আমাদের অতীত মহান ছিল, আমাদের ভবিষ্যতও মহান হবে যদি…

“মহাকাশ মহাদেশ মহাসাগর ঘুরে যদি হও কখনো ক্লান্ত
বাংলার শীতল ছায়াতলে এসে জিরিয়ে নিও, হবে প্রশান্ত”

বাংলার আছে সুখ-সমৃদ্ধি-প্রাচুর্যের এক মহান ইতিহাস যা অনেকেই জানেন না 

ব্রিটিশদের ভারতবর্ষ দখলের সময়ও প্রাচুর্যের দিক থেকে আমরা ছিলাম বিশ্বের ৬ষ্ঠ সমৃদ্ধ জাতি। ওয়ার্ল্ড জিডিপিতে এই উপমহাদেশের অবদান ছিল ২২-২৩%, যার মধ্যে শুধু বাংলারই অবদান ১২ শতাংশ! যেখানে ইংল্যান্ডের জিডিপি ছিল ওয়ার্ল্ড জিডিপির মাত্র ১ শতাংশ! 

বাংলার প্রাচুর্য দেখে চীনা পরিব্রাজক মা-হুয়ানের সঙ্গে আগত এক দূতের মন্তব্য: ‘বঙ্গের মাটিতে সাত বেহেশত সোনা ছড়িয়ে রয়েছে!’

আর মুঘল সম্রাট হুমায়ুন তৎকালীন বঙ্গের রাজধানী গৌড়ের ধন-সম্পদ দেখে বিস্মিত হয়ে এর নামকরণ করেন জান্নাতাবাদ। 

মধ্যযুগে আরব, ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান, তুর্কিসহ মধ্য এশিয়ার লোকেরা বাংলায় আসত রুটি-রুজির সন্ধানে। এরপর পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ, ব্রিটিশসহ ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের অসংখ্য মানুষ চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সন্ধানে এখানে এসেছে।

বাংলার অর্থনীতি কতটা সমৃদ্ধ ছিল এ থেকেই বোঝা যায়।

আমরা ছিলাম শিল্পোন্নত জাতি 

বিশেষত বস্ত্রশিল্পে বাংলার সুখ্যাতি ছিল বিশ্বজোড়া। মার্কো পোলো, ইবনে বতুতা, সিজার ফ্রেডারিক বাংলায় উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার কাপড়ের কথা বলেছেন।

মা-হুয়ান এখানে পাঁচ-ছয় রকমের কার্পাস বস্ত্র ও মখমলের কাপড়ের কথা বর্ণনা করেছেন।

ইতালির পর্যটক বার্থেমা বলেছেন, পৃথিবীর কোনো দেশে আমি এতো সুতিবস্ত্র দেখি নি। তার মতে, রেশম দ্রব্য বাংলার প্রধান একটি রপ্তানি দ্রব্য ছিল।

তবে সবচেয়ে বেশি বলতে হয় মসলিনের কথা। টেক্সটাইল টেকনোলজির সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শন এই মসলিন। আজ পর্যন্ত তুলা থেকে এর চেয়ে মিহি কাপড় তৈরি করা সম্ভব হয় নি। বাংলার তাঁতীরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ঢাকাই মসলিন বয়ন করেছে। বাংলায় তাঁতীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮০ হাজার, যাদের অধিকাংশই নারী।

এছাড়াও, ইবনে বতুতা বাংলায় জাহাজ শিল্পের ব্যাপক উন্নতির কথা বলেছেন। তখন চট্টগ্রামে জাহাজ তৈরি হতো। চট্টগ্রামে যে ‘বহদ্দার হাট’ রয়েছে সেটি ছিল ‘বহরদার’ অর্থাৎ নৌবহরের দার বা প্রধানের জায়গা। 

আর চীনা বর্ণনায় জানা যায়, বাংলায় কার্পেট, কাগজ, ইস্পাত, লবণ প্রভৃতি শিল্প গড়ে উঠেছিল। লৌহ শিল্পের কথাও জানা যায় ঐতিহাসিকদের বর্ণনা থেকে। 

