করোনাভাইরাস, মিসেস প্যাকলেটাইডের বাঘশিকার ও অন্যান্য...

মিসেস প্যাকলেটাইড’স টাইগার

‘আফ্রিকার জঙ্গলে গিয়ে বাঘ শিকার করেছেন’- মিসেস লুনা বিম্বারটনের নামে শহরজুড়ে এ খ্যাতি ছড়াবার পর থেকে মিসেস প্যাকলেটাইডের মনে কোনো শান্তি নেই।

তিনি নিজেও কবে এরকম বাঘ শিকার করবেন, সেটার কথা ফলাও করে প্রচার করবেন - রাতদিন শুধু তা-ই ভাবেন।

শেষমেশ এক ফন্দি আঁটলেন।

মিসেস লুনা বিম্বারটনের সম্মানে এক মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করবেন যেখানে আগে থেকে জোগাড় করা একটা বাঘের চামড়া অতিথিদের দেখিয়ে বলবেন যে, এই বাঘ তিনি শিকার করেছেন।

অতএব শুরু হলো শিকারের জন্যে বাঘের খোঁজ।

মিসেস প্যাকলেটাইড ঘোষণা করলেন, সহজে শিকার করা যায় এমন কোনো বাঘের সন্ধান দিতে পারলে মোটা অঙ্কের পুরস্কার দেবেন গ্রামবাসীকে।

গ্রামবাসীও মরিয়া হয়ে খুঁজতে লাগল। শেষমেশ বৃদ্ধ, অসুস্থ এক বাঘ তারা জোগাড় করল, যাকে জঙ্গলের ভেতর আটকে রাখা হবে যাতে সে পালিয়ে যেতে না পারে।;

গ্রামের শিশুদের দায়িত্ব দেয়া হলো জঙ্গলের চারপাশ পাহারা দেয়ার।

একটা ছাগলে এনে রাখা হলো ‘টোপ’ হিসেবে। আর মিসেস প্যাকলেটাইডের জন্যে তৈরি করা হলো এক উঁচু মাচান যেখান থেকে বাঘের গায়ে গুলি করবেন তিনি।

মায়েরা ছোট ছেলেমেয়েদের সাবধান করে দিল যাতে তারা কোলাহল না করে। মিসেস প্যাকলেটাইডের বাঘের ঘুম ভেঙে যেতে পারে।

নির্দিষ্ট দিন ছাগলটাকে জায়গামতো বেঁধে রাখা হলো। মিসেস প্যাকলেটাইড এবং তার পরিচারিকা মিস মেবিন গিয়ে বসলেন মাচায়।

ওদিকে ছাগল ক্রমাগত ব্যা ব্যা চিৎকার করেই যাচ্ছে। কিন্তু বৃদ্ধ বাঘ এতই দুর্বল যে শোয়া থেকে উঠে ছাগলকে আক্রমণ করার শক্তিটুকুও যেন তার নেই।

দেখেশুনে পরিচারিকা মিস মেবিন বলল, “মিসেস প্যাকলেটাইড, এরকম বৃদ্ধ বাঘ শিকারের জন্যে আপনি এত টাকা দিচ্ছেন! তাছাড়া দেখুন, বাঘটা তো ছাগলটাকে খাচ্ছেও না। তাহলে মিছিমিছি ছাগলের দাম কেন দেবেন?”

বলতেই বলতেই দ্রিম করে গুলির আওয়াজ বেরুল মিসেস প্যাকলেটাইডের বন্দুক থেকে।

সাথে সাথে বাঘটা মাটিতে চিৎপটাং!

গ্রামবাসী তো উল্লসিত! “মিসেস প্যাকলেটাইড বাঘ শিকার করেছেন! মিসেস প্যাকলেটাইড বাঘ শিকার করেছেন!”

কিন্তু মিস মেবিন লক্ষ করল- গুলিটা বাঘের গায়ে লাগে নি। লেগেছে ছাগলের গায়ে।

তাহলে বাঘটা মরল কীভাবে!

