পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ যখন থেকে শহরে থাকতে শুরু করল, তখন থেকে ‘মেট্রোপলিস লাইফস্টাইল’ ধারণারও বিকাশ। গ্রাম্য জীবনধারা থেকে নিজেদের আলাদা করতে শহরের মানুষ গড়ে তুলতে লাগল তাদের কিছু বিশেষ অভ্যাস, আচার, সংস্কৃতি।
কিছু খাবার, কিছু পানীয় এবং এই খাবার ও পানীয় কেন্দ্রিক বাণিজ্য রমরমা হয়ে উঠল শহরগুলোতে। বাণিজ্যকে সম্প্রসারিত করতে বেনিয়াদের চেষ্টারও কোনো ত্রুটি হলো না।
বিজ্ঞাপন, মিডিয়া আর প্রচারণার কৌশলকে কাজে লাগিয়ে এসব খাবার আর পানীয় যাতে সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়, পরিণত হয় তার নিত্যদিনের খাদ্যাভ্যাসে, সেই উদ্যোগ নিল তারা।
কফি সম্ভবত এর সবচেয়ে জ্বলজ্বলে উদাহরণ! ১০০ বছর আগেও পৃথিবীর মানুষ এত কফি খেত না, যা তারা আজ খায়। ইন্টারন্যাশনাল কফি অর্গানাইজেশনের মতে- ১৯৯১ সালে সারা বিশ্বে ৬০ কেজি ওজনের কফির বস্তা বিক্রি হয়েছিল ৯ কোটি। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ কোটিতে।
কেন? কারণ ব্যবসায়ীরা মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, কফি খেলে প্রাণবন্ততা বাড়ে, উদ্যম বাড়ে, এমনকি রয়েছে স্বাস্থ্যগত অনেক উপকার!
কিন্তু কফির যেসব ক্ষতির কথা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, সেসবকে প্রত্যাখ্যানের প্রবণতা যেমন দেখা যায়, তেমনি দেখা যায় এসব গবেষণা যাতে সহজে মানুষের হাতের নাগালে না আসে সে প্রয়াস প্রবণতাও।
এ নিবন্ধে আমরা নিয়ে এসেছি এরকমই কিছু গবেষণা ফলকে যা সচরাচর আপনি দেখবেন না। কিন্তু কফিকে নিত্যদিনের পানীয় বানাবার আগে আপনার অবশ্যই যা জানা উচিত।
প্রথমেই আসা যাক, কফি নিয়ে গবেষণার ফাঁক প্রসঙ্গে। প্রায়ই বিভিন্ন গবেষণার কথা আপনি শুনবেন- যেখানে বলা হয়ে থাকে- সীমিত কফিপান স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো।
২০১৮ সালের শুরুতে প্রকাশ হওয়া একটি গবেষণায় বলা হয়, দিনে অন্তত তিন কাপ কফি পান করলে হার্ট অ্যাটাকসহ অনেক জটিল রোগের সম্ভাবনা কমে যায়। ১৬ বছর ধরে ইউরোপের ১০টি দেশের ৫ লাখ মানুষের তথ্য নিয়ে চালানো হয় এ গবেষণা।
কিন্তু এ গবেষণাটিসহ এ জাতীয় অন্যান্য গবেষণায় আছে বড় ধরনের এক ফাঁক। কারণ গবেষণাগুলো আজ থেকে ১০ বা ১৬ বছর আগের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা। যখন মানুষ কফি খেত ছোট কাপে। এক কাপে হয়তো চার আউন্স। দু’কাপে বড়জোড় আট আউন্স। ব্যস। এটুকুই ছিল তার দিনের কফি খাওয়া।
কিন্তু এখন স্টারবাকসের সবচেয়ে ছোট যে ক্যানে কফি পরিবেশন করা হয় তার পরিমাণ ১২ আউন্স। মানে আগের দিনের মানুষের পরিমাণের অন্তত তিনগুণ। এবং অনেকেই শুধু যে এক ক্যানে সন্তুষ্ট থাকেন তা নয়, সারাদিনে ছোট, মাঝারি এমনকি সবচেয়ে ঢাউস সাইজের ক্যানেও তিন থেকে চার ক্যান কফি খেয়ে ফেলছেন। হয়তো ৬০০ থেকে ৮০০ মিলি কফি পান করছেন একেকজন।
