শাকসবজি যেভাবে খেলে আপনি অধিক পুষ্টি পাবেন

এদেশে খাদ্যের প্রধান উৎস বিবেচনা করা হয় চাল ও গমের মতো দানাজাতীয় খাবারকে। তবে শরীরের জন্যে ভাত বা রুটির চেয়ে বেশি জরুরি হলো শাকসবজি।

পুষ্টিবিজ্ঞানীরা একজন প্রাপ্তবয়স্কের জন্যে প্রতিদিন ৪০০ গ্রাম ফল-সবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন। এর মধ্যে আছে শাকপাতা ১১০ গ্রাম, ফুল-ফল-ডাঁটাজাতীয় সবজি ৮৫ গ্রাম, মূলজাতীয় সবজি ৮৫ গ্রাম ও ফল ১১০ গ্রাম।

সবজির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর সেভাবে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তাই সব বয়সের মানুষই শরীর সুস্থ রাখতে প্রচুর শাকসবজি খেতে পারেন।

শাকসবজি খাওয়ার ব্যাপারে জনসাধারণ্যে সচেতনতা বাড়ছে

তবে আরো বেশি সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে সঠিক নিয়মে শাকসবজি খাওয়ার ব্যাপারে। কারণ শুধুমাত্র রান্না, সংরক্ষণ বা প্রক্রিয়াজাতকরণের ভুল পদ্ধতির কারণে শাকসবজি থেকে অনেকটা পুষ্টিই আমরা হারাই। ফলে প্রচুর শাকসবজিও পারে না পুষ্টিঘাটতি পূরণ করতে।

তাই শাকসবজি কীভাবে খেলে অধিক পুষ্টি পাওয়া যাবে তা জানতে হবে।

যতটা পারেন কাঁচা খান

শাকসবজিতে থাকা এনজাইম এর হজমে সহায়তা করে। কিন্তু বেশি রান্না করলে এই এনজাইম নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া শাক-সবজি কাঁচা খেলেই বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়। কাজেই কাঁচা খাওয়া যায় এমন সবজি ও সবুজ পাতা সেদ্ধ না করাই ভালো।

গাজর, লেটুস, শসা, পেঁপে, মুলা, পুদিনা পাতা, বিট, ক্যাপসিকাম, থানকুনি, টমেটো, ধনেপাতা প্রভৃতি শাকসবজি খেতে পারেন সালাদ হিসেবে।

তবে রান্না করে যদি খেতেই হয় তো অর্ধসেদ্ধ খান

কারণ শাকসবজি যত সেদ্ধ করবেন তত এর পুষ্টিগুণের বিনাশ ঘটতে থাকবে। শাকসবজিতে থাকা বিভিন্ন অ্যামাইনো এসিড ও প্রোটিন নষ্ট হয়ে যায় বেশিক্ষণ ধরে অতিরিক্ত আঁচে রান্না করলে।

তাই অল্প সময় ধরে রান্না করুন। রান্নায় যতটা সম্ভব কম পানি দিন। এতে শাক-সবজির ভিটামিন ও মিনারেল অক্ষত থাকবে।

আর একবার রান্না করার পর ঠান্ডা শাকসবজি দ্বিতীয়বার গরম করে খাবেন না। কারণ সবজি বার বার গরম করলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।

শাকসবজি তাৎক্ষণিক রান্নার জন্যে প্রস্তুতকরণ এবং পরে রান্নার জন্যে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যা খেয়াল রাখবেন-

শাকসবজি কেটে তারপর ধোয়ার অভ্যাস আছে বেশিরভাগ মানুষের। এটি ভুল! কারণ এভাবে কাটা শাকসবজি পানিতে ধুলে বেরিয়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান।

তাই শাকসবজি ধোবেন অবশ্যই কাটার আগে। এতে বেঁচে যাবে মূল্যবান পুষ্টি।

আবার অনেকেই আছেন একবারে অনেক শাকসবজি কেটে ফ্রিজে রেখে দেন পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্যে। এটা ঠিক নয়। কারণ শাকসবজি কেটে বেশিক্ষণ রেখে দিলেও পুষ্টিমান কমে যায়।

সবজি কেমন মাপে কাটবেন তার ওপরও নির্ভর করে পুষ্টিগুণ কতটা থাকবে!

পুষ্টিবিদরা সবজিকে খুব ছোট টুকরো না করার পরামর্শ দেন। কারণ এতে সবজির প্রতিটি অংশ সরাসরি তেল ও মশলার সরাসরি সংস্পর্শে চলে আসে। ফলে নষ্ট হয় পুষ্টির একটি অংশ।

তাই রান্নার জন্যে সবজি যথাসম্ভব বড় টুকরো করে কাটুন।

বেশি স্বাদ পুষ্টি বাদ!

খাবারকে সুস্বাদু করতে প্রচুর তেল-মশলা ব্যবহার করেন অনেকেই। এতে স্বাদ না হয় বাড়লো, কিন্তু পুষ্টি?

আসলে অনেক তেল-ঝাল-মশলা দিয়ে রান্না করলে শাকসবজির পুষ্টিমান কমে। কাজেই পরিমিত তেল-মসলা দিয়ে একেবারে রান্না চড়িয়ে দিন। আর রান্না করুন ভালোভাবে ঢেকে। স্বাদ হয়তো কিছুটা কম পাবেন, কিন্তু বেঁচে যাবে পুষ্টির অপচয়!

সবজির খোসাকে আবর্জনা ভেবে ফেলে দেবেন না

কারণ ফলমূলের মতো শাকসবজিরও ভিটামিন মিনারেলসহ পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে এর খোসায়। তাই খোসা বা ত্বক যত কম ফেলা যায় তত ভালো।

যে সবজি খোসাসহ খাওয়া যায় সেসব সবজি না ছিলে রান্না করুন।

খোসা ছাড়াতে হয় এমন অনেক সবজির (যেমন লাউ) খোসা ভর্তা করে খাওয়া যায়। এভাবে খেলে খাবারের অপচয়রোধের পাশাপাশি পাবেন বাড়তি পুষ্টিও।