published : ২৮ মার্চ ২০২৩
দুই যুগ ধরে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন পরিচালনা করে আসছে রমজানের বিশেষ প্রোগ্রাম 'কোয়ান্টায়নে খতমে কোরআন' ও 'আখেরি দোয়া'। গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে ৭ দিনব্যাপী মৌনতার সাথে আল কোরআন আরবি তেলাওয়াত এবং বাংলা মর্মবাণী শ্রবণের পর আয়োজিত হয় দিনব্যাপী 'আখেরি দোয়া' কার্যক্রম।
আসুন, পিছন ফিরে দেখি যেভাবে শুরু হলো রমজানের এই বিশেষ কার্যক্রম।
কোয়ান্টায়নে খতমে কোরআন আসলে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আল্লাহ্র একটি আদেশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ-
যখন কোরআন তেলাওয়াত করা হয় তখন তোমরা মৌন থাকো এবং মনোযোগ দিয়ে শোনো। [সূরা আরাফ : ২০৪]
মৌনতা ও মনোযোগ দিয়ে শোনার প্রক্রিয়া কী হবে সে ব্যাপারে শ্রদ্ধেয় গুরুজী (শহীদ আল বোখারী মহাজাতক) ১৯৯৭ সালে গবেষণা শুরু করেন মা-জীকে (শ্রদ্ধেয়া নাহার আল বোখারী) সাথে নিয়ে। কাজটা ছিল ধ্যানের স্তরে মৌন থেকে কোরআন তেলাওয়াত এবং তরজমা শোনা।
১৯৯৭-৯৮ টানা দুই বছর চলে এই চর্চা। চমৎকার উপলব্ধিময় একটি অনুভূতি নাড়া দেয় গবেষকদ্বয়ের।
ধ্যানের স্তরে কোরআন শোনার উপকারিতা অনুধাবনের ফলে উদ্যোগ নেয়া হয় সদস্যদের সাথে নিয়ে কোয়ান্টায়নে খতমে কোরআন কার্যক্রমের। এজন্যে ১৯৯৯ সালে কাকরাইলে হল ভাড়া নেয়া হয়। প্রথম সেই আয়োজনে অংশ নেয় শখানেক মানুষ- কেউ দু’দিন, কেউ তিন দিন আবার কেউ সাত দিনই।
শুরু হয় আখেরি দোয়া
একই স্থানে অনুষ্ঠিত হয় আখেরি দোয়াও শতাধিক মানুষের অংশগ্রহণে।
কোয়ান্টামের কোনো প্রোগ্রামে একশ' মানুষ উপস্থিত হওয়া সেসময় ছিল খুব বড় ঘটনা! কিন্তু প্রথম প্রোগ্রাম এতটাই সাড়া পেল যে পরবর্তী তিন বছরে কাকরাইল হল ভরে গেল!
২০০২-২০০৪ এই তিন বছর খতমে কোরআন হয় সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনে।
আর ২০০৫-০৬ এই দুবছর বিয়াম মিলনায়তনে।
২০০৭ সালে দুদিনব্যাপী আখেরি দোয়া হয় বিয়াম মিলনায়তনে। অংশ নেয় প্রায় এক হাজার মানুষ।
১০০০ হাজার মানুষের উপস্থিতে দুদিনব্যাপী আখেরি দোয়া
বিয়াম মিলনায়তন ছিল সাড়ে চারশ’ মানুষের হল। একহাজার মানুষের আয়োজন হচ্ছে জেনে কর্তৃপক্ষ হল ভাড়া দিতেই চাইল না। এত মানুষ হলে উঠলে যদি হল ভেঙে যায়! শেষমেশ হল ভাড়ার জন্যে শর্ত জুড়ে দিল, যে আর্কিটেক্ট ফার্ম হলটি নির্মাণ করেছে তাদের থেকে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে আসতে হবে।
আর্কিটেক্ট ফার্ম সবটা শুনে হাসতে হাসতে বলল, এক হাজার লোকের ভারে যদি হল ভেঙে যায় তো সেটা কোনো হলই না! ওনারা বলার পরে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি পাওয়া গেল।
২০০৮ সালে আখেরি দোয়া অনুষ্ঠিত হয় বসুন্ধরা সিটি গ্র্যান্ড হল। তখনকার সময়ে ওটাই ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় দোয়ার প্রোগ্রাম। দুই হাজার মানুষ একত্রে এক হলে বসে দোয়ায় অংশ নেয়।
এর কিছুদিন পরেই অবশ্য হলটি বন্ধ হয়ে যায়।
২০০৯ সাল থেকে আখেরি দোয়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে কাকরাইলে অবস্থিত আইডিইবি মিলনায়তনে।
২০০৯ সালে আখেরি দোয়া হয়েছিল সেপ্টেম্বরে। সেবার প্রথমবারের মতো দুই হলে প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়।
গুরুজী আলোচনা করছেন নিচতলায়। ২য় তলায় হল বোঝাই মানুষ, কিন্তু এসি নেই! মানুষ গরমে-ঘামে নেয়েঘেয়ে প্রোগ্রাম করেছে। দু-তিনজন একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন; তারা ছাড়া হল ছেড়ে যান নাই কেউই।
তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে ২য় দিন গুরুজী প্রোগ্রাম করেন দ্বিতীয় তলায়। গুরুকে সাথে পেয়ে ২য় তলার অংশগ্রহণকারীরা গরমের কথা যেন ভুলেই গেল!
