published : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আপনার সন্তান সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে কোন বিষয়টি জানেন? উপদেশ!
অবাক লাগলেও বাস্তবতা হচ্ছে, সন্তান আপনার উপদেশ শুনে কমই শেখে; সে শেখে মূলত দৃষ্টান্ত দেখে। সে খুব ভালো অনুকরণও করতে পারে। দেখবেন, আপনার সন্তানের বয়স যখন আড়াই তখনই সে আপনার জুতা, শাড়ি, চশমা পরার চেষ্টা করে; আপনার অঙ্গভঙ্গি নকল করতে চায়। আর এই স্বভাবটা সে আয়ত্ত করেছে আপনার কাছ থেকেই!
এভাবে তার মানসিক বিকাশে অবদান রাখে আপনার কথা-কাজ-আচরণ। তাই সন্তানের শারীরিক দিকে যেমন খেয়াল রাখা দরকার, তেমনি দরকার মানসিক দিকেও।
সন্তানকে মানসিকভাবে ফিট রাখার জন্যে আপনার যা করণীয়-
বাচ্চার জন্যে খাবার আর খেলনাই যথেষ্ট না! তাকে যথেষ্ট সময় দেওয়াটাও জরুরি। কেননা, শিশুরা বাবা-মায়েদের সঙ্গ, সময় ও মনোযোগ চায়।
তাই নিজের হাতের কাজ, অফিসের কাজ গুছিয়ে সন্তানকে সময় দিন, তার সাথে খেলুন।
শরীরচর্চা ও খেলার অভ্যাস মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধির জন্যে প্রয়োজন- বিশেষজ্ঞরা এটা অনেক আগে থেকেই বলছেন। সম্প্রতি জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিন পত্রিকায় একটি নতুন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, খেলাধুলার অভ্যাস পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের ওপর এর প্রভাব বেশি।
সন্তানকে আদর দিতে হবে, মমতা দিতে হবে, আবার প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কঠোরও হতে হবে। দেড় বছর বয়স থেকেই সে তার চাহিদা বোঝাতে সচেষ্ট হয়। চাহিদামতো জিনিস না পেলে সে প্রথম যে হাতিয়ারটি ব্যবহার করে তা হলো কান্না!
পছন্দের জিনিসগুলো বার বার পাওয়ার জন্যে সে কান্নাকাটি করবে এবং এমন সব কর্মকাণ্ড করবে যা আপনাকে গলিয়ে ফেলবে। কিন্তু আপনি যদি এভাবে গলে যান তাহলে তা তাদের একগুঁয়ে, জেদি এবং অবাধ্য করে তুলবে।
তাই প্রথমেই কিছুটা কঠোর হোন; যাতে সে বুঝতে পারে কান্নাকাটি করলেই সব পাওয়া যায় না! কোনো কিছু পেতে হলে মেহনত করতে হয়। আপনার এই কাজ সন্তানকে মানসিকভাবে দৃঢ় করবে এবং সে ছোটখাট অপ্রাপ্তিতে মুষঢ়ে পড়বে না।
আপনার সন্তান যদি আপনাকে অহেতুক ভয় পায় তাহলে সে আত্মরক্ষার্থে মিথ্যার আশ্রয় নেবে। তাই সত্য স্বীকারে তাকে উদ্বুদ্ধ এবং উৎসাহিত করুন; এতে তার সৎসাহস বাড়বে।
ধরুন, আপনার ছেলে বা মেয়ে বেখেয়ালে আপনার শখের ফুলের টবটি ভেঙে ফেলেছে। এর জন্যে যদি তাকে বকাঝকা বা মারধর করেন তাহলে সে এরপর থেকে কোনো অন্যায় বা ভুল করে ফেললে তা লুকোবে বা মিথ্যার আশ্রয় নেবে।
কিন্তু তাকে যদি অভয় দেন এবং সত্য স্বীকারের কারণে আপনি যে খুশি হয়ে তাকে শাস্তি দেয়া থেকে বিরত থাকছেন- এটা বলেন, তাহলে একদিকে সে ইচ্ছাকৃত অন্যায় থেকে বিরত থাকবে যেমন, তেমনি ভুল করে ফেললে শুরুতেই তা আপনাকে এসে বলবে। এতে মানসিকভাবে সে পরিচ্ছন্ন থাকবে।
ধরুন, আপনি হলুদ রঙ পছন্দ করেন না। কিন্তু কেউ যদি চাপিয়ে দেয় যে, 'হলুদ পাঞ্জাবীই পরতে হবে'- তাহলে আপনার কেমন লাগবে? নিশ্চয়ই ভালো না!
সন্তানের ক্ষেত্রেও কিন্তু বিষয়টা একই!
অনেক বাবা-মা আছেন যারা বাচ্চার ব্রাশ করা থেকে শুরু করে জুতা-মোজা পড়ার মতো কাজগুলোও নিজের পছন্দমতো করে করাতে চান। সে জীবনে কী হবে- ডাক্তার না ইঞ্জিনিয়ার সেটাও নিজেরাই নির্ধারণ করে দেন। তাদের নিজস্ব মতামত সন্তানদের ওপর চাপিয়ে দেন। ফলে শিশুর মধ্যে বিভ্রান্তি, তিক্ততা, বিরক্তি ও অজুহাত তৈরির প্রবণতা বেড়ে যায়।
তাই শিশুকে পছন্দ-অপছন্দ এবং মত প্রকাশের অধিকার দিন।
মানুষের একটি মহৎ গুণ হচ্ছে ভুল হলে ক্ষমা চাওয়া এবং কারো থেকে উপকৃত হলে কৃতজ্ঞতা জানানো। কিন্তু সবাই এই গুণটি নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারে না।
আপনার সন্তান এই গুণগুলো অর্জন করতে পারবে যদি ছোটবেলা থেকেই তাকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে 'স্যরি'/’দুঃখিত’ এবং ‘থ্যাংকস’/'ধন্যবাদ' বলা শেখান।
সন্তানকে অতিরিক্ত আদর-আহ্লাদ দিয়ে নিজের কাজ করা থেকে বিরত রাখবেন না। এতে সে পরনির্ভরশীল হয়ে বেড়ে উঠবে।
আসলে নিজের এবং পরিবারের ছোট ছোট কাজ করার মাধ্যমে সন্তান আত্মনির্ভরশীল এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। এতে বাড়ে মানসিক ফিটনেস।
মানসিক দৃঢ়তা এবং ফিটনেস বাড়াতে মেডিটেশনের জুড়ি নেই! মেডিটেশন মেধা এবং মননের বিকাশও ঘটায়।
তাই ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে মেডিটেশন করতে উদ্বুদ্ধ করুন। আপনি যখন মেডিটেশন করবেন তখন তাকেও সাথী করে নিন। তার মনের ফিটনেস বাড়বে, ঘটবে মেধার বিকাশও।