published : ১৪ এপ্রিল ২০২২
আত্মশুদ্ধি ও স্রষ্টার নৈকট্য হাসিলের এক অসাধারণ সময় পবিত্র মাহে রমজান। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাত লাভের পাশাপাশি এ মাস নিয়ে আসে শারীরিক ফিটনেস অর্জনের চমৎকার সুযোগও। যথানিয়মে রোজা রাখলে দেহ অভ্যন্তরীণ আবর্জনা ও বিষাণু থেকে মুক্ত হয়ে হয় ঝরঝরে, প্রাণবন্ত।
রোজা রেখে কায়িক পরিশ্রম করলে দুর্বল বা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারি- এই চিন্তায় রমজানে শরীরকে বিশ্রামে রাখতে চান অনেকেই। ক্ষুধার যন্ত্রণা ভুলে থাকতে বা বিনা আয়াসে দিন পার করতে সময় কাটান আলস্যভরে- ঘুমিয়ে, ঝিমিয়ে বা ইউটিউব, ওটিটি, ফেসবুক ইত্যাদি ভার্চুয়াল ভাইরাসে মত্ত হয়ে।
রোজায় এই অতিরিক্ত নিষ্ক্রিয়তা হতে পারে শরীরের মারাত্মক ক্ষতির কারণ। কারণ অতিরিক্ত বিশ্রামের ফলে ক্যালরি খরচ হয় না বলে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। তাছাড়া শরীরে মেদ জমে বাড়ে ওজন আর মেদস্থূলতাজনিত নানা ব্যাধি।
রোজা বা ফাস্টিংয়ে দেহকোষ ‘অটোফেজি’ নামক বিশেষ একটি জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টক্সিনমুক্ত হয়। অটোফেজির সর্বোচ্চ সুফল পেতে হলে আপনাকে জারি রাখতে হবে স্বাভাবিক কর্মব্যস্ততা ও শারীরিক সক্রিয়তা। কারণ কায়িক শ্রম অটোফেজি প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত বা ত্বরান্বিত করে।
ধরুন, আপনি যখন ক্ষুধার্ত থাকেন তখন কি - কী খাবেন সে ব্যাপারে কোনো বাছাই করেন, নাকি সামনে যে খাবারটা আসে সেটাই খান? নিশ্চয়ই আপনি দ্বিতীয়টাই করেন!
রোজাকালে একই অবস্থা হয় আপনার শরীরেও। বাইরে থেকে খাবার না পেলে দেহকোষ ক্যালরি জোগাতে অভ্যন্তরীণ আবর্জনা বা টক্সিনকে ধরে ধরে খেয়ে ফেলে। এটাই অটোফেজি বা নিজেই নিজেকে খাওয়া। কিন্তু রোজা রেখে আপনি যদি শুয়েবসে সময় কাটান তাহলে ক্যালরি বার্ন হবে না। ফলে আলাদা করে ক্যালরির প্রয়োজন হবে না, অটোফেজিও সক্রিয় হবে না।
ব্যায়াম করলে ফ্যাট বার্ন হয়, বাড়ে শরীরে রক্ত চলাচল। তবে ইনস্ট্রুমেন্টাল ব্যায়াম না করাই ভালো, বিশেষত রমজানে। এর চেয়ে ভালো এবং কার্যকর হলো ইয়োগা বা যোগব্যায়াম।
রোজা অবস্থায় অস্বস্তিকর মনে হলে ইয়োগা করতে পারেন ইফতারের পর।
খেজুর পানি দিয়ে ইফতারের পর মাগরিবের নামাজ পড়ে আপনি কিছুক্ষণ ইয়োগা করে তারপর ভরপেট খাবার খান। কোনো অবস্থাতেই ভারি খাবার খাওয়ার পরপরই ইয়োগা করবেন না। সেক্ষেত্রে তারাবির নামাজ পড়ে তারপর ইয়োগা করুন।
অবশ্য ভরাপেটে বজ্রাসন করতে পারেন। বজ্রাসন হজমপ্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
সহজ কয়েকটি যোগাসন করার মাধ্যমে আপনি চমৎকার উপকার পাবেন রোজার এই মাসে। শুরুটা হবে সবসময়ের মতো সহজ উজ্জ্বীবনের মধ্য দিয়ে।
বঙ্গাসন- খুবই সহজ, আবার অনেক উপকারীও। স্রেফ প্যানে বসার ভঙ্গিমায় কিছুক্ষণ বসলেই হয়ে যাবে বঙ্গাসন! এই আসনটির জন্যে খুব বেশি প্রস্তুতি লাগবে না। করতে পারবেন যে কোনো সময় যে-কোনো স্থানে।
শীতলী প্রাণায়াম- পদ্মাসন, বজ্রাসন, সুখাসন বা অন্য যে-কোনো ধ্যানাসনে বসুন। হাত দুটো রাখুন হাঁটুর ওপরে। এবার জিহ্বাকে সামনের দিকে বের করে রোল বানান। দম নিন রোলের ভেতর দিয়ে। এরপর মুখ বন্ধ করে নাক দিয়ে দম ছাড়ুন। প্রতিবারে ৫-১০ বার এই প্রাণায়াম করুন দিনে ৩/৫ দফা। আপনার দেহ থাকবে শীতল, আপনি মুক্ত থাকবেন স্ট্রেস ও টেনশন থেকে।
হাঁটুন- রোজার সময় সকালেই হাঁটার কাজটি সেরে ফেলুন। বিকেলে না হাঁটাই ভালো। বিশেষত ডায়বেটিস রোগীরা বিকেলে হাঁটলে রক্তে সুগারের পরিমাণ অনেক কমে যেতে পারে।