২০১০ সালে আইডিইবি-তে তিন দিনের প্রোগ্রাম আয়োজিত হয় প্রথম গ্রাজুয়েটদের নিয়ে, তারপরে প্রো-মাস্টারদের নিয়ে।
২০১০ সালে শ্রদ্ধেয় গুরুজীর পরিচালনায় আইডিইবি বিল্ডিং-এ আয়োজিত হয় আখেরি দোয়া
২০১২ সালে গ্রাজুয়েটদের নিয়ে দুদিন আলাদা, মাস্টারদের নিয়ে দুদিন আলাদা।
২০১৪ সালেও একইভাবে প্রোগ্রাম হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে আইডিইবি-তে যতগুলো হল আছে তার সবগুলো নিয়ে।
প্রচলিত কোরআনের ক্যাসেট, আরবি তেলাওয়াত আর বাংলা তরজমা থাকে যেটায়, সেটা দিয়েই শুরু হয়েছিল খতমে কোরআন। সেটা শুনতে শুনতে আমাদের মনে হয়েছিল, বাংলার এই অনুবাদ আরো সহজ হতে পারে।
প্রকাশিত হলো আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী
এই ভাবনা থেকে ২০১৫ সালে কোয়ান্টাম প্রকাশ করে আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী অডিও। যেখানে কোরআনকে উপস্থাপন করা হয়েছে মায়ের ভাষায় সহজ করে। সেই থেকে নিজস্ব এই অডিও দিয়েই অনুষ্ঠিত হচ্ছে কোয়ান্টায়নে খতমে কোরআন।
২০১৬ সালে আইডিইবির ছাড়াও আরো দুটো ভেন্যু মিরপুর এবং উত্তরায় আলাদা আলাদাভাবে আখেরি দোয়া আয়োজিত হয়।
২০১৭ সালে সারাদেশে একশ'র বেশি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয় খতমে কোরআন; অংশ নেয় প্রায় তিন হাজার মানুষ।
সেই থেকে প্রতি রমজানে দেশজুড়ে শতাধিক ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কোয়ান্টায়নে খতমে কোরআন; আইডিইবিতে আখেরি দোয়া হয়েছে নিয়মিত।
২০২০-২১ করোনাকালীন বিশেষ পরিস্থিতিতে দেশ যখন কার্যত অবরুদ্ধ তখনও থেমে থাকে নি রমজানের এই বিশেষ আয়োজনগুলো। কোয়ান্টাম মেথড ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় অনলাইন প্রোগ্রামের অডিও ফাইল ও সময়সূচি। নির্ধারিত সময়ে হাজারো মানুষ ঘরে থেকেই একাত্ম হয়েছেন খতমে কোরআন এবং আখেরি দোয়ায়।
করোনাকালে শ্রদ্ধেয় গুরুজীর পরিচালনায় ঘরে ঘরে পরিচালিত হয় আখেরি দোয়া
২০২২ সালে গ্রাজুয়েট এবং প্রো-মাস্টারদের জন্যে আখেরি দোয়া অনুষ্ঠিত হয় আলাদাভাবে। বিশেষ সংযোজন ছিল রমজানের শেষের দিকে গুরুজীর কন্ঠে কোরআন অনুধ্যান নৈশায়ন।
চলতি বছর (২০২৩) ২৪-৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কোয়ান্টায়নে খতমে কোরআন। গ্রাজুয়েট ও প্রো-মাস্টারদের নিয়ে আখেরি দোয়া হবে ০১ এপ্রিল আইডিইবি মিলনায়তনে।
এ-বছর প্রথমবারের মতো আখেরি দোয়া লাইভ স্ট্রিমিং হবে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে Quantum Method [Official]-এ। ফলে কোয়ান্টাম পরিবারের সদস্য নয় যারা তারাও এবার অংশ নিতে পারবেন রমজানের এই বিশেষ দোয়ার প্রোগ্রামে।
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন -
অথবা যোগাযোগ করুন আপনার নিকটবর্তী কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের যে-কোনো শাখা/সেলে।