published : ২ এপ্রিল ২০২৩
আরবি দ্বিতীয় হিজরির ১০ শাবান মুমিন মুসলমানের ওপর রমজানের রোজা ফরজ হয়। কিন্তু এর আগেও রাসুলুল্লাহর (স) ওপর রোজা ফরজ ছিল। তিনি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন, যা আইয়্যামে বিজের রোজা নামে পরিচিত।
নবীজীকে (স) অনুসরণ করে সাহাবীরাও এই রোজা পালন করতেন। আর রমজানে রোজা ফরজ হওয়ার পর থেকে যুগ যুগ ধরে রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা রোজা পালন করছেন।
মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, নবীজী (স) এবং সাহাবীরা কীভাবে রোজা পালন করতেন?
চলুন জেনে নেয়া যাক, কেমন ছিল তাদের রোজা!
রমজানের প্রস্তুতির উপযুক্ত মাস হলো শাবান।
হযরত আয়েশা (রা) বলেন, ‘রমজানের রোজার পর নবীজী (স) শাবান মাসের রোজাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে পালন করতেন।’
নবীজীর (স) অনুসারী হিসেবে সাহাবীরাও শাবান মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। মাহে রমজান আগমনের পূর্ব থেকেই তাদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা বেড়ে যেত।
নবীজী (স) দোয়া করতেন যে, হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্যে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।
জাঁকজমকহীন অনাড়ম্বর রোজা পালন করতেন নবীজী (স)। তার সেহরি ও ইফতার ছিল একেবারেই সাধারণ খাবার দিয়ে।
আনাস ইবনে মালেক (রা) বর্ণিত- নবীজী (স) ইফতার করতেন তিনটি তাজা-পাকা খেজুর দিয়ে। তাজা-পাকা খেজুর না পেলে তিনটি শুকনো খেজুর দিয়ে। আর শুকনো খেজুর না পেলে তিন ঢোক পানি পান করে। (তিরমিজী)
নবীজী (স) ইফতার করতেন খেজুর দিয়ে
রসুল (স) সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করতে পছন্দ করতেন। ইফতারে দেরি করা তিনি পছন্দ করতেন না।
তিনি সেহরি খেতেন রাতের শেষভাগে সুবহে সাদিকের আগ মুহূর্তে। তার খাবার গ্রহণের সারল্য ও অল্পতুষ্টি বজায় থাকতো সেহরির সময়ও। ঘরে যখন যা থাকতো তাই সেহরি হিসেবে গ্রহণ করতেন।
তবে খাবার যাই হোক না কেন, নবীজী (স) নিয়মিত সেহরি গ্রহণ করতেন এবং সাহাবীদেরও সেহরি গ্রহণের প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা সেহরি গ্রহণ করো, কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে। (বোখারী, মুসলিম)
নবীজী (স) সবচেয়ে বেশি নিতেন মুখের যত্ন, যার বাদ যেত না রমজান মাসেও। রোজা অবস্থায় তিনি মেসওয়াকের খুব বেশি গুরুত্ব দিতেন; অন্যদেরও উৎসাহ দিতেন।
আমের বিন রাবিয়া (রা) থেকে বর্ণিত, আমি রোজা অবস্থায় রাসুলকে (স) এতো বেশি মেসওয়াক করতে দেখেছি, যা গণনা করে শেষ করা যাবে না।
রমজান কোরআন অবতীর্ণের মাস। এ মাসে কোরআন তেলাওয়াত করা ও শোনা দুটোই কল্যাণের।
নবী কারীম (স) কোরআন তেলাওয়াত ও তেলাওয়াত শ্রবণ পছন্দ করতেন। রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াত আরও বাড়িয়ে দিতেন তিনি।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (র) বলেন, ‘রমজান এলে প্রতি রাতে নবীজীর (স) কাছে জিবরাইল (আ) আগমন করতেন। একে অপরকে কুরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন।’ (বোখারী)
সাহাবীরাও এ মাসে অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে অন্যান্য ব্যস্ততা থেকে অবসর হয়ে যেতেন। অসংখ্যবার কোরআন খতম করতেন।
রমজান মাসে দানের সওয়াব অন্য যে-কোনো মাসের চেয়ে ৭০ গুণ। যে কারণে রাসুলুল্লাহ (স) এই মাসে অনেক বেশি দান করতেন।
রমজান মাসে বেশি বেশি করে দান করা নবীজীর (স) শিক্ষা (ছবিসূত্র- বাংলাদেশ প্রতিদিন)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন যে, নবীজী (স) আমাদের মধ্যে সবচেয়ে দানশীল ছিলেন, আর রমজান মাসে তার দানশীলতা আরও বেড়ে যেত। তিনি অনেক বেশি দান করতেন। (বোখারী ও মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ (স) রমজান মাসে কারও উপকার করা, কল্যাণ করা, সমস্যা দূর করা, অভাব মোচন করার জন্যে কাজ করাকে এতেকাফের চেয়েও অনেক বেশি সওয়াবের কাজ বলে বর্ণনা করেছেন।
লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান ও ফজিলত লাভের উদ্দেশ্যে রসুলুল্লাহ (স) রমজান মাসে এতেকাফ করতেন। জীবনের শেষ রমজান পর্যন্ত তিনি এটি পালন করেছেন।
আয়েশা (রা) বলেন, নবীজী (স) রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে এতেকাফ করতেন। নিজে সারারাত জাগতেন। নিজের পরিবারবর্গকে জেগে থাকতে উদ্বুদ্ধ করতেন। কঠোর সাধনা ও ইবাদতে মগ্ন থাকতেন।
নবীজীর (স) মৃত্যুর পর তার স্ত্রীগণও রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করেছেন। (বোখারী, মুসলিম)
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত যে, নবীজী (স) রমজানে তারাবি পড়তে উৎসাহিত করতেন, কিন্তু কখনো এ ব্যাপারে হুকুম করেন নি (যাতে তারাবির নামাজ বাধ্যতামূলক হয়ে না যায়)।
নবীজী (স) রমজানে তারাবি পড়তে উৎসাহিত করতেন (ছবিসুত্র- wikipedia.org)
তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি রমজানে স্বেচ্ছায় গভীর বিশ্বাস ও আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে তারাবির নামাজ পড়বে, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। (মুসলিম)
রবের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরীর অন্যতম মাধ্যম হলো তাহাজ্জুদ। রাসুল (স) অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজানে তাহাজ্জুদ নামাজ বেশি আদায় করতেন। রমজানে কখনো তার তাহাজ্জুদ ছুটতো না।
তিনি রাতের শেষ অংশে তাহাজ্জুদের জন্যে দাঁড়িয়ে যেতেন।