আর কফিতে আছে ক্যাফেইন, যা আসক্তি সৃষ্টিকারী একটি উপকরণ। আপনি যত খাবেন, ততই বাড়াতে বাধ্য হবেন এর পরিমাণ। কারণ আগের পরিমাণে আর সেই তৃপ্তি বা প্রভাব হচ্ছে না বলে আপনার মনে হতে থাকবে।
চলুন এবার দেখা যাক, অতিরিক্ত ক্যাফেইন কী কী ক্ষতি করতে পারে আপনার দেহের? অতিরিক্ত ক্যাফেইন আপনার দেহের যেসব হরমোনাল সিস্টেমের ক্ষতি করতে পারে তাহলো-
-কর্টিসল নামে স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে পেটের চর্বি বেড়ে যাবে এবং বুড়িয়ে যাওয়া ত্বরান্বিত হবে।
-টেস্টোস্টেরন কমে যেতে পারে। যার মানে হলো পেশীর ক্ষয়ে যাওয়া এবং যৌনক্ষমতা কমে যাওয়া
-গ্রোথ হরমোন কমে যাওয়া। যার মানে চর্বি বাড়া এবং বুড়িয়ে যাওয়া
-থাইরয়েড হরমোন কমে যাওয়া। যার মানে মোটা হয়ে যাওয়া
-এড্রিনালিন হরমোন বেড়ে যাওয়া
-এস্ট্রজেন বেড়ে যাওয়া, যার ফলে মহিলাদের পিরিয়ডে অনিয়ম থেকে শুরু করে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। পুরুষদের অনেক সময় যে ভারী স্তন সমস্যা দেখা যায়, তাও এস্ট্রজেনের কারণে হয়।
-ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়া এবং ইনসুলিন
-ডোপামাইন কমে যায়। ফলে আনন্দ অনুভূতি কমে যায় এবং পার্কিনসন্স দেখা দেয়
-সেরেটনিন কমে যায়, যার মানে আনন্দ অনুভূতি কমে যায়, উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বেড়ে যায় এবং প্যানিক অ্যাটাক বেড়ে যায়।
-অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বেড়ে যায়। ফলে ব্যথা বা প্রদাহ বাড়ে।
আপনি হয়তো বলবেন- ঘুম তাড়াবার জন্যে কফি না খেয়ে কোনো উপায় নেই।
কফি ঘুম তাড়ায়- এ কথা ঠিক। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই তাড়াতে গিয়ে কফি আপনার শরীরে কী কার্যকারণ সৃষ্টি করছে?
প্রথমত, আমাদের মধ্যে ঘুম ঘুম অবস্থা তৈরি হয় শরীরের একটা বিশেষ জৈব রসায়নের কারণে, যার নাম এডিনোসাইন। এডিনোসাইনকে বলা যেতে পারে এক ধরনের মাতৃর্মূতি। মা যেমন টের পায়- সন্তান কখন ক্লান্ত বা কখন প্রাণবন্ত এবং সে অনুযায়ী তাকে ঘুমুতে পাঠায়, এডিনোসাইনও তাই।
আপনার দেহ যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ব্রেনে তখন তৈরি হয় এডিনোসাইন রিসেপ্টর। এর প্রভাবে আপনার ঘুম ঘুম পায়, আপনি ঘুমিয়ে পড়েন।
কিন্তু কফি খেলে এই এডিনোসাইনের উৎপাদনই ব্যহত হয়। অর্থাৎ আপনার দেহ ক্লান্ত হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ব্রেনের এডিনোসাইন রিসেপ্টরগুলো বাধাগ্রস্ত হবার কারণে আপনি তা টের পাচ্ছেন না।
কিছুক্ষণ এ অবস্থা চলতে থাকলে কী হবে? ব্রেন আরো বেশি বেশি এডিনোসাইন রিসেপ্টর তৈরি করতে থাকবে। এবং জেগে থাকার জন্যে আপনাকে আরো বেশি বেশি পরিমাণে কফি খেতে হবে।
আর যখন কফি খাওয়া ছেড়ে দেবেন? তখন কী হবে?
