কোয়ান্টাম মেথড কোর্স করে তারা পেরেছেন আপাত অসম্ভবকে সম্ভব করতে!

কোর্স করে কি আসলে কোনো লাভ হয়?

কোর্স করার আগে এই সংশয়ের ফেরে পড়ে যান অনেকে। কোর্স মানে ৪ দিনের কোয়ান্টাম মেথড মেডিটেশন কোর্স। কিন্তু কোর্সের ৪র্থ দিন এই তারাই আপ্লুত হয়ে বর্ণনা করেন তাদের প্রাপ্তিগুলো। যার কোনো কোনোটা হার মানায় রূপকথাকেও!

কোয়ান্টাম মেথড ওয়েবসাইটের ভিডিও পেইজে আপনি পাবেন এমন শত শত মানুষের কোর্স প্রত্যয়ন ভিডিও।

হাত ঠিক করতে কিছুই বাদ দেন নি তিনি!

১৯৯৬-এর এক রাতে দুর্ভোগ নেমে এসেছিল মনোয়ার হোসেন পলাশের জীবনে। ছাত্র রাজনীতি করতেন; বিবাদের জেরে প্রতিপক্ষের ছেলেরা তার ডান হাতের রগ কেটে দেয়। অচল হয়ে পড়ে হাত। দেশে চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়ে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যান তার বাবা। ৬ মাসের চিকিৎসা শেষে লাভ যা হলো- শুধু ডান হাতের বুড়ো আঙুল ভালভাবে নাড়াতে পারতেন; মধ্যমা আর তর্জনী একসাথে নড়ে, কিন্তু একদমই নাড়াতে পারতেন না অনামিকা আর কনিষ্ঠা।

পরবর্তী ১৪টি বছর এভাবেই চলছিল তিন আঙুলের জীবন। এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যথি- হাত ঠিক করতে করেছেন সবই; বাদ যায় নি জ্বিনের চিকিৎসাও! জ্বিন হুজুরের পরামর্শে কঙ্কালের খুলীতে করে পানি পান, নদীর একচল্লিশ ঘাটের পানি দিয়ে গোসল- এমন সব কাজ তিনি করেছেন আঙুলকে কর্মক্ষম করতে যা শুনলে পাবেন রোমাঞ্চের স্বাদ। কিন্তু সব প্রচেষ্টা যখন ব্যর্থ হলো, হতাশায় নিমজ্জিত হলেন; আত্মহত্যাচেষ্টা করেন দু’বার।

পরিচিতদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মি. পলাশ ভর্তি হলেন কোর্সের ৩০০তম ব্যাচে। কোর্সের ৩য় দিন হিলিং শেখার পর রাতে বাসায় লেগে গেলেন হাত ঠিক করার কাজে। হিলিং মেডিটেশনের করণীয়গুলো করে ঘুমোতে গেলেন। সকালে দেখা গেল মিরাকল- হাতের সবগুলো আঙুল নাড়াতে পারছেন তিনি!

দেখুন তার অনুভূতি ভিডিও : 'আঙুল নাড়াতে পারছি আমি'

নামাজ ও দোয়ায় এত তৃপ্তি তিনি এর আগে পান নি!

হুদরিল ক্বালব বা একাগ্রচিত্ততা কেবল নামাজ কবুল হওয়ার শর্তই নয়, নামাজ থেকে পরিপূর্ণ পরিতৃপ্তি লাভেরও পূর্বশর্ত। মেডিটেশন অনুশীলনে বাড়ে একাগ্রচিত্ততা।

সৈয়দ মুস্‌তাফা মুনিরুদ্দীন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছেন। ছেলেবেলা থেকে নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। পাঁচ বার হজ করেছেন, ওমরা করেছেন পঞ্চাশ বারের বেশি। এতসবের পরেও কোথায় যেন ছিল একটা শূন্যতার অনুভূতি! কিন্তু ৩২০তম ব্যাচে কোর্স করে তিনি সন্ধান পেলেন পূর্ণতার।

