ভালো রেজাল্ট ! ওরে বাবা জিনিয়াসরাই পারে কেবল !

একটা বাস্তব সত্য কি জানেন? ভালো রেজাল্ট করার জন্যে জিনিয়াস হবার প্রয়োজন নেই। বরং দেখা যায়, ভালো রেজাল্ট সাধারণত মধ্যম মানের ছাত্রছাত্রীরাই বেশি করে। কেন? উত্তরটা বুঝতে পারবেন খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পটা মনে করলেই।

খরগোশ-কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতায় কে জিতেছিল? সারাদিন ঘুমিয়ে থেকে এক দৌড়ে যে গন্তব্যে পৌঁছেছিল সেই খরগোশ, নাকি কোনো বিশ্রাম-বিরতি না দিয়ে সারাদিন টুক টুক করে হেঁটে যে পৌঁছেছিল সেই কচ্ছপ? কচ্ছপ। কারণ দৌড়ানোর সামর্থ্য না থাকলেও তার হাঁটার সামর্থ্যকেই সে কাজে লাগিয়েছিল নিরলস পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে।

আপনি হয়তো ভাবেন, আমার ব্রেনটা তো অত ভালো না। দেরিতে বুঝি। মনে থাকে আরো কম। অমুক তুখোড় মেধাবীদের মতো কি আমি পারব?

অভিনন্দন আপনাকে! কারণ আপনিই পারবেন। সাধারণ মেধার বলেই আপনার পক্ষে ভালো করার সম্ভাবনা বেশি। আপনি কচ্ছপের মতো লেগে থাকতে পারবেন, পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে ধারাবাহিক কাজের মাধ্যমে লাভ করবেন সাফল্য। আসলে বিশ্ববিখ্যাত সফল মানুষেরা সবাই যতটা না জিনিয়াস, তার চেয়ে বেশি পরিশ্রমী, অধ্যবসায়ী।

আর তুখোড় মেধাবী হলেও অধ্যবসায় ছাড়া সফলতা লাভ সম্ভব নয়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক মহামনীষী ইবনে সিনা। চিকিৎসাবিজ্ঞান থেকে শুরু করে জ্যোতির্বিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, ভূগোল, দর্শন, মনোবিজ্ঞান, যুক্তিবিজ্ঞান, সাহিত্য এবং ইসলামী শাস্ত্রসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সব শাখায়ই তিনি তার অবদান রেখেছেন।

অসাধারণ মেধা এবং স্মরণশক্তির ফলে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই শিখে ফেলেন তার শিক্ষকদের সবকিছু। এরপর শুরু করেন বাইরের দুনিয়ায় যা আছে তা জানার চেষ্টা। কিন্তু নিজে পড়ে বোঝা এত সহজ হলো না। এরিস্টোটলের মেটাফিজিক্স বুঝতে গিয়ে পড়লেন গভীর গাড্ডায়। একবার দুই বার করে ৪০ বার পড়ে ঝাড়া মুখস্থ হয়ে গেল। কিন্তু বুঝতে পারলেন না একবর্ণ।

যখনই কঠিন কিছু বুঝতে পারতেন না, ইবনে সিনার অভ্যাস ছিল মসজিদে চলে যাওয়া। অজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গভীর প্রার্থনায় ডুবে যেতেন। মানুষের কল্যাণে যে জ্ঞান তিনি আয়ত্ত করতে চাচ্ছেন, তা বোঝার সামর্থ্য যেন পরম প্রভু তাকে দেন। প্রার্থনা থেকে উঠতেন তখনই যখন মনে হতো প্রভু তার প্রার্থনা শুনেছেন। এখানেও ব্যতিক্রম হলো না। হঠাৎ একদিন বাজারে গিয়ে খুঁজে পেলেন মেটাফিজিক্সের ওপর জ্ঞানের আরেক দিকপাল আল ফারাবীর ব্যাখ্যাসম্বলিত একখানা বই। তিন দিরহাম দিয়ে বইটি কিনে ছুটতে ছুটতে ইবনে সিনা চলে এসেছিলেন মসজিদে প্রভুর কাছে শুকরিয়া জানাবার উদ্দেশ্যে।