published : ২ আগস্ট ২০২৩
৭ মার্চ, ১৯৯৩। অনুষ্ঠিত হলো কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের ১ম ব্যাচ। এর আগে কেউ কোনোদিন শোনে নি বা কল্পনাও করে নি এমন একটি কোর্স সম্ভব, যেখানে সকল স্তরের মানুষ অংশ নেবেন মনের শক্তিতে জীবন বদলানোর জ্ঞান শিখতে।
‘কে আসবে ৪ দিন ৪০ ঘন্টা আপনার কথা শুনতে, ধ্যান শিখতে, তাও টাকা দিয়ে?’, অনেকেই জিজ্ঞেস করেছিলেন গুরুজীকে। গুরুজী শহীদ আল বোখারী মহাজাতক- কোয়ান্টাম মেথডের উদ্ভাবক এবং কোর্সের একক পরিচালক।
গুরুজী সেদিন বলেছিলেন, ‘আমি আমার বিশ্বাসের কথা বলব! মানুষের কল্যাণের জন্যে বলব। তাদের কল্যাণ হবে। অবশ্যই মানুষ আসবে!’
বেশিরভাগ মানুষই সেদিন বিশ্বাস করে নি। কিন্তু এখন সহস্র মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের একেকটি ব্যাচ। তিন দশকের পথপরিক্রমায় লাখো মানুষ অংশ নিয়েছেন জীবনের বদলের এই কোর্সে।
কারণ আমরা বিশ্বাস করেছিলাম মেডিটেশনের মাধ্যমে ইতিবাচক চেতনা ধারণ করে জীবনযন্ত্রণার অবসান সম্ভব; কোর্সের পরতে পরতে আছে এই বিশ্বাসেরই প্রতিফলন।
“কোয়ান্টাম মেথড আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিপূরক” : শিথিলায়ন ক্যাসেট প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ডা. নুরুল ইসলাম
১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি কোয়ান্টাম আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছিল শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে শিথিলায়ন ক্যাসেট প্রকাশের মাধ্যমে। মেডিটেশন কী এবং কীভাবে এটি জীবন বদলের অনুঘটক হতে পারে- এই বিষয়ে গুরুজী নাতিদীর্ঘ আলোচনা করেন সেদিন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডা. নুরুল ইসলাম বলেন, কোয়ান্টাম মেথড আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিপূরক! আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে কোয়ান্টাম মেথডকে যুক্ত করা হলে রোগীর রোগ নিরাময় সহজ হবে, দ্রুত হবে।
সেদিন আমাদের সামনে কোনো দৃষ্টান্ত ছিল না, ছিল শুধু নিখাদ বিশ্বাস। পরবর্তী তিন দশকে সেই বিশ্বাস জন্ম দিয়েছে হাজারো দৃষ্টান্ত। আর এই দৃষ্টান্তগুলোই আজ অন্যদের অনুপ্রাণিত করে কোর্সে অংশ নিতে।
এবং সেটাও নিরবচ্ছিন্নভাবে!
অনুশীলনে সহজ, কার্যকারিতায় অনন্য আর শাশ্বত জীবনচেতনার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় লাখো মানুষের জীবনে কোয়ান্টাম মেথড কোর্স এনে দিয়েছে ইতিবাচক পরিবর্তন শারীরিক, মানসিক, পেশাগত, পারিবারিক, আত্মিক অর্থাৎ জীবনের সবদিকে।
মানুষের যেন ঢল নামে কোর্সের একেকটি ব্যাচে!
কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের উপস্থাপনা এতটাই সহজ আর প্রাণবন্ত যে, কখনো মেডিটেশন করেন নি, এমনকি মেডিটেশনের নামই শোনেন নি এমন মানুষও এই কোর্সে অংশ নিয়ে উপকৃত হতে পারেন। যে-কারণে দশ বছরের শিশু থেকে আশি বছরের বৃদ্ধ, শিক্ষার্থী থেকে পেশাজীবী, পিএইচডি প্রফেসর থেকে নিরক্ষর হকার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক থেকে গ্রামের গৃহিণী, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার সাংবাদিক আইনজীবী সচিব সংসদ সদস্যসহ নানান শ্রেণীপেশার মানুষ এই কোর্সে অংশ নিয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছেন, পেয়েছেন প্রভূত উপকারিতা।
দেশ-বিদেশে মেডিটেশন শেখার কোর্স অনেক থাকলেও উদ্ভাবক কর্তৃক এককভাবে টানা এত বছর এতগুলো কোর্সের উদাহরণ নেই আর একটিও!
