এবারের রমজান হোক করোনা আতঙ্ক জয়ের রমজান

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কের এক অভূতপূর্ব অবস্থায় এবার শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। সংক্রমণ ঠেকাবার উপায় হিসেবে কোটি কোটি মানুষকে বাসায় থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

কিছু মানুষ আক্রান্ত। বাকিরা আতঙ্কিত।

এই আতঙ্ক, অস্থিরতা, অনিশ্চয়তার মধ্যেই কীভাবে এবারের রমজান আপনার জীবনকে প্রশান্তি ও নিশ্চয়তায় ভরিয়ে তুলতে পারে তা জানাতেই এ নিবন্ধ-

রোজা রাখা ফরজ

ধর্মীয় বিধিমতে কেউ মুসলিম হলে, সাবালক হলে, রোজা রাখার শারীরিক সামর্থ্য থাকলে, ভ্রমণরত না থাকলে এবং অসুস্থ, আহত, মাতৃদুগ্ধদানরত বা গর্ভবতী না হলে তার জন্যে রোজা ফরজ। এসব সঙ্গত কারণ ছাড়া কেউ যদি রোজা না রাখেন, তাহলে ধর্মের বিধান অনুযায়ী তাকে কাফফারা দিতে হবে। 

ডায়াবেটিস, হাইব্লাড প্রেশার ও বয়সজনিত মস্তিষ্কের অসুখ প্রতিহত করে রোজা
অটোফেজি : রোজার বৈজ্ঞানিক নাম
ভিডিও : যেভাবে রোজা রাখলে আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন

রোজা যুগে যুগে জনপদে জনপদে

হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বসূরিদের ওপর। যাতে তোমরা আল্লাহ-সচেতন থাকতে পারো। [সূরা বাকারা, আয়াত- ১৮৩]

ইসলামের আগেও রোজা বা উপবাসের বিধান ছিল পূর্ববর্তী অনেক ধর্মবিশ্বাসে। যেমন, খ্রীষ্টধর্মের একেবারে শুরু থেকেই ফাস্টিং বা উপবাসের বিধান ছিল। আত্মশুদ্ধির মানসে তারা উপবাস করতেন। ৬ষ্ঠ শতকে লেন্টেন ফাস্ট বলে একটি ধর্মীয় বিধি প্রচলিত হয় যাতে ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টানরা ৪০ দিনের উপবাসকাল কাটাতেন যখন দিনে মাত্র একবেলা খাওয়ার অনুমতি ছিল তাদের। খ্রিষ্টানদের প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাথলিক দুই ধারাতেই উপবাসের বিধি আছে।

পেরু ও মেক্সিকোর কিছু জনগোষ্ঠীর মানুষ এখনো পাপের প্রায়শ্চিত্য ও দেবতাকে খুশি করার জন্যে উপবাস করে থাকেন।

ইহুদিদের বছরের সবচেয়ে পবিত্র দিন, ইয়ুম কিপুর পালনের অনুষঙ্গই হলো দীর্ঘ ২৫ ঘণ্টা কোনোরকম খাবার পানীয় গ্রহণ না করে সিনাগগে (ইহুদিদের উপাসনালয়) অবস্থান করা।

রোজা নিয়ে এ ভুল ধারণাগুলো কি আপনারও আছে? 

কোরআন নাজিলের আগে রমজান ছিল অন্য এগারটি মাসের মতোই

কোরআন নাজিলের আগে রমজান ছিল অন্য এগারটি মাসের মতোই একটি সাধারণ মাস। কিন্তু যখন কোরআন নাজিল হলো, রমজান একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস হিসেবে বিবেচিত হতে লাগল, এমনকি স্বয়ং আল্লাহর কাছেও।

মানবজাতির ওপর কোরআন নাজিলকে আল্লাহ নিজেও গুরুত্বপূর্ণ গণ্য করেছেন। আর সেজন্যেই রমজান মাসটিকে তিনি শুধু অন্য এগার মাস নয়, হাজার মাসের চেয়েও বেশি মর্যাদাপূর্ণ বলে বলেছেন।

