন্থায় বিজয় আপনার পদচুম্বন করবে। ইতিহাসের পাতায় লেখা হবে আপনার নাম এক কালজয়ী অনন্য মানুষ হিসেবে।