কোর্স প্রত্যয়নে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “মেডিটেশনের পর যেদিন প্রথম এশার নামাজ পড়লাম, মনে হলো জীবনে প্রথম এশার নামাজ পড়লাম! বিগত ২৫ বছর ধরে মাগরিবের নামাজের পর আমি ১০/১৫ মিনিটের একটি দোয়া পড়ি। এখান থেকে যাওয়ার পর প্রথম যেদিন আমি দোয়াটা পড়লাম, আমার মনে হলো আমি প্রথম এই দোয়াটা পড়ছি, গত ২৫ বছর পড়ি নাই!”

দেখুন তার অনুভূতি ভিডিও : 'আমার জীবনের মোড় ঘুরে গেছে'

সারাক্ষণ থুথু ফেলার কারণে প্রিয়জনেরা ঘেন্না করতো

২৪ বছর ধরে এক অদ্ভুত সমস্যায় ভুগছিলেন রুবিনা মনির- সারাক্ষণ মনে হতো নাকে এবং গলায় ময়লা জমে আছে! এজন্যে থু থু করে সারাক্ষণ থুথু ফেলতেন। সবসময় সাথে টিস্যু বক্স রাখতে হতো। ঠিকমতো ঘুমাতে পর্যন্ত পারতেন না থুথু ফেলার অস্বস্তির কারণে। সারাক্ষণ থুথু ফেলায় কাছের মানুষজন তাকে ঘেন্না করতে শুরু করেছিল। চিকিৎসার জন্যে অনেক ডাক্তারের কাছেই গেছেন, কিন্তু কেউ তাকে আশার আলো দেখাতে পারে নি। উল্টো বলেছিল, আপনার এই রোগ কোনদিনও ভালো হবার নয়!

কোর্সের শুরুর দিকে একটু অস্বস্তি হলেও তৃতীয় মেডিটেশন করার পর তার খেয়াল হলো, এতটাক্ষণ তিনি থুথু না ফেলেই পার করেছেন! থুথু ফেলতে হয় কিনা এই ভয়ে প্রথম দুদিন তিনি ব্যাগে করে টিস্যু বক্স নিয়ে এসেছেন। কিন্তু যেভাবে এনেছেন সেভাবেই নিয়ে গেছেন, লাগে নি এক প্রস্থ টিস্যুও!

“আমি আরো আগে কেন এই কোর্সে আসলাম না; কেন চব্বিশ বছর এই রোগটা নিয়ে ঘুরে বেড়ালাম!”- এই আক্ষেপ তার মুখ ফুটে বেরিয়েছে কোর্স প্রত্যয়নে।

দেখুন তার অনুভূতি ভিডিও : 'আমি এখন ভালো হয়ে গেছি'

গত তিন বছর কোনো পোষাক বানান নি মুফতি মো. ইমরান হোসেন!

কারণ তিনি ভাবতেন, তিনি তো মারাই যাবেন, তাহলে পোষাক দিয়ে কী হবে!

বিগত চার বছর ধরে ভীষণ অসুস্থ; ডাক্তার বলেছিল কখনো ভালো হবেন না! দেশের নামকরা হাসপাতালগুলো তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। প্রচণ্ড মুষড়ে পড়েছিলেন তিনি।

একজন ডাক্তার তাকে পরামর্শ দিলেন মেডিটেশন করার। কিন্তু তিনি দ্বিধায় ছিলেন এতে কোনো লাভ হবে কিনা। অবশেষে শ্বশুরের (যিনি ছয় মাস আগে কোর্স করে ওষুধ ছাড়াই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছেন) পরামর্শে তিনি কোর্সে ভর্তি হন।

কোর্সের চারদিনে তিনি লাভ করেছেন সুস্থতা আর নতুনভাবে জীবন যাপনের প্রেরণা। কোর্সটা চলাকালেই টেইলার্সে দিয়েছেন নতুন পাঁচ সেট পোষাক তৈরির অর্ডার!