দেখা যাবে যে, আগের চেয়েও আরো বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন আপনি, কাজ করার জন্যে কোনো প্রাণবন্ততাই আর আপনার নেই। তখন আবার বাধ্য হবেন কফি খাওয়ায় ফিরে যেতে।
এ কারণেই দেখবেন কফি ছাড়তে চেয়েও অনেকে পারে না, কারণ কফি ছাড়া সে আগের চেয়েও বেশি ক্লান্তি অনুভব করে। এবং কফি ছাড়া আর অন্য কোনোভাবেই যে ক্লান্তি সারে না।
আবার কফির ক্যাফেইন যেহেতু মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে, কফি খেয়ে আপনি হয়তো দুপুরের ঝিমুনিকে এড়ালেন, কিন্তু বেশি খেলে রাত্রিবেলা যখন সত্যিই আপনার ঘুমের প্রয়োজন হবে, তখন আর ঘুম নাও আসতে পারে।
দেখা যাবে যে, ক্যাফেইনের প্রভাব কাটিয়ে ঘুমুতে ঘুমুতে ভোররাত। ফলে না হলো আপনার পর্যাপ্ত বিশ্রাম, আবার দিনের কাজ করার জন্যে আপনাকে আশ্রয় নিতে হলো আরো কফির। এ যেন এক দুষ্ট চক্র।
একথা তাই বলাই যায় যে, অনিদ্রা রোগের সাথে কফির একটা যোগসাজশ আছে।
একটা গবেষণায় বিজ্ঞানীরা কিছু স্বেচ্ছাসেবীকে চার কাপ কফির সমপরিমাণ ক্যাফেইন পিল খাওয়ান। এবং অন্যদল স্বেচ্ছাসেবীকে শুধু প্লাসিবো ইফেক্ট দেয়া হলো। দেখা গেল-ঘুমুবার অন্তত ছ’ঘণ্টা আগে পিল খাওয়ার পরও তাদের ননরেম ঘুম (হালকা ঘুম) কম হয়েছে। তার মানে তাদের ঘুমের গুণ এবং মান কমে গেছে। ফলে প্রভাব পড়েছে তাদের দিনের কাজেও।
যারা ইতোমধ্যেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছেন, বেশি কফি খেলে তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। লুসিও মজের পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে-অল্প বয়সেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছেন এমন রোগীরা যদি দিনে চার কাপের বেশি কফি খান তাহলে তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে চারগুণ।
পরীক্ষায় দেখা গেছে- কফির সাথে হার্টরেট বাড়ার একটা সম্পর্ক আছে। যে কারণে ইরেগুলার হার্টরেটের রোগীদের ডাক্তাররা কফি খেতে মানা করেন।
আমেরিকান ডায়াবেটিস এসোসিয়েশনের এক রিপোর্টে দেখা গেছে- ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় দেহে গ্লুকোজের মেটাবলিজমকে বাড়িয়ে দিয়ে টাইপ টু ডায়াবেটিসের প্রকোপকে বাড়িয়ে দেয়।
একটা গবেষণায় দেখা গেছে- যে মহিলারা দিনে ৩১ থেকে ২৫০ মিলি পরিমাণ কফি খান, তাদের স্তনে সিস্ট হওয়ার আশংকা দুইগুণ বেশি। আর যারা ৫০০মিলির বেশি খান, তাদের ঝুঁকি আরো বেশি-তিন গুণ।
রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে ক্যাফেইন। বিশেষ করে ইতোমধ্যেই রক্তচাপে ভুগছেন এমন কেউ হঠাৎ হঠাৎ কফি খেলে তার রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। একটা নিরীক্ষায় দেখা যায়-একদল উচ্চরক্তচাপের রোগীকে আড়াইশ মিলি (২ কাপ) কফি খাওয়ানোর ঘণ্টাদুয়েকের মধ্যেই তাদের রক্তচাপ অনেক বেড়ে গেল।