দুর্ভাগ্যজনক হলো রমজান এলে আমরা কাজ কমিয়ে দিই

রমজানে আল্লাহ যে-কোনো সুন্নত কাজের সওয়াব ফরজ কাজের সমান করে দেন। আর একটি ফরজের সওয়াবকে ৭০টি ফরজের সমান করে দেন।

তার মানে তিনি কোরআন নাজিল করেছেন এবং সেই আনন্দে তার বান্দাদেরকে এই সুবিধা দিতে চাচ্ছেন যে, এই মাসে তোমরা বেশি বেশি কাজ কর। কারণ, কাজের তুলনায় বিনিময় তোমরা অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি পাবে।

কাজেই আমাদের কী করা উচিত- কাজ বাড়ানো না কমানো? নিঃসন্দেহে কাজ বাড়ানো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, রমজান এলে আমরা কাজ কমিয়ে দেই। 

দু/তিনগুণ ওভারটাইমের কথা শুনে একজন শ্রমিক কী করে!

প্রসঙ্গত একটি কারখানা এবং তার শ্রমিকদের উদাহরণকে আনা যেতে পারে।  

একটি কারখানায় যখন শ্রমিকরা কাজ করে, সাধারণভাবে ছুটির অপেক্ষায়ই তারা থাকে! ছুটি পেলে চলে যেতে পারবে- এটাই তারা চায়। 

কিন্তু যখন গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ কোনো জরুরি ডেলিভারির কথা জানায়, বলে ওভারটাইম করে এটা শেষ করতে হবে, তখন কী হয়?

শ্রমিকরা নাখোশ হয়। অপছন্দ করে।

কিন্তু যখন শোনে এবারের ওভারটাইমের পেমেন্ট হবে অন্যান্য বারের দুইগুণ/চারগুণ, তখন কী হয়?

মন খারাপ তো থাকেই না, বরং বহুগুণ উৎসাহ নিয়ে মুক্তকচ্ছ হয়ে কাজে নেমে পড়ে।

কেন? বাড়তি উপার্জনের আশায়।

তো একজন সাধারণ শ্রমিক যদি কিছু বাড়তি মজুরির আশায় তার দুনিয়ার পরিশ্রমকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে,  তাহলে একজন বিশ্বাসী যখন জানতে পারে যে রোজার মাসে তার যে-কোনো ভালো কাজের প্রতিদান আল্লাহ অন্তত ৭০ গুণ বাড়িয়ে দিতে চেয়েছেন, তখন তার দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিৎ? পরিশ্রম কী মাত্রার হওয়া উচিৎ?

আর ৭০ আসলে একটি রূপক। এর মানে এর গুণন হতে পারে অগুণতি।

রমজানে তাই কাজ বাড়াতে হবে

রমজানে আমাদের প্রস্তুতিটা তাই এরকম থাকা উচিত যে, ফরজগুলো আমরা মনোযোগের সাথে আদায় করবই। আর সুন্নত কাজসহ যত কাজ আছে কোনোটাই যাতে এ মাসে বাদ না পড়ে। এগারোটি মাসে যেসব কাজে গাফলতি করেছি সেসব যেন রমজান মাসে করতে পারি।

-এ মাসের প্রথম ১০ দিন রহমতের, পরের ১০ দিন মাগফেরাতের আর শেষ ১০ দিন নাজাত অর্থাৎ জাহান্নাম থেকে মুক্তির। এই সময়গুলোতে এই প্রাসঙ্গিক দোয়া বেশি বেশি করতে হবে।

-নামাজ আদায়ের পর নীরবে ৩৩বার সুবহানাল্লাহ ৩৩বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর পড়ুন