দেখুন তার অনুভূতি ভিডিও : সব হাসপাতাল থেকে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল ভালো হবো না বলে

ভাইভা বোর্ড ভীতি জয় করলেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ-দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা সাবজেক্টে পড়া সত্ত্বেও হীনম্মন্যতা আর নেতিবাচকতায় কুঁকড়ে থাকতেন মোঃ তাওহিদুল ইসলাম। ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হতে ভয় লাগত। এই ভয়টিকে তিনি জয় করেছেন কোর্সে এসে।

কোর্সের ৪র্থ দিন ছিল সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ভাইভা। বোর্ডে ছিলেন ক্লাসের সবচেয়ে কড়া শিক্ষক। এটা দেখে যথারীতি ভয়ে হাত-পা কাঁপতে শুরু হলো তাওহিদের। ঠিক তখন তিনি স্মরণ করলেন কোর্সের শিক্ষা; সেই সাথে কোর্সে শেখা অটোসাজেশন ‘আমি বিশ্বাসী, আমি সাহসী..’ ব্যস, ভয় উধাও! ভাইভায় স্যারদের করা সকল প্রশ্নের উত্তর দিলেন সাবলীলভাবে।

দেখুন তার অনুভূতি ভিডিও : ভাইভা বোর্ডকে আর ভয় পাই না!

সাইকিয়াট্রিস্টের কথা ভুল প্রমাণ করলেন!

সাত বছর আগে একটি পারিবারিক কারণে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। আস্তে আস্তে আক্রান্ত হন ডিপ্রেশনে। চার মাস আগে মানসিকভাবে প্রায় ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। কিছু মনে রাখতে পারতেন না, সন্তানেরা কে কী করছে সে খেয়াল থাকত না। নামাজ শেষ করতে পারতেন না। সারাদিন বিছানায় পড়ে থাকতেন। ঘুমের ওষুধ খেয়েও পারতেন না ঘুমাতে।

সাইকিয়াট্রিস্টের শরণাপন্ন হলে ডাক্তার বলেছিল দুই বছরের আগে তিনি সুস্থ হবেন না। উল্টো আশঙ্কা ছিল সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হবার।

কোর্সের প্রথম মেডিটেশনেই রোমেনা আফরোজ নিজের ভেতর ইতিবাচক পরিবর্তন অনুভব করেন। মাত্র ৪ দিনেই তিনি হন পুরোপুরি সুস্থ!

দেখুন তার অনুভূতি ভিডিও : সাইকিয়াট্রিস্ট বলেছিল আমি দু'বছরের আগে সুস্থ হতে পারব না!

সাফল্যসূত্রের সন্ধান পেলেন মেডিটেশনে!

মাহমুদুর রহমান ইরেশ, যিনি বর্তমানে একজন তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা, কোর্স করেন শিক্ষার্থী অবস্থায়। মালয়েশিয়ায় পড়ালেখার জন্যে স্কলারশীপ পাওয়া বেশ কঠিন হলেও কোর্সে শেখা মনছবির সাফল্যে পড়ালেখার সুযোগ পান টেলিকমিউনিকেশনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ার মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটিতে। মেডিটেশনের হাত ছাড়েন নি কখনো।

উদ্যোক্তাজীবনের প্রথম দিককার ঘটনা। একদিন মেডিটেশনে হঠাৎ একজন ক্লায়েন্টের নাম মনে পড়ে যায়, যার সাথে ৪/৫ বছর কোনো যোগাযোগ নেই, নামটা পর্যন্ত ভুলে গেছেন। মেডিটেশনেই মনে হলো ওনার সাথে কথা বলতে হবে।

কথা বলে দেখা গেল, কোম্পানিটি কিছু সমস্যায় ধুঁকছে, যার সমাধান খুঁজতে তারা দু’বছরে ১২টি কোম্পানির ইন্টারভিউ নিলেও প্রজেক্টটি কাউকেই দেয় নি। দেশ-বিদেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির ভিড়ে ইরেশের কোম্পানি ছিল সবচেয়ে ছোট এবং নবীন। কিন্তু সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে প্রজেক্টটির দায়িত্ব পান ইরেশ-ই। কোম্পানিটি যেন তারই অপেক্ষায় ছিল এতদিন!

