মজার কথায় নামতা শেখা

(মিনার বাবা বলছেন) মিনা, আইজ তোমার ল্যাইগা এই চোরটাকে ধরতে পারলাম। মুরগি লইতে চোরডারে দেখছিলা?

  • না, দেহি নাই (মিনার উত্তর)
  • তাইলে অত তাড়াতাড়ি বুঝলা কী কইরা? (মায়ের প্রশ্ন)
  • আমি একটু অংক করছিলাম। (মিনা নরম স্বরে বলল)

প্রতিবেশীরা মিনার বাবা-মায়ের প্রশংসা করলেন। বা বা বা, তুমি মিঞা মাইয়্যাডারে স্কুলে পাঠাইয়্যা বুদ্ধিমানের কাজ করছ।

মিনার বাবা নিশ্চুপ। কারণ মেয়েকে স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে তার কোনো আগ্রহ ছিল না কোনো কালেই। বরং মা চাইতেন, মেয়ে ঘরের কাজে সাহায্য করুক, রান্না শিখুক।

মিনার তাই খুব মন খারাপ। রাজুও বোঝে তার কষ্ট। বলে-তুমি স্কুলে গেলে ভালা হইতো। কিন্তু সে উপায় নেই। রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে মিনা চুপিচুপি রাজুর বইয়ের পাতা ওল্টায় আর স্বপ্ন দেখে স্কুলে যাওয়ার। পরদিন মিঠুকে আদর করে বলেকয়ে পাঠায় স্কুলে। সেদিনই ছেলেমেয়েরা শিখছিল ২-এর নামতা।

মিঠু শিখে এসে বলে মিনাকে। মিনার আগ্রহ ছিল। তাই শিখতে সময় লাগে নি। তিন দু গুণে ছয় পর্যন্ত শুধু শেখে নি, এই নামতা দিয়ে সে মুরগি গুণেছে, পাখি গুণেছে, ব্যাঙের দলের হিসাব মিলিয়েছে। তারপর সেদিন মুরগিদের কক কক আওয়াজে গুণতে গিয়ে ধরা পড়ল একটা মুরগি কম। তাড়া করতে করতে ধরা পড়ল সেই চোর, যে কিনা গ্রামের এর-ওর বাসা থেকেও এর আগে শুরু করেছিল চুরি। মুরগি উদ্ধারের জন্যে কাজে এলো মিনার অংক করা নামতা শেখার মাধ্যমে।

স্কুলে যাওয়ার আগেই সন্তানকে কিছু পড়িয়ে লিখিয়ে অভ্যস্ত করার জন্যে মা-বাবার চেষ্টার কোনো কমতি নেই। এটি ভালো। শিশুরা নিতে পারে। তবে তারা যেভাবে নিতে পারে, সেভাবেই দিতে হবে। পড়াটাকে রসকসহীন থেকে একটু রসিক করতে তাই সাহায্য নিতে হবে ছন্দের। যেমন ধরুন, 

২ X ১ = ২

শাকের নাম পুঁই

২ X ২ = ৪

লোহা কত ভার

২ X ৩ = ৬

আমরা করব জয়  

২ X ৪ = ৮

সোনালি আঁশ পাট

২ X ৫ = ১০

হাঁড়ি ভরা রস

২ X ৬ = ১২

হতে চাই বড়

২ X ৭ = ১৪

পুকুর ভরা পদ্ম

২ X ৮ = ১৬

স্বাস্থ্য করো ভালো

২ X ৯ = ১৮

খেলতে হবে আরো

২ X ১০ = ২০

আঙুর থেকে হয় কিশমিশ

এই নামতা শুধু নামতা নয়, এর মধ্য দিয়ে সন্তান জানবে স্বাস্থ্যের যত্নে পুঁই শাকের গুণাগুণ, লোহার ভারের কথা, মনের চোখে দেখবে পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য, মনে সৃষ্টি হবে জয় করার প্রত্যয়, মানুষ হিসেবে বড় হওয়ার ইচ্ছা, বুঝবে কীভাবে কিশমিশ তৈরি হয়, হাঁড়ি ভরে খেজুর গুড়ের রসে আর আপ্লুত হবে বাংলার সোনালি আঁশের গল্প শুনে।

এক কাজে বহু কিছু শেখার সুযোগ করে দেবে এই ছন্দ। তাহলে আর দেরি কেন? সন্তানের সাথে সাথে আপনিও এই ছন্দগুলোকে আওরান। সবচেয়ে ভালো হয়, সন্তানকে বিটা লেভেলে মানে স্বাভাবিক জাগ্রত অবস্থায় শেখানোর আগে তার ঘুমের সময় ছন্দগুলো বলুন। খামোখা ভুত-প্রেতের ভয় দেখিয়ে, কুকুর-বাঘ খেতে আসবে বলে ভয় দেখিয়ে ঘুম না পাড়িয়ে এই সুন্দর কথাগুলো বলুন। বলার সময় তার গায়ে-মাথায় হাত বোলাতে থাকুন। চুলে বিলি কাটুন। তার অবচেতন মন তখন সক্রিয় থাকে। ফলে গুণগুণ করে বললেও কানের মাধ্যমে মস্তিষ্কে কথাগুলো প্রবেশ করে। পরদিন জেগে ওঠার পরে যখন তাকে শেখাতে যাবেন, দেখবেন কত সহজে শিখে ফেলছে! আর আপনিও তখন বলতে পারবেন, বাহ বা! বাহ বা!!