-নবীজীর (স) সুন্নত হিসেবে তারাবীহ পড়তে সচেষ্ট হোন

-সেহরির আগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় উত্তম ইবাদত

-নবীজী (স) বলেন- এ মাসে এমন একটি রাত (শবে কদর) আছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। তাই রমজানের শেষ ১০ দিনের প্রত্যেক বেজোড় রাতকে কদর এর মহিমান্বিত রাত মনে করে ফজর না হওয়া পর্যন্ত ইবাদতে মগ্ন থাকুন, ডুবে যান কোরআনের মর্মবাণীর গভীরে।

-ইফতারের আগে ও তাহাজ্জুদের সময় নিজের অতীত ভুলত্রুটির জন্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। প্রতিজ্ঞা করুন এ ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি না করার।

রোজা রেখেও রক্ত দেয়া যায়

ক্ষুধার্ত থাকুন- মস্তিষ্ক হবে ক্ষুরধার

দীর্ঘজীবন চান? রোজা রাখুন (পর্ব-১)

কোরআন ও নিরাময়

রমজান যেহেতু কোরআন নাজিলের কারণে বিশিষ্ট, এ মাসে তাই যতবেশি কোরআন অনুধাবনে ব্যয় করা যাবে তত উত্তম। আর একজন বিশ্বাসীর জন্যে কোরআন কল্যাণ ও নিরাময় বয়ে আনে-

“বিশ্বাসীর জন্যে কোরআন হচ্ছে শেফা ও রহমতস্বরূপ” (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৮২)। এ নিরাময় শারীরিক, মানসিক, আত্মিক এবং সামাজিক।

এই রমজানে এ কোরআনের গভীরেই আপনি ডুবে যান। ১-৭ মে বাসায় বসে সপরিবারে করুন কোয়ান্টায়নে খতমে কোরআন। পাবেন রোগব্যধি, নেতিবাচকতা, ভয়, বিকৃতি, আতঙ্ক ও মনোবিকার থেকে মুক্তি। সেইসাথে ১২৪ কোটি বছর ইবাদতের সমান নেকি।

করোনাসহ সকল বালা-মুসিবত থেকে পরিবার থাকবে আল্লাহর রহমতের ছায়ায়। কারণ আপনি জানেন, কোরআনের জ্ঞান যেখানে অনুশীলন হয় ফেরেশতারা সেখানে আল্লাহর রহমত বর্ষণ করে। 

খতমে কোরআনের এ লিঙ্ক পৌঁছে দিন আরো ৪০ জনকে। উদ্বুদ্ধ করুন- করোনা মুক্তির নিয়তে যেন তারাও বাসায় বসে সপরিবারে অংশ নেন কোরআন থেকে নিরাময় লাভের এ সুযোগে।

বাজেট বেড়ে যাওয়া, সারা বিকেল রান্নায় ব্যস্ততা ও অন্যান্য

রমজান মাসে আমাদের অনেকেরই বাজেট বেড়ে যায়। কেন? কারণ অন্য সময় আমরা যা খাই, রমজানে তার চেয়ে বেশি খাই।

খাওয়া-খরচ বেশি হবে রমজানে- এটা আমরা ধরেই নিই। অথচ ধর্ম বলে এহেন আচরণ রমজানের উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ খেলাফ।

রমজান মাসে অতিরিক্ত কোনো বাজার বা বাজেট রাখার প্রয়োজন নেই। এটা জাহেলিয়াত।

তাছাড়া ‘ইফতারি’ নামের ভাজাপোড়া গরম গরম পরিবেশন করার তাগাদা থেকে রমজানে বেশিরভাগ গৃহিণীর বিকেল থেকে পুরো সময়টা কাটে রান্নাঘরে। ইফতারের দোয়া করার সুযোগটাও উনি পান না।

তাহলে কী হলো?