মেয়ো ক্লিনিকের একটা নিরীক্ষায় একই ঘটনা দেখা গেছে। এবং তা আরো কম পরিমাণ কফি খেয়েই (১৬০মিলি)। নিয়মিতর চেয়ে যারা অনিয়মিত কফি খেয়েছেন, তাদের মধ্যে এই ব্যাপারটা বেশি দেখা গেছে।
বদ হজম এবং পেট খারাপের কারণ হতে পারে কফি। বিশেষ করে যারা খালি পেটে কফি খান, তাদের এমনটা হতে পারে। খালিপেটে কফি খেলে (অনেকে সকালবেলা উঠেই যখন খান) পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড তৈরি হয়। আর হাইড্রোক্লোরিক এসিড হলো এমন এক এসিড যা শুধুমাত্র খাবার হজম করার জন্যেই তৈরি হওয়া বাঞ্ছনীয়।
যে স্বামী-স্ত্রীরা সপ্তাহে দু’বার ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করেন, গর্ভসঞ্চারের পর দেখা গেছে- সেই স্ত্রীর গর্ভপাতের আশংকা বেশি থাকে। অতিরিক্ত কফিপান এমনকি গর্ভসঞ্চারের সম্ভাবনাকেও কমিয়ে দেয়। নেভাদা স্কুল অব মেডিসিনের একটা গবেষণা যা ব্রিটিশ জার্নাল অফ ফার্মাকোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে দেখা যায়, যে মহিলারা নিয়মিত কফিপান করেন, তাদের গর্ভধারণের ক্ষমতা ২৭% কমে গেছে। তাছাড়া পূর্ণাঙ্গ সময়ের আগেই শিশুর জন্ম হয়ে যাওয়া, গর্ভাবস্থায় জটিলতা- ইত্যাদি তো আছেই।
মেনোপজকালে নারীদের যেসব জটিলতা হয়, কফি অনেকসময় তা বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন হট ফ্লাশ, দুর্বলতা, ব্যথা বা খারাপ মুড। নর্থ আমেরিকান মেনোপজ সোসাইটির এক গবেষণায় এটা দেখা গেছে।
কফি বেশি খেলে অস্টিওপরেসিস ও হাড়ের ঘনত্ব কমে যেতে পারে।
ক্যাফেইনযুক্ত আর সব পানীয়ের মতো কফিও একটা ড্রাগ এবং আসক্তিকারক। ফলে নিয়মিত না খলে এর ফলে নার্ভাসনেস, হাতকাঁপা, ঘাম হওয়া এমনকি মেজাজ খারাপ পর্যন্ত হতে পারে
উদ্বেগ এবং নার্ভাসনেস বাড়িয়ে দিতে পারে। ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় বলা হয় ক্যাফেইনের কারণে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যাদের মধ্যে অস্থিরতা বা উদ্বেগের ঝুঁকি বেশি।
ক্যাফেইনের উইথড্রয়াল সিম্পটম হিসেবে বিষণ্নতাও বাড়তে পারে।
শহুরে জীবনভ্যাসে আজকাল অনেক শিশুই কফি, ক্যাফেইনযুক্ত খাবার- ইত্যাদিতে আসক্ত। ৪০০ মিলি এর বেশি কফি খায় যে শিশুরা তা তাদের জন্যে খুবই ধ্বংসাত্মক। বিশেষত, ওদের দাঁত। কফি এক ধরনের এসিডিক। যা দাঁতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
কফি আর ক্যান্সারের মধ্যে যোগাযোগ নিয়ে ইদানিং যে হৈ চৈ হচ্ছে, তার জেরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় স্টারববাক্স ও অন্যান্য কফি বিক্রেতাদের এখন থেকে কফির কাপে ক্যান্সারের সতর্কবার্তা লিখতে হবে। কারণ কফি বীন সেদ্ধ করলে তার বাই প্রডাক্ট হিসেবে অ্যাক্রিমালাইড নামে একটি রাসায়নিক তৈরি হয় যা ক্যান্সারের কারক হতে পারে বলে বলছেন গবেষকরা।
অবশ্য এজন্যে কফিগ্রহণের পরিমাণ নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে। কেউ কেউ বলছেন, প্রতিদিন যে স্বাভাবিক পরিমাণ কফি মানুষ খায় তাতে এই ঝুঁকি নেই। কিন্তু অন্যরা বলছেন, ঝুঁকি কম বা বেশি হোক-সতর্কবার্তা লেখার গুরুত্ব তাতে রদ হয়ে যাচ্ছে না।