ছিলাম বিশ্ববাণিজ্যে অগ্রসর জাতি 

আমাদের সওদাগরেরা জাহাজে করে সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে জাভা, সুমাত্রা, মালদ্বীপ, সিংহল প্রভৃতি স্থানে যেতেন বাণিজ্য করতে।

আরব, পারস্য, ভারতবর্ষ, আবিসিনিয়া হতে বড় বড় বাণিজ্য জাহাজ বাংলায় আসত এবং এখানকার পণ্যদ্রব্য নিয়ে করমন্ডল, মালাবার, পেগু, সুমাত্রা, সিংহল প্রভৃতি দেশে যেত। সুতিকাপড়, রেশমি বস্ত্র, চাল, চিনি, আদা, তামাক, পাট ইত্যাদি রপ্তানি হতো বিভিন্ন দেশে। 

পর্তুগিজ পরিব্রাজক বার্নিয়ার বলেন, ‘অনেকে বলেন পৃথিবীতে মিশরই সর্বাপেক্ষা শস্যশালিনী। কিন্তু এ খাতি শুধু বঙ্গেরই প্রাপ্য; এদেশে এত ধান হয় যে, এটা নিকট ও দূরে বহু দেশে রপ্তানি হয়।’ ৩৫০ প্রজাতির ধান উৎপন্ন হতো এই বাংলায়।

উৎপাদন বেশি হওয়ায় পণ্যের মূল্য ছিল মানুষের নাগালের মধ্যে। ইবনে বতুতা বাংলায় জিনিসপত্রের স্বল্পমূল্য দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। বিশ্বের আর কোথাও জিনিসপত্রের মূল্য এত কম নয় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।   

শুধু প্রাচুর্যেই নয়, আমরা এগিয়ে ছিলাম নীতি-নৈতিকতার দিক থেকেও

আমাদের চিরায়ত বাংলার সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল গোলাভরা ধান, পুকুরভরা মাছ, গলাভরা গান আর হৃদয়ভরা টান। সামাজিক ও অতিথিপরায়ণ জাতি হওয়ায় উৎসব-পার্বনে ছেলে-বুড়ো নির্বিশেষে অনাবিল আনন্দে মিশে যাওয়া বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য।

তৎকালীন সময়ে আমরা কতটা অসাম্প্রদায়িক ছিলাম তা বর্ণিত আছে ইংরেজ সিভিল সার্জন জেমস ওয়াইজের একটি লেখায়- 

“ব্যক্তি হিসেবে একজন মুসলমান তার স্বদেশীয় হিন্দুর মতো একইরকম। কোনো ধর্মের বিরুদ্ধেই তাদের বিদ্বেষ নেই। যে-কোনো ধার্মিক লোকের ব্যাপারেই তারা শ্রদ্ধাশীল। শৈশবে একসঙ্গে খেলাধুলা করেই হিন্দু ও মুসলমান শিশুরা বড় হয়। সুখে-দুঃখে হিন্দু মুসলমান পাড়া-প্রতিবেশী মিলেমিশে থাকে।” 

ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, চীনাদের লেখা বইগুলোতে আছে, তারা বাংলার মানুষকে দুটো সার্টিফিকেট দিয়েছিল- এক. তারা মিথ্যা বলে না। দুই. কারো সাথে প্রতারণা করে না।

তখন নীতি-নৈতিকতা মানবিকতায় মানুষের অন্তর ছিল পরিপূর্ণ। আমাদের নির্লোভ স্বভাব এবং সততা বিদেশীদের জন্যে ছিল চরম বিস্ময়ের ব্যাপার। জানমালের এতখানি নিরাপত্তা ছিল যে দরজা খোলা রেখেই মানুষ ঘুমাতে পারত। 

বিজ্ঞানে কি আমরা পিছিয়ে ছিলাম? 