হার্ট অ্যাটাক! গুলির শব্দ শুনে বাঘের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু মিসেস প্যাকলেটাইডের তাতে কিছু যায় আসে না। তার বাঘের চামড়া দরকার, পেয়েছেন।

বাঘের চামড়ার সাথে ছবি তুলে পত্রিকার পাতা ভরিয়ে ফেললেন। মিসেস লুনা বিম্বারটনের খ্যাতি ম্লান হয়ে গেল মিসেস প্যাকলেটাইডের কাছে।

গ্রামবাসীও খুশি। মোটা অঙ্কের ইনাম পেয়েছে তারা।

ক্লাস টেনের কমিউনিকেটিভ ইংলিশ ক্লাসে পড়া এ গল্পটা কি পাঠকদের মনে আছে?

গল্পটা কেন বলা হলো, তা একটু পরের আলোচনায়ই পরিষ্কার হবে।

করোনাভাইরাস আক্রান্তের হিসাবটা কেন জটিল?

এখন দেখা যাক করোনা-র আজকের আপডেট।

১০ লক্ষ ১৬ হাজার ৩৩০ জন আক্রান্ত, ৫৩ হাজার ২৩৮টি মৃত্যু, ৩৭ হাজার ৬৫৪ জন সংকটাপন্ন অবস্থায়। (৩ এপ্রিল, ২০২০, 6GMT, worldometers.info)

প্রসঙ্গত-করোনাভাইরাসে আক্রান্তের যে সংখ্যাটা সাধারণত আমরা দেখি, তার হিসাবটা বেশ জটিল।

কারণ এদের সবাই নিশ্চিতভাবে করোনা-আক্রান্ত নন। এদের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি সন্দেহ করা হচ্ছে এমন মানুষ যেমন আছে, তেমনি আছে যাদের কোনো লক্ষণ-উপসর্গ নেই তেমন মানুষ। সেই সাথে আছে যারা ইতোমধ্যেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে সেরকম সুস্থ মানুষও। [CCDC, China, Feb 17, 2020]

যারা মারা গেছেন তাদের বয়সের হার

এবার দেখা যাক- যারা মারা গেছেন, তাদের বয়সের হার কেমন। (WHO-China Joint Mission Report, Feb 28, 2020)

বয়স মৃত্যুর হার (নিশ্চিত করোনাভাইরাস) মৃত্যুর হার (নিশ্চিত-অনিশ্চিত মিলিয়ে)
৮০ এবং তদুর্ধ্ব ২১.৯% ১৪.৮%
৭০-৭৯   ৮.০%
৬০-৬৯   ৩.৬%
৫০-৫৯   ১.৩%
৪০-৪৯   ০.৪%
৩০-৩৯   ০.২%
২০-২৯   ০.২%
১০-১৯   ০.২%
০-৯   কোনো মৃত্যু নেই

কোনো শিশু মারা যায় নি

অর্থাৎ যে ৭২ হাজার ৩১৪ জন করোনা-আক্রান্তকে নিয়ে চীন এ জরিপটি চালিয়েছে তাদের মধ্যে নয় বছরের কমবয়সী কোনো শিশুই মারা যায় নি।

সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। আর বয়স কমার সাথে সাথে মৃত্যুর হারও কমেছে।

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের এক গবেষণা অনুযায়ী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের মৃত্যুর হার, ৪০ বছরের কম বয়সীদের চাইতে ১০ গুণ বেশি।

আগে থেকে কোনো অসুস্থতা কতটা মারাত্মক?

এবার দেখা যাক, আগে থেকে কোনো অসুস্থতা থাকলে কী ঘটছে?

আগে থেকে অসুস্থতা ছিল- এমন কোন অসুস্থতার কত ভাগ মানুষ মারা গেছে, তা উঠে এসেছে চায়না সিসিডিসি-র এ জরিপে-

পূর্ববর্তী অসুস্থতা মৃত্যুর হার (নিশ্চিত করোনাভাইরাস)* মৃত্যুর হার (নিশ্চিত-অনিশ্চিত মিলিয়ে)
হৃদরোগ ১৩.২% ১০.৫%
ডায়াবেটিস ৯.২% ৭.৩%
ফুসফুস জটিলতা ৮% ৬.৩%
উচ্চ রক্তচাপ ৮.৪% ৬%
ক্যান্সার ৭.৬% ৫.৬%
কোনো অসুস্থতা ছিল না   ০.৯%

 

তার মানে আগে থেকে কোনো অসুস্থতা রোগটি থেকে মৃত্যুর শঙ্কাকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ!

কেন?