ভ্যারাইটিজ ইফতার খেতে গিয়ে নিজের জীবনে বারোটা বাজল, দোয়ার মৌসুম হারিয়ে গেল।

কাজেই রোজা রাখছি বলে ভালো ভালো খেতে হবে, ভোররাতের জন্যে আলাদা রান্না করতে হবে- এসব ভাবনার সাথে প্রকৃত ধর্মীয় চেতনার কোনো সম্পর্ক নেই।

সারাবছর যেভাবে খেতেন এমাসেও সেভাবে খান।

ভোজনবাহুল্য বর্জন করুন, বেঁচে যাওয়া করোনার শিকার নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ান 

বরং এখন করোনাভাইরাসের কারণে দেশজুড়ে ব্যাপকসংখ্যক নিম্নবিত্ত মানুষ যেভাবে উপার্জনহীন-নিরন্ন হয়ে পড়েছে তাদের কথা চিন্তা করে আরো সংযমী, মিতাচারী হোন।

ইফতারের মেনু তিন আইটেমে সীমিত রাখুন। বেঁচে যাওয়া অর্থ নিরন্ন এই মানুষের কাজে লাগাবার মতো করে দেয়া-এটাই হোক এবার রমজানে আপনার সাধনা।  

ইফতারে কী খাবেন?

-মাগরিবের আজান দিলে খেজুর খেয়ে পানি পান করুন; শরীরে আসবে তাৎক্ষণিক প্রাণশক্তি। চিনির শরবতেরও প্রয়োজন নেই।

-নামাজ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে নিন। খাবারে ভাত, শাকসবজি, মাছ বা মাংস বা ডিম ও ডালসহ অন্যান্য সুষম খাবার, সালাদ, লেবু, ছোলা ও টক দই রাখুন।

-পেঁয়াজু, চপ, বেগুনি, পাকোড়ার মতো ভাজাপোড়া খাবেন না। হজমের অসুবিধা, বুক জ্বালাপোড়া ও এসিডিটির সমস্যা হতে পারে।

-পোলাও, বিরিয়ানি, তেহারি, মোগলাই, হালিম, চাইনিজ, গরু ও খাসির গোশত এ মাসে যত কম খান তত ভালো।

-ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কার এসময়ে বেশি বেশি ভিটামিন সি-যুক্ত ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

সেহরিতে কী খাবেন?

-প্রোটিন পানির তৃষ্ণা বাড়ায়। সেহরিতে তাই মাছ-মাংস বর্জন করুন। খিচুড়ি, ডিম, ডালও খাবেন না। সামান্য ভাত-সবজি বা কলা-খেজুর বা দই-চিড়া খান।

-তবে একেবারে কিছুই না খাওয়া, অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে সেহরি বর্জন- এটা করবেন না।

-সেহরি শেষে দাঁত ব্রাশ ও ওযু করে কিছুক্ষণ বজ্রাসনে বসুন। কোয়ান্টাম প্রকাশিত আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী  অডিও শুনতে থাকুন। ফজরের নামাজ আদায়ের পর যতক্ষণ ইচ্ছা মর্মবাণী শুনতে বা পড়তে পারেন।

-রমজান খাদ্য সংযমের মাস, খাদ্য উৎসবের নয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সমাজের যে বিপুলসংখ্যক মানুষ উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন, তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে নামী-দামী হোটেলের খাবার বর্জন করুন একেবারেই।

ইফতারের সময় একটি দোয়া আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না

নবীজি (স) বলেছেন, রোজাদারের জন্যে দুটি আনন্দ। একটি হচ্ছে, ইফতারির সময়। আরেকটি আনন্দ হচ্ছে, সে যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে সাক্ষাত করবে সেই সময়।

তিনি আরো বলেন, নিশ্চয়ই রোজাদারের জন্যে ইফতারের সময় একটি দোয়া এমন, যা আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না।

অর্থাৎ ইফতারের সময় দোয়া কবুলের সময়। অন্তত একটি দোয়া আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবেন।

তাহলে আমরা কী প্রস্তুতি নিতে পারি?

