published : ২৬ অক্টোবর ২০১৯
পারস্যের রাজকুমার। অদ্ভুত এক রোগ হলো তার। মানুষ নয়, নিজেকে একটা ‘গরু’ ভাবতে শুরু করল সে!
খাওয়াদাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দিল। গরুর মতো হাম্বা হাম্বা ডাকতে লাগল। কেঁদে কেঁদে সবার কাছে আর্জি জানাতে লাগল- ‘বিশ্বাস কর, আমি একটা গরু। আমাকে তোমরা জবাই করো, আমার মাংস কেটে রান্না করে খাও।’
দেখে রাজকুমারের বাবা, মানে রাজা খুব অস্থির হয়ে উঠলেন। এ কেমন অদ্ভুত রোগ! আর এর চিকিৎসাই বা কী!
এদিকে সাম্রাজ্যের সবচেয়ে খ্যাতিমান চিকিৎসক শুনলেন রাজকুমারের কথা। রাজকুমারকে সারিয়ে তোলার দায়িত্ব নিলেন।
তিনি বুঝলেন রাজকুমার সম্ভবত কোনো মনোবৈকল্যের শিকার হয়েছে। ওষুধ নয়, এর চিকিৎসা করতে হবে মানসিকভাবে।
তিনি রাজকুমারের কাছে লোক পাঠিয়ে দিলেন। বললেন, “তাকে গিয়ে বল, তোমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে। জবাই করার জন্যে কসাই আসছে শিগগিরই।”
শুনে তো রাজকুমার খুব খুশি। এতদিনে তার ইচ্ছা পূরণ হতে যাচ্ছে!
এরপর চিকিৎসক একদিন বড় একটা ছোরা নিয়ে এলেন প্রাসাদে। ঢুকতে ঢুকতে বললেন- ‘কোথায়? আমার গরুটা কোথায়? আমি এখন ওটাকে জবাই করব।’
রাজকুমারও হাম্বা হাম্বা ডাকে জানান দিল—এই যে, গরু এখানে! গরু এখানে!
চিকিৎসক রাজকুমারকে শুইয়ে দিলেন। তারপর ছুরিটা তার গলায় ধরলেন। কিন্তু ধরেই আবার সরিয়ে ফেললেন।
নাহ! এত দুবলা পাতলা গরু জবাই করে কোনো লাভ নেই! একদম মাংস নেই। তার চেয়ে একে আগে খাইয়ে দাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করা হোক। তারপর জবাই করা যাবে।
রাজকুমারও শুনল। তার কাছেও যুক্তিগ্রাহ্য মনে হলো কথাটা।
এরপর তাকে যে খাবারই দেয়া হয়, সে খেতে লাগল। আস্তে আস্তে তার অপুষ্টি কেটে গেল। আর এভাবেই একসময় ভালো হয়ে গেল তার মনোবৈকল্যও। কারণ চরম অপুষ্টি থেকেই দেখা দিয়েছিল রাজকুমারের এ মনোবৈকল্য।
ঘটনাটি আজ থেকে এক হাজার বছর আগের যখন দেহের চিকিৎসা বলতেই কিছু ছিল না, মনের চিকিৎসা তো পরের কথা।
কিন্তু সেই সময় একজন চিকিৎসক চিকিৎসাবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিককে যে মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন আজ হাজার বছর পরও তার প্রাসঙ্গিকতা হারায় নি।
ইবনে সিনা। ৯৮০ খৃষ্টাব্দে জন্মানো কালজয়ী এক মহামনীষী।
তার ‘চিকিৎসক’ পরিচয়টিই সবচেয়ে বেশি কথিত হলেও তিনি ছিলেন আসলে একজন ‘পলিম্যাথ’ – বাংলায় যাকে বলা যায় ‘সর্ববিদ্যায় বিদুষী’। দর্শন, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, যুক্তিবিদ্যা, রসায়ন, ভূগোল, ভূতত্ত্ব, পদার্থবিদ্যা, মনোবিজ্ঞান, ইসলামি ধর্মতত্ত্ব এমনকি কাব্যসাহিত্যে পর্যন্ত ছিল তার পাণ্ডিত্য, আছে তার লেখা।
ধারণা করা হয় তার মোট রচনার সংখ্যা ৪৫০, যার ২৪০টি এখনো পাওয়া যায়। তার চিকিৎসা বিশ্বকোষ ‘আল কানুন ফিল তিবব’ (Canon of Medicine) ১৯৭৩ সালে নিউইয়র্কে পুনর্মুদ্রিত হয়েছে।
ইবনে সিনা জন্মেছিলেন উজবেকিস্তানের বোখারায়। বোখারা ছিল তখন সামানিদদের রাজধানী। পারস্যের এই সাম্রাজ্যটি সেসময় ইরান, পাকিস্তান ও মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল শাসন করতো।