করোনাভাইরাসের মূল আক্রমণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর

কারণ করোনাভাইরাসটির মূল আক্রমণ আসলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর।

এমআইটির একজন গবেষক ড. শিব আয়াদুরাই। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণাই তার বিষয়। তিনি বলেন, “ক্ষতি করা বা মেরে ফেলার কাজটা ভাইরাস নিজে করে না।

ভাইরাস যা করে তাহলো- দুর্বল বা অকার্যকর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আক্রমণ। আর সেটা যখন হেরে যায়, তখন শরীরও হাল ছেড়ে দেয়। সেল, টিস্যু, অর্গানগুলো ক্লান্ত, পরাজিত হয়ে পড়ে, শারীরিক জটিলতা বাড়ে, শেষমেশ হয়তো রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।"

ড. আয়াদুরাই বলেন, "আর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল বা অকার্যকর হওয়ার কারণ হলো কিছু শারীরিক অবস্থা (সমস্যা/বদভ্যাস)- স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং ধূমপান।

তার মানে এই সমস্যাগুলো থাকলে তার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত এবং ভাইরাস বা এহেন যে-কোনো বহিঃশত্রুরই সে সহজ শিকার।“

এর আগেও ছিল ছয় ধরণের করোনাভাইরাস

তাহলে যে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ আজ আধমরা হয়ে আছে, তা কি নতুন ঘটনা?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার ওয়েবসাইটে এ প্রসঙ্গে যে বিবৃতিটি দিয়েছে, তা হলো-

Coronaviruses (CoV) are a large family of viruses that cause illness ranging from the common cold to more severe diseases such as Middle East Respiratory Syndrome (MERS-CoV) and Severe Acute Respiratory Syndrome (SARS-CoV). A novel coronavirus (nCoV) is a new strain that has not been previously identified in humans.”

মানে করোনাভাইরাস হলো একটি ‘বড় ভাইরাস পরিবার’ যা সাধারণ ফ্লু থেকে শুরু করে জটিল রোগ যেমন, মার্স বা সার্সের কারণ হতে পারে। এনসিওভি বা নভেল করোনাভাইরাস হলো এরই সর্বশেষ সংযোজন যা মানুষের মধ্যে এই প্রথম দেখা দিল।

চারটি করোনাভাইরাস খুবই সাধারণ

আসলে এর আগে মোট ছয়টি করোনাভাইরাসের কথা আমরা জানি যা মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছিল। এর মধ্যে সার্স আর মার্স বাদে বাকি চারটিই খুব সাধারণ।

বছরজুড়েই মানুষ এগুলোর কোনোটা না কোনোটার শিকার হয়। ঠাণ্ডা, কাশি, সর্দি হয়। আবার ভালোও হয়ে যায়।

শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই আক্রান্ত ছিলেন সাড়ে তিন কোটি

২০১৮-১৯ সালে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই সাড়ে তিন কোটি মানুষ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়। হাসপাতালে ভর্তি হয় পাঁচ লক্ষ। মারা যায় ৩৪ হাজার মানুষ। (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন)

যদি শুধু একটি দেশেরই হিসেব এত বেশি হয় তাহলে সারা পৃথিবীর সংখ্যাটা কত বড় হবে?

যথেষ্ট বড় হবে।

ফ্লু-জনিত জটিলতায় পৃথিবীতে প্রতিবছর দু লক্ষ ৯১ হাজার থেকে শুরু করে ছয় লক্ষ ৪৬ হাজার মানুষ মারা যায়! [ল্যান্সেট]

এবং একটু আগেই যেমনটা বলা হয়েছে- মৃত্যুবরণকারী এই বেশিরভাগ মানুষই ছিল বয়স্ক, আগে থেকে অসুস্থ এবং ধূমপান ও ওজনের সমস্যাক্রান্ত দুর্বলদেহী মানুষ, রোগের বিরুদ্ধে যাদের প্রতিরোধ-ক্ষমতা ছিল দুর্বল।

মৃত্যুর কারণ ছিল শরীরে উপস্থিত অন্য একটি জটিল সমস্যা

‘নভেল করোনাভাইরাসের’ ক্ষেত্রেও হয়েছে।

ইংল্যান্ডের কভেন্ট্রিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পরদিন মারা যায় ১৮ বছর বয়সী এক কিশোর। তার মৃত্যুর পরদিন হাসপাতাল থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে যে, তার শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থাকলেও মৃত্যুর কারণ ছিল তার শরীরে উপস্থিত অন্য একটি জটিল সমস্যা।

