published : ২৪ জুলাই ২০২৫
কতদিন বাঁচব? এই চিন্তা মাথায় আসার সাথে সাথে আমরা আমাদের বয়সের একটা সীমা নির্ধারণ করে ফেলি। আর সেই সীমা আমাদের জন্যে বাস্তবতায় পরিণত হয়। আমাদের পারিপার্শ্বিকতা, সাংস্কৃতিক ধ্যানধারণা আমাদের আয়ু সংক্রান্ত প্রত্যাশাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর মনোদৈহিক প্রক্রিয়ার মূল সূত্র হচ্ছে : 'প্রত্যাশা ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করে'।
আপনি যদি আপনার প্রত্যাশাকে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের আলোকে শুধরে নেন, তাহলেই আপনি আপনার দেহকে বহুলাংশে কালজয়ী করে তুলতে পারেন। বার্ধক্যেও অনুভব করতে পারেন তারুণ্যের শক্তি।
চল্লিশ পেরোলেই চালশে নয়!
আজকে যে বেপরোয়া বিচ্ছু
শান্ত সুবোধ হবে কাল সে;
চোখের সঙ্গী হবে চশমা,
শান্ত সুবোধ হতে কিছুমাত্র দোষ নেই, কিন্তু চল্লিশ পেরোতেই চালশে? এ-ই কি নিয়তি? সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এই নিয়তি অবধারিত নয়! তরুণ বয়স থেকেই যদি আপনি মেডিটেশন এবং বৈজ্ঞানিক জীবনাচার অনুসরণ করেন তাহলে বার্ধক্যেও আপনি থাকবেন শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট।
বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন একটি প্রচ্ছদ নিবন্ধ প্রকাশ করে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমসারির বিজ্ঞানী ও গবেষকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত গবেষণা-কার্যক্রমের ভিত্তিতে বলা হয়েছে যে, নিয়মিত মেডিটেশনের মাধ্যমে প্রশান্ত জীবনযাপন, সুস্থ জীবনাচার এবং ইতিবাচক ও আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বার্ধক্যগতিকে বিলম্বিত করে। অর্থাৎ আয়ু বাড়ায়।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আপনার মুড অনুভূতি চিন্তাভাবনা সবকিছুই প্রভাবিত করে আপনার শারীরবৃত্তিয় কার্যক্রমকে। তাই স্বাস্থ্যগবেষকদের পরামর্শ হলো, দেহমনে শিথিল হতে শিখুন। তাতে আপনার রক্তচাপ থাকবে স্বাভাবিক; বিষণ্নতা-হতাশার মতো নেতিবাচক অনুভূতিগুলো হ্রাস পাবে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হয়ে উঠবে আরো সংহত ও কার্যকর। বাড়বে আপনার ফিজিক্যাল ও মেন্টাল ফিটনেস।
তা-ই নয় শুধু, হাড়ের গঠন মজবুত ও হাড় সুরক্ষা, করোনারি হৃদরোগ নিরাময় এবং বয়সজনিত নিউরোন-ক্ষয় প্রতিরোধেও মনের আছে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা।
আমাদের দেহকোষের অভ্যন্তরে থাকা ক্রোমোজোমের প্রান্ত দুটোর নাম ‘টেলোমেয়ার’ (telomere)। জন্মের পর থেকে প্রতিনিয়ত কোষ বিভাজনের সময় এই টেলোমেয়ার-এর দৈর্ঘ্য ক্রমান্বয়ে ছোট হতে থাকে।
টেলোমেয়ার নিয়ে প্রথম গবেষণা শুরু হয় ১৯৭৮ সালে বিজ্ঞানী এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন এবং হার্ভার্ডের গবেষক জ্যাক জোস্টাকের হাত ধরে। তারা বলেন, টেলোমেয়ার-এর দৈর্ঘ্যহ্রাস ঘটার ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও নিউরোন-ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে এবং দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হতে থাকে।
অনেকটা জ্বলন্ত মোমবাতির সলতের মতো, টেলোমেয়ারের দৈর্ঘ্য যত কমতে থাকে, বার্ধক্যও তত ত্বরান্বিত হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্ট্রেসমুক্তি এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নিয়মিত মেডিটেশন, বিজ্ঞানসম্মত খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও জীবনের প্রতি আশাবাদী-ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি টেলোমেয়ার-এর স্বাভাবিক দৈর্ঘ্যহ্রাসকে ব্যাহত করে। ফলে বার্ধক্য প্রক্রিয়া ঘটে তুলনামূলক ধীর গতিতে।
শুধু তা-ই নয়, নিয়মিত মেডিটেশনকারীদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বয়সজনিত নিউরোন-ক্ষয়ও অন্যান্যদের তুলনায় কম। তারা হতাশা-বিষণ্নতার মতো নেতিবাচক আবেগ-অনুভূতিতে আক্রান্ত হন কম।
২০১৪ সালে ইউসিএসএফ-এ ২৩৯ জন মহিলার ওপর পরিচালিত বছরব্যাপী একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মেডিটেশনের মাধ্যমে স্ট্রেসমুক্ত জীবনযাপন এবং সুস্থ জীবনাচার অনুসরণ করেছেন তাদের টেলোমেয়ারের দৈর্ঘ্য ততটা কমে নি, যতটা কমেছে স্ট্রেস-আক্রান্ত ও পরিশ্রমহীন জীবনযাপনকারীদের ক্ষেত্রে। বার্ধক্যেও জরা-ব্যধি তাদের স্পর্শ করেনি।
তাই, সময়ের সাথে সাথে আপনার বয়স বাড়বে- একথা সত্যি; তবে সচেতন জীবনচর্চার পথ ধরে আপনি হতে পারেন ফিজিক্যাল ও মেন্টাল ফিটনেসের অধিকারী, যাপন করতে পারেন এক আনন্দময় সুখী সুস্থ দীর্ঘজীবন।