উত্তরটা বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর একটা বিখ্যাত উক্তি থেকে জানা যাক, 

“যারা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা হয় না তারা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না!”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বসে তিনি মোমবাতির আলোতে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে চিঠি লিখতেন। আর আইনস্টাইন সেই চিঠিগুলো ছাপাতেন নিজের বা অন্য স্বনামধন্য জার্নালে। 

জগদীশ চন্দ্র বসুর মতো বিজ্ঞানী এই বাংলার সন্তান। আইনস্টাইন তার সম্পর্কে বলেন- ‘জগদীশ চন্দ্র যেসব অমূল্য তথ্য পৃথিবীকে উপহার দিয়েছেন তার যে-কোনোটির জন্যে বিজয় স্তম্ভ স্থাপন করা উচিৎ’।

দেশ নিয়ে হীনম্মন্যতা তৈরি হলো কীভাবে? 

আসলে আমরা আমাদের অতীত জানি না বলেই এত হীনম্মন্যতায় ভুগি। অনেকের মানসিকতা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে ইউরোপ-আমেরিকায় গিয়ে ডিশিং ওয়াশিং করব, তবু দেশে থাকব না! এটা জাতিগত হীনম্মন্যতারই পরিচায়ক, যা আমাদের মগজে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে সুকৌশলে। 

দুশো বছরের শাসনামলে বাংলাকে চরমভাবে শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তারা তাঁতিদের আঙুল কেটে দিয়েছিল, যাতে মসলিন বুনতে না পারে। নীল চাষ করতে বাধ্য করেছিল, যাতে বাংলার জমির উর্বরতা কমে যায়। 

তাদের শাসনভার গ্রহণের অল্পকাল পরেই ১৭৭০ সালে (বাংলা বর্ষ ১১৭৬) ঘটে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, যা ইতিহাসে ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ নামে পরিচিত। এককালের প্রাচুর্যশালী বাংলার এক-তৃতীয়াংশ, মানে প্রায় ১ কোটি মানুষ মারা যায় না খেতে পেয়ে। অথচ ব্রিটিশ সরকার শুল্ক তো কমায় নি, বরং ঠিক পরের বছর, মানে ১৭৭১ সালে তারা শুল্ক আদায় করে ১৯৬৮ সালের চেয়ে ৩০ শতাংশেরও বেশি! 

বাংলার রাজকোষে যে লুটপাট তারা চালিয়েছিল তার পরিমাণ ছিল ৪০ বিলিয়ন ডলার! বাংলা
ছাড়ার সময় লুণ্ঠিত ধনরত্ন মণিমাণিক্য নিয়ে যাওয়ার জন্যে তাদের লেগেছিল তিনটি জাহাজ! 

তবে বাংলা ছাড়লেও বাংলার মানুষের আত্মসম্মানবোধে আঘাত হানতে সবসময়ই তৎপর ছিল পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী। ভূ-রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ভারতবর্ষকে ভাগ করার মধ্যে দিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন সৃষ্টি করে তারা। আর তার আগে কৌশলে শিক্ষাব্যবস্থায় অনৈতিকতার বীজ বপন করে ভেঙে দিয়েছিল বাংলার নৈতিক মেরুদণ্ড।

মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নিয়ে তদানীন্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে একটি তলাবিহীন ঝুড়ি!

আর পৃথিবীর শীর্ষ দুজন উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ তাচ্ছিল্যভরে লিখেছিলেন, বাংলাদেশ যদি অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করতে পারে তাহলে দুনিয়ার যে-কোনো দেশই উন্নত হতে পারবে!

তাদের অপপ্রচার এবং অপতৎপরতার ফলে ধীরে ধীরে চরম হতাশা এবং নেতিবাচকতায় নিমজ্জিত হলাম আমরা। ভেতরে ঢুকে গেল জাতিগত হীনম্মন্যতা। এরপর থেকে নিজেরাই ভাবতে শুরু করলাম, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেই! 

আবারো সমৃদ্ধ জাতি হবার সামর্থ্য আমাদের রয়েছে

সত্তরের দশকে বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় প্রতিবছর যদি দুই শতাংশ হারে বাড়ে তবুও মানসম্পন্ন মাথাপিছু আয়ের তালিকায় যেতে বাংলাদেশের ১২৫ বছর লাগবে। তিন শতাংশ হারে বাড়লে লাগবে ৯০ বছর।

৯০ বছর লাগে নি! ৪৫ বছরের মাথায় বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হবে! 

