বিশ্ব মেডিটেশন দিবস : ২১ মে সকাল ৯:৩০ এ লক্ষ ধ্যানীর সাথে আপনিও শামিল হোন

ঘটনা-১

দুরারোগ্য ব্যাধিতে ৫ বছরের একমাত্র সন্তানকে হারাবার পর জীবন সম্পর্কে একেবারে হতোদ্যম হয়ে পড়ছিলেন সেলিম-সোহানা দম্পতি।

বিশেষ করে স্ত্রী সোহানা এত ভেঙে পড়েছিলেন যে কারো সাথে কথা বলতেন না, সংসারের কোনো কাজ করতে পারতেন না, এমনকি খাওয়া-দাওয়াও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

এমনসময় পরিচিত একজনের পরামর্শে স্ত্রীকে নিয়ে মেডিটেশন কোর্সে আসেন জনাব সেলিম।

আশ্চর্যের ব্যাপার, প্রথমদিন কোর্সের প্রথম মেডিটেশনের পরই দুপুরের বিরতির সময় স্ত্রী নিজ থেকেই বলে উঠলেন, খুব খিদে পেয়েছে তার। গরম মাছভাজা দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছে করছে।

খেলেন। বহুদিন পর স্বামী-স্ত্রী একসাথে বসে টুকটাক গল্প করলেন।

সেলিম-সোহানা দম্পতির এখন দু’বছরের এক ফুটফুটে মেয়ে। দেখতে হুবহু তাদের মৃতা বড় মেয়ের মতো! চলন-বলনও এক!               

ঘটনা-২

হাঁটুর ব্যথায় একদম কাবু হয়ে পড়েছিলেন মায়ারানী দেবী। থাকেন একটা জেলাশহরে। স্থানীয় স্কুলে পড়ান।

বাড়ি থেকে স্কুল আধঘণ্টার পথ। রিক্সায় গেলে ১০ মিনিট।

কিন্তু হাঁটু ভাজ করতে না পারায় রিক্সায় ওঠা মায়ারানী দেবীর এক নিত্যদিনের যুদ্ধ।     

রাস্তায় বেরিয়ে প্রতিদিনই তিনি খোঁজেন কোনো না কোনো উঁচু জায়গা। যেখানে গিয়ে তিনি দাঁড়াবেন। রিক্সা আসবে পাশে। তিনি রিক্সায় উঠবেন।

গরমের ছুটির সময় মায়ারানী দেবীকে জোর করে ঢাকায় পাঠাল তার এক ছাত্রীর মা। বলল, আপনি হাঁটুর ব্যথায় এত কষ্ট পাচ্ছেন! এই কোর্সটাতে যান। প্রভু চান তো ভালো হয়ে যাবেন।

কিছুটা সংশয় নিয়েই মায়ারানী দেবী কোর্সে এলেন। কোর্স করতে করতেই মায়ারানী দেবীর ব্যথা অনেকটাই ভালো হয়ে গেল।

মজার ব্যাপার হলো, বাসায় যাওয়ার সময় রিক্সা করতে গিয়ে ব্যথার কথা তার মনেই ছিল না। রিক্সা থেকে নেমে তার খেয়াল হলো- আরে আজকে তো কোনো উচু জায়গা খুঁজতে হয় নি তাকে।  

ঘটনা-৩

তাসনিম রাশিক। ভেবেছিলেন বুয়েটে পড়বেন।

এসএসসি, এইচএসসি-র রেজাল্ট ভালো। ভর্তিপ্রস্তুতিও নিচ্ছেন পুরোদমে।

কিন্তু পরীক্ষার দিন পুরান ঢাকার বাসা থেকে বেরিয়ে এত যানজটে পড়েন যে হলে পৌঁছতে পৌঁছতে পরীক্ষার আধঘণ্টা শেষ! শেষ হয়ে গেলে বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন।

এরপর থেকেই রাশিকের সমস্যার শুরু। প্রথমে হতাশা, তা থেকে বিষণ্নতা, একসময় জীবন থেকে সব উদ্যম হারিয়ে গেল তার।

আর বাস্তব জগত থেকে দূরে থাকতে রাশিক জড়িয়ে পড়ল নেশার জগতে। ইন্টারনেট নেশার জগত। অনলাইন গেম, সোশ্যাল মিডিয়া- এই ছিল তার ২৪ ঘণ্টার জগত।

প্রাইভেট একটা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়েছিল বটে। কিন্তু একসময়কার পড়াশোনায় আগ্রহী রাশিককে আর ফিরে পাওয়া যায় নি।

এর মধ্যেই এক বন্ধু তাকে নিয়ে আসে মেডিটেশনে। প্রথম দুদিন কোনো আগ্রহ পায় নি। তৃতীয় দিন থেকে ভালো লাগতে শুরু করে। হঠাৎ করে তার মনে হলো, এত মূল্যবান জীবনটাকে তো সে হেলায় নষ্ট করছে।

এই ভাবান্তর তার মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে এলো।

শৃঙ্খলার জীবনে ফিরে এলো। পড়াশোনায় মনোযোগী হলো।

ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে এখন রাশিক। কিছুদিনের মধ্যেই স্নাতক হয়ে বেরোবে সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

কীভাবে সম্ভব হলো!

এই সোহানা, রাশিক আর মায়ারানী দেবীদের জীবনটা হয়তো এভাবেই চলত যদি না তারা মেডিটেশনের সন্ধান পেতেন।

ধ্যান বা মেডিটেশন- ৫০০০ বছর আগের এক আত্মিক-আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া যা এখন ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক মানুষের শারীরিক, মানসিক উন্নয়নের কাজে।

মেডিটেশন কী?

