published : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১১
বিজ্ঞাপনের কী জাদু! ‘শক্তিমান’ হওয়ার নেশায় কেউ ‘লাল মহিষ’-এ মজে যাচ্ছি, কেউ বা ‘কালো ঘোড়া’-র পেছনে দৌড়াচ্ছি! কেউ হতে চাই ‘বাঘ’, কেউ আবার আরও এক কাঠি সরেস- টার্গেট করি ‘হাঙর’-কে! এসব আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন চোখে ধন্দ লাগিয়ে দেয়—মনে হয় এটা খেলে এক্ষুণি যেন অসুরিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যাবো; তা আমি বালক হই, আর বুড়োই হই!
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো এনার্জি ড্রিংকস নিয়ে মাতামাতি করলেও উন্নত বিশ্ব ইতোমধ্যেই এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হয়ে একের পর এক ব্র্যান্ডকে নিষিদ্ধ করছে। সম্প্রতি ফ্রান্সে ১৮ বছর বয়সী এক কিশোর বাস্কেটবল খেলার পর ৪ ক্যান ‘রেড বুল’ খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ময়না তদন্তে মৃত্যুর কারণ হিসেবে বলা হয় উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে এনার্জি ড্রিংকসের উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন মিশে ‘সাডেন এডাল্ট ডেড সিনড্রোম’ থেকেই এ মৃত্যু হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ফ্রান্স সরকার ‘রেড বুল’কে সে দেশে নিষিদ্ধ করে।
প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, কী আছে এনার্জি ড্রিংকসে? ক্ষতিকর অন্যান্য উপাদানের পাশাপাশি আছে উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন যা মৃগীরোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দেহে ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইনই যথেষ্ট। একজন নারীর জন্যে এ মাত্রা ৩০০ মিলিগ্রাম। অথচ একটা এনার্জি ড্রিংকের ক্যানেই থাকে ৩৬০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন। ধূমায়িত এক কাপ কফিতে থাকে ৮৫ থেকে ১৩৫ মি.গ্রা. ক্যাফেইন। সেখানে সমপরিমাণ এনার্জি ড্রিংকসে যে কেবল এর চেয়ে ২-৩ গুন বেশি ক্যাফেইন থাকে তা নয়, চিনিও থাকে খুব বেশি; এক কাপ পরিমাণে কমপক্ষে পাঁচ চা-চামুচ। আবার অ্যালকোহল-ও কিন্তু এনার্জি ড্রিংকসের আরেকটি উপাদান। তবে দুঃসংবাদ হলো নন-অ্যালকোহলিক এনার্জি ড্রিংকসেও কিন্তু একই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
এনার্জি ড্রিংকসের ক্ষতিকর প্রভাবের মধ্যে আছে নার্ভাসনেস, বদমেজাজ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, পেশির টান, অনিদ্রা, মাথাব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট। দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের মধ্যে আছে স্নায়বিক দুর্বলতা এবং হিস্টেরিয়া। এছাড়া আরেকটা ক্ষতিকারক দিক হলো সন্তানধারণে জটিলতা। যেসব নারী বা পুরুষ এনার্জি ড্রিংকসে অভ্যস্ত তাদের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। তাছাড়া দুর্বল শিশু বা সময়ের আগেই বাচ্চা হয়ে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে।
আরেকটা সতর্ক সংবাদ হলো একবার হয়ে গেলে এ আসক্তির পরিমাণ ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। এনার্জি ড্রিংকস আসলে মাদকাসক্তির কালো দরজাকেই উন্মুক্ত করে। তাই বলি, যারা বেশি বেশি ‘পান’-এ প্রীত, তারা একবার ভবিষ্যতের কথাও ভেবে দেখবেন যেন।
References:
Energy drinks: busting your health for the buzz. (2008). Pennsylvania Medical Society. Retrieved from http://newswise.com/articles/view/544512/
Lowe, M. R. (2010). Popular energy drinks have hidden risks. In E. Lies (Ed.), link.reuters.com/tag35q. Retrieved from http://www.reuters.com/assets/print?aid=USTRE6AE0BU20101115
Norfolk, K. (2011, May). Energy drinks release bad side effects. Retrieved from http://newsinabox.net/1464/energy-drinks-release-bad-side-effects.html
Pupil’s facing energy drink ‘ban’. (2009). Retrieved from http://news.bbc.co.uk/2/hi/uk_news/england/sussex/8295914.stm