ফলে ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে- করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে, আগে থেকেই অসুস্থ থাকা এমন মানুষরা যখন মারা যাচ্ছেন, তখন এটাও বোঝা যাচ্ছে না যে এরা কি করোনাভাইরাসের কারণেই মারা যাচ্ছেন? নাকি জটিল শারীরিক সমস্যার সাথে ‘করোনাভাইরাস’ একটি প্রভাবক হিসেবে যুক্ত হয়ে মৃত্যুর গতি ত্বরান্বিত হচ্ছে?

অ্যালোন মাস্ক জানালেন আতঙ্ক না ছড়ানোর আহবান

করোনাক্রান্ত না হলেও এমনিতেই মারা যেতেন, এমনরাও যখন ঢুকে পড়ছেন করোনা-মৃত্যুর এ পরিসংখ্যানে, তা কিছুটা ভীতিকর চিত্র তৈরি করছে বৈ কি!

ড. শিব আয়াদুরাইয়ের মতো বিশেষজ্ঞরা তাই এখন আতঙ্ক না ছড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে বলছেন।

আতঙ্ক না ছড়াবার আহবান জানান তেসলা এবং স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা অ্যালোন মাস্কও-

“Danger of panic still far exceeds danger of corona imo. If we over-allocate medical resources to corona, it will come at expense of treating other illnesses…”

এবারে করোনাভাইরাস নিয়ে কিছু ভালো খবর যা আপনাকে স্বস্তি দেবে-

বয়স হলেই যে করোনাভাইরাসে আপনি কাবু হবেন ব্যাপারটা তা নয়

করোনাভাইরাসের আক্রমণ বয়স্কদের ওপর বেশি ঠিকই, কিন্তু সেটা তাদের বয়সের কারণে নয়, তাদের শারীরিক অবস্থার কারণে। ৬০/৬৫/৭০ বছরের একজন মানুষ যদি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রবল থাকে, তার চিন্তার কিছু নেই। [ড. নাগেশ্বর রেড্ডী]

৯৫% ই মৃদু সংক্রমণে আক্রান্ত হন

কারণ আমরা দেখেছি রোগটিতে আক্রন্ত হলেও মাত্র ৫% রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় যান। শারীরিকভাবে সবল যেসব মানুষ আক্রান্ত হন তারাই বাকি ৯৫%। যাদের হয় কোনো উপসর্গই থাকে না, অথবা থাকলেও তা খুবই মৃদু।

সংক্রমণের প্রকোপ বাংলাদেশে কম হচ্ছে

পৃথিবীর অপরাপর দেশগুলোর তুলনায় (দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্) করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাংলাদেশে বিস্ময়করভাবে কম

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণের কথা জানানো হয় ৮ মার্চ। পরবর্তী ২৭ দিনে ৬১ জন আক্রান্ত হয়, ৬ জন মারা যায়।

অথচ দক্ষিণ কোরিয়ায় ভাইরাসটি শনাক্ত হওয়ার মাত্র এক মাসের মাথায় সংক্রমণ দুহাজার ছাড়িয়ে গেছিল। ইতালিতে একমাসে ছাড়িয়েছিল হাজার।

যদিও বলা হচ্ছে যে বাংলাদেশে পর্যাপ্ত পরীক্ষা হচ্ছে না বলে সংখ্যাটা এত কম, কিন্তু এর একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাতিগত জীন-বৈশিষ্ট্যও রোগের প্রাদুর্ভাবে প্রভাব ফেলে

বলা হয়, একটি ভাইরাস যিনি বহন করছেন তার জাতিগত জীন-বৈশিষ্ট্যও রোগের প্রাদুর্ভাবে প্রভাব ফেলে। যেমন, একই ভাইরাস আফ্রিকানদের যে রোগে আক্রান্ত করে চীনাদের সেই একই রোগে আক্রান্ত করে না।

আবার যেমন জিকা। পৃথিবীর অনেক দেশেই এর প্রাদুর্ভাব হলেও শুধুমাত্র ব্রাজিলেই আমরা দেখলাম, 'মাইক্রোসেফালি' হতে অর্থাৎ গর্ভবতী নারীদের ছোট মাথার শিশু জন্ম দিতে।