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিয়ে এখন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্বনেতাগণ। বাংলাদেশকে বলা হচ্ছে Next Eleven-এর একটি। Next Eleven হলো এমন ১১টি দেশ যারা আগামীতে অন্যতম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।

এই বাস্তবতা ইতিমধ্যে বেশ খানিকটা দৃশ্যমান

দ্রুত বাড়ছে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি। যা বর্তমানে আছে ২.৬৫ হাজার মার্কিন ডলার এবং ২০৩১ সাল নাগাদ ৪ হাজার মার্কিন ডলারে গিয়ে বাংলাদেশকে উন্নীত করবে উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশে।    

ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ প্রবেশ করবে ‘ট্রিলিয়ন ডলার ক্লাব’এ; অর্থাৎ, দেশের জিডিপি আকার হবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার। মূলত অগ্রসরমান নতুন অর্থনীতি, বিশ্ববাজারে ভোক্তা সন্তুষ্টি ও তরুণ জনশক্তি হবে বাংলাদেশের শক্তিশালী হাতিয়ার।

বাংলাদেশের তরুণ জনশক্তির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে আমেরিকান কনসাল্টিং ফার্ম Boston Consulting Group (BCG)-ও। বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনশক্তির গড় বয়স মাত্র ২৮ বছর উল্লেখ করে তারা বলছে, বাংলাদেশের যে যোগ্য জনশক্তি রয়েছে তা দিয়ে দেশটি তার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে।   

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৩তম শীর্ষ অর্থনীতির দেশ। উন্নয়নবিদেরা বলছেন, ইকনোমিক র‍্যাংকিংয়ে অদূর ভবিষ্যতে সবচেয়ে অগ্রসর দেশটি হবে বাংলাদেশ- উঠে আসবে ২০৩০ সালের মধ্যে ২৮তম এবং ২০৩৫ সাল নাগাদ ২৫তম স্থানে।

আর কোয়ান্টাম শুরু থেকে বলছে আমরা আবারো পরিণত হবো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দশ জাতির একটিতে। কারণ একজন মানুষ শুধু মুখ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না, মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। যে মস্তিষ্ক সভ্যতার সকল সম্ভাবনার সূতিকাগার।

মস্তিষ্ক যখন কাজ করবে, আমাদের প্রাচুর্য থামিয়ে রাখতে পারবে না কেউ।

আগামীর সমৃদ্ধ বাংলা গড়তে আমাদের করণীয় 

আমাদের পতনের শুরু হয়েছিল জাতিগত হীনম্মন্যতা দিয়ে। আমাদের উত্থানের জন্যে তাই প্রয়োজন এর বিপরীত, অর্থাৎ, দেশ নিয়ে ইতিবাচক ভাবনা। সমৃদ্ধি, প্রাচুর্য আর শীর্ষস্থানীয় দেশে রূপান্তরের ভাবনা। প্রয়োজন ভাবনাকে বিশ্বাস আর বিশ্বাসকে কর্মে রূপান্তর।

দেশ নিয়ে আর নেতিবাচক ভাবনা নয়। সবসময় ইতিবাচক ভাবতে হবে এবং ভাবনায় অনড় থাকতে হবে। 

আসলে একটা জাতি যখন তার ঐতিহ্য নিয়ে সচেতন হয় তখন তার পুনরুত্থান ঘটে। 

তাই আসুন আমাদের সুমহান ইতিহাস নিয়ে যা জানলাম তাকে অন্তরে ধারণ করি। দেশকে শীর্ষস্থানীয় সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে ভাবি। নিজের কাজ করি সবচেয়ে ভালোভাবে। আমাদের সম্মিলিত ভাবনা এবং কাজ আবারো ফিরিয়ে আনবে আমাদের হারানো সমৃদ্ধি।

ইনশাআল্লাহ্‌! সব সম্ভব!