published : ১৯ জুন ২০২৫
কোয়ান্টাম মেথড হলো সুস্থতা, সাফল্য ও সুখের ২৮টি সূত্রে গাঁথা একটি টুলবক্স, কম্প্যাক্ট সুইস নাইফের মতোই যা জীবনকে সুন্দর করার জন্যে যে-কোনো সময়, যে-কোনো প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে। মেডিটেশনের এত বহুমুখী ব্যবহারের কথা কোয়ান্টাম বলছে প্রায় ৩ দশক ধরে।
২৯ নভেম্বর ২০২৪ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সর্বসম্মতিক্রমে ২১ ডিসেম্বরকে ঘোষণা করা হয় বিশ্ব মেডিটেশন দিবস। শারীরিক মানসিক ও আবেগিকভাবে ভালো থাকার জন্যে মেডিটেশন চর্চার গুরুত্বেরই এ এক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
এই ঘোষণার আগেই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ২০২৫ সালকে ঘোষণা করে ‘দ্য ইয়ার অব মেডিটেশন’। এরই প্রেক্ষিতে এই সিরিজ আর্টিকেল, যা মূলত কোয়ান্টাম মেথড বইয়ের আলোচনাগুলোর অ্যাডাপ্টেশন।
………………………………………………………………………………………………..
শিথিলায়ন (Relaxation) হলো মননিয়ন্ত্রণ ও পরিকল্পিত মেডিটেশনের প্রথম ধাপ। কারণ দেহমন শিথিল হলে আপনার পক্ষে সম্ভব হবে অন্য মেডিটেশনগুলো ঠিকঠাক করা। ইচ্ছামতো শিথিল হতে পারা একটি দক্ষতা, যা ধাপে ধাপে অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়।
শিথিলায়ন শুধু শারীরিক বিশ্রাম নয়, বরং মনের গভীর প্রশান্তির একটি চর্চা, যা আমাদের আত্মজাগরণ, একাগ্রতা এবং ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। নিয়মিত শিথিলায়ন চর্চা করে আপনি অনেক ধরণের উপকার পেতে পারেন, যার মধ্যে আছে-
১. মানসিক প্রশান্তি ও চাপমুক্তি
শিথিলায়নের মাধ্যমে নেতিবাচক চিন্তা, দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ দূর করা যায়। এটি মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয় এবং স্ট্রেস লেভেল কমায়। বলা হয়, শিথিলায়ন এবং স্ট্রেস- এ দুটো একসাথে থাকতে পারে না।
২. একাগ্রতা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি
নিয়মিত শিথিলায়ন চর্চার ফলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। এতে বাড়ে একাগ্রতা, চিন্তার স্বচ্ছতা এবং সৃজনশীলতা। যা সমস্যার সমাধান ও নতুন ভাবনার জন্ম দিতে সাহায্য করে।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
গবেষণায় দেখা গেছে, শিথিলায়নের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হয়। এটি দেহকে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা সক্রিয় করতে সাহায্য করে।
৪. আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি
শিথিলায়ন অস্থিরতা কমিয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে ব্যক্তিজীবনে আরও দৃঢ় ও স্থিতিশীল হতে সহায়তা করে।
৫. আত্মজাগরণ ও অন্তর্দৃষ্টির বিকাশ
শিথিলায়নের মাধ্যমে মানুষ নিজের অন্তর্দৃষ্টি ও অনুভবশক্তি উন্নত করতে পারে। এটি অন্তর্চেতনার জগতে প্রবেশের একটি মাধ্যম, যা প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি গঠনে সহায়ক।
৬. শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখা
শিথিলায়ন দেহ ও মনকে একটি সুস্থ ভারসাম্যের মধ্যে রাখে। এটি শারীরিক ক্লান্তি দূর করে এবং মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করে।
৭. আত্মউন্নয়ন ও সফলতা অর্জন
শিথিলায়ন চর্চার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের সম্ভাবনাকে উন্মোচন করতে পারে। এটি সফলতার পথে ইতিবাচক চিন্তা ও পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করে।
৮. দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন
শিথিলায়ন শুধু মেডিটেশনের একটি অংশ নয়, বরং এটি ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে।
নিয়মিত শিথিলায়নের মাধ্যমে প্রশান্তি, আত্মজাগরণ ও সফলতা অর্জন করা সম্ভব। এটি আমাদের মন, শরীর এবং দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা উন্নত করে।
শিথিলায়ন হল প্রজ্ঞার প্রথম ধাপ এবং সমস্ত মেডিটেশনের ভিত্তি। এটি মনকে চাপমুক্ত করার একটি শক্তিশালী উপায়। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, নেতিবাচক ভাবনা—এসব আমাদের শিথিল হতে বাধা দেয়। তবে ইতিবাচক চিন্তা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে আমরা দ্রুত প্রশান্তির দিকে যেতে পারি।
আসলে শিথিলতা মানে স্থবিরতা নয়, বরং মনের গভীরে শান্তির জোয়ার বইয়ে দেওয়া। আপনার দেহমন শিথিলায়ন হলেই সম্ভব হবে গভীর মেডিটেশন, মনছবি, নিরাময় সবই। তাই শিথিলায়নকে বলা হয় সমস্ত মেডিটেশনের জননী।
শিথিলায়ন একটি চর্চার বিষয়, যার জন্যে প্রয়োজন নিয়মিত অনুশীলন। এই অনুশীলন চলাকালে কিছু বিষয় যদি অনুসরণ করেন তাহলেই আপনি পায়ে পায়ে এগিয়ে যাবেন গভীর শিথিলায়নের পথে।
শিথিলায়ন মনের শক্তিকে সক্রিয় করার একটি কার্যকর পদ্ধতি। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে এর শক্তিকে পুরোপুরি উপলব্ধি করা সম্ভব। তাই শিথিলায়নকে অভ্যাসে পরিণত করুন, মনের গভীরতা আবিষ্কার করুন এবং এগিয়ে যান আত্মউন্নয়ন ও প্রশান্তির পথে।
[আর্টিকেলটি কোয়ান্টাম মেথড বইয়ের “শিথিলায়ন : মনের বাড়ি” অধ্যায় থেকে অ্যাডাপ্টেড। পুরো চ্যাপ্টারটি পড়তে বইটি সংগ্রহ করুন অথবা ই-বুক পড়ুন এই লিংকে]