ইবনে সিনার বাবা ছিলেন সামানিদ দরবারের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বালক বয়স থেকেই ইবনে সিনার প্রতিভা বিস্ময় জাগাতে শুরু করে। কোরআন মুখস্ত করে ফেলেন মাত্র ১০ বছর বয়সেই। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই যুক্তিবিদ্যায় তার পারদর্শিতা ছাড়িয়ে যায় তার শিক্ষককেও।
১৬ বছর বয়সে শুরু করেন চিকিৎসাবিদ্যা অধ্যয়ন। এবং মাত্র দুবছরে ১৮ বছর বয়সেই চিকিৎসা বিষয়ক সেসময়কার যত জ্ঞান আর তথ্য ছিল- সবই আয়ত্ত করে ফেলেন ইবনে সিনা।
নিজের আত্মজীবনীতে ইবনে সিনা বলেছেন, ১৮ বছর বয়সের মধ্যেই আমি আমার সব তত্ত্ব, ধারণা আর জ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করে ফেলেছিলাম। বাকি জীবনে আমি শুধু সেগুলোকে আরো পরিপক্ক, সমৃদ্ধ করার কাজটাই করেছি।
১৮ বছর বয়সে চিকিৎসক হিসেবে বোখারার আমীরের দরবারে শুরু হয় তার আনুষ্ঠানিক পেশাজীবন। সব জ্ঞান-বিজ্ঞানের মধ্যে তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রেই সবচেয়ে সাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন,
"Medicine is no hard and thorny science, like mathematics and metaphysics, so I soon made great progress; I became an excellent doctor and began to treat patients, using approved remedies."
অর্থাৎ গণিত বা অধিবিদ্যার মতো কঠিন বিষয় চিকিৎসাবিজ্ঞান নয়। ফলে আমি দ্রুত শিখতে লাগলাম। কিছুদিনের মধ্যেই পরিণত হলাম একজন দক্ষ চিকিৎসকে। সফল চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগ করে রোগীদেরকে সারাতে শুরু করলাম।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যবহারিক এবং তাত্ত্বিক- দুই ক্ষেত্রেই ছিল তার সমান দক্ষতা।
১০২৫ সালে ইবনে সিনা শেষ করেন তার ‘আল কানুন ফিল তিবব’ (Canon of Medicine)। চিকিৎসাশাস্ত্রের ওপর পাঁচ খণ্ডের বিশ্বকোষ। বলা হয়, এ বিশ্বকোষ এত পরিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ছিল যে এরপর আর পূর্ববর্তী চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নের প্রয়োজন কারো ছিল না।
গ্রীক থেকে শুরু করে ভারতীয় থেকে শুরু করে তদানীন্তন পৃথিবীর যত চিকিৎসাজ্ঞান ছিল, তার সবই সন্নিবেশিত হয়েছিল এতে। পাশাপাশি ইবনে সিনা নিজেরও অনেক জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এ বিশ্বকোষে।
১৬৫০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাশাস্ত্রের মূল পাঠ্যবই হিসেবে গণ্য হতো এই ‘আল কানুন ফিল তিবব’।
যক্ষ্মারোগের কথা তিনিই প্রথম বলেন। সংক্রামক ব্যাধির কথাও তিনি প্রথম বলেন। বলেন যে রোগ একজনের কাছ থেকে আরেকজনের মধ্যে পানি, মাটি এমনকি যৌন মিলনের মাধ্যমেও সংক্রমিত হতে পারে। বলা বাহুল্য আজকের দিনে এ ধারণাগুলো চিকিৎসাশাস্ত্রের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত ধারণাগুলোর মধ্যেই পড়ে।
এনাটমি, পেডিয়াট্রিক্স এবং গাইনোকোলজির যেসব মৌলিক ধারণার কথা ইবনে সিনা এ বইতে ব্যাখ্যা করেছেন, তা আজো প্রণিধানযোগ্য। এসব কারণেই আল কানুন ফিল তিবব-কে টাইম ম্যাগাজিন আখ্যা দিয়েছে "Laying the Ground work for western Medicine" বলে।
তবে ইবনে সিনার যে বইটি তার চিন্তার মৌলিকত্ব ও পরিপক্কতাকে আরো গভীরভাবে ফুটিয়ে তোলে তাহলো তার বিজ্ঞান ও দর্শন বিশ্বকোষ ‘কিতাব আল শিফা’ (The Book of Healing)।
