আখেরি দোয়া কী ও কেন?

‘আখেরি দোয়া’ মানে কী?

‘আখের’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘শেষ’। ‘আখেরি দোয়া’ মানে ‘শেষের দোয়া’ বা ‘সমাপনী দোয়া’।

সূরা আরাফের ২০৪নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন,

তাই যখন কোরআন পাঠ করা হয় তখন মৌন থাকো ও মনোযোগ দিয়ে শোনো।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত রমজান মাসের বিশেষ কার্যক্রম ‘কোয়ান্টায়নে খতমে কোরআন’ হলো এই ধ্যানের স্তরে মৌনতা ও মনোযোগের সহিত কোরআন তেলাওয়াত ও বাংলা মর্মার্থ শ্রবণের কার্যক্রম, যা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০০১ সাল থেকে। ৭ দিনব্যাপী এই কার্যক্রম শেষে আয়োজিত হয় সঙ্ঘবদ্ধ দোয়ার প্রোগ্রাম 'আখেরি দোয়া'।

কেন এই আয়োজন?

চাওয়াকে পাওয়ায় রূপান্তরের একটি কার্যকরী হাতিয়ার হলো দোয়া বা প্রার্থনা। আর সেটা যখন অনেক মানুষ একত্র হয়ে করে তখন তার কল্যাণশক্তি বৃদ্ধি পায় বহুগুণে।

এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে। যখন আপনি একা ধ্যান করেন, তখন আপনার মেডিটেটিভ লেভেল বা ধ্যানের স্তর যে মাত্রায় পৌঁছাবে, অনেকের সাথে একত্রে করলে পৌঁছবে তার চেয়েও গভীরে; আপনি দ্রুত ধ্যানে নিমগ্ন হতে পারবেন। [সূত্র : Institute of Electrical and Electronics Engineers]

আর ইসলামের শিক্ষাই হচ্ছে ভালো কাজ সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে করা। যুগে যুগে কালে কালে যারাই স্রষ্টার নৈকট্য লাভের উপায় খুঁজেছেন, তারা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে ভালো কাজে নিজেদেরকে নিবেদিত করেছেন।

এই কাজ-ই করছে কোয়ান্টাম রমজানে আখেরি দোয়া আয়োজনের মাধ্যমে!

কী হয় এই কার্যক্রমে?

আখেরি দোয়া একটি সারাদিনব্যাপী প্রোগ্রাম, যাতে অংশগ্রহণ করেন হাজারো কোয়ান্টাম সদস্য। প্রোগ্রামটি শুরু হয় সকাল নয়টায় এবং শেষ হয় ইফতার দিয়ে। পুরো প্রোগ্রামটি পরিচালনা করেন শ্রদ্ধেয় গুরুজী শহীদ আল বোখারী মহাজাতক।

আখেরি দোয়া পরিচালনা করেন গুরুজী শহীদ আল বোখারী মহাজাতক

পবিত্র কোরআনের আলোকে কীভাবে আমরা জীবনকে গুছিয়ে নিতে পারি, সমৃদ্ধ করতে পারি, অবিদ্যার অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারি- এসব নিয়ে গুরুজী উপস্থাপন করে বিশদ আলোচনা। ১৪শ বছর আগে নবীজীর (স) বাণী ও দিক নির্দেশনা যে আজকের দিনেও কতটা প্রাসঙ্গিক, এবং এই অস্থিরতা-অশান্তির যুগে শান্তি ও সুখ প্রাপ্তির মূল পথ যে তিনি দেখিয়ে গেছেন, আলোচনার মধ্য দিয়ে উঠে আসে তা।

এ-ছাড়াও, কীভাবে দৈনন্দিন জীবনে কোরআন ও হাদীসের গভীরে ডুব দেয়া যায় এবং তার শিক্ষা জীবনে প্রতিফলিত করা যায়- এই ব্যাপারে গাইডলাইন দেয়া হয়, যা শুনে যে-কেউই তার জীবনকে খুব সহজেই কোরআন এবং হাদীসের আলোকে সমৃদ্ধ করতে পারবেন।

