ভেঙে ফেলুন আলস্য ও দীর্ঘসূত্রিতার বৃত্ত

অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর সমস্যাই এটা। ভাল রেজাল্ট তারা সবাই করতে চায়। কিন্তু সমস্যা হলো তারা শুরু করতে পারে না। প্রতিদিনই ভাবে, পরের দিন থেকে শুরু করবে, কিন্তু সেই পরের দিন আর আসে না। তাহলে, জেনে নিন আপনি কেন শুরু করতে পারেন না, আলস্য আর দীর্ঘসূত্রিতার কারণটা কী?

আমি পারি না

ইউনিভার্সিটি অব কালগ্যারির অধ্যাপক পিয়ার্স স্টিল তার ১০ বছর গবেষণার ফল প্রকাশ করেন, দীর্ঘসূত্রিতার একটি প্রধান কারণ হলো ‘কাজটি আমি পারব’ -এ বিশ্বাস করতে না পারা। যখন একজন শিক্ষার্থী কোনো বিশেষ বিষয়ে নিজেকে দুর্বল মনে করে তখন সেটি শুরু করাটা তার জন্য চ্যালেঞ্জিং। যেমন লেখালেখির ব্যাপারে হয়তো আপনার মধ্যে জড়তা আছে। এখন যদি এমন কোনো এসাইনমেন্ট থাকে যাতে নিজের আইডিয়াগুলোকে লিখে প্রকাশ করতে হবে, তাহলে আপনার মধ্যে গড়িমসি দেখা যাবে।
এক্ষেত্রে সমাধান হলো মেডিটেশনের মাধ্যমে আপনার অবচেতন মনের ভয় বা অনিশ্চয়তাকে বের করে আনা। সমস্যাগুলোকে শনাক্ত করুন। এবং সে আলোকে নতুন যোগ্যতা, দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করুন। এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবে এমন কারো সাথে যোগাযোগ করুন। সবসময় মনে করবেন আপনার চেয়ে কম মেধার অনেক মানুষ যদি এটা পেরে থাকে আপনি কেন পারবেন না?

করে কী লাভ!

অন্যের চাপিয়ে দেয়া লক্ষ্যের ক্ষেত্রে আমরা দীর্ঘসূত্রিতায় ভুগি। অর্থাৎ যে কাজের জন্যে আমরা নিজেরা উদ্বুদ্ধ হতে পারি না বা যেটা করে আমার কী লাভ তা বুঝতে পারি না সেটা করার প্রতি আমাদের আগ্রহও সেভাবে হয় না। ব্যাপারটা অনেকসময় অবচেতনভাবেও হয়। যেমন, আপনার মা চান আপনি ডাক্তার হোন। কিন্তু আপনার ডাক্তারি পছন্দ নয়। আপনি হয়তো এমন বিষয়গুলো ইচ্ছে করেই খারাপ করেন যেগুলোতে ভালো করলে আপনি ডাক্তারিতে চান্স পেয়ে যাবেন।
কাজেই আগে ঠিক করুন কেন আপনি এ কাজটা করতে চান। এটা করলে কী কী লাভ হবে আপনার। যদিও নিজের অনিচ্ছার যে কোনো বিষয়েই মন দেয়াটা খুব কঠিন, তবু না করে যে উপায় নেই –এটা বুঝতে হবে।

শুরু ! ওরে বাবা!

শুরু করাটা সবসময়ই একটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। কারণ শুরু মানেই এতদিনের পরিচিত আরামবলয় ভেঙে অনিশ্চয়তার পথে যাত্রা। শুরু মানেই আপাত আনন্দ-অলস বিনোদনের অভ্যাসকে বিসর্জন দিয়ে কষ্টের পথে ঝাঁপিয়ে পড়া। অধিকাংশ মানুষ তাই শুরু করার পরীক্ষাতেই পাশ করতে পারে না। তারা ভাবে আরেকটু অপেক্ষা করি। ইচ্ছেটা আরো চাঙ্গা হোক, তারপরে করব। আসলে কাজ শুরু করে দিতে হয়। ইচ্ছে চাঙ্গা হয় তারপর। আর শুরু করার জন্যে এ মুহূর্তটাই হচ্ছে সর্বোত্তম। তাই শুরু করুন। বই নিয়ে বসে যান। প্রতিজ্ঞা করুন, যত অস্থিরই লাগুক, অন্তত ১৫ মিনিট ধরে আপনি বইটি নিয়ে বসে থাকবেন। কোনো অজুহাতকেই পাত্তা দেবেন না। মনে রাখবেন যত দেরি করবেন, শুরু করতে দেরি হবে ততটাই। 

যদি না পারি!