আমাদের ভাইরাসটি উহান থেকে আসে নি

আমাদের এখানকার করোনাভাইরাসটি উহান থেকে আসে নি, এসেছে ইতালি থেকে। অর্থাৎ উহান থেকে ভাইরাসটি প্রথমে গেছে পাশ্চাত্যে। পাশ্চাত্য থেকে বাংলাদেশে। মাঝখানে বেশ কয়েক সপ্তাহের ব্যবধান।

এই যে সময় এবং স্থানান্তর- এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভাইরাসটির জেনোম সিকোয়েন্সিংয়েও ঘটেছে কিছু রূপান্তর। মারাত্মক থেকে ভাইরাসটি হয়তো হয়ে উঠছে নিরীহ, কম ক্ষতিকর ঘাতকে।

জনসংখ্যার তুলনায় আমাদের এখানে যে অনেক কম এবং ধীর সংক্রমণ ঘটছে এটা হয়তো তার একটা কারণ হতে পারে।

যদিও ব্যাপকভিত্তিক গবেষণা না করে এ ব্যাপারে ১০০ ভাগ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়, তবে জেনোটাইপে একটা রূপান্তর ঘটেছে এটা নিশ্চিত।

চরম তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় কোভিড-১৯ কম টিকে থাকতে পারে

আগের করোনাভাইরাসগুলোকে মূলত শীতকালেই সংক্রমিত হতে দেখা গেছে। কোভিড-১৯-কেও মনে করা হচ্ছে যে এটি ঠাণ্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়া পছন্দ করে।

যদিও এ নিয়ে চূড়ান্ত কথা বলার সময় এখনই আসেনি, তবে, কম্পিউটার মডেলিংয়ে দেখা গেছে চরম তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় কোভিড-১৯ কম টিকে থাকতে পারে

রান্না করা মাংস ঠাণ্ডা করা হলে যেমন চর্বির আস্তর সৃষ্টি হয়

করোনাভাইরাস এমন একটি গোত্রের সদস্য যাদের বলা হয় 'এনভেলপড ভাইরাস'-ভাইরাসের চারপাশে প্রোটিনের তৈরি একটা তৈলাক্ত আস্তরণ থাকে, যাকে বলে লিপিড বাইলেয়ার।

এ আবরণের কারণে শরীরের বাইরে, মুক্ত পরিবেশে যখন উষ্ণ বা উচ্চ তাপমাত্রার আবহাওয়ায় ভাইরাসটি থাকে তখন তা দুর্বল হয়ে যায়।

অন্যদিকে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সেটি আরও টেকসই হয়ে ওঠে।

রান্না করা মাংস ঠাণ্ডা করা হলে যেমন চর্বির একটা আস্তর তৈরি হয়, অনেকটা তেমন।

এ কারণেই তাপমাত্রা যত বাড়ে, মুক্ত পরিবেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার তত কমতে থাকে।

চীন বিধিনিষেধ শিথিল করছে

করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু হয়েছিল চীন থেকে। উহান অবরুদ্ধ ছিল দু্ই মাসেরও বেশি সময়। ২ এপ্রিল থেকে এর অবরোধ আংশিক তুলে নেয়া হচ্ছে। ৮ এপ্রিল থেকে পুরোপুরি।

চীনে এখন স্থানীয় সংক্রমণ প্রায় নেই বললেই চলে। যারা হচ্ছেন তারা বাইরে থেকে আগত।

ফলে ধীরে ধীরে চীন এখন তার বিধিনিষেধগুলো তুলে নিচ্ছে

ইতালি ও স্পেনেও হয়তো পরিস্থিতির মোড় ঘুরতে শুরু করেছে

ইতালি এবং স্পেনে সংক্রমণ সম্ভবত সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে বা পৌঁছুতে যাচ্ছে। এরপর থেকেই আশা করা যায়- নতুন সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা –কমতে শুরু করবে।

এ সম্পর্কে আরো জানতে:

[ভিডিও] : করোনা আতঙ্ক

[অডিওসহ গুরুজীর বক্তব্য] : করোনাভাইরাস

[আরো আর্টিকেল] : করোনাতে করণীয়

[গুরুজীর চিঠি] : করোনাভাইরাস সচেতনতায় করণীয়

[মেডিটেশন] : করোনাভাইরাস প্রতিরোধে