মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায় মেডিটেশন

মেডিটেশন মানসিক দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ দূর করে। এটা এখন আর নতুন কোনো তথ্য নয়। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের নানারকম প্রযুক্তির সাহায্যে মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা এখন জানতে পারছেন যে, মেডিটেশন মস্তিষ্কের কাঠামো ও কাজকে সরাসরি প্রভাবিত করে থাকে। বিশেষ করে সচেতনতা, মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে মেডিটেশনের ভূমিকা প্রত্যক্ষ করে নিউরোসায়েন্টিস্টরা রীতিমতো অভিভূত।

নভেম্বর ২০০৫-এ ম্যাসাচুসেট্স জেনারেল হাসপাতালের রিসার্চ-সায়েন্টিস্ট সারা লাজার ২০ জন নারী-পুরুষের ওপর চালানো তার এক গবেষণার প্রাথমিক ফল প্রকাশ করেন-যারা প্রতিদিন ৪০ মিনিট করে মেডিটেশন করতেন। তাদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে সারা দেখলেন, নিয়মিত মেডিটেশনের পর তাদের মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্সের পুরুত্ব বেড়েছে। সেরিব্রাল কর্টেক্স হলো মস্তিষ্কের সেই অংশ যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ, মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে।

এর আগে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের ওপর চালানো প্রায় একই ধরনের একটি পরীক্ষায়ও ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গিয়েছিলো। কিন্তু দিনের প্রায় বেশিরভাগটাই মেডিটেশনে আত্মনিমগ্ন থাকা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তুলনায় এবারের এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন বোস্টন এলাকারই বিভিন্ন কর্মজীবী সাধারণ মানুষ। আর এতে যে বিষয়টি প্রমাণিত হয় তা হলো, দিনের মাত্র কিছুটা সময় নিয়মিত মেডিটেশন করলেই এ ফল পাওয়া যায়।

শুধু মনোযোগ বা স্মৃতিশক্তি নয়, সারা লাজারের গবেষণার আরেকটি চমকপ্রদ আবিষ্কার হলো-বয়স বাড়ার সাথে সাথে কর্টেক্সের যে অংশ পাতলা হতে থাকে মেডিটেশন সেটিকেও রোধ করতে পারে।

নিয়মিত মেডিটেশন করলে মনোযোগ এবং আরো বেশি সচেতনতা নিয়ে কাজ করা যায়। কেউ কেউ বলেন, তাহলে দুপুরের খাওয়ার পর কিছুটা ঘুমিয়ে নিলেও কি একইভাবে চাঙ্গা হওয়া যায় না? না, বলেছেন ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির বায়োলজির প্রফেসর ব্রুস ওহারা। তিনি একদল কলেজ ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে একটি গবেষণা চালান, যেখানে নিদিষ্ট সময়ের জন্যে তাদের কিছু সংখ্যককে মেডিটেশন, কিছু সংখ্যককে ঘুম এবং বাকিদেরকে টেলিভিশন দেখানো হয়। এরপর একটা নির্দিষ্ট স্ক্রিনে বাতি জ্বলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বলা হয় একটি নির্দিষ্ট বোতাম টিপতে।

এ পরীক্ষায় দেখা গেল, যারা মেডিটেশন করেছে তারা অন্যদের চেয়ে দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে তা করতে পেরেছে। যারা ঘুমিয়ে ছিলো তাদের তৎপরতা ছিলো তুলনামূলক ধীর। অর্থাৎ মেডিটেশনের ফলে মস্তিষ্কের সু-সমন্বয় এবং তৎপরতা বাড়ে।

মেডিটেশনের এ ইতিবাচক প্রভাবের কারণেই ডয়েচ ব্যাংক, গুগল বা হাগস এয়ারক্রাফটের মতো বড় বড় ব্যবসায়িক কর্পোরেশনগুলো তাদের কর্মীদের জন্যে মেডিটেশন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে। তারা দেখছে, এতে করে তাদের কর্মীদের মেধা শাণিত হবার পাশাপাশি উৎপাদন ক্ষমতাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। কর্মীদের অসুস্থতার হার কমেছে, কমেছে কাজে অনুপস্থিতির হারও।

তথ্যসূত্র : টাইম ম্যাগাজিন (২৪ জানুয়ারি, ২০০৬)