মেডিটেশনকে এক বাক্যে বলা যায়, মাথা ঠান্ডা রাখা ও মনকে নেতিবাচক ভাবনা থেকে মুক্ত রাখার বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া।

মাথা ঠান্ডা রেখে ব্রেনকে বেশি পরিমাণে কাজে লাগাতে সাহায্য করে মেডিটেশন।

অপরদিকে মনের নেতিবাচক চিন্তার বিনাশ করে ব্যক্তিকে আত্মপ্রত্যয়ী, সাহসী ও ইতিবাচক করে তোলে।

তখন সে অনায়াসে বলতে পারে আমি পারি, আমি করব। আমার জীবনে আমি গড়ব।

সোহানা, রাশিক বা মায়ারানী দেবীরা এই রূপান্তরেরই প্রমাণ।     

এবং এই উপকার পেতে পারে যে কেউ- শিশু থেকে শুরু করে অশীতিপর।

ভুল ধারণা

তবে মেডিটেশন নিয়ে একটি ভুল ধারণা আছে যে শুধু সমস্যা বা রোগ থাকলেই মেডিটেশন করতে হয়। আসলে সফল মানুষরাই বরং মেডিটেশন চর্চা করেন।

বিশ্বজুড়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক, শিল্পপতি, বিজ্ঞানী, এমনকি পেন্টাগনের জেনারেলরাও মেডিটেশন করছেন।

তাদের অর্থ, খ্যাতি, ক্ষমতা কিছুরই অভাব নেই। তারপরও মেডিটেশন করেন ব্রেনটাকে আরো ভালোভাবে কাজে লাগানোর জন্যে, সফলতাকে ধরে রাখার জন্যে, সুখ-শান্তির জন্যে।

বিশ্বের ৫০ কোটি মানুষ এখন নিয়মিত মেডিটেশন করে।

আসলে আধুনিক ব্যস্ত জীবনের স্ট্রেস হতাশা বিষন্নতা উদ্যমহীনতা কাটিয়ে উঠে সফল ও পরিতৃপ্ত জীবনের জন্যে মেডিটেশনের কোনো বিকল্প নেই- এই উপলব্ধি থেকে পশ্চিমা বিশ্বে এখন জোয়ার উঠেছে মেডিটেশনভিত্তিক কার্যক্রমের।

এমআইটি, অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড, ইয়েল, স্ট্যানফোর্ডের মত বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন নামে চালু হয়েছে মেডিটেশনভিত্তিক হ্যাপিনেস কারিকুলাম।

বিশ্ব মেডিটেশন দিবস

আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মেডিটেশনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব থেকে ২১ মে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস হিসেবে।

বৃটিশ নাগরিক উইল উইলিয়ামস এর উদ্যোক্তা।

উইল উইলিয়ামস একসময় নিদ্রাহীনতার রোগে ভুগতেন। এর সমাধানে নানারকম চেষ্টার পর অবশেষে তিনি মেডিটেশন শিখে এর মাধ্যমে নিরাময় লাভ করেন। তিনি এক দশক ধরে মেডিটেশন চর্চা করছেন।

কোয়ান্টাম মেথড

এদিকে তিন দশক আগেই ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে সূচিত হয় মেডিটেশনকেন্দ্রিক আত্মোন্নয়ন কার্যক্রম কোয়ান্টাম মেথড।

মেডিটেশনের সকল প্রাচ্য ধারার সফল উত্তরসূরি, যোগ, বিপাসন ও মোরাকাবার নির্যাসে সমৃদ্ধ কোয়ান্টাম মেথড সকল ধর্মের সকল মানুষের উপযোগী পরীক্ষিত পূর্ণাঙ্গ মেডিটেশন পদ্ধতি।

যে শব্দটি এদেশে একেবারেই অপরিচিত ছিল সেই মেডিটেশনকে জনপ্রিয় করা শুধু নয়, একে এদেশের সংস্কৃতির অংশে পরিণত করার নেপথ্যে কাজ করেছে যে সঙ্ঘবদ্ধ শক্তি তার নাম কোয়ান্টাম।

পৃথিবীতে এই প্রথম!

তাই এবারের বিশ্ব মেডিটেশন দিবসকে ব্যাপক আয়োজনে উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে কোয়ান্টাম। এবং প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে।

ছোট পরিসরে এবং ক্ষুদ্র সংগঠনিক প্রেক্ষাপটে দিনটি কিছু জায়গায় পালিত হলেও এখন পর্যন্ত সার্বজনীনভাবে দেশজুড়ে মেডিটেশন দিবস পালনের ঘটনা পৃথিবীতে এই প্রথম বাংলাদেশে হচ্ছে।

২১ মে সকাল সাড়ে ৯টায় বসুন মেডিটেশনে

২১মে শুক্রবার, ২০২১। সকাল সাড়ে ৯টা

বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ ধ্যানী একযোগে অংশ নেবেন যৌথ মেডিটেশনে।

আপনি যেখানেই থাকুন, এই সময়টিতে বিশেষ ধ্যানে লাখো মানুষের সাথে একাত্ম হোন সপরিবারে। অংশী হোন জীবন বদলের অভিযাত্রায়।

সেই সাথে চোখ রাখুন কোয়ান্টামের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে। দিনব্যাপী লাইভ সম্প্রচারে। মেডিটেশন কী কেন কীভাবে, কারা করছেন জানতে পারবেন এর সবকিছুই।

ভিজিট করুন কোয়ান্টাম ওয়েবসাইট। ২১ মে-র আগে প্রতিদিনই পাবেন নতুন নতুন আপডেট।

সুস্থতা সাফল্য আর সুখী জীবনের পথে শুরু হোক আপনার প্রথম পদক্ষেপ।