আমাদের জীবনে অনেক অব্যক্ত দুঃখ-কষ্ট আছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু সীমিত বুদ্ধি বিবেক সামর্থ্যের জন্যে সেগুলো কাটিয়ে ওঠতে পারি না।

মানসিক অশান্তি, পারিবারিক অশান্তি, অর্থনৈতিক দৈন্য বিভিন্ন ধরণের ভেজালের মধ্যে আছি যেগুলো থেকে আমরা মুক্তি চাই।

জীবনের ত্রিশটি গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া নির্বাচন করুন

জীবনের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ত্রিশটি বিষয় যদি আলাদা করে লিখে নেই তাহলে রমজানের প্রত্যেকদিন সবগুলোই এক এক করে স্রষ্টাকে বলতে পারব।

প্রথমে হয়তো দেখা যাবে আপনি পাঁচ/দশটার বেশি লিখতে পারছেন না। আবার লিখবেন, আবার লিখবেন।

তারপর এই দোয়াগুলোই প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ইফতারের আগে পেশ করুন। আপনি দেখবেন, ইনশাল্লাহ! আপনার জীবন বদলে যাচ্ছে।

ইফতার এবং আল্লাহর ক্ষমা

ইফতারের সময়ের গুরুত্ব নিয়ে আরো বলা হয়- আল্লাহ এসময় আরশে আজিম থেকে তাকিয়ে থাকেন আর ফেরেশতাদেরকে ডাকেন। বলেন, আচ্ছা! জমিনে কী হচ্ছে?

ফেরেশতারা বলে, আল্লাহ, সবাই খাবার-দাবার নিয়ে বসে আছে।

আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, ওরা খায় না কেন? ফেরেশতারা জবাব দেয়, আপনি যে নিষেধ করেছেন সূর্য ডোবার আগে খাবে না।

ঐসময় যারা দোয়া করে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন, এরা কী চায়? তখন ফেরেশতারা বলে, আল্লাহ এরা মাফ চায়।

তখন আল্লাহ বলেন, তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে আমি বলছি, আমার ভয়ে যারা সব খাবার সামনে রাখার পরও এখনও খাচ্ছে না, আমি সবাইকে মাফ করে দিলাম।

এরকম বরকতের সময়ও যদি কেউ ইফতারি বানাতে ব্যস্ত থাকে বা অন্য কাজে মশগুল থাকে তাহলে তাকে দুর্ভাগাই বলতে হয়।

এজন্যেই খাবার নিয়ে তো বটেই অন্য কোনো কাজ নিয়েও এসময়টা হুলস্থূল করা উচিত নয়।

ইফতারের ১৫ মিনিট আগে বাসার গৃহকর্মী ও অধীনস্থসহ সবাইকে একসাথে নিয়ে বসুন। খেজুর-পানি রাখুন সামনে। আল কোরআনের বাংলা দোয়া প্লে করুন। নিমগ্ন হোন। শেষ হবার পর প্রত্যেককে বলেন, এবার নির্ধারিত দোয়াটা কর।

মৃতদের জন্যে নাজাত প্রার্থনা করুন

আমাদের বাবা-মা বা আপনজন যখন পৃথিবী থেকে বিদায় নেন আমরা খুব কান্নাকাটি করি।

কিন্তু এরপর সাধারণভাবে আমরা তা পুরোপুরি ভুলে যাই। মনে করতেই চাই না। করলেও বছরে একবার, মৃত্যুদিবসে!

