published : ২৮ জুলাই ২০১৫
মনই সূচনা করেছে চিন্তা বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও সভ্যতার। মনের ধ্যানাবস্থা তথা তন্ময় ভাবনার মধ্যেই আবিষ্কৃত হয়েছে বৈজ্ঞানিক সত্য। মনোশক্তির সৃজনশীল প্রয়োগে উদ্ভাবিত হয়েছে নতুন প্রযুক্তি। নীরব মুহূর্তেই সৃষ্টি হয়েছে অমর কাব্য, সাহিত্য, সংগীত। আত্মনিমগ্ন অবস্থায়ই মহাপুরুষেরা দুনিয়াকে দিয়েছেন নতুন দর্শন, ধর্ম, জীবনবিধান।
পৃথিবীর সকল বড় বড় বিপ্লবের সূচনা হয়েছে মৌনতার মাঝে মনের ধ্যানাবস্থায়। দুনিয়ায় মানুষের তৈরি দৃশ্যমান সবকিছুই প্রথম বাস্তবতা লাভ করেছে মনে।
ধর্মবেত্তা দার্শনিক দরবেশ ঋষি কবি সাহিত্যিক বিজ্ঞানী সবাই মনের ধ্যানাবস্থার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছেন, বরণীয় হয়েছেন। সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। প্রতিভার রহস্য এখানেই। আমরা যাকে প্রতিভা মনে করি, তা অলৌকিক কিছু নয়। প্রতিভা মানে ইচ্ছেমতো তৎক্ষণাৎ মনে ‘ধ্যানাবস্থা’ সৃষ্টি করার ক্ষমতা, সবার অলক্ষ্যে মুহূর্তে তন্ময় ভাবনায় নিমগ্ন হয়ে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেয়ার সামর্থ্য।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, ধ্যানাবস্থায় মন অপ্রয়োজনীয় সবকিছু থেকে নিজেকে আলাদা করে নির্দিষ্ট বিষয়ে নিমগ্ন হয় এবং মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ও নিখুঁতভাবে ব্যবহার করতে পারে।
ইলেক্ট্রো এনসেফেলোগ্রাফ (ইইজি) এবং ব্রেন ইমেজিং পরীক্ষা থেকে তারা দেখেছেন, নিয়মিত মেডিটেশনের ফলে ব্রেনের কর্মকাঠামোতে ঘটে কিছু স্থায়ী পরিবর্তন। এমিগডালা এবং বাম প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের এসব পরিবর্তনের ফলে তার মধ্যে মুহূর্তে রেগে যাওয়ার প্রবণতা কমে, বাড়ে মনোযোগ ও পরিকল্পনার দক্ষতা। মনে সুখানুভূতি সৃষ্টির সাথে সাথে সচেতনতা পায় এক ভিন্নমাত্রা। শুধু তা-ই নয়, ধ্যানের মধ্য দিয়ে একজন মানুষ সমমর্মী এবং মমতাময় হয়ে ওঠে, যা তার মস্তিষ্কের কর্মকাঠামোতেও পরিবর্তন ঘটায়। গবেষণার মাধ্যমেই এর প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ধ্যানাবস্থায় ব্রেনে আলফা ওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি বিরাজ করে অর্থাৎ ফ্রিকোয়েন্সি থাকে প্রতি সেকেন্ডে ৮-১৩ সাইকেল। বিজ্ঞানীরা দেখেন, এই সাইকেলেই ব্রেন সবচেয়ে সুন্দরভাবে কাজ করে। সাধারণ কর্মতৎপর অবস্থায় ব্রেন থাকে বিটা লেভেলে। প্রতি সেকেন্ডে ব্রেনওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি থাকে ১৪-২৬ সাইকেলে। উত্তেজিত অবস্থায় ব্রেনওয়েভ থাকে গামা লেভেলে। আর তন্দ্রা ও নিদ্রার সময় ব্রেনওয়েভ থাকে যথাক্রমে থিটা লেভেলে ৪-৭ সাইকেলে ও ডেল্টা লেভেলে ০.৫-৩ সাইকেলে।
দরবেশ ও ঋষিরা ইচ্ছেমতো মুহূর্তে মনের ধ্যানাবস্থা সৃষ্টি করতে পারতেন। ব্রেনওয়েভকে আলফা/থিটায় নিয়ে গিয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন হওয়ার পরিবর্তে হয়ে উঠতেন অতি সচেতন। চেতনা হয়ে উঠত শাণিত। ব্রেনের ঐ ফ্রিকোয়েন্সিতেই তাদের চেতনা যুক্ত হতো দৃশ্যমান সবকিছুর পেছনে ক্রিয়াশীল প্রকৃতির নেপথ্য স্পন্দন ও ছন্দের সাথে। এ প্রক্রিয়ায় তিনি নিজের আত্মিক উন্নয়ন যেমন করতেন, তেমনি মানুষকে নিরাময় করতেন, বিপদমুক্ত করতেন, সাফল্য ও কল্যাণের পথে নিয়ে যেতেন।
প্রাচ্যের সাধকদের মনের শক্তি ব্যবহারের এ সূত্রগুলোই পাশ্চাত্যের সবকটি মন নিয়ন্ত্রণ ও মেডিটেশন পদ্ধতিতে কিছুটা হেরফের করে প্রয়োগ করা হয়েছে।
সাধকদের অনুসৃত ধ্যানাবস্থার ক্ষমতাকে প্রশান্তি, নিরাময় ও সাফল্য লাভের উদ্দেশ্যে প্রয়োগের সর্বশেষ সফল উদ্যোগ কোয়ান্টাম মেথড। গত ২৪ বছরে ৪০০টি কোর্সে ৪০০ বার একই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর মধ্য দিয়ে যার কার্যকারিতা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত।