পেশা ও ব্যবসায় মেডিটেশন-অবিশ্বাস্য সাফল্য

মেডিটেশন মনের উন্নতি ঘটায়, দেহের উন্নতি ঘটায়। কিন্তু ডেট্রয়েটের একটি কেমিকেল কোম্পানির সিইও আর ডব্লিউ মন্টগোমারি দেখলেন, মেডিটেশন তার কোম্পানির স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটিয়েছে অবিশ্বাস্য মাত্রায়।

আশির দশকের শুরুতে আমেরিকায় বিরাজমান অর্থনৈতিক স্থবিরতার মুখে পড়ে ৪০ বছরের এ প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হলেন মন্টগোমারি ও তার সহকর্মীরা। নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন পরিকল্পনা, নতুন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির দরকার হয়ে পড়ল। বেশ কয়েকটি উদ্যোগে ব্যর্থতার পর ১৯৮৩ সালে তারা শুরু করলেন কোম্পানিব্যাপী ৬ মাসের এক মেডিটেশন কর্মসূচির। ইতোমধ্যে কোম্পানির প্রতিটি ডিভিশনেই মেডিটেশন চালু হয়ে গেল। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুবেলা করে মেডিটেশন করতে লাগলেন। সকালে কাজ শুরু করার আগে এবং বিকেলে কাজের মাঝখানে নির্দিষ্ট বিরতিতে। পরবর্তী তিন বছরের মধ্যেই দেখা গেল অভাবনীয় পরিবর্তন। অনুপস্থিতির হার ৮৫%, অসুস্থতা ৭৬% এবং কাজে দুর্ঘটনার হার ৭০% কমে গেল। অন্যদিকে বিক্রি বেড়ে গেল ১২০% এবং পণ্যের গুণ নিয়ন্ত্রণ মান ২৪০% বেড়ে গেল। আর এর সার্বিক ফলাফল হিসেবে কোম্পানির মুনাফা বেড়ে গেল ৫২০%।

এই অভাবনীয় অগ্রগতির পেছনে কাজ করেছে কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেডিটেশন চর্চা- বলেছেন সিইও মন্টগোমারি। কারণ মেডিটেশনের ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে মুক্ত হয়ে তারা কাজ করতে পেরেছেন আগের চেয়ে বেশি কর্মক্ষমতা, সৃজনশীলতা ও আনন্দ নিয়ে। মন্টগোমারি খুব সুন্দরভাবে বলেছেন, “ব্যবসায়ের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তার মানবসম্পদ। কারণ আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যদি ক্লান্ত অবসন্ন থাকে, তারা যদি কাজে উদ্বুদ্ধ হতে না পারে এবং তারা যদি এটা ভাবতে না পারে যে তাদের কোনো সৃজনশীলতা আছে, তাহলে আপনি তাকে যত আধুনিক যন্ত্রপাতিই দিন না কেন, এটা সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।

বিশ্বজুড়ে ব্যবসাক্ষেত্রে মেডিটেশনের জয়জয়কার

শুধু এই একটি কোম্পানিই নয়, মেডিটেশনকে কাজে লাগিয়ে অসাধারণ সাফল্য লাভ করছে বিশ্বব্যাপী আরও অসংখ্য কোম্পানি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। যাদের মধ্যে রয়েছে তোশিবা, সনি, টয়োটা, সুমিতমো, ভলভো, জেনারেল মটরস বা আইবিএম-এর মতো বিশ্বখ্যাত কোম্পানি। জেনারেল মটরস ঘোষণা করেছে, তাদের যেসব কর্মী মেডিটেশন কোর্সে অংশ নিতে আগ্রহী, তাদের ব্যয়ভার কোম্পানি বহন করবে। কর্মীদের মেডিটেশন শেখানোর জন্যে কোরিয়ার স্যামসাং শিল্পগোষ্ঠী রাজধানী সিউলের দক্ষিণে ১৭ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তুলেছে এক বিশাল প্রশিক্ষণকেন্দ্র।

কেন বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়ী মহলে মেডিটেশনের এ জয়জয়কার? পেশাগত ক্ষেত্রে মেডিটেশনের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে। পৃথিবী জুড়ে দুই শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত এসব গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে একাডেমি অফ ম্যানেজমেন্ট জার্নাল, সায়েন্স, সাইকোসোম্যাটিক মেডিসিন, হাইপার-টেনশন, আমেরিকান সাইকোলজিস্ট এবং আমেরিকান জার্নাল অফ ম্যানেজ্‌ড কেয়ার প্রভৃতি শীর্ষস্থানীয় জার্নালে। এসব গবেষণায় দেখা গেছে কোম্পানিতে মেডিটেশন চালু করার ফলে কর্মীদের টেনশন, অস্থিরতা অবসাদ ও নিদ্রাহীনতা কমেছে, ধূমপান ও নেশার আসক্তি কমেছে এবং দক্ষতা, কর্মসন্তুষ্টি ও পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়ন বেড়েছে লক্ষণীয় মাত্রায়। যে কর্মীরা সৃজনশীল, বুদ্ধিমান, সুস্থ এবং প্রাণবন্ত স্বাভাবিকভাবে তারাই বেশি কাজ করতে পারে। তখন উৎপাদনক্ষমতা বাড়ে, অনুপস্থিতির হার কমে এবং দলগতভাবে কাজ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

জবস্ট্রেস-আধুনিক ব্যবসা জগতের প্রধান চ্যালেঞ্জ

১৯৯৩ সালে আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা বা আইএলও-র একটি রিপোর্ট অনুযায়ী জবস্ট্রেসের কারণে আমেরিকায় প্রতিবছর ২০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার অপচয় হয়।
এ্যালেন প্রাইজ একজন বিজনেস স্ট্রেস কনসালট্যান্ট। মিনেপোলিসে অবস্থিত তার কনসালটিং ফার্মটির ক্লায়েন্টদের তিনি শেখান মেডিটেশনকে কীভাবে দৈনন্দিন জীবনে ও পেশায় কাজে লাগাতে হয়। তিনি বলেন, “কম্পিউটারের ব্যবহার মানুষের জীবনকে সহজ করার বদলে আরও সমস্যা ভারাক্রান্ত করেছে। কারণ এর ফলে একদিকে কর্মীদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে, অন্যদিকে কাজের ধরণ ও যোগ্যতার চাহিদায় ঘটেছে ব্যাপক পরিবর্তন। ফলে কম লোক দিয়ে বেশি কাজ করানোর আর্থিক সুবিধা পেতে উঠে পড়ে লেগেছে বর্তমান দুনিয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এর শিকার হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ, ম্যানেজার ও শ্রমিকরা পেশাগত মানসিক চাপ ও নানা জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া লস এঞ্জেলেসের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পেশাগত চাপের মুখে দশ বছর ধরে কাজ করছেন এমনদের কোলন ও রেকটাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে সাড়ে পাঁচ গুণ বেশি।

এ্যালেন প্রাইজ বলেন, জবস্ট্রেস বা পেশাগত মানসিক চাপের ফলে কর্মীদের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তা হলো, তার মনোবল কমে যায়; বস, সহকর্মী বা অধীনস্থদের সাথে সম্পর্কের সমস্যা হয়; বিষণ্নতা, অস্থিরতা দেখা দেয়। ফলে কমে যায় তাদের উৎপাদন ক্ষমতা এবং বেড়ে যায় স্বাস্থ্যরক্ষা খরচ। একজন অসুখী বা অসুস্থ কর্মী কখনো কাজে তার পুরোশক্তি ব্যবহার করতে পারে না।”

মেডিটেশন-জবস্ট্রেস মোকাবিলায়

অল্টারনেটিভ থেরাপি জার্নালের ১৯৯৬ এর একটি সংখ্যায় বলা হয় শতকরা ৫৪ ভাগ ক্ষেত্রে কাজে অনুপস্থিতির কারণ হলো ক্রনিকব্যথা, হাইপারটেনশন এবং মাথাব্যথা। আর এ সবকটি সমস্যাই তৈরি হয় মানসিক চাপ ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে। আর এখানেই মেডিটেশনের ভূমিকা। বিজনেস উইকের ‘কোম্পানিজ আর ব্যাটলিং এমপ্লয়ি স্ট্রেস উইথ মেডিটেশন’ শীর্ষক এক রিপোর্টে বলা হয়, আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ, ম্যাসাচুসেটস্‌ ইউনিভার্সিটি এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একাধিক গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, মেডিটেশন মানুষের ব্রেনের তৎপরতা বাড়ায়, তার বুদ্ধিমত্তা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং মনোযোগের ক্ষমতাকে বাড়ায়। অন্যদিকে কর্মীরা প্রায়ই আক্রান্ত হয়—এরকম নানা ধরনের ব্যথা-বেদনা দূর করতে সাহায্য করে মেডিটেশন। এসব কারণে পৃথিবীর বড় বড় করপোরেশনগুলো এখন তাদের কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করছে মেডিটেশনে। ব্যবস্থা করছে ফ্রি মেডিটেশন ক্লাসের। কারণ এতে যে খরচ হচ্ছে সে তুলনায় উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ছে অনেক বেশি। বলা যেতে পারে পেশাগত উদ্বেগ নিরসনের সবচেয়ে কার্যকরী ও সাশ্রয়ী একটি উপায় হচ্ছে মেডিটেশন।

পিউরিটান বেনেট করপোরেশন পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। কর্মীদের ওপর মানসিক চাপের ক্ষতিকর প্রভাব দূর করতে ১৯৯৩ সালের আগস্টে কোম্পানিটি কানসাসে অবস্থিত এর করপোরেট হেড কোয়ার্টারে শুরু করে একটি পাইলট প্রোগ্রাম। ৩৮ জন করে কর্মী নিয়ে দুটো গ্রুপ করা হলো। শুধু একটি গ্রুপকে মেডিটেশন শেখানো হলো। ৩ মাস পর দেখা গেল যে গ্রুপটি মেডিটেশন করছে অন্য গ্রুপের তুলনায় তারা বেশি প্রাণবন্ত, বেশি প্রশান্ত। তাদের শারীরিক অসুস্থতা কম এবং তাদের রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রাও হ্রাস পেয়েছে অন্যদের চেয়ে বেশি। এমনকি প্রতিষ্ঠানে সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রেও তাদেরই সুনাম হয়েছে। সেখানে যারা মেডিটেশন করে নি তাদের কোনো পরিবর্তন হয় নি।

প্রতিযোগিতার হাতিয়ার

মেডিটেশন বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা বাড়ায় যা ব্যবসার জন্যে খুবই প্রয়োজনীয় কয়েকটি গুণ। পিউরিটান বেনেটের চেয়ারম্যান বার্টন এ-ডোল বলেন, “প্রতিযোগীর চেয়ে ভালো মানের পণ্য ও সেবা দিতে পারাটাই বর্তমান দুনিয়ার ব্যবসাক্ষেত্রে সাফল্যের চাবিকাঠি। আর এর জন্যে প্রয়োজন নতুন কিছু, ব্যতিক্রমী কিছু ভাবতে পারার সামর্থ্য ও সৃজনশীলতা। আর মেডিটেশন কর্মীদের এই সৃজনশীল উদ্ভাবনী ক্ষমতাকেই বাড়ায়।”

সুইডেনের এরিকসন কোম্পানির ডিরেক্টর ইভা সলোমনসন। তিনি বলেন, “১৯৭৪ সাল থেকে আমি মেডিটেশন করি। আর এখন আমার শতাধিক সহকর্মী মেডিটেশন করছেন। আমার কোম্পানির পণ্য সংক্রান্ত নতুন আইডিয়া লাভ ও তা বাস্তবায়নে আমি মেডিটেশনের সাহায্য নিই।”

জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইনডাস্ট্রিয়াল হেলথ এবং সেন্ট মারিয়ানা মেডিকেল ইনস্টিটিউট একযোগে একটি গবেষণা চালায়। এতে সুমিতমো হেভি ইনডাস্ট্রির ৪৪৭ জন শ্রমিককে মেডিটেশনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পাঁচ মাস পর তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হলো। দেখা গেল আগের চেয়ে তাদের শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক অস্থিরতা, খিটখিটে মেজাজ এবং রাতে ঘুমের সমস্যা অনেক কম। সুমিতমোর হেলথ ইন্স্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান টি ওয়াতানাবে বলেন, আমরা কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে এই মেডিটেশন প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করেছি। কারণ আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে মেডিটেশন একটি অপরিহার্য উপাদান।

বেথেসডার একটি রিয়েল এস্টেট ফার্ম ‘টাওয়ার কোম্পানি’র কর্মীরা মেডিটেশন করার পর তাদের অসুস্থতার প্রকোপ এত কমে গেল যে, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি তাদের প্রিমিয়ামের ৫% ছাড়ই দিল তা নয়, মেডিটেশন কোর্স করার খরচেরও ৮০% দিতে রাজি হলো।

প্রক্টর এন্ড গ্যাম্বল প্রাক্তন এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট স্যার জন হার্ভে জোনস। বিশ্বখ্যাত এ কোম্পানিতে ক্যারিয়ারের ৩৬ বছরের মাথায় একদিন তার হার্ট এটাক হলো। ওপেন হার্ট সার্জারি করা হলো। অপারেশনের পর তার কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শে তিনি শুরু করলেন মেডিটেশন। জোন্‌স বলেন, “আমি আমার প্রতিটি দিন শুরু করি এবং শেষ করি একান্তই নিজের জন্যে কিছু সময় দিয়ে। আর এর ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে আমি এখন আগের চেয়ে অনেক প্রশান্ত। টেনশন, উদ্বেগ প্রায় নেই বললেই চলে। সৃজনশীলতা ও স্মৃতিশক্তিও বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি। আগে যদি মেডিটেশন শিখতে পারতাম তাহলে জীবনটা হতো আরো উপভোগ্য।”