তাও ব্যস্ততার অজুহাতে অনেক সময় নিজেরাও যাই না। মাদ্রাসায় বিরিয়ানির প্যাকেট পাঠিয়ে দিই বা টাকা পাঠিয়ে দিই। বলি যে, আজকে আমার মায়ের মৃত্যুদিবস! একটু দোয়া করে দেবেন।

অথচ নবীজির (স) বর্ণনা অনুসারে, একজন মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন সে সার্বক্ষণিকভাবে তার বাবা-মা, সন্তান-সন্তুতি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনের কাছে সাহায্য চাইতে থাকে।

এমনকি যার সাথে আপনার একদিনমাত্রও দেখা হয়েছে, তিনিও কবরে গিয়ে আপনার কাছে সাহায্য চাচ্ছেন।

হঠাৎ হঠাৎ কারো কথা মনে পড়ে

এ কারণেই দেখবেন, হঠাৎ করে অনেক পুরনো কোনো বন্ধুর কথা মনে পড়ে যায়। কোথায় কার সাথে দেখা হয়েছিল, তার কথাটা হঠাৎ করে মনে পড়ে যায়।

এই মনে পড়ে যাওয়াটা কিন্তু আপনারও ইচ্ছা না; ঐ ব্যক্তিরও ইচ্ছা না। আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। কারণ আল্লাহ চান, তার বিপদগ্রস্ত বান্দাকে মুক্ত করতে এবং সে মুক্তির উসিলা হিসেবে জীবিত কোনো বান্দাকে দিয়ে সুপারিশ করাতে।

সুপারিশ কেন?

প্রশ্ন হতে পারে এই সুপারিশের প্রয়োজন কেন

আপনি জানেন, পৃথিবীর সব দেশেই একটা রীতি আছে যে বিশেষ বিশেষ দিবস উপলক্ষে সেসব দেশের কারাগারগুলোতে বন্দি থাকা কিছু কয়েদিকে মুক্তি দেয়া হয়।

এই মুক্তি কিন্তু এমনি এমনি হয় না। হয়তো দেখা যায় যে, সারা বছর ধরে তার আত্মীয়-বন্ধু, পরিজনরা তার জন্যে সুপারিশ করেছে। কর্তৃপক্ষের কাছে তদবির করেছে। তারপর তার মুক্তি হয়েছে। কারণ মুক্তির জন্যে তারাই অগ্রাধিকারী বিবেচিত হয়েছে যাদের নামটা প্রতিনিয়ত সামনে এসেছে।  

তালিকা করুন মৃত যাদের জন্যে সুপারিশ করবেন

কাজেই যারা বেঁচে আছি তাদের দায়িত্ব হলো- যাদের পরিশ্রমের ফসল ভোগ করে আজ আমরা এ পর্যায়ে আছি, তাদের মুক্তির জন্যে দোয়া করা।

দাদা-দাদী, নানা-নানীসহ পরিচিতজন, বন্ধুবান্ধব কার কার জন্যে আপনি বলবেন, এরকম একটা লিস্ট আগেই তৈরি করে নিন। রমজান মাস আসার সাথে সাথে প্রতিদিন এই নামগুলো ধরে ধরে আল্লাহর কাছে তাদেরকে মুক্ত করার জন্যে বলুন।

রাসুলুল্লাহ (স) এ মাসে বেশি বেশি দান করতেন

রমজান একদিক থেকে শারীরিক সুস্থতার মাস। ইবাদতের মধ্য দিয়ে কোরআন অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শারীরিক মানসিক পারিবারিক আত্মিক সুস্থতার মাস। আবার এমাসে দানের সওয়াবও হচ্ছে অন্য যে-কোনো মাসের চেয়ে ৭০ গুণ।

যে কারণে রাসুলুল্লাহ (স) এই মাসে অনেক বেশি বেশি দান করতেন। বোখারী শরীফ এবং মুসলিম শরীফের হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন যে, নবীজী (স) আমাদের মধ্যে সবচেয়ে দানশীল ছিলেন, আর রমজান মাসে তার দানশীলতা আরও বেড়ে যেত। তিনি অনেক বেশি দান করতেন।

