১৮ বছরের কম বয়সী কারো হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দেবেন না

রাত ১১টায় নিজের হাতে ওষুধ এনে বাবাকে খাইয়েছিল মেয়েটি। রাত ১টায় ঘুমন্ত বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে নিজেই তাকে জাগিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিল মায়ের শোবার ঘরে। বলেছিল, বাবা, তুমি আরাম করে নিজের ঘরে ঘুমাও।

তারপর? তারপরই সবশেষ! ক্লাস এইটে পড়া ১৪ বছরের ফুটফুটে কিশোরীটি ভোরের আলো দেখার আগেই হারিয়ে গেল পৃথিবী থেকে। এমন দেশে, যেখান থেকে আর কোনোদিনই সে ফিরবে না, দেখবে না পৃথিবীর আর কোনো ভোর হওয়া, সন্ধ্যে নামা। শুনবে না পাখির কাকলি, মায়ের কান্না, বাবার হাসি, ভাইয়ের ‘দিদি’ ডাক।

স্বর্ণা কেন চলে গেল? জীবনটা যার ভালো করে শুরুই হলো না, জীবন নিয়ে তার এমন কী অতৃপ্তি, আহাজারি থাকতে পারে যে এই জীবনটাকে নিজেই শেষ করে দেয়ার মতো ধ্বংসাত্মক হতে বাধ্য হলো সে! এই প্রশ্নই আজ সবার!

অপূর্ব বর্দ্ধন স্বর্ণা- বাবা এডভোকেট সুব্রত বর্দ্ধন দম্পতির একমাত্র মেয়ে। ১০ বছর বয়স পর্যন্ত সে একাই ছিল। এরপর জন্ম নেয় ওর একটি ছোট ভাই, এখন যার বয়স ৪ বছর। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সাজানো গোছানো সংসারের এই মেয়েটিকে গত ৫ অক্টোবর তারিখে তার পড়ার ঘরে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় মৃত উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হয়, ভোররাতের কোনো একটা সময় গলায় ফাঁস দিয়ে সে আত্মহত্যা করে!

স্বর্ণার মৃত্যুর পর সংবাদমাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে যায় যে, বহুল আলোচিত ব্লু হোয়েল গেমটির শিকার হয়ে সে এই পথ বেছে নিয়েছে। যদিও এ দাবীর সপক্ষে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি বলে স্বর্ণার পরিবার বলছেন, তবে এটা নি:সন্দেহ যে ওর বয়সী এখনকার লক্ষ লক্ষ কিশোর-তরুণের মতো ওর হাতেও সারাক্ষণ যে স্মার্টফোনটি থাকতো, তারই কোনো ভয়ংকর প্রভাবের ফলেই আজ স্বর্ণার এ পরিণতি!

স্বর্ণার বাবার ভাষ্যমতে ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসেই সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম হয়ে স্বর্ণা উত্তীর্ণ হতো। চমৎকার গানের গলা ছিল। চিন্তায়, কথায় আচরণে ঝকঝকে এক মেধাবী কিশোরীর সবগুলো বৈশিষ্ট্যই ছিল তার মধ্যে।

কিন্তু ক্লাস সিক্সে ওঠার পর তার পীড়াপীড়িতে বাসার জন্যে একটি মোবাইল ফোন কিনে দেন বাবা সুব্রত বর্দ্ধন। প্রথমদিকে পড়াশোনার কাজেই সে এটা ব্যবহার করতো। কিন্তু আস্তে আস্তে মোবাইল ব্যবহারের প্রবণতা বাড়তে থাকে। এসময়েই তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন দেখা গেল। চুপচাপ হয়ে গেল। বাসায় যতক্ষণ থাকতো সারাক্ষণ মায়ের স্মার্টফোনটি নিয়েই সময় কাটাতো। আর এভাবেই হয়তো কোনো ভয়ংকর চিন্তা বা আসক্তি তার মনে স্থান নেয়। আর তার পরিণতিতেই ক্লাস এইটে উঠতে না উঠতেই থেমে গেল একটি চমৎকার জীবনের ছন্দ!

কী হয় আসলে এ বয়সটায়। বয়ঃসন্ধিতে ছেলেমেয়েদের পরিবর্তনের কথা আমরা সবাই কমবেশি জানি। কিন্তু পরিবর্তনটা ঠিক কী? বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, একটি শিশু যখন কৈশোরের দিকে যেতে থাকে তখন তার ব্রেনের মিডিয়াল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সে অংশগুলোও বিকশিত হতে শুরু করে। আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি এ সময়ের একটি স্বাভাবিক উপসর্গ। দেখা গেছে, একগাদা লোকের সামনে বসে থাকতে হবে- এমন কোনো পরিবেশে একজন পরিণত মানুষের চেয়ে একজন টিনএজারের স্ট্রেস রেসপন্স অনেক বেশি। তার মানে এ সংক্রান্ত তার আবেগ অনুভূতিগুলোও খুব চড়া থাকে এসময়। এবং এটার চূড়ান্ত সময়টা হলো ১৫ বছর বয়স। অপরিণামদর্শী কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া বা ‘একটা কিছু করে দেখিয়ে দেব’ – ঝোঁকের মাথায় এধরনের চিন্তাগুলো এ বয়সেই সবচেয়ে বেশি হয়।

আর এরই সুযোগ নিয়ে এই কিশোর-তরুণদের বিপথগামী করার জন্যে তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে একটা গোষ্ঠী। নানারকম ক্ষতিকর অনলাইন গেম, পর্ণোগ্রাফি, সোশাল নেটওয়ার্ক নামধারী অসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম –আসক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে এই তরুণদের সমাজবিচ্ছিন্ন, লক্ষ্যহীন হতাশ মানুষে পরিণত করাই এদের উদ্দেশ্য।

এসব বিষয়কে সামনে এনেই তাই স্বর্ণার বাবা সুব্রত বর্দ্ধন মাননীয় সরকার, বিচারবিভাগসহ সুশীল সমাজের কাছে যে আহ্বান নিয়ে দাঁড়িয়েছেন তাহলো কিশোর তরুণদের জন্যে ইন্টারনেট ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ।

তার প্রয়াসের একটি ফসল হিসেবেই গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্টের এক রায়ে রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত মোবাইল ফোন অপারেটররা যে বিশেষ ইন্টারনেট অফার দেন তা ছয় মাসের জন্যে বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 

কিন্তু শুধু এটাই যথেষ্ট নয়। আসলে পরিণত বয়স্ক না হলে (মানে সুনির্দিষ্ট বিচার বিবেচনার অধিকারী না হওয়া পর্যন্ত) স্মার্টফোনের নানারকম অপব্যবহারে আসক্ত হয়ে যাওয়া একজন টিনএজারের জন্যে খুবই সহজ। এডভোকেট বর্দ্ধন তাই এখন যে আহ্বান নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, তাহলো ১৮ বছরের কম বয়সী কারো হাতে স্মার্টফোন দেয়া যাবে না- এ মর্মে একটি সুনির্দিষ্ট আইন করা এবং তা বাস্তবায়নে আশু গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আর তার এ আহবানের সাথে কোয়ান্টাম পরিবারের লাখো সদস্যও ঘোষণা করেছে পূর্ণ একাত্মতা!

কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের প্রত্যয়ন অনুষ্ঠানে এডভোকেট সুব্রত বর্দ্ধনের প্রদত্ত অনুভূতি

বিডি২৪লাইভে এডভোকেট সুব্রত বর্দ্ধনের প্রদত্ত সাক্ষাতকারের ভিডিও