নামে ‘হিলিং’ থাকলেও বইটি চিকিৎসা শাস্ত্রের বই নয়। বরং এই ‘হিলিং’ বা ‘নিরাময়’ বলতে আত্মার অজ্ঞতার নিরাময় বা নিবারণকে বোঝানো হয়েছে। ইবনে সিনা বলেন, আত্মা বা মনের সুস্থতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর ওপরই নির্ভর করে তার দেহের সুস্থতা। একজন দৈহিকভাবে অসুস্থ মানুষও প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তির জোরে সুস্থ হতে পারে। আবার একজন সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে যদি মনের দিক থেকে সে আতংকিত হয়।
দেহের ওপর মনের প্রভাব কত বেশি- এ বিষয়ে তার একটি যুগান্তকারী উদাহরণ আছে।
রাস্তার ওপর একটি সরু কাঠের তক্তা বিছিয়ে দিয়ে কাউকে যদি বলা হয়, এর ওপর দিয়ে হেঁটে যাও। অনায়াসে তক্তার ওপর দিয়ে সে হেঁটে যাবে।
একই তক্তা যদি খালের ওপর পুল হিসেবে বিছিয়ে দেয়া হয় এবং সেই ব্যক্তিকে তক্তার ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে বলা হয়, তাহলে ঘটবে উল্টো ঘটনা। শক্ত-সমর্থ পা দুটি দিয়ে সে আর পুল পার হতে পারবে না। কয়েক কদম চলার পরই হয়তো পড়ে যাবে খালে। কেন?
কিতাব আল শেফা-তে ইবনে সিনা এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে- This is because he pictures to himself a possible fall so vividly that the natural power of his limbs accords with it.
অর্থাৎ পার হওয়ার সময় পড়ে যেতে পারার ছবিটা তার মনে এত গভীরভাবে গেঁথে যায় যে তার পায়ের যে স্বাভাবিক শক্তি তা মনের এই চিত্রের সাথে মিলে যায়। ফলে পা তার স্বাভাবিক শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং পড়ে যায়।
ইবনে সিনার এ উদাহরণটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় মন নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলোতে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কোয়ান্টাম মেথড কোর্সেও এই উদাহরণটি উল্লেখ করা হচ্ছে ২৭ বছর ধরে।
আজ থেকে মাত্র ১০০ বছর আগেও বিতর্ক ছিল- ‘সাইকোলজি’ মেডিকেল সায়েন্সের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে কি না। মাত্র ৭০ বছর হলো ‘সাইকোথেরাপি’ মেডিকেল সায়েন্সের অংশ হয়েছে।
অথচ আজ থেকে নয়শ’ বছর আগেই ইবনে সিনা বলে গিয়েছিলেন এ কথাগুলো।
জীবনের বেশিরভাগ সময়ই যাযাবরের মতো তাকে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। লেখালেখির জন্যে যে ধরনের পরিবেশ আমরা কল্পনা করি- একটা স্থায়ী ঘর, লেখার একটি নির্দিষ্ট জায়গা, রেফারেন্স ঘাঁটবার জন্যে আরো বইপত্র- সেসব কিছুই বেশিরভাগ সময় ইবনে সিনার ছিল না। তারপরও এত বিশাল জ্ঞানগর্ভ রচনাসমগ্র এটাই প্রমাণ করে যে অত্যন্ত ক্ষুরধার স্মৃতিশক্তি অধিকারী ছিলেন তিনি।
জ্ঞানের প্রতি তার আগ্রহ এবং অধ্যবসায় ফুটে উঠেছে তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনায়। যখন যেখানে যেতেন, যার সাথেই দেখা হতো উন্মুখ হয়ে থাকতেন নতুন কিছু শেখার।
ভারতীয় পাটীগণিত তিনি শিখেছিলেন ভারত থেকে যাওয়া একজন সবজিবিক্রেতার কাছ থেকে। একই বিষয়ে আরো জ্ঞান অর্জন করেন দেশবিদেশ ঘুরে বেড়ানো এক পন্ডিতের কাছে, যিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন ছাত্র পড়িয়ে ও মানুষের চিকিৎসা করে।
আর বোখারার আমিরকে সুস্থ করে তোলার ইনাম তিনি কী দাবী করেছিলেন তাও এক ঘটনা।