সাফল্যের সিঁড়ি ছিল সেই প্রজেক্টটি, যার বদৌলতে তাকে পিছু ফিরতে হয় নি আর।

দূরত্ব ঘুচে পারিবারিক সম্পর্ক হয়েছে মধুময়

অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি অর্থনৈতিক দুর্ঘটনার ফলে অভাবগ্রস্ত, হতাশ এবং একটা পর্যায়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন মি. এ. জামান। আর এর নেতিপ্রভাব পড়ে পরিবারে। অল্পতেই উত্তেজনা, রাগারাগি, চিৎকার-চেঁচামেচি পারিবারিক সম্পর্ককে করে তোলে বিষময়। একটা সময়ে দেখলেন স্ত্রী-সন্তানেরা তার থেকে সরে গেছে অনেক দূরে।

ইতিবাচক পরিবর্তনের সূত্রপাত হলো আলোকায়নে এসে, যা গভীরতা লাভ করে কোর্সে। কোর্সে শেখা সুখী পরিবারের কৌশলগুলো কাজে লাগিয়ে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের সাথে দূরত্ব মিটিয়ে লাভ করে পারিবারিক প্রশান্তি। আগে তিনি ঘরে থাকলে যে সন্তানেরা ভয়ে সিঁটিয়ে থাকত, এখন কিছুক্ষণ ঘরে না থাকলে তারাই বারবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে, আব্বু তুমি কখন আসবা?!

প্রথম বর্ষে ১০০ জনের পরে থেকেও অনার্স-মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট!

জয়নব বিনতে হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর মনে হয়েছিল সব পাওয়া হয়ে গেছে; এখন কোনোরকম পাস করে বেরোলেই হলো! ফলাফল- প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় স্থান হলো ১০০ জনের পরে! ভেঙে পড়লেন খুব।

কোর্সে এসে তিনি খুঁজে পেলেন হারিয়ে ফেলা আত্মবিশ্বাস। মনছবি দেখলেন ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়ার। এতখানি আত্মবিশ্বাস তিনি অর্জন করলেন যে, প্রথম বর্ষে অতটা পিছিয়ে থেকেও ফার্স্ট হওয়ার মতো উঁচু লক্ষ্যকেই মনে দৃঢ়মূল করে ফেললেন। মেডিটেশনে মনছবিতে ধার দেয়ার পাশাপাশি করলেন রুটিনমাফিক পড়াশোনা।

ফলাফল মিললো হাতেনাতে; অনার্সে হলেন ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট!

পরবর্তী মনছবি আরো বড়- মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে দুটি পদক নিচ্ছেন একসাথে।

যথারীতি মাস্টার্সেও ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হলেন এবং একসাথে দুটো পদক পেলেন জয়নব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতিতে তিনিই প্রথম যিনি, অনার্স এবং মাস্টার্স দুটোতেই ফার্স্টক্লাস পেয়েছেন!

পড়ুন- দুটো স্বর্ণপদক একসাথে পেলাম

এতক্ষণ যা পড়লেন তা আসলে কোয়ান্টাম মেথড কোর্স করে অবিশ্বাস্য সাফল্য পাওয়াদের গুটিগতেকের ঘটনা। এভাবে কোর্সের প্রতিটি ব্যাচই জন্ম দিচ্ছে অজস্র বিস্ময়ের।

আপনিও কোর্সে আসুন; লাভ করুন সাফল্য, সাক্ষী হোন বিস্ময়ের।