যে মাসে রাসুলুল্লাহ (স) বেশি বেশি দান করতেন, সেই মাসে প্রত্যেক বিশ্বাসীর উচিৎ বেশি বেশি দান করা। এবং এবার করোনা পরিস্থিতির শিকার মানুষের কথা মনে করে ঈদের কেনাকাটাসহ সব ধরনের ব্যয়বহুলতাকে বর্জন করুন। যথাসাধ্য এই দান নিয়ে নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ান।  

অন্যের প্রয়োজন পূরণে কাজ ১০ বছরের এতেকাফের সমান

এবং রাসুলুল্লাহ (স) রমজান মাসে কারও উপকার করা, কারও কল্যাণ করা, কারও সমস্যা দূর করা, কারও অভাব মোচন করার জন্যে কাজ করাকে এতেকাফের চেয়েও অনেক অনেক বেশি সওয়াবের কাজ বলে বর্ণনা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বলেছেন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা)। একবার তিনি মসজিদে নববীতে এতেকাফ করছিলেন। এমনসময় একজন মানুষ এসে তাকে সালাম দিল এবং তার সামনে বসল।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে।

ব্যক্তিটি বললেন, আমি ঋণগ্রস্ত এবং এই ঋণ শোধ করার সামর্থ্য এখন আমার নাই।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি তোমার পক্ষে তার সাথে কথা বলব?

লোকটি বলল, যদি আপনি দয়া করেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস মসজিদ থেকে বেরিয়ে রওনা করলেন।

লোকটি পেছন থেকে ডেকে বলল, আপনি কি ভুলে গেছেন যে আপনি এতেকাফে আছেন?

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বললেন, যে না আমি ভুলি নি।

বরং আমার মনে পড়েছে এই মসজিদে যিনি ঘুমিয়ে আছেন তার কথা। তিনি আল্লাহর রাসুল।

আমি আল্লাহ্‌র রসুলকে বলতে শুনেছি যে কোনো বিশ্বাসী যখন আরেকজনের জরুরি প্রয়োজন পূরণের জন্যে বের হয়, তার এ কাজ ১০ বছরের এতেকাফের সমান!

জান-ই-সদকা ও যাকাত

আর করোনা সংকট থেকে মুক্তি, বালা-মুসিবত থেকে নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার জন্যে জান-ই-সদকা হিসেবে বিশেষ দান করুন।

এক চান্দ্র বছর আপনার কাছে ৪৫ হাজার টাকা জমা থাকলেই আপনি যাকাতদাতা। করোনা পরিস্থিতির শিকার দুস্থদের কথা স্মরণ করে যাকাত দিন সঙ্ঘবদ্ধভাবে। রমজানে যাকাতের অর্থ কোয়ান্টাম যাকাত ফান্ডে দান ৪,৯০০ গুণ বরকতের।

ভার্চুয়াল ভাইরাস

টিভি, ইউটিউব, ফেসবুক দেখে সময় কাটানো আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমাবে, নষ্ট করবে রোজার গুণমান, সৃষ্টি হবে নেতিবাচকতা।

আশাবাদ ও ইতিবাচকতায় উজ্জীবিত হতে চোখ রাখুন কোয়ান্টাম সাইটে।

স্পিচ, ভিডিও, কোয়ান্টাপিডিয়া, আর্টিকেল, উইশ, কোরামশুদ্ধাচার অ্যাপগুলোতে সময়ের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা আপনি পাবেন।

ভার্চুয়াল ভাইরাস আসক্তিমুক্তির এক চমৎকার সুযোগ হতে পারে এ রমজান।

শেষ রমজান

এ রমজানকেই মনে করুন আপনার জীবনের শেষ রমজান। আত্মশুদ্ধি ও হক্কুল ইবাদে সাধ্যমতো সর্বোচ্চ প্রয়াস দিয়ে সার্থক করে তুলুন এবারের রমজান।

এবারের রমজান হোক মনুষ্যত্বের বিজয়ের, শুদ্ধাচার অনুশীলনের।