আমিরের দরবারের একজন তরুণ চিকিৎসক তখন তিনি। বয়স মাত্র ১৮।
একবার আমিরের গুরুতর ব্যাধি হলো। অভিজ্ঞ ডাক্তার-হেকিম সবাই চিকিৎসা করে ব্যর্থ হলেন।
ইবনে সিনা বললেন, আমি চেষ্টা করে দেখি।
চিকিৎসায় যখন আমির সুস্থ হয়ে উঠলেন, কৃতজ্ঞতায় কী পুরস্কার তাকে দেবেন, ভাবছিলেন।
এমন সময় ইবনে সিনা জানালেন, তার চাওয়া হচ্ছে প্রাসাদের ভেতরে যে বিশাল গ্রন্থাগারটি আছে, সেখানে প্রবেশাধিকার।
আমির অনুমতি দিলেন।
পরবর্তী দিনগুলোয় ইবনে সিনা উদয়াস্ত সে গ্রন্থাগারে অধ্যয়ন করে কাটাতেন। অবশ্য কিছুদিন পর আগুনে সে গ্রন্থাগার পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে যায়।
জ্ঞানের জন্যে তার অধ্যবসায়ও সুবিদিত। কৈশোরে এরিস্টটলের মেটা ফিজিক্স পড়তে গিয়ে প্রথমেই ধাক্কা খেলেন। কিছুই বুঝতে পারছেন না।
বোঝার জন্যে শুরু করলেন দর্শন পড়া। তাও কঠিন। দেড় বছর টানা দর্শন নিয়ে পড়ে থাকলেন। কথিত আছে, এসময় পড়তে পড়তে ইবনে সিনা যখনই কিছু বুঝতে পারতেন না বলে মনে করতেন, সোজা বই ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেন। অজু করে চলে যেতেন মসজিদে। এরপর প্রার্থনায় নিমগ্ন হতেন যতক্ষণ না সমাধান পেতেন বা বুঝতে পেরেছেন বলে মনে করতেন।
একাদিক্রমে ৪০ বার তিনি এরিস্টটলের মেটা ফিজিক্স অধ্যয়ন করেন। পড়তে পড়তে বাক্য এমনকি শব্দগুলো পর্যন্ত তার মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দুর্বোধ্যতা কাটে নি তারপরও।
শেষ পর্যন্ত একদিন ঘটনাচক্রে তিনি কেনেন আল ফারাবীর একটি চটিবই। তিন দিরহাম দামের এই বইটিতে দার্শনিক আল ফারাবী এরিস্টটলের মেটাফিজিক্সের ওপর তার একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণী মন্তব্য তুলে ধরেছিলেন।
আর সেটা পড়েই ইবনে সিনার কাছে পুরো দর্শনটি দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে ওঠে। কৃতজ্ঞতায় তিনি এতটাই আপ্লুত হয়ে পড়েন যে সাথে সাথে ছুটে যান মসজিদে স্রষ্টার কাছে শুকরিয়া জানাবার জন্যে। শুকরিয়া স্বরূপ দরিদ্রদের মাঝে দানও করেন তিনি।
এমনি ছিল তার জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ!
৫৬ বছর বয়সে এক প্রচণ্ড অসুস্থতা দেখা দিল ইবনে সিনার। পেটের পেশি ও নাড়িতে হঠাৎ চেপে বসা মারাত্মক এক ব্যথারোগ।
প্রথম যখন অসুখ ধরা পড়ে তিনি তখন হামাদান অভিযানে শাসক মোহাম্মদ ইবনে রুস্তমের সাথে ছিলেন। অসুখের প্রাবল্যের কারণে অনেক কষ্টে হামাদান পৌঁছুলেও এরপর আর তিনি এগোতে পারেন নি।
তবে তারপরও নিরস্ত হন নি ইবনে সিনা। শরীরের অবস্থা দেখে শুভানুধ্যায়ীরা যখন একটু বিশ্রাম নেয়ার পরামর্শ দিলেন, ইবনে সিনা তখন মন্তব্য করেছিলেন, “I prefer a short life with width to a narrow one with length”. অর্থাৎ একটা সংকীর্ণ দীর্ঘজীবনের চেয়ে একটি প্রশস্ত সংক্ষিপ্ত জীবনই আমার কাছে বেশি শ্রেয়।
তাই করেছিলেন ইবনে সিনা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কর্মব্যস্ত ছিলেন।
মৃত্যুর আগে তিনি তার সব সম্পদ দরিদ্রদের দান করে যান, দাসদের মুক্ত করে দেন। স্রষ্টার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা আর কোরআন অধ্যয়নেই বেশি সময় ব্যয় করতেন।
১০৩৭ সালের ২২ জুন ৫৬ বছর বয়সে মারা যান এই মহামনীষী।
[সজ্ঞা জালালি, জুলাই, ২০১৯ অবলম্বনে]