মন ভালো তো সব ভালো

ছোট্ট গ্রামটির প্রত্যেকটি মানুষই সুখী আর পরিতৃপ্ত। এ গ্রামের এক রাখাল বালক প্রতিদিন মেষ চরাতে যেত গাঁয়ের পাশের জঙ্গলটায়। একদিন দুপুরবেলা গাছের গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছে। হঠাৎ চোখ পড়ল দূরের ঝোঁপ থেকে কিছু একটা চকমক করে উঠছে। তাড়াতাড়ি কাছে গিয়ে দেখল একটা পেতলের প্রদীপ। হাতে তুলে নিলো। আনমনে হাতের ঘষা লাগতেই ক্ষীণ কন্ঠস্বর ভেসে এলো, আমি ইচ্ছেপূরণ প্রদীপ। তোমার যেকোনো একটি ইচ্ছে আমি পূরণ করব, চাইতে পারো যা খুশি।

রাখাল ছেলেটি বিস্ময়ের আতিশয্যে কিছুই চাইতে পারল না। ভাবল কাল দিনটি ভেবে নিই। তারপর চাওয়া যাবে। এদিকে দূর থেকে পুরো দৃশ্যটা দেখল সে গ্রামেরই আরেক বালক। গাঁয়ে এসে সবাইকে বলে দিলো। গ্রামের মোড়ল সিদ্ধান্ত নিলেন এ প্রদীপটি দিয়ে তার গ্রামের সবারই একটি করে ইচ্ছেপূরণ হওয়া উচিত। পরবর্তী কয়েকদিন প্রদীপটি গ্রামের সবার হাতে হাতে ঘুরল। একজন এক ঘর সোনা চাইল তো আরেকজন চাইল সোনার দরজা-জানালাওয়ালা প্রাসাদ। তো আরেকজন চাইল ঘরভর্তি হীরে।

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো কেউ কোনো বাগান চাইল না, চাইল না খেলার মাঠ বা প্রকৃতির কোনো সৌন্দর্য। ফলে গ্রামের সব শিশুরা মনমরা হয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগল। এদিকে বড়দের মনেও শান্তি নেই। যার প্রাসাদ আছে সে ভাবছে আমারতো সোনা নেই। আর যার সোনা আছে সে ভাবছে আমারতো প্রাসাদ নেই। হিংসায় প্রতিবেশীদের একে অন্যের মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ।

অবশেষে একদিন শিশুরা সব দলবেঁধে এলো রাখাল বালকের কাছে। তারা আবার আগের মতো হতে চায়। রাখাল বালক বলল, ঠিক আছে। আমি এখনও আমার ইচ্ছেটি চাই নি। আমাদের গ্রামকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়াই হবে আমার এই চাওয়া। তা-ই হলো। গ্রামের মানুষ আবারও ফিরে পেল হাসিখুশি আর সুখী জীবন। মাঝখানের দিনগুলোকে তারা এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন বলেই ধরে নিলো।

সুখী হওয়ার রহস্যই এখানে। আপনার যা আছে তা নিয়ে তৃপ্ত হোন। ভাবুন তাদের কথা যারা আপনার চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছে। শুকরিয়া করুন আপনি তাদের চেয়ে ভালো আছেন এজন্যে। আপনার মন খারাপ হবে না।

আর মন খারাপ করে, বিষণ্নতায় ভুগে বা ক্ষোভ অভিমান করে কেন সময় নষ্ট করবেন? ভেবে দেখুন জীবনের কতগুলো সময় আপনি শুধু মন খারাপের জন্যে মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারেন নি। পরীক্ষা খারাপ দিয়েছেন। কী লাভ হয়েছে তাতে? মন পরে ভালো হয়েছে ঠিকই। কিন্তু যে পরীক্ষা খারাপ হয়েছে বা অভিমান করে যে সুযোগ হাতছাড়া করেছেন তা-তো আর ফিরে আসে নি। মন ভালো রাখার জন্যে তাই অনুসরণ করুন নিচের কয়েকটি টিপস:

  • প্রত্যাশা করবেন না। আপনি কী পাচ্ছেন সেটা নয়, কী আপনি দিতে পারেন তা নিয়ে ভাবুন। আপনি কষ্ট পাবেন না।
  • মানুষকে ভালবাসুন। অন্যদের ত্রুটিগুলো খুঁজে না বেড়িয়ে কী কী গুণ তাদের আছে তা নিয়ে ভাবুন। প্রশংসা করুন, সাফল্যের জন্যে অভিনন্দিত করুন। মেডিটেশনে কল্যাণ কামনা করুন। আপনার প্রশান্তি বেড়ে যাবে।
  • ব্যস্ত থাকুন। পড়ালেখার পরও যে সময়গুলো কিছু করার নেই, দুঃখবিলাসে না কাটিয়ে মানুষের জন্যে কাজ করুন।

 

একবার নাসিরুদ্দিন হোজা দেখলো, এক লোক পথের ওপর বসে আছে খুব বিমর্ষ হয়ে। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই লোকটি বলল, তার অনেক ধন-সম্পত্তি। খাওয়া-পরা নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। কিন্তু তার কিছুই ভালো লাগে না। জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ঘর-বাড়ি, স্ত্রী-সন্তান কোনো কিছুই আর তাকে আকর্ষণ করে না। এ অস্থিরতা সইতে না পেরে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে সে। হোজা মনোযোগ দিয়ে শুনল। হঠাৎ কিছু না বলেই পাশে রাখা লোকটির কাপড়ের বোচকা নিয়ে দিলো এক ছুট এবং নিমেষে হয়ে গেল চোখের আড়াল। বিস্ময়ের ঘোর কাটতেই লোকটিও পিছু ধাওয়া করল। কিন্তু হোজাকে পায় কে? অনেকদূর যাওয়ার পর রাস্তার ওপর এক জায়গায় বোচকাটি রেখে গাছের আড়ালে অপেক্ষা করতে লাগল হোজা। এদিকে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত, অবসন্ন, উদ্বিগ্ন লোকটি যখন এখানে এসে তার বোচকা খুঁজে পেল, আনন্দে চিৎকার করে সে বলে উঠল, পেয়েছি, পেয়েছি, এইতো আমার বোচকা। বহুদিন সে এত খুশি হতে পারে নি। হোজা আড়াল থেকে হেসে বললো, দুঃখবিলাসীদের এভাবেই শায়েস্তা করতে হয়।