কোয়ান্টাম মেথডের সূচনালগ্নে পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সম্পর্কিত কোনো কোর্স ছিল না। সুখী হওয়ার প্রক্রিয়া যে আয়ত্ত করা যায় আর এ নিয়ে কারিকুলামও হতে পারে- এ ছিল অকল্পনীয়! কোয়ান্টাম যাত্রা শুরু করেছিল একা।
কিন্তু এখন?
গত এক দশকে পৃথিবীর নামিদামি এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই যেখানে হ্যাপিনেস কারিকুলাম বা সুখীজীবন আয়ত্তের কোর্স নেই। হার্ভার্ড, এমআইটি, অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ ইয়েল, পেনসেলভেনিয়াসহ প্রথমসারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর Wellbeing, Applied Positive Psychology ইত্যাদি বাহারী নামের কোর্সগুলোতে এখন হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়ে শিখছে কীভাবে সুখী হতে হয়, ইতিবাচক ও প্রো-একটিভ থাকতে হয়।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১২ বছরের ইতিহাসে জনপ্রিয়তম কোর্স সাইকোলজি অ্যান্ড দ্য গুড লাইফ
মজার বিষয় হলো, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে এই কোর্সগুলো থেকে আপনি যা শিখবেন তা কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের বড়জোর দশ ভাগের এক ভাগ! একই কনটেন্ট কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে আছে আরো ভালভাবে, পরিপূর্ণভাবে কিন্তু অনেক কম খরচে।
ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের ৪৯৬টি ব্যাচ; অচিরেই হতে চলেছে ৫০০তম ব্যাচ। উদ্ভাবক কর্তৃক একক পরিচালনায় মেডিটেশন কোর্সের অর্ধসহস্র ব্যাচ- এ যে মহাবিস্ময়, এক অনন্য বিশ্বরেকর্ড! পৃথিবীর আর কোথাও একা ক্লাস নিয়ে কেউ এতগুলো কোর্স সম্পন্ন করেছে- এমনটা হয় নি।
কোয়ান্টাম মেথড কোর্স যেদিন শুরু হয়েছিল, সেই দিনটিও আসলে ছিল একটি বিশ্বরেকর্ড! এর আগে পৃথিবী শোনে নি যে এমন একটি কোর্স পরিচালনা সম্ভব, যেখানে মানুষ ধ্যান শিখে তার মাধ্যমে নিরাময়, প্রশান্তি, প্রাচুর্য ও সাফল্য অর্জন করতে পারে। কেউ কল্পনা করে নি যে এমন একটি কোর্সের একেকটি ব্যাচে হাজার হাজার মানুষ আসবে ধ্যান শিখতে।
বহু বছর বাদে নিজের পায়ে ভর দিয়ে হাঁটছেন কোর্সের একজন অংশগ্রহণকারী
ভাবে নি যিনি হাঁটতে পারতেন না, তিনি কোর্সে এসে কিছু কথা শুনে আর ধ্যান করে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে ক্লাসেই হাঁটা শুরু করবেন। যিনি রুকু-সেজদা নিয়ে নামাজ পড়তে পারতেন না, তিনি সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা করে মসজিদে যেয়ে রুকু-সেজদা দিয়ে নামাজ পড়বেন। যিনি জীবনের সব আশা হারিয়ে ব্যর্থতায় হাবুডুবু খাচ্ছিলেন, তিনি বেঁচে থাকার নতুন প্রেরণা খুঁজে পাবেন, হয়ে উঠবেন দারুণ উদ্যমী-আশাবাদী-সাহসী।
৩১তম বছরে নতুন উচ্চতার নতুন ধারার বিশ্বরেকর্ড গড়ার পথে কোয়ান্টাম মেথড কোর্স। আজ পেছনে ফিরলে শূন্যতা নয়, পুরোটাই যেন পূর্ণতার গল্প! বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যে যে ধ্যান, যে কল্যাণ কামিতা, তারই আরেক অধ্যায়ের সূচনা হতে চলছে কোয়ান্টাম মেথডের হাত ধরে।
ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক এই ধ্যানের বাণী। কোয়ান্টাম মেথড ৫০০তম কোর্সের সাথে জেগে উঠুক সহস্র প্রাণ, আলোকিত হোক ধ্যানের আলোয়। সর্বোচ্চসংখ্যাক অংশগ্রহণকারী আর সর্বাপেক্ষা সাফল্যে ইতিহাসের বুকে ঠাঁই করে নিক এই কোর্স।
আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি সেই দিনটির!