অনেক সময় ব্যর্থতার ভয় থেকেও দীর্ঘসূত্রিতা হয়। যেমন, কেউ হয়তো মনে করল, ‘এত চেষ্টার পরও যদি কাজটিতে ফেল করি! তার চেয়ে চেষ্টা না করাই ভালো; অন্তত এটা তো বলতে পারব যে, তেমন চেষ্টা করি নি’। এমন হলে বুঝতে হবে আপনি আসলে আপনার জীবনের ব্যাপারে সিরিয়াস নন। না পড়ার জন্য স্রেফ একটা অজুহাত দাঁড় করাতে চাইছেন মাত্র। কারণ পড়ালেখা করেও খারাপ করার ঘটনা হয়তো ১০০ বারের মধ্যে ১ বার হতে পারে। বাকি ৯৯ বারই কিন্তু যারা সঠিক নিয়মে পরিশ্রম করে তারাই সাফল্য পায়। কাজেই ‘এত পড়েও ভালো করবো না’ – এ ধারণাকে বদলে ভাবুন, ‘আমি যেহেতু পড়েছি তাই আমি ভালো করবোই’।

ডেডলাইন না দিলে আমি কাজ করতে পারি না!

আমাদের অনেকেরই শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে কাজ করার অভ্যেস আছে। ডেডলাইন এগিয়ে না এলে আমরা কাজের জন্যে উদ্যমী হতে পারি না। পরীক্ষার রুটিন না পেলে বা পরীক্ষা আর পেছানো যাবে না - এ অবস্থা না হলে আমরা পড়ায় আগ্রহ বা মনোযোগ পাই না।

বেশিরভাগই তাই পরীক্ষার আগের রাতে পড়ে পরীক্ষা দিতে যাই। এতে পাশ করতে পারলেও ভালো রেজাল্ট করা কখনও সম্ভব হয় না। আর ছোট ক্লাসে এ প্রক্রিয়ায় পার পেয়ে গেলেও বড় ক্লাসে যখন অনেক পড়া তখন আর তাল সামলানো যায় না।

এটি অভ্যাস নয়, বদভ্যাস যার কোনো ভালো দিক নেই। চাপের মুখে কাজ সবাই করতে পারে। কিন্তু চাপের আগে কাজ করতে পারাটাই দক্ষতার লক্ষণ।

নিখুঁত করতে হবে! সেরা হতে হবে!

এখানেই নিখুঁত করতে চাওয়াদের দীর্ঘসূত্রিতা। তারা প্রতিটি কাজই নিখুঁতভাবে করতে চায় এবং এর সাথে জড়িয়ে ফেলে আত্মমর্যাদাকে। এরা প্রতিটি জিনিসকেই হয় একেবারে নিখুঁত অথবা কিছুই না এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। কোনো কাজে ব্যর্থ হলে এরা নিজেদেরকেই ব্যর্থ বলে ভাবে। মনে করে পুরোপুরি না পারলেই শেষ হয়ে গেলাম।

এক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। আপনার কী করা উচিত তা না ভেবে কতটুকু করতে পারেন, তা নিয়ে ভাবুন। ১০০ তে ৯০ পেলেও এ প্লাসতো আপনি পাচ্ছেনই। তাহলে ১০০ না পাবার দুঃখকে বড় করে কেন অশান্তি ডেকে আনবেন?  আর কোনো মানুষই নিখুঁত নয়। তাই কোনো কাজই নিখুঁত হতে পারে না। টেবিলের ওপর আধাবেলা সব এলোমেলো করে রাখুন। পোশাকে একটু খুঁত থাকুক না একবেলা। যখন দেখবেন এর ফলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে না তখনই আপনি শিখবেন নিখুঁত নয়, সুন্দরভাবে সময়মতো কাজ করাটাই গুরুত্বপূর্ণ।

সবশেষে

আলস্যকে বলে ‘ডেস্টিনেশন হেল’, সোজা বাংলায় ‘গন্তব্য জাহান্নাম’। কারণ এর থেকে কক্ষণও ভালো কিছু আসে না, কক্ষণও না। অতএব নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করুন যে, ‘মুড আসার জন্য’ বা শেষ সময়ের জন্য বসে না থেকে এখনই শুরু করে দিবেন। আর যখন কোনো কাজ শুরু করবেন আপনি তা শেষ করবেনই। খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, কোনো কাজ সেরে উঠে যাবার আগে পরের কাজটি খানিকটা শুরু করে দিয়ে যান। তাহলে এসে আপনি নিজেকে কিছুটা এগুনো দেখতে পাবেন এবং প্রথম থেকে শুরু করার জড়তায় ভুগবেন না।