published : ৯ এপ্রিল ২০২২
একদিন এক সাহাবী কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন। নবীজীকে (স) দেখে তিনি তেলাওয়াত বন্ধ করলেন। নবীজী (স) তাকে বললেন, তুমি তেলাওয়াত করো। সাহাবী বলল, ইয়া রসুলুল্লাহ! এই কোরআন তো আপনার ওপর নাজিল হয়েছে! আপনার সামনে আমি তেলাওয়াত করব!
নবীজী বললেন, অবশ্যই তুমি শোনাও; কোরআন তেলাওয়াত করা এবং শোনা দুটোই সওয়াবের।
হাট-বাজারে, দোকানপাটে, বাসাবাড়িতে অডিওতে কোরআন তেলাওয়াত হচ্ছে। তেলাওয়াত শুনতে শুনতে দোকানি বেচাকেনা করছে; গৃহিণী রান্নাবান্না করছে। এমনকি গাড়িতেও কোরআনের ক্যাসেট ছেড়ে রেখে গল্পে মশগুল হয়ে আছে লোকজন।
রমজান মাসের একটি ‘সাধারণ’ চিত্র এটি। অথচ আমরা কি জানি এভাবে তেলাওয়াত শ্রবণ কোরআনের আদবের বরখেলাপ, এর শিক্ষার পরিপন্থী কাজ?
সূরা আরাফের ২০৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
যখন কোরআন পাঠ করা হয় তখন মৌন থাকো এবং মনোযোগ দিয়ে শোনো। যাতে তোমরাও রহমত পেতে পারো।
মৌনতা এবং মনোযোগের সম্মিলিত রূপই হলো কোয়ান্টায়ন।
কারণ শুধু কিছু কথা, কিছু বাণী মস্তিষ্কে প্রবেশ করলেই জীবনে পরিবর্তন আসে না, যতক্ষণ না তা হৃদয়ে প্রবেশ করে। আর এখানেই কোয়ান্টায়নে কোরআন শ্রবণের গুরুত্ব।
ধরুন, আপনাকে আপনার বস তার প্রতিনিধি হিসেবে কোথাও পাঠালেন। সেখানে আপনি কী করবেন আর কী করবেন না সেটা যখন আপনাকে ব্রিফ করা হচ্ছিল তখন আপনি মনোযোগ দিলেন না; আপনি তখন হয়তো ভাবছিলেন আজ কত টাকা আয় হলো, বাসার জন্যে কী কিনতে হবে, আগামীকাল কার সাথে দেখা করবেন- অর্থাৎ যাপিত জীবনের নানা বিষয়ে আপনার মন আচ্ছন্ন। আপনি কি পারবেন আপনার প্রতিনিধিত্বের দায়িত্বটি যথাযথভাবে পালন করতে? নিশ্চয়ই না!
পৃথিবীতে স্রষ্টা আমাদের প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন; এখানে আমাদের করণীয়-বর্জনীয়ের কথা সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন পবিত্র কোরআনে। পালন করতে হলে আগে জানতে হবে সেগুলো আসলে কী। আর জানতে প্রয়োজন মনোযোগ ও মৌনতায় কোরআনের গভীরে ডুব দেয়া।
আর এই কাজটিই আপনি করতে পারবেন কোয়ান্টায়নের খতমে কোরআনে অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে।
ধ্যানের স্তরে আরবিতে কোরআন তেলাওয়াত ও বাংলা তরজমা শোনা ও অনুধাবন করার মাধ্যমে রমজান মাসে পবিত্র কোরআন খতম করার কার্যক্রম কোয়ান্টায়নে খতমে কোরআন। ১৯৯৯ সাল থেকে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজন করছে অনন্য এই কার্যক্রম।
টানা ৭ দিনে মোট ৫২ ঘণ্টার এই ইবাদত ১২৪ কোটি ৮৫ লক্ষ ২০ হাজার বছর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম!
নবীজী (স) বলেছেন, এক ঘণ্টার ধ্যান ৭০ বছরের নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। আর রমজান মাসে যে-কোনো ইবাদতের সওয়াব হয় কমপক্ষে ৭০ গুণ। আবার সঙ্ঘবদ্ধভাবে কোন ইবাদত করলে তার সওয়াব বাড়ে আরো ৭০ গুণ। আর কোরআন শিক্ষা যেহেতু ফরজ, তাই ফরজ কাজের সওয়াব নফলের ৭০ গুণ।
তাই ৫২ ঘণ্টার কোরআন ধ্যান কমপক্ষে ৫২ x ৭০ x ৭০ x ৭০ x ৭০ = ১২৪,৮৫,২০,০০০ বছর ইবাদতের সমান।
উত্তর হলো- যাবে!
আসলে কোরআন তেলাওয়াত অডিওতে শোনা এবং সরাসরি শোনা দুটোই সমান সওয়াবের। কারণ দুটোই হচ্ছে শোনা। আর ধ্যানের স্তরে যখন আপনি কোরআন শুনছেন তখন এটার সওয়াব এমনিতেই হাজার গুণ বেড়ে যাচ্ছে। কারণ তখন শোনার সাথে যুক্ত হচ্ছে মৌনতা ও মনোযোগ।
তাই আন্তরিকতার সাথে অংশ নিন কোয়ান্টায়নে খতমে কোরআনে; আপনি হবেন কোরআনের জ্ঞানে জ্ঞানী আর আলোকিত জীবনের অধিকারী!