তাদের লবিংয়ের কারণেই মামলায় কোম্পানিগুলো হেরে যায় এবং ক্যালিফোর্নিয়ার ৯০টি কফি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে অর্ধেকসংখ্যকই এখন সতর্কবার্তা লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ অনেক সময় মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। এরকমই একটি ঘটনা ঘটেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনায়। সেখানকার এক কিশোর মাত্র দুঘণ্টায় ১৬ আউন্স পরিমাণ ক্যাফেইন পানীয় (এনার্জি ড্রিংকস, লাটে, সোডা সব মিলিয়ে) পানের দুঘণ্টার মধ্যে মারা যায়।
এতো গেল তৎক্ষণাৎ প্রভাব। কিন্তু স্লো পয়জনিংয়ের মতো কফির ধীর প্রভাবও কম নয়। যে কারণে বলা হয়- কফি খাওয়া আর নিজেকে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ধাবিত করার মধ্যে তফাৎ নেই খুব একটা।
মেয়ো ক্লিনিকের সাথে যৌথ এক গবেষণায় দেখা যায়-যেসব পুরুষ দিনে ৪ কাপ কফি খায়, অন্যদের চেয়ে তাদের মৃত্যুর হার ২১% বেশি। অবশ্য ধূমপানসহ এদের জীবন অভ্যাসের অন্যান্য খারাপ দিকও এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
একটু আগেই তরুণ প্রজন্মের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর কফির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বলা হয়েছে। হয়তো বা এ কারণেই হালে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গ্লোরিয়া জিনস, ব্যারিস্টা লাভাজা বা নর্থ এন্ড কফি রোস্টারের মতো অভিজাত সব কফি চেইন ছড়িয়ে পড়েছে মেট্রোপলিটন শহরের আনাচে কানাচে, যেখানে বসে কফি খাওয়া বা আড্ডা দেয়াকে তরুণ প্রজন্মের কাছে একটা স্ট্যাটাস সিম্বল হিসেবে প্রচারের চেষ্টায় লিপ্ত মিডিয়া।
জাতিকে যেসব বিদেশি শক্তি দমিয়ে রাখতে চায়, তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের পাশাপাশি দেশের তরুণ প্রজন্মের প্রজনন স্বাস্থ্যের বারোটা বাজানোর দুরভিসন্ধিও তাদের আছে কি না- সময়ই তা বলবে।
কারণ সমাজবিজ্ঞানীদের মত হলো- জনসংখ্যাই কোনো দেশের প্রধান শক্তি। যাদের জনসংখ্যা যত বেশি, নেতৃত্বও তাদেরই হাতে। আর সেজন্যেই জনসংখ্যাবহুল দেশগুলোর জনশক্তি যাতে কমানো যায় সেজন্যে গত ৫০ বছর ধরেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা চালিয়ে গেছে।
যারা ইতোমধ্যেই কফিতে অভ্যস্ত বা আসক্ত হয়ে পড়েছেন, তাদের প্রথমে এটা পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। প্রথম কিছুসময় হয়তো খুব অস্বস্তি হবে, প্রাণশক্তির ঘাটতি হতে পারে, প্রভাব পড়তে পারে মুডের ওপরও।
কিন্তু এসময়গুলোতে ধৈর্য ধরতে হবে। কফির কাছে আর ফিরে যাওয়া যাবে না। বদলে গ্রিন চা বা এমনি চা খেতে পারেন। বা গরম গরম ভেজিটেবল ব্রথ বা ক্যাবেজ স্যুপ বা অন্য কোনো গরম পানীয় খেতে পারেন যা গরম খাওয়ার প্রাথমিক চাহিদাকে পূরণ করবে।
ধীরে ধীরেই আপনি বের হয়ে আসতে পারবেন এ আসক্তি থেকে।