লেখাপড়া করে কী হবে !

অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই মনে করে, ভালো রেজাল্ট দিয়ে কী হবে! কিংবা কেন এত লেখাপড়া করছি? প্রশ্নটা আপনার মনে জেগেছে, সেজন্যে অভিনন্দন। কারণ লেখাপড়ায় আনন্দ না পাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণই হলো এটা না জানা।

আচ্ছা চিন্তা করুন তো একটা চাকরির পরীক্ষা। দুজন পরীক্ষার্থী। একজন ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট। আরেকজন কোনোরকমে টেনেটুনে ডি প্লাস। চাকরিটা কার হবে? প্রথমজনের না শেষজনের?

আচ্ছা এবার একটা গল্প বলি। এক বৃদ্ধ পথিক তার গাধাটাকে সাথে নিয়ে যাচ্ছিলেন গ্রামের পথে। হঠাৎ তার সাথে দেখা হলো গ্রামেরই এক যুবকের। যুবক জানতে চাইল, চাচা আপনার ঝোলায় কী? বৃদ্ধ বললেন, এক মণ গম। যুবক বলল, তাতো দেখছি একটা বস্তায়। আরেকটা বস্তায়? বৃদ্ধ বলল, বাবা আরেক বস্তায় এক মণ বালি। যুবক বলল, গম তো বুঝলাম। কিন্তু বালি? বালি কি জন্যে? বৃদ্ধ বলল, আরে বুঝলে না! গমের বস্তাকে ব্যালেন্স করার জন্যে বালি।

শুনেই তো যুবক হা হা করে হেসে উঠল। বলল, সে কি চাচা! আপনি এরকম বোকামি কেন করতে গেলেন? গমটাকে ভাগ করে ২০ সের করে দুবস্তায় দিলেই তো চমৎকার ভারসাম্য হয়ে যেত।

বৃদ্ধ ভাবলেন, আরে তাই তো। এত চমৎকার বুদ্ধিটা কেন আমার মাথায় এল না? বৃদ্ধ এবার যুবককে বেশ তোয়াজ করে জিজ্ঞেস করলেন, তা বাবা তোমার মাথায় তো দেখছি বেজায় বুদ্ধি। নিশ্চয়ই তুমি এ গ্রামের খুব বড় কিছু।

যুবক বলল, না চাচা, আমি হলাম এ গ্রামের সবচেয়ে বুড়ো বেকার। খাইদাই ঘুরে বেড়াই আর ক্লান্ত হলে পথের দিকে চেয়ে বসে থাকি। সারাদিনে এই আমার কাজ।

বৃদ্ধ তখন বললেন, ওমা তাই নাকি! থাক থাক বাবা। এত বুদ্ধি নিয়ে তুমি তোমার নিজের জন্যেই যখন কিছু করতে পারছ না, তখন তোমার এ বুদ্ধি ধার করে আমার কোনো কাজ নেই। এ বুদ্ধি নিয়ে না জানি আমি আবার কোন বিপদে পড়ি! ব্যস। বৃদ্ধ বিরক্তিভরে হন হন করে চলে গেল।

প্রিয় পাঠক! তাই, স্বীকৃতি না থাকলে অনেক যোগ্যতাও অনেক সময় কোনো কাজে আসে না। ভালো রেজাল্ট হলো যোগ্যতার এমনি স্বীকৃতি, যা আপনাকে দেবে সহজ সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা, অন্যদের যা অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পেতে হয়। বাবা-মা শিক্ষক ও বন্ধুমহলে যেমন তিনি পান এ গুরুত্ব, তেমনি যে-কোনো আসরে তিনি হন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

শিক্ষাজীবনে এবং কর্মজীবনে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার পাশাপাশি জীবনে ১ম হওয়ার পথ হয় অনেক সহজ। যারা প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় ভালো রেজাল্টের মাধ্যমে স্বীকৃতি পায়, তারা জীবনে ১ম হওয়ার পথে অর্ধেক এগিয়ে যায়। কারণ জ্ঞান ও তথ্য একজন মানুষের চলার পথকে অনেক সহজ করে, ত্বরান্বিত করে। অবশ্য এ জ্ঞান শুধু পুঁথিগত জ্ঞান নয়। কিন্তু একজন ক্লাসে প্রথম হওয়ার পক্ষে এ জ্ঞান অর্জনের সুযোগ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বেশি।