উন্নয়নশীল দেশের অবস্থান

শুধু পাশ্চাত্য বা উন্নত দেশগুলোই নয় করপোরেট জীবনের এই ঝুঁকির মুখে এখন পড়েছেন ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের বিজনেস এক্সিকিউটিভরাও। ইন্ডিয়া টুডে’র এক রিপোর্ট অনুযায়ী—ভারতে প্রতি পাঁচজন এক্সিকিউটিভের একজন বিষণ্নতায় ভুগছেন। করোনারি হৃদরোগে আক্রান্তদের অর্ধেকেরও বেশি হলেন পেশায় যারা মিড লেভেল এক্সিকিউটিভ। ফলে দেখা যাচ্ছে এক্সিকিউটিভ হিসেবে ১০/১৫ বছরের ক্যারিয়ার জীবন এখন নেমে এসেছে মাত্র ৫/৭ বছরে। এসব কারণে টনক নড়েছে ভারতের করপোরেট মহলে। স্ট্রেস মোকাবিলায় তারা নিচ্ছেন বিভিন্ন পদক্ষেপ। কাজের পরিবেশ উন্নত করা, কর্মীদের আরো বেশি ক্ষমতা দেয়া ইত্যাদি ছাড়াও তারা আয়োজন করছেন বিভিন্ন স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ওয়ার্কশপের, আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয় যোগ বা বেদান্ত মেডিটেশনের। যেমনটি করেছেন ভারতের ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের বিশাল প্রতিষ্ঠান ভিডিওকনের সিইও বেনুগোপাল দূত তার ৬ শতাধিক কর্মীকে যোগ প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে। বিড়লা গ্রুপ অফ কোম্পানিজ, টিসকো, টেলকো, গোদরেজ, রিজার্ভ ব্যাংক বা স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন নিয়মিত আয়োজিত হচ্ছে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ওয়ার্কশপ।

বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্যে মেডিটেশন

বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। গত ১২ বছর ধরে কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের দুই শতাধিক ব্যাচে অংশ নিয়েছেন শত শত পেশাজীবী ও শিল্প-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এদের মধ্যে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ল’ইয়ার ও ব্যাংকারসহ রয়েছেন বড় শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান, বহুজাতিক কোম্পানির সিইও থেকে শুরু করে অসংখ্য পাবলিক ও প্রাইভেট কোম্পানির এক্সিকিউটিভ এবং ব্যবসায়ী। মেডিটেশন চর্চা করে ব্যক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি তারা পেয়েছেন পেশাগত উপকারও। এ নিয়ে এক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে ‘ইনস্টিটিউট অফ কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ’-এর জার্নাল ‘দি কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট’-এর নভেম্বর-ডিসেম্বর সংখ্যায়। ‘দি ইনফ্লুয়েন্স অফ এ মেডিটেশন- রিলাক্সেশন টেকনিক অন এক্সিকিউটিভ পারফরম্যান্স’ শিরোনামের এ প্রবন্ধে কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে অংশগ্রহণকারী ২০ জন শিল্পমালিক ও ব্যবস্থাপকের মেডিটেশন পরবর্তী অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফারুক আহমেদ ও ড. আব্দুল হান্নান মিঞার সাথে এ গবেষণায় সহযোগিতা করেন গবেষক রাবিয়া নাজরীন।

এতে দেখা যায়, মেডিটেশনের ফলে মালিক ব্যবস্থাপকদের কাজে উৎসাহ এবং তৎপরতা বেড়ে গেছে। বস, সহকর্মী ও অধীনস্থদের সাথে সম্পর্কেও ঘটেছে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। নেতিবাচক আবেগ অর্থাৎ রাগ-ক্ষোভ-ঈর্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা এখন আগের চেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন। শারীরিক-মানসিকভাবেও তারা আগের চেয়ে সুস্থ ও প্রশান্ত।

মুনি-ঋষি-দরবেশদের চৌহদ্দি থেকে ধ্যান বা মেডিটেশন বেরিয়ে এসেছে অনেক আগেই। আত্ম উন্নয়ন বা নিরাময়ে মেডিটেশনের কার্যকারিতা এখন এক পুরনো সত্য। কিন্তু শিল্প- বাণিজ্য-ব্যবসায়ের মতো টাকা-কড়ির ক্ষেত্রে মেডিটেশন যেভাবে কার্যকরী প্রমাণিত হচ্ছে তা বিস্ময়কর হলেও সত্য। এ কারণেই হয়তো হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের মাইন্ড/বডি মেডিকেল ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ডা. হার্বার্ট বেনসন মন্তব্য করেছেন, “ব্যবসা কর্তৃপক্ষ যদি বুদ্ধিমান হতো তাহলে প্রত্যেকেই তাদের প্রতিষ্ঠানে একটি আলাদা কক্ষ রাখতো এবং কর্মীদের আলাদাভাবে প্রতিদিন কিছুটা সময় দিত যাতে তারা নিজেদের পছন্দমতো কোনো মেডিটেশন করে নিতে পারে।”