সুযোগের সদ্ব্যবহার করে না এমন মানুষ আর ক’জনইবা আছে। আর যদি মোক্ষম সুযোগ আসে তবে তো কথাই নেই, রাজনৈতিক বক্তাদের মতন জ্বালাময়ী কিছু ভাষণ দিতে পারলে বেশ হয়—তাতে মানুষের বিরক্তি হোক আর না-ই হোক। এই কথা বলতে বলতে কখন যে জরুরী কোনো কাজের সময় পেরিয়ে যায়!! আহ! তা যাক না, আগে তো কথাটা শেষ করে নেই। প্রায় সময়ই আপনি হয়তো খেয়াল করেন না, যার সাথে কথা বলছেন সে যে উসখুস করছে আপনার কথার জাল থেকে মুক্তি পাবার জন্যে।
প্রায় মানুষই চায় তার কথাটা কেউ মনোযোগ দিয়ে শুনুক, তার অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করুক। শুধু শুনে গেলেই হবে না, চোখে-মুখে এর প্রকাশও থাকা চাই। কখনো ভ্রু কিঞ্চিত বাঁকবে, কখনোবা ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠবে আলতো হাসি। একই সাথে আপনি যে তার কথা বুঝতে পারছেন সেটাও তাকে বুঝতে দিতে হবে। কীভাবে? এই ধরুন, কথা শোনার মাঝে একটু বললেন, ‘জ্বী, এতে তো খুব ভালো হয়’, ‘বাহ! আপনি তো বেশ ভালো বলেছেন’, ‘তারপর কি হলো?’ ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অবশ্যই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করবেন। আর যার কথা আপনি মন দিয়ে শুনবেন, খেয়াল করে দেখবেন, তার চোখে-মুখে বেশ তৃপ্তির ভাব রয়েছে। আজকালকার যুগে কে কার কথা শুনতে চায় বলুন, সবাই কেবল বকবকানির ঝড় তুলে আকাশ-বাতাস গরম করতে চায়। আর এর মাঝে আপনি যদি কোমল একটা হাসি দিয়ে তার কথা শুনতে বসে যান, তবে সে যে রীতিমতন আপনার একজন ভীষণ রকম ভক্ত হয়ে যাবে সে কথা বোধ করি বলে না দিলেও আপনি বুঝতে পারবেন। তাই বলা হয়, ভালো বক্তার চেয়ে ভালো শ্রোতা অন্যকে বেশি প্রভাবিত করে। ভালো শ্রোতা হওয়ার জন্যে আপনার মধ্যে অব্যশই থাকতে হবে জানার আগ্রহ, ধৈর্য, মনোযোগ ও ইতিবাচক মনোভাব।
আমেরিকার এক উপদেষ্টা একবার বলেছেন, আমার জানামতে বেশির ভাগ মানুষ যারা জীবনে উন্নতি করতে পেরেছেন, তারা কথা বলার চাইতে কথা শুনতেন বেশি।
যার সাথে কথা বলছেন তার সব কথার সাথেই যে আপনাকে একমত হতে হবে তা নয়, কিন্তু তা নিয়ে কখনো তর্কে যাবেন না। কারণ তর্ক করে আহাম্মকেরা, বুদ্ধিমান যারা তারা তর্ক এড়িয়ে চলেন। আপনি ধৈর্য নিয়ে তার কথা শুনুন-নতুন কোনো আইডিয়া বা টিপস পেয়েও যেতে পারেন, এতে হয়তো আপনার কোনো সমস্যা সম্ভাবনায় রূপান্তর হতে পারে।
আপনি হয়তো গুছিয়ে কথা বলতে পারেন না। মনোযোগী শ্রোতা হয়ে যান, বক্তার কথা বলার ভঙ্গী, ধরন বোঝার চেষ্টা করুন। দেখবেন একসময় আপনিই খুব দারুন করে কথা বলতে পারছেন। আপনার জানার পরিধিও বেশ বেড়ে যাবে।
একজন গ্রীক দার্শনিক কী বলেছেন, শুনবেন? আমাদের একটা মুখ অথচ দুইটা কান থাকার কারণ হচ্ছে আমরা যতটা কথা বলি তার চাইতে যেন দিগুণ শুনতে পাই।
তাই না বলে যত শুনবেন তত দেখবেন আপনার জ্ঞান বাড়ছে, বাড়ছে আপনার ব্যক্তিত্ব।