মেডিটেশন ও দোয়া

প্রোগ্রামে একাধিক মেডিটেশন হয়, যার মাধ্যমে ধ্যানীরা আল্লাহ্‌ ও তাঁর নবীকে অনুভব করেন অন্তরের গভীরে। কোরআনকে জানার ও শেখার প্রয়োজনীয়তা তারা ধ্যানের মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করেন।

আখেরি দোয়া একটি সম্মিলিত দোয়া যা স্রষ্টা প্রেমে সমর্পিত করে

সবশেষে অনুষ্ঠিত হয় দোয়া। অংশগ্রহণকারীরা ধ্যানের স্তরে সেই দোয়ায় সমবেত হয়ে স্রষ্টার কাছে পেশ করেন নিজের ও পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনীয় সব চাওয়া।

পবিত্র রমজান মাসে ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে স্রষ্টাকে অনুভব করার ও নবীপ্রেমে ডুব দেয়ার এ এক অনন্য অনুভূতি। দেশের নানা প্রান্তের হাজারো মানুষ বছরজুড়ে প্রতীক্ষায় থাকেন এই একটি দিনের জন্যে।

কারা অংশগ্রহণ করতে পারবেন?

সশরীরে ভেন্যুতে এসে আখেরি দোয়ায় অংশগ্রহণ করতে চাইলে কোয়ান্টাম মেথড কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কোয়ান্টাম মেথড কোর্স সম্পন্নকারী যে-কেউই এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে পারেন। সেজন্যে আগে থেকেই রেজিস্ট্রেশন করে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।

রেজিস্ট্রেশনের জন্যে যোগাযোগ করুন আপনার নিকটস্থ কোয়ান্টাম সেন্টার-শাখা-সেলে। ঠিকানা পাবেন এই লিংকে- কোয়ান্টাম শাখা/সেল

তবে যারা এখনো কোয়ান্টামের সদস্য হন নি, এ-বছর তাদের জন্যে থাকছে সুবর্ণ সুযোগ! কারণ তারাও এবারে আখেরি দোয়ায় অংশ নিতে পারবেন অনলাইন সম্প্রচারের বদৌলতে।

আগামী ১ এপ্রিল ২০২৩ প্রথমবারের মত আখেরি দোয়া লাইভ স্ট্রিমিং হবে কোয়ান্টাম মেথড ওয়েবসাইট এবং কোয়ান্টাম মেথডের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল Quantum Method [Official]-এ। সেদিন দেশ-বিদেশের দর্শকেরা ঢাকা সময় সকাল ৯টা থেকে সুবিধামত ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলটির মাধ্যমে শরিক হবেন আখেরি দোয়ায়।

“আমি তো কখনো মেডিটেশন করি নি; আখেরি দোয়ায় অংশ নেব কীভাবে?”

মেডিটেশন আসলে খুব সহজ। মনের গভীরে ডুব দেয়ার নামই মেডিটেশন। তবে একটা বিশেষ ব্যাকরণ অনুসরণ করে চর্চা করা উত্তম।

ব্যাকরণটাও বেশ সরল, এই ভিডিওতেই তা দেখে নিতে পারেন- শিথিলায়ন ভিজ্যুয়াল গাইড

গুরুজী মেডিটেশনের সময় যা বলবেন, আপনি শুধু চোখ বন্ধ করে তা কল্পনা ও অনুভব করার চেষ্টা করবেন, তাহলেই হবে।

আর আখেরি দোয়ায় হাজারো ধ্যানীর সম্মেলনে স্রষ্টা ও নবীপ্রেমে একাত্মতার অনুভূতি এত চমৎকার হয় যে, কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে শুনলেই দেখবেন যে আপনি সবার সাথে একাত্ম হয়ে গেছেন।