রমজানে যে ৫ কাজ বাড়াবে আপনার সোশ্যাল ফিটনেস

মাহে রমজান আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাস। সামাজিক সমমর্মিতার মাস। দুঃস্থ-বঞ্চিত-অভাবী ক্ষুধিতের কষ্ট অনুধাবনের সুযোগ আসে এই মাসে। পাশাপাশি সামাজিক ফিটনেস বাড়ানোর সুযোগও আমরা নিতে পারি কিছু করণীয় ও বর্জনীয় অনুসরণের মধ্য দিয়ে।

এমন ৫ করণীয়-বর্জনীয় :

১. সবাইকে আগে সালাম দিন

সালাম একজন বিশ্বাসীর প্রতি আরেক বিশ্বাসীর হক। সালামের চর্চা বাড়ায় সামাজিক বন্ধন। সালামের মাধ্যমে আমরা অন্যের শান্তি কামনা করি। শুভেচ্ছার এর চেয়ে বড় প্রকাশ আর কী হতে পারে!

সবাইকে আগে সালাম দিন। ( (তত্ত্বসূত্রঃ odhikar.news )

নবীজী (স) সবসময় আগে সালাম দিতেন। তাই আসুন আমরাও রমজানে সবাইকে আগে সালাম দেই।

যার সাথেই সাক্ষাৎ হবে স্পষ্টভাবে, সুন্দর উচ্চারণে বলুন- ‘আসসালামু আলাইকুম’। প্রত্যুত্তরে আরো সুন্দরভাবে বিনয়ের সাথে বলুন- ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম’। সালাম ও তার জবাবের এই সুন্দর চর্চা বাড়াবে আপনার সোশ্যাল ফিটনেস।

২. নিয়মিত সাদাকায়নে অংশ নিন

সামাজিক ফিটনেসের প্রথম শর্ত হলো সামাজিক হওয়া। অর্থাৎ সমাজের অংশ হওয়া।

চারপাশের মানুষ আপনাকে দেখলে কতটা আপন মনে করে; আপনার উপস্থিতি তাদের কতটা তৃপ্তি দেয়; কতটা তারা আপনাকে কাছে কামনা করে- এটাই আপনার সোশাল বা সামাজিক ফিটনেসের ব্যারোমিটার। যা অর্জনে চমৎকার ভুমিকা রাখবে সাদাকায়ন

নিয়মিত সাপ্তাহিক উন্মুক্ত প্রোগ্রাম সাদাকায়নে অংশ নিন।

আসলে দেহের পেশির বাইরেও আমাদের অদৃশ্য একটি পেশি আছে- ‘সোশ্যাল মাসল’ বা সামাজিক পেশি। একে যত আমরা কাজে লাগাব, আমাদের সুখের পরিমাণ তত বাড়বে। সাদাকায়নে আপনার নিয়মিত উপস্থিতি বাড়াবে আপনার ‘সোশ্যাল মাসল’।

৩. অভাবী আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নিন

এটা আপনার প্রতি আপনার আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের হক। যা আদায় করে আপনি নিজেকে ধার্মিক পরিচয় দিতে পারবেন শুধু না, সামাজিকভাবে ফিটও হয়ে উঠবেন।

রমজান এলেই দেখা যায় অসাধু ও অর্থলোভী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্মে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এতে দুর্বিপাকে পড়ে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষেরা। না পারে স্বল্প আয়ে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে, না পারে অন্যের কাছে হাত পাততে। এদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য।

রমজানে দরিদ্র এবং প্রতিবেশীর হক আদায় করুন । ( তত্ত্বসূত্রঃ ppbd.news )

একটু খোঁজখবর করে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। কাজটা আপনার জন্যে বাড়তি বা উটকো হতে পারে, কিন্তু এর প্রতিফল কিন্তু অনেক! যার অন্যতম হলো সোশ্যাল ফিটনেস অর্জন।

৪. অন্তরে সমমর্মিতা লালন করুন, গীবত পরিহার করুন

বিশ্বজনীন মমতা জাগ্রত করার মাস রমজান। তাই এই মাসে সৃষ্টির সেবায় যথাসম্ভব সময় ব্যয় করুন। নবীজী (স) রোজার মাসে দানের পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দিতেন। কারণ এ-মাসে দানের সওয়াব অন্য সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ।

তাই আপনিও রমজানে বেশি বেশি দান করুন। সেহরি শুরু করুন মাটির ব্যাংকে দান করে। সঙ্ঘবদ্ধ দানের বদৌলতে আপনি পাবেন ৪,৯০০ (৭০ X ৭০) গুণ সওয়াব! পাশাপাশি আপনি পরিণত হবেন সমমর্মী মানুষে।

এ-ছাড়াও রমজানে পরনিন্দা, পরচর্চা ও গীবত পুরোপুরি বর্জন করুন। কারণ এই কাজগুলো সামাজিক অস্থিরতা ও অশান্তি সৃষ্টি করে। যার পরিণাম সোশ্যাল ফিটনেস হ্রাস।

রমজান মাসে গীবত পরিহার করুন।

গীবত ও দুর্ব্যবহার নিজে তো করবেনই না; অন্যেরা করলেও আপনি অংশ নেবেন না। আপনার সাথে কেউ যেচে এসে বিবাদ করতে চাইলেও আপনি প্রশান্ত থাকুন।

৫. যাকাত ও ফিতরা যথাযথভাবে আদায় করুন

নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এমন সকল সুস্থ-সবল, বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মুসলিমের জন্যে যাকাত আদায় করা ফরজ। এ কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়; বরং অবশ্য পালনীয়। যাকাত আদায় না করলে ঈমান পরিপূর্ণ হয় না।

জমানো অর্থের উপর যাকাত আদায় করুন যথাযথ ভাবে।

যথাযথভাবে যাকাত আদায় এবং প্রকৃত গ্রহীতার মধ্যে বিতরণে কেবল ধর্মীয় বিধান পালনই হয় না, সমাজে ধনবৈষম্য লাঘব হয়, দরিদ্র মানুষ স্বাবলম্বী হয়ে একটা সময় সে নিজেই পরিণত হয় যাকাতদাতায়। আর এই রূপান্তরে অবদান রাখায় দৃঢ় হয় সামাজিক শক্তি।

কল্যাণের এই ধারায় যাকাতদাতা ও যাকাতগ্রহীতাকে সুষ্ঠুভাবে সম্পৃক্ত করতে ১৯৯৬ সালে শুরু হয় কোয়ান্টাম যাকাত কার্যক্রম। কোয়ান্টামের এ প্রয়াসে যুক্ত হয়েছেন হাজারো যাকাতদাতা। আর তাদের সঙ্ঘবদ্ধ সহযোগিতায় হাজার হাজার পরিবার হয়েছে স্বাবলম্বী।

এই কল্যাণপ্রয়াসে শরিক হোন আপনিও; আপনার যাকাত ও ফিতরা দিন কোয়ান্টামে। সঙ্ঘবদ্ধভাবে সৃষ্টির সেবায় রাখুন সক্রিয় অবদান।