published : ১২ জুন ২০২৫
‘আয় আয় চাঁদ মামা’ গান শুনিয়ে কিবা পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়া রাজকুমারের গল্প শুনিয়ে সন্তানকে ঘুম পাড়ানোর সময়টাই এখন কর্মজীবী বাবা-মায়ের হয়ে ওঠে না, একসাথে বসে গল্প করার ফুরসৎ কই! বিশেষত পেশা নিয়ে ব্যস্ত যখন বাবা-মা দুজনই তখন সন্তান আলাদা করে সময় পাচ্ছে না কারো কাছ থেকেই। কিন্তু এতে পেশাগত উন্নতি তো ঘটছে, পারিবারিক সম্পর্ক কি ভালো থাকছে? উত্তরটা অনেক ক্ষেত্রেই ‘না’। ফলে সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের দূরত্ব বাড়ছে, ঘাটতি ঘটছে তাদের মানসিক বিকাশেও।
একটু কুশলী হলেই কর্মজীবী বাবা-মায়েরাও অনায়াসে সন্তানকে কোয়ালিটি সময় দিতে পারেন। এজন্যে কিছু টিপসঃ
কর্মজীবীদের গড়ে আট ঘণ্টা অফিসে থাকতে হয়; ক্ষেত্রবিশেষে এর চেয়েও বেশি। সাপ্তাহিক ছুটি কারো দুদিন, কারো একদিন। এমতাবস্থায় ঘরের মানুষগুলোকে সময় দিতে রুটিনের বিকল্প কী!
পুরো সপ্তাহের বা মাসের রুটিন করে ফেলুন। অফিসের কাজের সময়টুকু বাদে যে সময় আপনার হাতে থাকে, রুটিন করলে দেখবেন সেখান থেকেই পরিবারকে দেয়ার মতো সময় বেরিয়ে এসেছে। এভাবে প্রতিদিন সংসারের জন্যে তিনঘণ্টা এবং সন্তানের জন্যে কমপক্ষে দু' ঘণ্টা সময় আপনি দিতেই পারেন।
তিন বছরের নিচে শিশুদের ক্ষেত্রে নিজের কাজ, নিজের জীবন ও সন্তানকে একসুতোয় বাঁধতে চেষ্টা করুন। সমন্বয় করুন পেশা-বাসা ও সন্তানের রুটিনকে। যত বেশি গোছানো হবে এই রুটিন তত এই তিনটি বিষয়ের সাথে ছন্দ মিলিয়ে আপনি চলতে পারবেন।
সন্তানের বয়স সাড়ে তিন বা চার হলে তাকে স্কুল বা প্রি-স্কুলে ভর্তি করুন। এতে তার সামাজিক বিকাশের সুযোগ বাড়বে। আর শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থাকায় আপনিও থাকবেন আশ্বস্ত।
আড়াই-তিন বছর বয়স থেকেই সন্তানকে স্বনির্ভর হতে শেখান। যেমন- নিজের জামা-কাপড়-বইখাতা গুছিয়ে রাখা, নিজের হাতে খাবার খাওয়া, নিজের জুতোর ফিতা বাঁধা, খাবার শেষে নিজের প্লেট পরিষ্কার করা ইত্যাদি।
একটু বড় হলে তাকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে যান। বাজারের একটা ব্যাগ দিন তার হাতে।
এতে করে আপনার কাজের একজন ভালো সঙ্গী পাবেন, সন্তানও সময়টাকে উপভোগ করবে। তার স্বনির্ভরতা আপনার অনুপস্থিতিতে তার জীবনকে করবে সহজ।
আপনি যতই কর্মব্যস্ত থাকুন না কেন, দিনে অন্তত একবার সন্তানকে ফোন করুন, কী করছে তা খোঁজখবর নিন।
কথোপকথনে তাকে এটা অনুভব করতে দিন যে, চাকুরির কারণে আপনি তাকে অবহেলা করছেন না; আপনার কাজ আছে ঠিকই, কিন্তু সে-ই আপনার প্রথম প্রায়োরিটি।
সকালের নাস্তা হোক, কিংবা রাতের খাবার, চেষ্টা করুন অন্তত একবেলা সন্তানসহ পরিবারের সবাই একসাথে খেতে। আড্ডা-খুনসুটি, গল্প করে কাটিয়ে দিন মুহূর্তটি।
খাবার টেবিলে সন্তানকে কথা বলতে দিন। তার কথা শুনুন। মতামত জানতে চান। তার যেন মনে হয় সে যথার্থই গুরুত্ব পাচ্ছে। এই অনুভূতিটা তাকে মানসিকভাবে সতেজ রাখবে।
সারাদিন অফিসের কাজ সামলে বাসায় ফিরে ক্লান্তি আসাটা স্বাভাবিক। এই ক্লান্তিভাব দূর করার জন্যে কিছুক্ষণ বিশ্রাম আপনি নিতেই পারেন। তবে বাকিটা সময় টিভি স্মার্টফোন ল্যাপটপকে না দিয়ে সন্তানের জন্যেই বরাদ্দ রাখুন।
তাকে আদর করে কাছে ডাকুন, মাথায় হাত বুলিয়ে দিন। জিজ্ঞেস করুন সারাদিন সে কী কী করলো, দিনটা কেমন কাটলো, স্কুলে কী কী হলো। কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন। ভালো কিছু করলে প্রশংসা করুন। ভুলভ্রান্তি হলে মমতা দিয়ে শুধরে দিন।
ঘরের কাজগুলো করুন তার সাথে কথা বলতে বলতে। বড় কাজগুলো নিজে করার পাশাপাশি ছোটগুলোর দায়িত্ব তাকে দিন। ব্যাপারটা অনেকটা পিকনিকের মতো। একসাথে সময় কাটানো হলো, আবার কাজও হয়ে গেল!
সন্তানকে বেশি সময় আপনি দিতে পারবেন যদি অফিস থেকে বাসাটা কাছেপিঠে হয়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি দূরত্বটা হয় পায়ে হাঁটাপথ। তাহলে আসা-যাওয়ার সময়টা যেমন বাঁচবে, তেমনি লাঞ্চটাও তার সাথে করতে পারবেন।
অনেক সময় কাজের চাপে অফিসের কাজ অনেকেই বাড়িতে নিয়ে আসেন। এটি একেবারেই করা যাবে না। অফিসের কাজ অফিসেই করার চেষ্টা করুন।
অফিস থেকে বেরোনোর পরের সময়টুকু হোক শুধুই আপনার নিজের এবং পরিবারের।
সন্তানকে নিয়ে বেড়াতে যান। কাছেপিঠে আত্মীয় থাকলে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে আসুন। বাচ্চা সময় পাবে, আবার সামাজিক মানুষও হয়ে উঠবে।
মনে রাখবেন, সন্তান কিন্তু আপনার সঙ্গ চায়। তাই ব্যস্ততা যতই থাকুক, সন্তান যেন বেড়ে ওঠে আপনারই তত্ত্বাবধানে।