ব্যর্থতার বিবমিষা

published : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১

এখন আপনি খারাপ করেছেন। তার মানে এই নয় যে আপনি আর কখনো ভালো করতে পারবেন না। বিজ্ঞানী টমাস এডিসনকে স্কুলে তার শিক্ষকরা মূর্খ বলে ডাকতেন পড়া পারতেন না বলে। আইনস্টাইনের ছিল কথা বলায় সমস্যা। স্কুলে ভর্তি হন ৯ বছর বয়সে। ফোর্ড মটরসের আগে হেনরি ফোর্ড তার দুদুটো গাড়ির ব্যবসায় ব্যর্থ হন।

কম্পিউটার নিয়ে নাড়াচাড়া করলে আপনি নিশ্চয়ই এইচপি বা হিউলেট-প্যাকার্ড নামটির সাথে পরিচিত। পৃথিবীর বৃহত্তম এই টেকনোলজি কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা বিল হিউলেট এবং ডেভিড প্যাকার্ড তাদের জীবিকা শুরু করেছিলেন লেটুস পাতা তোলা এবং ওজন কমানোর ওয়েট মেশিনের দুটি আইডিয়া নিয়ে। কিন্তু তা-ও ব্যর্থ।

সর্বকালের সেরা বাস্কেটবল তারকা মাইকেল জর্ডান তার স্কুলের বাস্কেটবল টিমে খেলার সুযোগ পান নি লম্বায় খাটো বলে। কঠোর অনুশীলন আর পরিশ্রমের জোরে তিনি লাভ করেন সে সুযোগ। মাটি থেকে লাফিয়ে চোখের নিমিষে তিনি যেভাবে বল বাস্কেটে ঢোকাতেন তা দেখে তার নাম দেয়া হয়েছিল এয়ার জর্ডান।

সামান্য রোজগারের জন্যে অ্যানিমেশনের জনক ওয়াল্ট ডিজনিকে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়েছে একজন অভিনেতা বা খবরের কাগজের আর্টিস্ট এবং অবশেষে একজন ড্রাইভার হওয়ার আশায়। হয় নি কোনোটাই। মুখের ওপর সম্পাদক বলে দিয়েছেন এরকম বাজে আইডিয়া নিয়ে আর্টিস্টের চাকরি তিনি পাবেন না।

এ বছর কোথাও চান্স পান নি। কেন ভাববেন জীবনটা ব্যর্থ হয়ে গেল? জীবন অনেক বড়। এত সহজে তা ব্যর্থ হয়ে যায় না।

বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু। জন্মেছিলেন অবিভক্ত বাংলার ময়মনসিংহে। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ারস কলেজ থেকে বিএ করার পর মেডিসিন নিয়ে পড়তে যান বিলেতে। কিন্তু অসুস্থতার কারণে ১ বছর পড়েও ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন। দেশে ফিরে শুরু করেন অধ্যাপনা। কিন্তু আবারও বাধা। প্রেসিডেন্সি কলেজে তখনকার নিয়ম ছিল বাঙালি হলে তার বেতন হবে ইংরেজ অধ্যাপকের বেতনের তিন ভাগের দুই ভাগ। আর নতুন যোগদান করেছেন বলে জগদীশের বেতন হলো মাত্র ১ ভাগ।

এ বৈষম্যের প্রতিবাদে টানা ৩টি বছর জগদীশ চন্দ্র বসু কলেজ থেকে কোনো মাইনে নেন নি। শেষ পর্যন্ত তার ব্যক্তিত্বের কাছে নতি স্বীকারে বাধ্য হলো কর্তৃপক্ষ। নিয়ম তো পাল্টালোই, আর চাকরিতে যোগদানের তারিখ থেকে পুরো ৩ বছরের মাইনে পুরোপুরি বুঝিয়ে দিলো তাকে। বেতার যন্ত্র, গাছের প্রাণ ইত্যাদি আবিষ্কারসহ আধুনিক সভ্যতায় তার অবদান অনেক।

তার গবেষণাকর্মের প্যাটেন্টিং করানো তিনি পছন্দ করতেন না। বাণিজ্যিক সুবিধা আদায়ের চেয়ে তার গবেষণাকে ভিত্তি করে আরেকজন আরো এগিয়ে যাক এটাই চাইতেন তিনি। এ থেকেই বোঝা যায় যে তিনি কত বড় মাপের বিজ্ঞানী ছিলেন। মেডিকেল স্কুল থেকে ঝরে না পড়লে আজ আমরা বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুকে না পেয়ে পেতাম জনৈক ডাক্তার জগদীশ চন্দ্র বসুকে!